কিডনি বিক্রি চলছেই
বদরুদ্দোজা সুমন, ঢাকা ও এটিএম সেলিম সরোয়ার, কালাই, জয়পুরহাট
প্রকাশ : ২৮ জুন, ২০১৪
সিমরাইল গ্রামের আবদুর রহিম, পেশায় দিনমজুর। কিন্তু তাতে দিন চলছিল না। ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। উদয়াস্ত শ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফিরে যান গ্রামে। সেখানে দিনে দিনে শরীর ভাঙে রহিমের। ভাঙন রোধে চিকিৎসার জন্য ঋণ নেন রহিম। মোসলেমগঞ্জ বাজারের দাদন ব্যবসায়ী গারামতলা গ্রামের মুনছুর, শাজাহান এবং নওয়ানা গ্রামের আবদুর রশিদের কাছে তার হফ্কা ঋণ (দাদন) হয় ৪০ হাজার টাকা। আর গ্রামীণ ব্যাংকসহ আশা, ব্র্যাক ও জেআরডিএম নামক ৩টি এনজিওতে ঋণ হয়ে যায় ৬০ হাজার টাকা। সব মিলে প্রায় লাখ টাকার ঋণ। চিকিৎসা চলাবস্থায় মোটা যৌতুকে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। দিন যায়, রহিম সেরে উঠে, কিন্তু আটকে যায় ঋণ। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিচ্ছিল না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমন দিশেহারা অবস্থায় দালালের প্ররোচনায় শুধু টাকার জন্য কিডনি বেচে দেয় আবদুর রহিম। ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে ভারতের দেবীশেঠি হাসপাতালে গিয়ে রহিম তার কিডনি বিক্রি করে বাড়ি ফেরে। এরপর নগদ টাকাসহ মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। দাদন ও এনজিও ঋণ পরিশোধ করেন। এখন কোনোভাবে চলছে তার দিন। ভবিষ্যতে কি হবে তার কিছুই জানেন না রহিম।
কণ্ঠগ্রামের শহিদুলের গল্প আরও করুণ। ঋণের দায় মেটাতে দালাল তাজুলের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করলেও সে পেয়েছে মাত্র দেড় লাখ টাকা। বাকি আড়াই লাখ টাকা মেরে দিয়েছে দালাল। নয়াপাড়া গ্রামের ভুট্টুর ছেলেও দালাল তাজুলের মাধ্যমে ভারতের মেডিকা হাসপাতালে গিয়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তিতে কিডনি বেচে দিয়েছে। তবে সে পুরো টাকা পেয়েছে কীনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব ঘটনাই জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় অভাবীদের কিডনি বিক্রির ঘটনা চলছেই। অনেক হইচই সত্ত্বেও এ অপকর্ম বন্ধ হয়নি। দালালচক্র সেখানে সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য স্থানেও কিডনি ব্যবসা ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। প্রায় আড়াই বছর আগে এই অপকর্ম ঠেকাতে বিদ্যমান আইন হালনাগাদের কাজ শুরু করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতদিনেও ওই কাজ শেষ হয়নি। আর কত সময় লাগবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে কালাইয়ের ২০ গ্রামের কমপক্ষে ২৪ জন ঋণগ্রস্ত ও অভাবী মানুষের কিডনি বিক্রির তথ্য মিলেছে। এখনও নিরুদ্দেশ রয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন। এসব অস্ত্রোপচারের অধিকাংশই হয়েছে বিদেশে। যুগান্তর প্রতিনিধির কাছে গরিব মানুষগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিডনি বিক্রির কারণ হিসেবে বলেছেন হফ্কা ঋণ (দাদন) এবং এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধের কথা। ঋণের টাকা শোধ দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা কিডনি বিক্রি করেছেন। কেউ দালালচক্রের চটকদার কথায় বিভ্রান্ত হয়েছেন। কিডনি বেচাকেনায় কড়াকড়ি আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে এখন কাগজপত্র জাল করাসহ নিত্যনতুন কৌশলে এই ব্যবসা চালাচ্ছে দালালচক্র। স্থানীয় সূত্রের খবর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, কিডনি বিকল হয়ে মরণাপন্ন রোগীর প্রতিস্থাপন সেবা দরকার পড়ে। রোগী ও স্বজন যখন ছটফট করে সেই দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক। এটা খুবই মানবিক একটি ইস্যু। তুবও আইনের বাইরে গিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালানো সমর্থনযোগ্য নয়। সেবা উপযোগী পরিবেশ ও সবপক্ষের আইনি সুরক্ষার জন্যই এ সংক্রান্ত আইনটির হালনাগাদ ও বিধি প্রণয়ন করা জরুরি।