Monday, June 16, 2014

ফেনীতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে ৬টি সংখ্যালঘু পরিবার

ফেনীতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে ৬টি সংখ্যালঘু পরিবার
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জুন, ২০১৪
ফেনী শহরতলীর গোহাডুয়া গ্রামের ৬টি সংখ্যালঘু পরিবার ভূমিদস্যুদের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছে। কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তার দাবিতে প্রশাসনের কাছে ২০ বার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে রোববার রাতে বাড়ি ছেড়ে শহরে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা। রোববার ভোরে ক্যাডার বাহিনীর পাহারা বসিয়ে বসতবাড়ি দখল করে রাস্তার মাটি কেটে পুকুর বানিয়েছে স্থানীয় ভূমিদস্যু শাহাবউদ্দিন। সকালে সন্ত্রাসীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার সামছুল আলম সরকারের সহযোগিতায় রোববার বিকাল ৪টায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বাড়ি ফিরলেও রাতে নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তায় শহরে পালিয়ে গিয়ে নিকটআত্মীয়দের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ভূমিদস্যু সাহাবউদ্দিনকে ঘটনাস্থলে পেয়েও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ২০১২ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি থেকে সাহাবউদ্দিনের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দফায় দফায় ২০টিরও বেশি আবেদন করলেও কোনো কাজ হয়নি। পুলিশ, এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, ফেনী শহরতলীর কালিদহ ইউনিয়নের গোহাডুয়া গ্রামের মঞ্জুরানী তার স্বামী মিলন চন্দ্র নম, কানু লাল নম, হীরা লাল নম, কুমত লাল নম, নিধর লাল নম ও লেপাল লাল নম পৈতৃক সূত্রে ৫১০ ডিসিমেল জমির মালিক হন। এনিয়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক এনামুল হক জমির মালিকানা দাবি করে মাঠ জরিপ চলাকালে গোপনে ভূমি তার নামে মাঠ জরিপ করে নেয়। মাঠ জরিপের আমিন মঞ্জুরানী গংদের নামেও পেন্সিল দিয়ে লিখে দেয়। এ নিয়ে ২০১২ সালে এনামুল হকের বিরুদ্ধে ফেনী আমলী আদালতে মামলা দায়ের করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। মামলার কার্যক্রম চলাকালে স্থানীয় ভূমিদস্যু সাহাবউদ্দিন এনামুল হকের পক্ষ নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বাড়িঘর ভাংচুর চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবারগুলো মামলা দায়ের করলে আদালত বিরোধ পূর্ণ ভূমির ওপর সাহাবউদ্দিনকে কোনো প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। ফেনীর সিনিয়র আইনজীবী মোঃ ইব্রাহীম ও ভূমিদস্যুদের পক্ষের আইনজীবী কলমদার হায়দার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অ্যাডভোকেট আক্রামুর জামান ও কালিদহ আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলামকে নিয়ে বৈঠক হয়। কয়েক দফার বৈঠকে কাগজপত্র নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হয়। বৈঠকে সাহাবউদ্দিন তার কাগজপত্র জমা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে আইনজীবী ফি না দেয়ায় আইনজীবীরা তাদের কার্যক্রম বন্ধকরে দেয়। রোববার ভোরে সাহাবউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩০-৪০ যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর আক্রমণ করে বাড়ি ছাড়া করে। একই সঙ্গে ৪০ জন দিনমজুর নিয়ে বাড়ি ও বাড়ির রাস্তা কেটে পুকুর তৈরি করে। মঞ্জুরানীসহ ওই ৬ পরিবারের লোকজন ফেনী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ কর্মব্যস্ত থাকার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। দুুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় জেলার সহকারী পুলিশ সুুপার সার্কেল সামছুল আলমের সরকারের নির্দেশে পুলিশ গিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সাহাবউদ্দিনের ক্যাডার বাহিনী রাতের মধ্যে সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে বাড়ি ছাড়তে নির্দেশ এবং পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে সন্ধ্যা রাতে তারা আইনজীবী মোহাম্মদ ইব্রাহীম হকের চেম্বারের গিয়ে হাজির হন। এবং নারী ও কিশোরীদের শহরের নিকটজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ ব্যাপারে সামাজিক বৈঠকের উদ্যোক্তা কালিদহ আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম জানান, ফেনীর মজলিপুর গ্রামের ভূমিদস্যু সাহাবউদ্দিন ও তার ভাই নিজামউদ্দিন বিরোধপূর্ণ ভূমির মালিকানার কোনো দলিলপত্র না থাকলেও এনামুল হকের পক্ষে ইতিমধ্যে প্রায় ৪শ ডিসিমেল ভূমি দখল করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিন মুঠোফোনে জানান, এ ভূমি তার ক্রয় করা সম্পদ। সংখ্যালঘুরা তা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। তাই আমি আইনি বা পুলিশি সহযোগিতা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি।
- See more at: http://www.jugantor.com/bangla-face/2014/06/17/112152#sthash.G8HBZVcC.dpuf

No comments:

Post a Comment