Friday, June 27, 2014

বাবার বুকপকেটে মেয়ের ৩০০ টাকা

বাবার বুকপকেটে মেয়ের ৩০০ টাকা

ইফতেখার ফয়সাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Decrease fontEnlarge font
চট্টগ্রাম: সকালে বের হওয়ার সময় ইয়াসমিন (২১) তার বাবার হাতে ৩০০ টাকা দিয়ে বলেছিলেন, মুরগি নিয়ে এসে রান্না করো। দুপুরে এক সাথে খাবো।

বাবা নুরুল আলম বাজারেই যেতে পারেনি। বুক পকেটে সে টাকা নিয়ে ছুটে এসেছেন লাশ ঘরের সামনে। আর আহজারি করছেন ‘তোঁয়ারা আঁর মাইয়ারে এক্কা দেখ না (তোমরা আমার মেয়েকে একটু দেখাও)’

মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এলাকায় ট্রেন-মিনিবাস সংঘর্ষে নিহত চার তৈরি পোশাক কারখানা শ্রমিকের একজন ইয়াসমিন।

ইয়াসমিনের স্বজনরা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালি এলাকার মাতারবাড়ি এলাকায় বাড়ি হলেও ইয়াসমিন ফুফাতো বোনের সঙ্গে কালুরঘাট সিঅ্যান্ডবি কলোনির একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। দেড় বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বেইজ গার্মেন্টস নামে ওই তৈরী পোশাক কারখানায় চাকুরি নিয়েছিল সে। জেরিন সুলতানা নামে একটি পাঁচ বছরের কন্যা সন্তানও আছে তার। জেরিন থাকে নানার বাড়িতে।
ctg_Accident
ইয়াসমিনের বাবা নুরুল আলম জানান, মেয়েকে দেখতে চার দিন আগে গ্রাম থেকে এসেছেন, নিজের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও নাতনী জেরিনকে নিয়ে নিয়ে।

বলেন, যাওয়ার সময় তিনশ’ টাকা দিয়ে গেছে। মাকে বলছে যেন সুন্দর করে রান্না করে করে। কিন্তু, আমি বাজার করতে বের হবো, এমন সময় শুনি আমার মেয়ে নেই।

শেষ দিনটাই কাল হলো রিয়ার:

কাঁচা হলদে রঙের মেয়ে রিয়া (২০)। বিয়ের একবছর পার হতে চললেও ঠিক মতো স্বামীর মুখ দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনি। সংসারের অভাব-অনটনে বাধ্য হয়েছিল পোশাক কারখানায় চাকুরি নিতে। কিন্তু এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বেকার স্বামী আজাদ। নগরীর বহদ্দার হাটে মোবাইল ‍সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেছে। তাই কথা ছিল বেতনটা পেলে এবার চাকুরিটা ছেড়ে দিয়ে ঘর-সংসার করবে। কিন্তু কে জানতো বেতনের টাকা নিয়ে ফেরা হবে না রিয়ার।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরের সামনে স্ত্রীর লাশের জন্য অপক্ষো করছিলেন আজাদ।

তিনি বললেন, ‘সোমবারে টাকা পাওয়ার কথা ছিল। না পেয়ে আজ (মঙ্গলবার) সকালে আবার গার্মেন্টেসে গেছিল টাকা নিতে। সকালে বের হবার সময় বলছিল, বেতনটা হাতে পেলে আর চাকরি করবে না। কিন্তু ঘণ্টা পার না হতেই শুনি ও আর নেই’
ctg_Accident_pi
আজাদ জানান, তার বাড়ি নগরীর চান্দগাঁও থানার শহীদ পাড়া এলাকায়। তবে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কালুরঘাট এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

সন্তানের ভবিষ্যত খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেলো জুলিয়া

বিধবা জুলিয়ার (২৭) শেষ সম্বল ছিল ১১ বছরের সন্তান রণি। ষষ্ট শ্রেণীতে পড়ে। পিতৃহারা সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর কোন চেষ্টায় বাদ দেননি মা। ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলেন। আর তাই ছেলের পড়ালেখার খরচ যোগাতে সুদূর বরগুনা থেকে চাকুরি করতে ছুটে এসেছিলেন বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। কিন্তু সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত খোঁজতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে যেতে হলো না ফেরার দেশে।

জুলিয়া বেগমও থাকতো কালুরঘাট সিএন্ডবি এলাকায়, ছোট বোনের সংসারে। দুপুরে লাশ নিতে এলে কথা হলো ছোট বোনের স্বামী রানা হাওলাদারের সঙ্গে।

তিনি জানালেন, ছেলে রণি থাকে গ্রামের বাড়িতে। জুলিয়া দিন-রাত শুধু তার ছেলের কথা বলতো।
/ctg_Accident_pic_3
তিনি বলেন, এখনো গ্রামে জানানো হয়নি। আমাদের এক দুর্সম্পর্কের ভাই আছেন শহরে। সে আসলে লাশ নিয়ে তারপর খবর দিবো।

রক্তে ঢেকে যাওয়া নাম

সকালে দূর্ঘটনায় নিহত চারজনের লাশ নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। এদের মধ্যে একজনের নাম এন্ট্রি হয় সুইটি নামে, যার চেহারা দূর্ঘটনায় এতোটায় বিকৃত হয়ে যায় যে চেনা মুশকিল।

তাকে আনার কিছুক্ষণ পরে আহত অবস্থায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় আরেকজনকে, যার নাম সুইটি। প্রশ্ন দেখা দেয়, নিহত মহিলা কি সুইটি, নাকি অন্য কেউ। সহকর্মীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয় দ্বন্ধের।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরাও প্রথমে নিহতের নাম সুইটি দাবি করলেও পরে বলেন, লাশের নাম পাওয়া যায়নি।

দুপুর একটা পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি নিহত এ পোশাক শ্রমিকের পরিচয়। লাশ নিতেও আসেননি নিহতের কোন স্বজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৪
- See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/273868.html#sthash.WrZvLDBd.dpuf

No comments:

Post a Comment