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কালাই এলাকায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন। এরা কিডনি বিক্রির উদ্দেশে নিরুদ্দেশ হয়েছেন বলে সন্দেহ এলাকাবাসীর। নতুন কৌশলে এখন কিডনি বিক্রেতাদের নাম ঠিক রেখে পরিবর্তন করা হচ্ছে মূল ঠিকানা। ব্যবহার করা হচ্ছে ভুয়া বাবা-মায়ের নাম। কিডনি গ্রহীতার সঙ্গে বিক্রেতার রক্তের সম্পর্ক দেখিয়ে কিডনি গ্রহীতাদের স্ব-স্ব এলাকার ইউনিয়ন/পৌরসভা থেকে সনদ নেয়া হচ্ছে। জাল করা হচ্ছে কিডনি বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রও তৈরি করার খবর পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট তৈরির সময় পুলিশ পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিলের আগে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কিডনি বিক্রেতাদের পরিবর্তিত নতুন ঠিকানায় সশরীরে উপস্থিত দেখানো হয়। সম্প্রতি কিডনি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজনের কাগজপত্র ঘেঁটে নানারকম অসঙ্গতি দেখা গেছে। কালাই উপজেলার বোড়াই গ্রামের বাসিন্দা মোকাররমের জন্মনিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ এবং পাসপোর্টে দেখা যায়, কেবল নাম ঠিক রেখে কিডনি গ্রহীতার সঙ্গে আপন ভাইয়ের সম্পর্ক দেখিয়ে তাকে কুমিল্লা সদরের স্থায়ী বাসিন্দা দেখানো হয়েছে। এর সপক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের সনদও আছে। এভাবে বিনইল পশ্চিম গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জবুনা বেগমকে খুলনা বসুপাড়া এতিমখানা রোডের বাসিন্দা দেখানো হয়েছে। অপর ভিকটিম আবদুর রহিমকে কাগজ-কলমে ফেনী সদরের স্থায়ী বাসিন্দা দেখানো হয়েছে।
দেশের বিদ্যমান আইনে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া অন্যদের মধ্যে কিডনি আদান-প্রদান করা অবৈধ। আড়াই বছর আগে কিডনি কেলেংকারি ফাঁসের পর তড়িঘড়ি করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ১৯৯৯ হালনাগাদ ও বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ জমা দিয়েছে প্রায় দু’বছর আগে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে অজ্ঞাত কারণে উদ্যোগটি দৃশ্যপটের বাইরে চলে যায়।
মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উদ্যোগটি স্বাস্থ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের নানারকম পাল্টাপাল্টি কোয়ারির ফাঁদে অনেক দিন আটকে ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পূর্বে প্রণীত আইনের বিধি প্রণয়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রক্রিয়ায় যেতে চাইলেও আইন মন্ত্রণালয় নতুনভাবে আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেয়। এতে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।
রোববার স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আইন হালনাগাদের কাজে ভাটা পড়েনি। বিধি না থাকায় এসব অপকর্মের সুযোগ পেয়েছে স্বার্থান্বেষীরা। আসলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনটির সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক নিরূপণ, চিকিৎসকের নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। সব মিলে এ কাজটি জটিল। তবুও মন্ত্রণালয় দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য সচিব।
