Thursday, May 29, 2014

কুমার পল্লীর লক্ষ্মীপটের শিল্পীদের কথা

কুমার পল্লীর লক্ষ্মীপটের শিল্পীদের কথা
ম্দাারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পালপাড়ায় বা কুমারপল¬ীতে প্রায় চার শ’ বছর ধরে পটের ছবি আঁকা হয়। এ ধারা চলে আসছে বংশপরম্পরায়। বিশ বছর বয়সী প্রতিমা পাল জানান, ভোর ৫টায় তিনি সরা আঁকতে বসেন। রাত ১২টা পর্যন্ত এঁকে যেতে হয়। দুর্গাপূজার পর পরই লক্ষ্মীপূজা ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস সরাচিত্র তৈরি করার সময়, আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা তারপরই লক্ষ্মীপূজা। ফলে এ কয়টা দিন পরিবারের সবাইকে পটে ছবি আঁকতে হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পট বিক্রেতারা বায়না করে যান। মোটামুটি তিন-চারদিনের মধ্যে সরা তৈরি করে দিতে হয়। মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ জেলার আশপাশ থেকেই সাধারণত অর্ডারগুলো আসে। প্রতিমা পাল বলেন, বাবা যোগেন্দ্রনাথ পাল মাটি কেটে আনেন, মাটির সরাগুলো তৈরি করেন মা পূর্ণিমা পাল। মাটি থেকে সরা তৈরি পর্যন্ত মা রান্নাবান্নাসহ সংসার সামলে সরা পোড়ানো কাজে খুব কষ্ট করেন। আমি আর ছোট বোন চম্পা সরা রেডি করি, বাবা ফাইনাল টাচ দিয়ে দেন। পট রং করার জন্য সাদা অক্সাইড পাউডারের সঙ্গে বিরজা মিশিয়ে গ্রাউন্ড তৈরি করে দিতে হয়। তার ওপর একটু কালো ও হালকা রং ব¬ু গ্রাউট করে। এর ওপর হলুদ রং দিয়ে লক্ষ্মীর চরিত্রগুলো আঁকে পট শিল্পীরা। এভাবে পনেরো বারের মতো লক্ষ্মী বা দুর্গার সরা আঁকা শেষ হয়। শেষে বার্নিশ কোট দিতে হয়। প্রতিমা পাল জানান, ‘আমার দাদাঠাকুর অসীম পাল বিভিন্ন গাছের কষ দিয়ে রং তৈরি করতেন। ইটের গুঁড়া হলুদ পুঁইশাকের বীজের কষ থেকে রং নিয়ে বাদি গাছের আঠা, তেঁতুলের বীজের কষ মিশিয়ে রং তৈরি করতেন। আমরাও কিছু কিছু ব্যবহার করি। আমার দাদাঠাকুর অসীম পাল তাঁতিহাঁটির সেরা প্রতিমা শিল্পী। তার কাজে আমাদের খালিয়ার আদি প্রতিমা দেখতে পাবেন। তিনি এখনও নিজের তৈরি রং ব্যবহার করেন প্রতিমার গায়ে। আমরা ছাগলের পশম দিয়ে তুলি তৈরি করি। ছাগলের পশমের তুলির কাজ হবে খুব সরু। দেখতে খুব ভাল লাগে। এই খালিয়ার দুর্গার পটও লক্ষ্মীর পট একমাত্র আমার দাদাই আঁকেন। দাদা ভাল প্রতিমা আঁকতে পারেন। দুর্গার পট কম বিক্রি হয়। দাদার আঁকা দুর্গার পট ঢাকার শিল্পী সাহিত্যিকরা কিনে সংগ্রহ করেন। দাদা বছরের অন্য সময় প্রায় বেকার থাকেন। তিনি এখন থাকেন টেকেরহাটে। মা-দিদি লক্ষ্মীপূজায় বেড়াতে এসে আমাদের সঙ্গে নেন।’ পালবাড়িতে তিনটি পরিবার সরাপটের ছবি আঁকেন। আঁকা লক্ষ্মীর সরা যত চলে, ডাইসে করা সরা ততটা চলে না। তবু চাহিদার কারণে কিছু কিছু তৈরি করে। সরাচিত্র পাওয়া যায় টেকেরহাট, রাজৈর, মাদারীপুর, ভাংগা, ফরিদপুর, শিবচর, কবিরাজপুর, কালকিনি, মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী, ঘাঘর, গোপালগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার হাটে বাজারে। দুর্গাপূজার পরপরই এসব এলাকার হাটে বাজারে পাওয়া যায়। তাঁতিহাঁটি থেকে মাদারীপুর যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। মাদারীপুর বাজারে লক্ষ্মীর সরা বিক্রিহয় ৫০ টাকায়। কারিগররা সরা বানিয়ে পান ৩৫ টাকা। ২/৩ মাস সরা তৈরির কাজ করে বাকি সময় হাঁড়িপাতিল বানান। এখন এ্যালুমিনিয়াম আর পস্টিকের যুগ। মাটির হাঁড়িকুড়ি চলে না। পটের কারিগর এই মেয়েদের দুঃখ-দুর্দশা শোনার সময় তো কারও নেই!

নৃপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment