Monday, June 16, 2014

যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর চেষ্টায় ছিল নূর হোসেন

যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর চেষ্টায় ছিল নূর হোসেন
মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু/তোহুর আহমদ
প্রকাশ : ১৭ জুন, ২০১৪
নারায়ণগঞ্জের সাত অপহরণ ও খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেন ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে ভারতের আমেরিকান দূতাবাসে আবেদনও করেছিলেন। নূর হোসেনকে আমেরিকায় যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য মার্কিন দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে তদবির করেন সরকারের এক উপদেষ্টা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রর্থনার পরিকল্পনা ছিল নূর হোসেনের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ দুই সঙ্গীসহ নূর হোসেনকে গ্রেফতার করায় সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, নূর হোসেনের পাসপোর্টে মালয়েশিয়ার মাল্টিপল ভিসা লাগানো আছে। কিন্তু বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে স্থলপথে ভারতে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার ভারতে পালানোর পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করে নারায়ণগঞ্জের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার পরামর্শ। সূত্র জানিয়েছে, নূর হোসেনের সঙ্গে সাত অপহরণ-খুনের মামলার এজাহারভুক্ত আরও দুই আসামি আমিনুল হক রাজু ও আনোয়ার হোসেনও ভারতেই আছে। নূর হোসেন গ্রেফতারের পর রাজু ও আনোয়ার পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে গেছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে নূর হোসেনকে গ্রেফতারের বিষয়টি কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনকে রাজ্য সরকারের তরফে এখন জানানো হয়নি। তবে নূর হোসেনের গ্রেফতারের বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছেন বলে সোমবার বিকালে যুগান্তরকে জানিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। নূর হোসেন আমেরিকান দূতাবাসে ভিসার জন্য যে আবেদন করেছেন সে বিষয়ে ডেপুটি হাইকমিশনার কিছু জানেন কিনা এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয়। ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী নূর হোসেন র‌্যাবকে দিয়ে এই খুন করিয়েছেন। সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১ সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। এদের দুজন ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ইতিমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সূত্র জানায়, নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের আমেরিকান দূতাবাসে ভিসার আবেদন করেন। তার ভিসা আবেদন নম্বর (বিডি৭৮৩)। ভিসা প্রার্থনার কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, রাজনৈতিক কারণে তার পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থান করা নিরাপদ নয়। এজন্য তিনি আমেরিকা যেতে চান। নূর হোসেন যাতে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করতে পারেন সেজন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে তদবির করেছেন সরকারের এক প্রভাবশালী উপদেষ্টা। এর আগে ২০০৫ সালে ইন্টারপোলে নূর হোসেনের নামে রেড অ্যালার্ট জারি করা হলে ওই প্রভাবশালী উপদেষ্টাই চিঠি দিয়ে রের্ড অ্যালার্ট প্রত্যাহার করিয়েছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগেই বাংলাদেশ থেকে ওই দেশে পলাতক বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে নিরাপদে থাকার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই সে বাংলাদেশ ছাড়ে। এর আগে গত তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের পুরোটা সময় সে ভারতে পালিয়ে ছিল। এ কারণে ভারতের আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নেটওয়ার্ক ভালো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পলাতক অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত এলাকায় একটি বাড়িও কিনেছিল নূর হোসেন, কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বাড়িটি বিক্রি করে দেয়।
সূত্র জানায়, নূর হোসেন ভারতে যাওয়ার পর তাকে রিসিভ করে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক। নূর হোসেনকে বাড়ি ভাড়া নিতে সহায়তা করেন দীপক ঘোষ ও বাপ্পা নামের দুই ভারতীয় নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর নূর হোসেনের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে ২০ লাখ টাকা পাঠানো হয়। একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ওই টাকা নূর হোসেনের কাছে পাঠান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন ভারতীয় মোবাইল ফোন থেকে দফায় দফায় কথা বলেছেন নূর হোসেন। এসব কথোপকথনের রেকর্ড গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে। সূত্র জানায়, কথোপকথনের সময় নূর হোসেনকে দেশের বিভিন্ন খবরাখবর দিয়েছেন আলোচিত ওই রাজনীতিক নেতা। বারবার তাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সময় সুযোগ মতো নূর হোসেনের সঙ্গে দেখা করারও প্রতিশ্র“তি দেন তিনি। এছাড়া নূর হোসেনকে তিনি টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা না করার পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, নূর হোসেন গ্রেফতারের পর ভারতে পলাতক সন্ত্রাসীদের মধ্যেও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসী ও অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের অনেকেই দেশে ফিরে আসার চিন্তা করছেন। কেউ কেউ পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোতে চলে যাচ্ছেন।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/06/17/112093#sthash.Bf0xtASp.dpuf

No comments:

Post a Comment