Monday, June 2, 2014

ফাঁস ১০০ কোটি টাকার কন্ডোম-চক্র

ফাঁস ১০০ কোটি টাকার কন্ডোম-চক্র

condom
চিত্রদীপ চক্রবর্তী

১৪টি লরি আগেই সীমান্ত পেরিয়ে গিয়েছিল৷ ধরা পড়ে গেল ১৫ নম্বর লরিটি৷ নেহাতই সন্দেহের বশে ঢেকে রাখা বক্সের একেবারে 'রুটিন চেক' করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠল শুল্ক বিভাগের কর্মীদের৷ অতি সম্প্রতি পেট্রাপোল সীমান্তে এই লরি থেকে বাজেয়ান্ত করা হয়েছে ৪৭০টি কার্টন৷ তাতে পাওয়া গিয়েছে থরে থরে সাজানো কন্ডোমের প্যাকেট৷ ধরা পড়েছে তিন জন তদন্তে জানা গিয়েছে, দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'পরিবার সেবা'র নামে এই কন্ডোমগুলি এ রাজ্যে সরবরাহের জন্য আনা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত গাড়িভর্তি কার্টন বেআইনি ভাবে চলে যাচ্ছিল বাংলাদেশে৷ শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার (প্রিভেন্টিভ ) শৈলেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, 'ওই সংস্থার কর্তারা অবশ্য কার্টনগুলি তাঁদের বলে স্বীকার করছেন না৷ তবে আমরা ওদের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছি৷ এ ভাবে সরকারি জিনিস বাইরে পাচার করে কয়েকশো কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে৷' দিল্লির অভিযুক্ত বেসরকারি সংস্থাটির কেউ রবিবার এ বিষয়ে 'এই সময়'-এর কাছে মুখ খুলতে চাননি৷ সংস্থার সভাপতি শুভ্রা তেওয়ারিকে ই -মেল করে তাঁর জবাব চাওয়া হলেও, তিনি রাত পর্যন্ত জবাব দেননি৷

শুল্ক দপ্তর সূত্রের খবর, যে কার্টনগুলি লরি থেকে বাজেয়ান্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকার ডিলাক্স ও মিলন কন্ডোম রয়েছে৷ তাতে 'নট ফর সেল' কথাটি লেখা রয়েছে৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এইডস কন্ট্রোল রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যে কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতেই সরকারি ভর্তুকি দিয়ে এ সব কন্ডোম পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর জন্য বরাত পেয়েছিল এই সংস্থাটি৷ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিষিদ্ধপল্লিতে মাত্র এক টাকা দরে এগুলি বিক্রি করার কথা৷

এই পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত তিন জনকে গ্রেন্তার করেছেন শুল্ক দন্তরের অফিসারেরা৷ পরিতোষ দেবনাথ, স্বপন রায় এবং রফিকুল ইসলাম নামে যে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটে৷ জেরার জবাবে ধৃতরা শুল্ক অফিসারদের জানিয়েছেন, এর আগে ১৪টি লরি করে বাংলাদেশে এই 'মাল' পাচার করা হয়েছে৷ কিন্ত্ত বাংলাদেশে কেন কন্ডোম পাচার করা হচ্ছিল, তার স্পষ্ট কোনও জবাব এখনও তদন্তকারীরা পাননি৷ সহকারী কমিশনারের বক্তব্য, 'যে সংস্থার নাম আমরা জানতে পেরেছি, তাদের চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলাম৷ অথচ তারা প্যাকেটগুলো তাদের বলে স্বীকার করছে না৷ কিন্ত্ত আমাদের হাতে তার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে৷ সুতরাং তার উপর ভিত্তি করেই আমরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ এখন পর্যন্ত যা হিসেব মিলেছে , তাতে একশো কোটি টাকারও বেশি কন্ডোম পাচার করা হয়েছে ওপারে৷

কিন্ত্ত কী ভাবে সন্দেহ হল শুল্ক বিভাগের অফিসারদের? জানা গিয়েছে, সাধারণত লরিতে যারা জিনিস নিয়ে যায়, তাদের জানা থাকে, ভেতরে কী রাখা আছে৷ কিন্ত্ত এ ক্ষেত্রে যারা লরি নিয়ে আসছিল, তাদের জেরা করে জানা যায়, ভেতরে রবারের জিনিস রয়েছে৷ ফলে সন্দেহ বাড়ে শুল্ককর্তাদের৷তাঁরা বুঝতে পারেন, দিল্লি থেকে কন্ডোমগুলি আসার পর এখানেই লরিতে বোঝাই করা হয়েছিল৷

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা অবশ্য জানান, নির্বাচনের জন্য এ সব সরকারি সরবরাহের ওপর নজরদারি অনেকটা ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছিল৷ এখন আবার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে৷ তাঁর কথায়, 'শুল্ক বিভাগ চিঠি দিয়ে থাকলে আমরা বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব৷'

No comments:

Post a Comment