ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে অজিত দোবালের নিয়োগ
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে অজিত কুমার দোবাল হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ। এর আগে মুখ্য সচিব হিসেবে প্রাক্তণ আমলা নৃপেন্দ্র মিশ্রকে নিয়োগ দেন মোদি। নৃপেন্দ্র মিশ্র সর্বশেষ ভারতীয় টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
অজিত দোবাল হলেন ভারতের পঞ্চম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং তাঁর নিয়োগ থেকে ধরে নেয়া হচ্ছে ভারত বহির্মুখী নিরাপত্তার চেয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে,কারণ দোবালকে সাধারণভাবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করা হয়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার সকল প্রতিবেশিই দোবালের নিয়োগ বিশেষ মনযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশে অনেকেই অনুমান করছেন এই নিয়োগের মাধ্যমে ভারতের বহিঃগোয়েন্দা তোড়জোড় কিছুটা স্তিমিত হবে। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে এও জানা যায়, দোবালের সম্মতিতেই শিগগির মোদি মন্ত্রিসভা একজন জাতীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টাও নিয়োগ দেবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বাজপায়ির নেতৃত্বে পূর্ববর্তী এনডিএ সরকারের আমলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। পূর্ববর্তী এনডিএ সরকারের অধীনে দোবাল কাজ করছেন লাল কৃষ্ণ আদভানির অধীনে ভারতের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গড়ে তোলা ‘মাল্টি এজেন্সি সেন্টারে’র পরিচালক হিসেবে।
বর্তমান নিয়োগের পূর্বে দোবাল ছিলেন আরএসএস সমর্থিত বিশিষ্ট থিংকট্যাংক ‘বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। দোবালই ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দোবালের নিয়োগকে খুব স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছেন,কারণ এটা খুব প্রত্যাশিত ছিল।
উল্লেখ্য, বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিষয়ে খুবই আক্রমণাত্মক অবস্থানের পক্ষে নিয়মিত আলোচনা ও গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বশেষ মে মাসে প্রকাশিত হয়েছে ‘Bangladesh Migrants - A Threat to India' শীর্ষক গ্রন্থ। এই গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফ-এর প্রাক্তণ ডিজি প্রকাশ সিং। এইরূপ প্রকাশনাই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে দোবালের ভাবাদর্শিক অবস্থানকে স্পষ্ট করে।
গত শুক্রবার দোবাল আনুষ্ঠানিক শিবশংকর মেননের স্থলাভিষিক্ত হলেও ২৭ মে মোদির সঙ্গে নওয়াজ শরীফ ও রাজপাকের বৈঠকেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।৬৯ বছর বয়সী অজিত দোবালের জন্ম উত্তরখন্ডে, ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি। সামরিক অফিসার বাবার সন্তান ছিলেন। পড়ালেখা করেছেন আজমিরের রাষ্ট্রীয় মিলিটারী স্কুলে। এছাড়া, ১৯৬৭ সালে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএসসি করেছেন। ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে ১৯৬৮ সালের ব্যাচ হিসেবে পরিচিত তিনি।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে তাঁর বিশেষ দক্ষতা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে দোবালের নিয়োগকে নিশ্চিত করেছে। ভারতের গোয়েন্দা জগতে দোবালকে অবহিত করা হয় ‘মোস্ট অপারেশনাল ব্রেইন’ হিসেবে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি’র পরিচালক হিসেবে অবসর নেন তিনি। এর আগে কাজ করেছেন ১৯৮৩ থেকে পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে প্রায় ছয় বছর। এছাড়া পাঞ্জাব, উত্তর-পূর্ব ভারত ও সিকিমেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। লালডেঙ্গার নেতৃত্বে নাগাল্যান্ডে মিজো বিদ্রোহের সময় দোবাল আরাকানে যেয়ে ৬ জন প্রধান মিজো কমান্ডের মধ্যে ৫ জনকেই পক্ষ পরিবর্তন করাতে সক্ষম হন। যার ফলে লালডেঙ্গা দিল্লির সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছিলেন।
দোবাল ভারতের প্রথম পুলিশ অফিসার যিনি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক ‘কৃর্তিচক্র’ পেয়েছেন। ১৯৮৯ সালে পাঞ্জাবে শিখ বিদ্রোহ দমনে অবদানের জন্যই তাকে কৃর্তিচক্র দেয়া হয়। ‘অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার’-এর পাশাপাশি পাঞ্জাবে খালিস্তানপন্থীদের কাছ থেকে রুমানিয়ার কূটনীতিবিদ লিভিয়ু রাদুকে উদ্ধার অভিযানেও নেতৃত্ব দেন দোবাল। ১৯৭১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ভারতীয় বিমানের ১৫ দফা হাইজ্যাকিংয়ে প্রতিবারই হাইজ্যাকারদের সাথে দরকষাকষিতে দোবাল সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। সিকিমের ভারতভুক্তিতেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দোবালের কাছে এখন থেকে ‘র’ এবং আইবি উভয় প্রতিষ্ঠানকে রিপোর্ট করতে হবে। উপরন্তু, দেশটির নিউক্লিয়ার কমান্ড অথরিটির নির্বাহী পরিষদের প্রধান হিসেবেও কাজ করবেন তিনি।
No comments:
Post a Comment