Monday, June 2, 2014

জয়োত্‍সবে ‘সরকারি হাত’ দেখে ময়দানে ক্ষোভের পাহাড়

জয়োত্‍সবে ‘সরকারি হাত’ দেখে ময়দানে ক্ষোভের পাহাড়
eden
এই সময়: শাহরুখের টিমের সাফল্যে রাজ্য সরকারের সংবর্ধনার তোড়জোড় দেখে ময়দানে উপচে পড়ছে ক্ষোভ, দুঃখ ও রাগ৷ 

দিন পনেরো আগে দেশের সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট আই লিগ থেকে কার্যত বের করে দেওয়া হয়েছে কলকাতার দুই টিম মহামেডান ও ইউনাইটেড স্পোর্টসকে৷ পরিকাঠামো নেই বলে৷ আজ তাদের আবেদন নিয়ে দিল্লিতে এআইএফএফ-এর বৈঠক৷ সিদ্ধান্ত বদল হওয়ার কোনও খবর নেই৷ তবু ক্লাবগুলোর হয়ে রাজ্য সরকারের কোনও মন্ত্রীকে সরব হতে দেখা যায়নি৷ ক্রীড়ামন্ত্রীকে পর্যন্ত না৷ সেই ক্রীড়ামন্ত্রীকে নবান্নে জগমোহন ডালমিয়াকে পাশে দাঁড় করিয়ে কেকেআরের উত্‍সব নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে দেখে ময়দানের কর্তারা ক্ষুব্ধ৷ 

পর্বতারোহীদের তরফেও উঠছে প্রশ্ন৷ ছন্দা গায়েন নিখোঁজ হওয়ার পরে চারদিকে যখন হতাশার মেঘ বাংলার খেলাধুলোয়, সেখানে এমন জয়োত্‍সবের মানেটা কী? 

ফুটবল-ক্রিকেটের বাইরের খেলাগুলোর দুর্দশা চরমে এ রাজ্যে৷ বাংলা অলিম্পিক সংস্থা চালান এখন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা ও ভাই৷ দাদা আবার বিওএর প্রেসিডেন্টও৷ অন্য ভাই রাজ্য হকি সংস্থার সচিব৷ তাতেও সব খেলার আর্থিক অনুদান মিলছে না বহুদিন৷ সরকারের কাছে বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার অনেক প্রাপ্য৷ সেই টাকা মেলেনি বারবার অনুরোধেও৷ শাহরুখের টিমের জন্য মমতা সরকারের একাধিক মন্ত্রীর দৌড় ঝাঁপ দেখে তথাকথিত ছোট খেলার কর্তারা ক্ষিপ্ত৷ কিন্ত্ত সরকারি রোষে মুখ খুলছেন না৷ 

মহামেডান ও ইউনাইটেড স্পোর্টস কর্তারা অবশ্য রাখঢাক রাখতে রাজি নন৷ ফেডারেশনের আপিল কমিটির সভায় যাওয়ার আগে মহামেডান শীর্ষ কর্তা রাজু আমেদ বললেন, 'আমাদের মতো একটা ঐতিহ্যশালী ক্লাব যে এ বার আই লিগ থেকে নেমে গেল, তারপর বাদও পড়ে গেল, এ নিয়ে কাউকে কিছু বলতে শুনিনি৷ সরকারি তরফে কেউ খোঁজই নেয়নি৷ একবার তো আলোচনা করাই যেত আমাদের সঙ্গে৷' মহামেডানের সর্বময় কর্তা তৃণমূলের সাংসদ সুলতান আমেদ৷ তবু সেই দলের জন্য সোচ্চার হননি মদন মিত্র, অরূপ বিশ্বাসরা৷ যাঁরা কেকেআর নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছেন৷ 

ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাহিনি আরও করুণ৷ স্পনসর ছাড়া লড়াই করে আই লিগে টিকে যাওয়ার পরেও ফেডারেশন ছেঁটে ফেলেছে তাদের৷ আজ মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন যখন শাহরুখ খানের নাচে উত্তাল হবে, তখন দিল্লিতে ক্লাব বাঁচানোর লড়াই করবেন ইউনাইটেড কর্তা নবাব ভট্টাচার্য৷ বললেন, 'স্পনসরের জন্য কার কাছে না যাইনি৷ মন্ত্রী-আমলা সব৷ ঘুরে-ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷ কিন্ত্ত কোনও সমাধান হয়নি৷ কেউ সরকারি তরফে এগিয়ে আসেনি৷ কেউ না৷' 

নবাবের সাফ কথা, গ্ল্যামার যেখানে, সরকারের আগ্রহও সেখানে৷ বললেন, 'আমাদের কথা বাদ দিন, মহামেডানের মতো ক্লাবকে বাদ দিয়ে দিল ফেডারেশন৷ একজন মন্ত্রীও ওঁদের কর্তাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, কেন এমন হল? কী করা দরকার? সরকার তো নিজে উদ্যোগ নিয়ে ফেডারেশনে চিঠি পাঠাতে পারত৷ কি করা যাবে, এ সবে তো গ্ল্যামার নেই৷' 

প্র্যাক্টিসের জন্য মাঠ ভাড়ার ক্ষেত্রেই ছাড় পাওয়া যায় না তো স্পনসর৷ হতাশ মহামেডান কর্তা বললেন, 'আমরা খুব শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছি, আমাদের বিষয়টা নিয়ে ভাবার জন্য৷ ক্লাবের ইতিহাস জানিয়ে রাজ্যপালের কাছেও যাব৷ দেখি যদি কিছু হয়৷' 

কেকেআরের জয়ে রাত পোহাতেই ইডেনে রাজকীয় সংবর্ধনা দেয় সরকার৷ অথচ, সাম্প্রতিক কালে টেবিল টেনিস, তিরন্দাজিতে বাংলার ঘরে অনেক সাফল্য এনে দেওয়ার পরও নীরব থাকে৷ ইডেনের পাশের খুপরি ঘরে বসে বাংলার ছোট খেলার কর্তারা তাই হতাশ মুখে বলেন, 'পাড়ার ক্লাব দু-লক্ষ টাকা করে অনুদান পায়৷ আমরা প্রাপ্য টাকা পাই না৷ টিম কোথাও খেলতে গেলে তার গাড়িভাড়াটাও নিজের পকেট থেকে দিতে হয়৷ জার্সি-প্যান্ট, সব৷' সামান্য দূরে মুখ্যমন্ত্রীর দাদা, ভাইরা বসে৷ তাঁদের সামনেই ক্ষোভ দেখাচ্ছেন অন্য খেলার কর্তারা৷ 

তাঁরা কেউই আর ইডেনমুখো হচ্ছেন না বিতৃষ্ণায়৷

No comments:

Post a Comment