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মন্ত্রী বিশেষ নজর না দিলে দ্রুততার সঙ্গে সমস্যাটি সুরাহার আশা দেখছি না। তিনি জানান, ১ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সারসংক্ষেপ মন্ত্রীর দফতরে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় কিডনি বেচাকেনা চক্রের মূল হোতা আবদুস সাত্তারসহ নতুন নতুন দালালচক্রের বিরুদ্ধে অভিনব কৌশলে কিডনি কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছে। ২০১১ সালে সাত্তারসহ কয়েক দালাল গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আগের ব্যবসায় নেমেছে। সরেজমিন কালাই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরনো দালালচক্রের সঙ্গে এখন নতুন দালাল হিসেবেও অনেকে যোগ দিয়েছে। এরা বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লার ঋণগ্রস্ত অভাবী ও খেটে খাওয়া মানুষদের টার্গেট করে। এরপর মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বেচতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এদের প্রলোভনে পড়ে এখনও এলাকাছাড়া রয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন অভাবী মানুষ।
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন যুগান্তরকে বলেন, দাদন ব্যবসায়ী আর এনজিওর কিস্তির চাপে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের ঋণগ্রস্ত ও অভাবী মানুষ কিডনি বিক্রিতে ঝুঁকে পড়ছে। দালালদের প্রলোভনে পড়েও অনেকে স্বেচ্ছায় অঙ্গহানি করে বাড়ি ফিরছে। এভাবে অভাব তাড়াতে আত্মঘাতী পথ বেছে নিলেও মুক্তি মিলছে না কারোরই। মোটিভেশন করেও লাভ হচ্ছে না। এটি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তবে কিস্তির টাকা পরিশোধে কিডনি বিক্রির অভিযোগ সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংক কালাই উপজেলার এরিয়া ম্যানেজার মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিডনি বিক্রি করে আমাদের ব্যাংকের ঋণের টাকা শোধ করেছেন এমন তথ্য আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
কিডনি বিক্রি করেছেন ২৪ জন : কালাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লার ২৪ বাসিন্দা সম্প্রতি দেহের মূল্যবান অঙ্গ কিডনি বিক্রি করেছেন। এরা হলেন- বোড়াই গ্রামের মোকাররম, বেলাল উদ্দীন ও তার স্ত্রী জোসনা বেগম; বিনাইল পশ্চিম গুচ্ছগ্রামের যমুনা বেগম, সিমরাইল গ্রামের আবদুর রহিম, এনামুল, সাখাওয়াত এবং মোত্তালেব, রঘুনাথপুর গ্রামের জাকারিয়া, ভেরেণ্ডির শফিক, কণ্ঠগ্রামের শহিদুল, দুর্গাপুরের রাজিয়া, বৈরাগীর হাটের তোফাজ্জল, ভূসা গ্রামের মানিক, আঁকলাপাড়া গ্রামের আনোয়ার, টাকাহুত গ্রামের সেলিনা, উলিপুর গ্রামের আজাদুল ইসলাম ও ছারভানু; কুসুমসাড়ার মোস্তফা, জয়পুর বহুঁতি গ্রামের গোলাম হোসেনের মেয়ে শাবানা ও খাদিজা, ফুলপুকুরিয়া গ্রামের মুসা, সুড়াইল গ্রামের সাইফুল এবং কালাই পৌরসভার থুপসাড়া মহল্লার বিপ্লব হোসেন ফকির।
দালালচক্রের নৈরাজ্য : জানা গেছে, দালালচক্রের মূল হোতা কালাই উপজেলার আবদুস সাত্তার, সিরাজগঞ্জের মকবুল, ঢাকার তারেক আজম, মাহমুদ, সন্ত্রাসী কবির ও বাগেরহাটের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নতুনভাবে কিডনি কেনাবেচার দালালি শুরু করেছেন অনেকে। এদের মধ্যে রয়েছে- কালাই উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের নূরনবী, বোড়াই গ্রামের উঁকুন খোরশেদ, দুর্গাপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম, হেলাল, গাজী, টাকাহুত গ্রামের মোশাররফ, শফি, রাসেল ও শাহিন, জয়পুর বহুঁতি গ্রামের মোস্তফা ও আবদুল মান্নান, নওয়ানা গ্রামের মোশারফ এবং নারায়ণগঞ্জের মকবুল। এসব দালাল প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে নানা প্রলোভনে গরিব মানুষদের বিভ্রান্ত করে কিডনি ব্যবসা চালাচ্ছে।
