Saturday, May 31, 2014

সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রী ও কন্যাকে কুপিয়ে হত্যা ॥ রক্তমাখা বঁটি উদ্ধার পারিবারিক কলহের জের ॥ ঘাতক গ্রেফতার

সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রী ও কন্যাকে কুপিয়ে হত্যা ॥ রক্তমাখা বঁটি উদ্ধার
পারিবারিক কলহের জের ॥ ঘাতক গ্রেফতার
নিজস্ব সংবাদদাতা, সিদ্ধিরগঞ্জ, ৩১ মে ॥ স্ত্রী ময়না বেগম ও মেয়ে নূরজাহান আক্তার স্বপ্নাকে খুন করেছে সুমন মিয়া (৩৮)। পারিবারিক কলহের জের ধরে সুমন মিয়া মা-মেয়েকে ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ৩টায় সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল মক্কিনগর এলাকায়। পুলিশ শনিবার ভোরে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ ঘাতক সুমন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, হীরাঝিলের মক্কিনগর এলাকায় ময়না বেগম (৩২) তার বড় বোন হোসনার টিনশেড বাড়িতে গত দুই মাস ধরে স্বামী সুমন মিয়া (৩৮), মেয়ে স্বপ্না (১৪) ও ছেলে ইমনকে (৭) নিয়ে ভাড়া থাকত। প্রতিবেশীরা জানায়, শুক্রবার রাতে ময়নার সঙ্গে সুমনের পারিবারিক কলহের জের ধরে কথাকাটাকাটি ও পরে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর সকলেই ঘুমিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে রাত ৩টার দিকে সুমন মিয়া ঘরে থাকা ধারালো বঁটি দিয়ে ময়না বেগমকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মেয়ে স্বপ্না ঘটনাটি দেখে চিৎকার করে খালা, খালা, মাকে বাঁচাও, বাঁচাও বললে, সুমন স্বপ্নাকেও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই মা ও মেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ সময় ঘরে থাকা ছোট ছেলে ইমন প্রাণের ভয়ে ঘরের এক কোণে আশ্রয় নেয়। পরে আশপাশের লোকজন কান্নাকাটির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে এসে সুমন যাতে পালাতে না পারে সেজন্য বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। সুমনও ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে। শনিবার ভোরে সুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানালা ভেঙ্গে দরজা খুলে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা একটি বঁটি উদ্ধার করে।
নিহত ময়না বেগমের বড় বোন হাসিনা জানায়, সুমন মিয়া গ্রামের বাড়িতে কাপড়ের ব্যবসা করত। সে নিয়মতিভাবে পরিবারকে খাবার খরচ দিত না। সপ্তাহে ২-১ দিন ময়নার স্বামী সুমন গ্রামের বাড়ি আখাউড়া থেকে এখানে আসত। কোন কোন সপ্তাহে একবারও এখানে আসত না। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে তার বোন ময়নার প্রায়ই ঝগড়া-ঝাটি হতো। শুক্রবারও এ নিয়ে উভয়ের মাঝে ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের ধরেই সুমন তার স্ত্রী ময়না ও মেয়ে স্বপনাকে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত ময়নার বাবার বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার ছয়আনি গ্রামে। ঘাতক স্বামী সুমনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার রামধননগর এলাকায়।
সকালে ঘটনাস্থলে সরেজমিন গিয়ে মেঝেতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় এলাকার শত শত লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। এ সময় নিহত ময়না বেগমের বৃদ্ধা মা আমেনা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। নিহতের আত্মীয়স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে পিবিআইর ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত দল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ এবং ঘটনাস্থলটি নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখেন। এ ঘটনায় নিহত ময়নার বোন হোসনা বেগম বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলাউদ্দিন জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরেই এ হত্যাকা- ঘটেছে। ঘাতক সুমনকে আটক করা হয়েছে।
একই ঘরে বাবা সুমন মিয়া, মা ময়না ও বোন স্বপ্নার সঙ্গে ইমনও ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙ্গে দেখে তার বোন বাবাকে বলছে, আব্বু মাকে কাইটো না, মাকে কাইটো না। বোন চিৎকার করে বলছে, খালা, খালা, আব্বু মাকে মেরে ফেলছে। মাকে বাঁচাও। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আব্বু বোনকেও কোপাতে থাকে। পরে ইমন হতভম্ব হয়ে নিজে বাঁচার জন্য এক কোণে বসে থাকে। পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
ঘাতক সুমন মিয়া তার স্ত্রী ময়না ও মেয়ে স্বপ্নাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করার পর কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে থাকে। ঘটনার সময় প্রতিবেশীসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। সুমন মিয়া যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারে সে জন্য প্রতিবেশী হাবিব মিয়ার স্ত্রী রেনু বেগম বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। এর পর প্রতিবেশীরা থানা পুলিশকে খবর দেয়। এ হত্যাকা-ের খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আলাউদ্দিন ও সেকেন্ডে অফিসার মনিরসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায়। পরে ওসি আলাউদ্দিন ঘাতক সুমন মিয়ার সঙ্গে কৌশলে কথাবার্তা বলে কিছুটা বশে আনে। এর পর সুমন মিয়া জানালার পাশে আসলে সেকেন্ড অফিসার তাকে ঝাঁপটে ধরে হাতকড়া পরিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে আটকিয়ে দেয়। সুমন এর আগে ঘরটি ভেতর দিয়েও বন্ধ করে দিয়েছিল। ছোট ছেলে ইমন ঘরের এক কোণে বসে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ অন্য জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে ঢুকে ইমনকে অক্ষত অবস্থায় এবং নিহত মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ঘাতক স্বামী সুমন মিয়াকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যায়।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment