বাজেটে কর ভ্যাটের জাল
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ০৬ জুন, ২০১৪
‘কালো মেঘের আড়ালে সোনালি রেখা’ দেখার মতো অপার সম্ভাবনা, প্রতিশ্রুতির বন্যা, অফুরন্ত আশার বাণী শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তার পুরো বাজেট বক্তৃতায়। তিনি জাতিকে প্রত্যাশার মোড়কে সরকারি কর্মসূচিগুলো ‘হচ্ছে, হবে’ বলেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। খুব কম ক্ষেত্রেই তিনি সুনির্দিষ্ট করেছেন। জীবনযাত্রার মান বাড়ানো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। রফতানিমুখী শিল্পে কর কমানো, অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপনে কর সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।
অন্যদিকে এবারের বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে ব্যাপকভাবে। উপজেলা, জেলা পর্যায়েও এবার করের আওতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। নতুন নতুন খাতকে মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) ও করের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী বছর থেকে ভ্যাটের আওতা আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ধনাট্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে এবার বাড়তি কর আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ির মালিকদের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া আদায়ের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। ব্যাংক জমা বাড়ি ভাড়া থেকেই সরকার আনুপাতিক হারে কর কেটে রাখবে। অনগ্রসর এলাকার যেসব কোম্পানি কর সুবিধা পায় না সেসব কোম্পানিকে করের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ করে এমন শিল্প পণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। বিড়ি-সিগারেটের ওপর নিয়মিত শুল্কের বাইরে ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে এবার ভ্যাটের হারও বাড়ানো হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এসব মিলে এবারের বাজেটে সারা দেশে কর ও ভ্যটের জাল ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। এবারের বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও পেশ করেছেন।
সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, সরকারের মন্ত্রী, সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। সংসদে বাজেট উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেন। অর্থমন্ত্রী ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা ও তার ওপরে মুজিব কোট পরে বাজেট বক্তৃতা করেছেন। তিনি কখনও বসে আবার কখনও দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল হালকা সবুজ পাড়ের ঘিয়ে রঙের শাড়ি। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার নির্ধারিত আসনে বসে বাজেট বক্তৃতা শুনেছেন।
নতুন বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটকে অবাস্তব ও এর বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই বাজেটে সম্পদ আহরণ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে সমন্বয় রাখা হয়নি। তবে বাজেটে রফতানি খাতে ও কিছু শিল্প খাতে ছাড় দেয়া ইতিবাচক।
স্বপ্নময় প্রতিশ্র“তি : অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে অনেক প্রতিশ্র“তির বাণী শুনিয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মিত হবে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হবে, রেলের অনেক উন্নয়ন হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। প্রবাসে শ্রমিক নিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্বস্থ্য খাতে আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পরিবেশ উন্নয়নে এবার ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আকার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ভাতার পরিমাণও। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করার কথাও বলা হয়েছে। সব শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, সরকারের এ ধারাবাহিকতা দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে উচ্চতর এক সোপানে পৌঁছে দেবে। তিনি আরও বলেছেন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সম্ভাবনাময় আগামী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করবে।
ভ্যাটের জাল : প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটের জাল বিস্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে। আবার নতুন অনেক খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। ২৩টি সেবা খাতে সংকুচিত ভিত্তি মূল্যে ভ্যাট কার্যকর রয়েছে। অর্থাৎ এসব সেবায় ২ থেকে ৬ শতাংশ মূসক দিতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতি হিসাবে আগামী বাজেটে বেশ কিছু সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে এসব খাতের সেবার মূল্য অনেক বেড়ে যাবে, যা মানুষের ওপর এক ধরনের দায় হিসাবে ব্যবহৃত হবে। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ, বাস, রেল সার্ভিসের ওপর বিদ্যমান ১০ শতাংশ মূসক বাতিল করে ১৫ শতাংশ মূসক কার্যকর করা হচ্ছে। এতে এসব সেবার দাম বেড়ে যাবে। এছাড়া কতিপয় সেবা যেমন মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ছবি নির্মাতা, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, ইমিগ্রেশন উপদেষ্টা, পরিবহন ঠিকাদার, এসব ক্ষেত্রে ভ্যাট সাড়ে ৪ শতাংশের বদলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাটের আওতা বেড়েছে।
অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে পূর্বের কর বাতিল করে নির্ধারিত হারে কর আরোপ করা হয়েছে। আগের নির্ধাতিত কর থেকে আরও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বিশেষ করে চিনিসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়বে।
করের জাল : বাজেটে করের আওতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে অনেককে করের আওতায় আনা হয়েছে। বাড়তি সম্পদ আছে এমন ব্যক্তিদের ওপর বেশি কর আরোপ করা হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার আয় থেকে কর আদায় নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাড়া আদায় করা হবে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। চড়া মূল্যস্ফীতির পরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সীমা বাড়ানো হয়েছে। উল্টো নতুন করদাতা শনাক্ত করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে।
পরিবেশ দূষণ করে এমন শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে গ্রিন টেক্স দিতে হবে। ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা থেকে আয়কে করের আওতায় আনা হয়েছে। জমির দলিলের ওপর ভিত্তি করে কর আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিড়ি সিগারেটের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর আরোপ করা হয়েছে। জমি কেনাবেচা করে মূলধন আয়ের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। মোবাইলের সিম প্রতিস্থাপনে ১০০ টাকা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সিমকার্ডের বিপরীতে ৩০০ টাকার কর বহাল রাখা হয়েছে।
বাজেটের আকার : প্রস্তাবিত বাজেটের আকার দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। মোট আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতের উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে আগামীতে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
টাকা আসবে যেভাবে : নতুন বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসবে রাজস্ব খাত থেকে। রাজস্ব আয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অংশ আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত খাত থেকে। অন্যান্য আয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। রাজস্ব আয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে আয়কর। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে চুক্তির কারণে পর্যায়ক্রমে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমে যাচ্ছে। এজন্য এ খাত থেকে আয়ও কমে যাচ্ছে। আগে রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বেশি আসত আমদানি শুল্ক থেকে। এবার আমদানি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়া হচ্ছে। ফলে দেশী শিল্প তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
নতুন বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর খাত থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এই করের এনবিআর খাত থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। যা মোট আয়ের ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকি ৫ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা পাওয়া যাবে এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে। কর ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে রাজস্ব পাওয়া যাবে ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ সম্পদের বাইরে বৈদেশিক অনুদান থেকে পাওয়া যাবে ৬ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে কম ধরা হয়েছে।
এনবিআর খাতের রাজস্ব আয়ের মধ্যে ভ্যাট থেকে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আমদানি শুল্ক থেকে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আয়কর খাত থেকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক থেকে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ দশমিক ৮ শতাংশ আয় হবে।
টাকা ব্যয় হবে যেভাবে : উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন এ দুটি খাতে মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি এবং অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশই অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে জোগান দেয়া হবে। বৈদেশিক খাত থেকে আসবে খুবই সামান্য। বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং বৈদেশিক অনুদান ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হবে এডিপিতে। এ খাতে মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। রাজস্ব বাজেট থেকে উন্নয়ন খাতে অর্থায়ন করা হবে ১ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্পে খরচ করা হবে ৩ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।
অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে রাজস্ব খাতে ব্যয় করা হবে ১ লাখ ২৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ২৯ হাজার ৩০৫ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন খাতের মূলধন জাতীয় ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানিতে ৩০৯ কোটি টাকা এবং ঋণের কিস্তি শোধে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় হবে ৬ দশমক ৬ শতাংশ।
ঘাটতি অর্থায়ন যেভাবে : বৈদেশিক অনুদান ছাড়া সামগ্রিক বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈদেশিক অনুদান নেয়া হচ্ছে মাত্র জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
এ ঘাটতি ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের অর্থে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে নিট বৈদেশিক ঋণ ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা নেয়া হবে। তবে বৈদেশিক ঋণ গড় হিসাবে আরও বেশি নেয়া হবে। ওই অর্থে পরিশোধ করা হবে আগের নেয়া ঋণ। আগামীতে বৈদেশিক খাত থেকে মোট ঋণ নেয়া হবে ২৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে ৮ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার ঋণ।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৯ হাজার ৮২৪ কোটি এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১১ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ১২ হাজার ৫৬ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
No comments:
Post a Comment