Friday, June 27, 2014

পেঁয়াজের সিন্ডিকেটের পেটে যাচ্ছে ৪৪০ কোটি টাকা

পেঁয়াজের সিন্ডিকেটের পেটে যাচ্ছে ৪৪০ কোটি টাকা
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ : ২৮ জুন, ২০১৪
শুধু রোজায় পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের পেটে যাচ্ছে ৪৪০ কোটি টাকা। ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রায় ১২ টাকা দরে আমদানি করা হয়। আমদানি থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদসহ সব ধরনের খরচ এবং মুনাফা বাবদ আরও ৭ টাকা যোগ হয়ে প্রায় ১৯ টাকা খরচ পড়ছে। কিন্তু খুচরা বাজার থেকে ক্রেতারা কিনছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। এক কেজি পেঁয়াজে সিন্ডিকেটের পকেটে চলে যাচ্ছে ২০ টাকা। এই হিসাব খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।
শুধু রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা হচ্ছে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি টনে আমদানি, পাইকারি ও খুচরা এই তিন পর্যায়ে ২৩ শতাংশ মুনাফা যোগ করার পরে সিন্ডিকেট আরও অতিরিক্তি ২০ টাকা মুনাফা করছে প্রতি কেজিতে। এই হিসাবে শুধু রোজায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা কমপক্ষে ৪৪০ কোটি টাকা শুধু পেঁয়াজের ব্যবসা থেকে হাতিয়ে নেবে। বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও এর দাম বাড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সরকার।
এদিকে পেঁয়াজের আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশন থেকে ভেড়ামারা সীমান্ত এলাকায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। বিকল্প পথ থেকেও আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নিজেই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সামনে মিয়ানমার ও তুরস্কের পথ খোলা আছে। ওই দুটি দেশ থেকে আমদানির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেছেন, দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। রোজায় পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এদিকে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য সর্বোচ্চ ৫ হাজার মার্কিন ডলারের ক্যাশ এলসি খুলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ মিয়ানমার থেকে এক দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ভারত থেকে ইতিপূর্বে আমদানিকৃত পেঁয়াজের কেজি পড়েছে ১১ টাকা ৮০ পয়সা। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ব্যাংক ঋণের সুদ, বর্ডার থেকে গুদামে আনার পরিবহন ভাড়া, প্রক্রিয়াজাত বিনিষ্ট পণ্যের আর্থিক ক্ষতি, আমদানি, পাইকার ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফা এবং পরিবহন ব্যয় যোগ করলে এক কেজির মূল্য দাঁড়ায় ১৮ টাকা ৯২ পয়সা। কিন্তু তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। হিসাবে দেখা গেছে, যৌক্তিক মুনাফার পরও ভারতের মূল্য বৃদ্ধির জুজু ও রোজার চাহিদাকে জিম্মি করে কেজিতে আরও ২০ টাকা লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র।
ভারতে প্রতি মেটিক টন পেঁয়াজ আমদানির মূল্য ৩শ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে। এর আগে অবশ্য ১৫০ ডলার ছিল। কিন্তু এই মূল্য বৃদ্ধির আগেই দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৫২ মেট্রিক টন। টাকার অংকে ১৫ জুন পর্যন্ত পৌনে দুকোটি টাকার পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় পেঁয়াজের মজুদ আছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে রোজার মাসে পেঁয়াজের চাহিদা হচ্ছে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। সারা বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা আছে ২২ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ১৩ লাখ টন। ইতিমধ্যে ৯ লাখ টন আমদানি হয়েছে। ফলে পুরো বছরের চাহিদা মেটানোর মতো পেঁয়াজ দেশে রয়েছে। এছাড়া আরও পেঁয়াজ আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মিলে সারা দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
এই সময়ে ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ালেও রোজার বাজারে প্রভাব পড়ার কথা নয়। কারণ আমদানিকৃত ও দেশীয় মজুদের হিসাবে রোজার চাহিদা পূরণের পেঁয়াজ দেশের ভিতর চলে আসছে।
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা ভেড়ামারার হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ১৮ টাকা হয়েছে। কারণ এসব পেঁয়াজ বর্ধিত মূল্যে ভারত থেকে আনা হচ্ছে। ওই হাটের ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে সারা দেশে এক সপ্তাহ আগ থেকে পেঁয়াজের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত পেঁয়াজের কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা এবং দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। দেশীয় পেঁয়াজ এক কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
- See more at: http://www.jugantor.com/last-page/2014/06/28/116308#sthash.Ju7oOCd4.dpuf

No comments:

Post a Comment