বিদেশেই হচ্ছে বেশির ভাগ অস্ত্রোপচার : ২০১১ সালে দেশজুড়ে হইচই শুরু হয় পূর্বে যারা কিডনি বিক্রি করেছিল, তাদের অধিকাংশেরই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখন যাদের দালালচক্র নিয়ে যাচ্ছে তাদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে বিশেষত ভারতের বাঙ্গালোরে অবস্থিত কলম্বো-এশিয়া হাসপাতাল, রবীন্দ্র-দেবীশেঠি হাসপাতাল, মেডিকা হাসপাতাল এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে। নারায়ণগঞ্জের দালাল মকবুলের মাধ্যমে ভারতে কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে দরদামে বনিবনা না হওয়ায় এলাকায় ফিরে এসেছে কালাই উপজেলার বৈরাগীহাটের রিপন ও দুর্গাপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম।
নিরুদ্দেশ ১৩ জন : সূত্রগুলোর অভিযোগ, কিডনি বিক্রির উদ্দেশে নিরুদ্দেশ রয়েছেন কালাইয়ের কমপক্ষে ১৩ জন। এরা হলেন- বিনইল পশ্চিম গুচ্ছগ্রামের মরিয়ম, মেরিনা, শেফালি, ইটাতলা গ্রামের মোজাহারের স্ত্রী, বোড়াই গ্রামের তানজিমা, দুর্গাপুর গ্রামের আনোয়ার, সুজাউল, শাহেনা, সেলিনা ও শাওনী, জয়পুর বহুঁতি গ্রামের জাহেদা বেগম ও বায়েজিদ; পাইকপাড়ার ছাইদুর। এছাড়াও নাম না জানা আরও অনেকে এলাকা ছেড়ে গেছেন।
আরও ৬ জেলায় কিডনি বেচাকেনা! : জয়পুরহাটের ঘটনাপ্রবাহে যুগান্তরের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিডনি বিক্রির এ প্রবণতা এখন আর কেবল কালাইয়ে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের আরও অন্তত ৬টি জেলা- ঢাকা, মাগুরা, রাজশাহী, সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও বরিশালেও ঋণগ্রস্ত অভাবী মানুষ কিডনি বিক্রি করেছেন। জড়িত চক্রগুলোর সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্যের আভাস পাওয়া গেছে।
গত এপ্রিলে সিরাজগঞ্জে এক শিশুর দুটি কিডনি কেটে নেয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। অপহরণের পর থেকে ৫ দিন যাবত শিশুটি নিখোঁজ ছিল। ২৬ এপ্রিল উভয় কিডনি কাটা অবস্থায় শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় এলাকায় অভিভাবকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। ৩ মে নরসিংদীতে কিডনি পাচারকারী চক্রের হাত থেকে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। এদের বাড়িও সিরাজগঞ্জে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনুমান, এসব ঘটনার সঙ্গে কালাইয়ের কিডনি ব্যবসার যোগসূত্র থাকতে পারে।
প্রশাসন নির্বিকার : ২০১১ সালে কিডনি কেলেংকারির ঘটনা ফাঁসের পর সক্রিয় হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। এখন আবারও তা ঝিমিয়ে পড়েছে। ওই সময় কালাই থানার উপপরিদর্শক নিপেন্দ্রনাথ ঘোষ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলায় কিডনি বিক্রি দালালচক্রের মূল হোতা কালাই উপজেলার আবদুস সাত্তার, ঢাকার তারেক আজম ও বাগেরহাটের সাইফুলসহ অন্তত ১০ দালালকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল। তাদের জবানবন্দিতে কিডনি কেনাবেচায় ঢাকার নামিদামি হাসপাতাল ও নামকরা চিকিৎসকদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। কিছুদিন পর আইনের ফাঁকফোকর গলে গ্রেফতারকৃত দালালরা জামিনে বেরিয়ে আসে। সূত্রগুলো বলছে, এসব ক্ষেত্রে ঘটনার নামমাত্র তদন্ত করে পুলিশ দায়সারা একটি অভিযোগপত্র দিয়েছে। বর্তমানে কিডনি ব্যবসা ঠেকাতে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। জানা গেছে, পুনরায় কিডনি বেচাকেনা শুরু হওয়ায় দালালচক্রের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ ও ১৩ সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি কালাই থানায় মোট ৩টি মামলা করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment