Saturday, May 31, 2014

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে, বেড়েছে অন্যান্য খাদ্যশস্যের

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে, বেড়েছে অন্যান্য খাদ্যশস্যের


মাঠে ধান কাটা ও ঝাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত ফিলিপাইনের কৃষকেরা l ছবি: বিশ্বব্যাংকআন্তর্জাতিক বাজারে আবার গম, ভুট্টা, চিনি, সয়াবিন প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদের জন্য সুখবর হলো, একই সময়ে চালের দাম ১২ শতাংশ কমেছে।
চলতি বছরের প্রথম চার মাস জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে সার্বিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম আগের চার মাসের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গম ও ভুট্টার দাম। এই দুটি পণ্যের মূল্য যথাক্রমে ১৮ ও ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালের আগস্টের পর এই প্রথম এমনটি ঘটেছে। বিশ্বব্যাংক এই তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে চাহিদা বৃদ্ধি, শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্রে খরা পরিস্থিতি ও ইউক্রেন সংকটের কারণেই মূলত অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদেরা বলেন, ২০১৩ সালে বিশ্বে বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তবে তাঁরা চলতি ২০১৪ সালে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন ও ব্যাপক হারে মজুত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিশ্বব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে অব্যাহত খরায় উৎপাদনে হ্রাস ও দেশে দেশে আমদানি চাহিদা বৃদ্ধি (প্রধানত চীনে) পাওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
একই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের ব্রেড বাস্কেট ‘খাদ্যভান্ডার’ খ্যাত ইউক্রেনে রাজনৈতিক সংকট-অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রার বিনিময় হার পড়ে যাওয়াটাও আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। কারণ, দেশটি হলো বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম গম ও তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা রপ্তানিকারক। সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেই যখন আগের বছরের তুলনায় গমের দাম ৩৭ শতাংশ ও ভুট্টার দাম ৭৩ শতাংশ বেড়ে যায়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তো প্রভাব পড়বেই। সে অনুযায়ীই বিশ্ববাজারে আগের প্রান্তিক অর্থাৎ গত বছরের শেষ তিন মাসের চেয়ে গমের দাম ১৮ শতাংশ ও ভুট্টার দাম ১২ শতাংশ বেড়েছে।
তবে ইউক্রেনকে ঘিরে বিরাজমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা অনিশ্চয়তায় রূপ নিলে ভবিষ্যতে দেশটির উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হবে—এমন আশঙ্কাতেই পণ্য দুটির দাম বাড়ে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১২ সালের গ্রীষ্মে বিশ্বের প্রধান খাদ্যপণ্যগুলোর দাম বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পরে আর কখনো এতটা বেশি দেখা যায়নি।’
আন্তর্জাতিক বাজারে অন্য খাদ্যপণ্যগুলোর মধ্যে আগের তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চিনির দাম ১৩ শতাংশ ও সয়াবিনের ৬ শতাংশ বেড়েছে।
একই সময়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামও ৩ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১০৪ মার্কিন ডলারে উঠেছে।
এদিকে জাতিসংঘও (ইউএন) গত মাসে জানিয়েছে, গত মার্চে বিশ্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এই সংস্থাও তখন বলেছে, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রধান দেশগুলোতে বৈরী আবহাওয়া ও ইউক্রেন সংকটের কারণেই মূলত দাম বেড়েছে।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তাদের মার্চ মাসের খাদ্যসূচকেও গত বছরের মে মাসের পর থেকে খাদ্যপণ্যের দাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্য উল্লেখ করেছে।
এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বের সবচেয়ে ঝঁুকিপূর্ণ দেশগুলোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এতে খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা ও সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্যকে কেন্দ্র করে ৩৭টি দেশে ৫১টি দাঙ্গার ঘটনা দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আনা রেভেঙ্গা বলেন, ‘আগামী কয়েক মাস আমাদের খাদ্যপণ্যের দামের ওপর নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে দাম বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী স্বল্প আয়ের মানুষজনের ওপর অতিরিক্ত প্রভাব পড়ছে না।’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতেও বলা হয়েছে, ‘খাদ্যের দাম সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াবে। সে জন্য খাদ্যের দাম বাড়ার প্রভাব মোকাবিলায় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।’
সূত্র: বিশ্বব্যাংক ও এএফপি

No comments:

Post a Comment