জামায়াতের বিচার প্রশ্নে অহেতুক বিতর্ক ॥ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
০ ‘সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে’ ॥ নির্মূল কমিটি
০ সোমবার মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা গণজাগরণ মঞ্চের
০ আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীলদের
০ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ৩৫ সংগঠনের
০ সোমবার মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা গণজাগরণ মঞ্চের
০ আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীলদের
০ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ৩৫ সংগঠনের
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আইসিটির আইনে জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার আপাতত সম্ভব নয়’ বলে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকের মন্তব্য দিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শক্তি। একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তি ও সংগঠন মন্ত্রীর এহেন অবস্থানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে সরকার জামায়াতের বিচারের পথ থেকে সরে আসছে কিনা? গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, আইনমন্ত্রীর নেতিবাচক মন্তব্যে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। এ বিচারের ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের কালক্ষেপণ জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান শক্তিশালী করবে, একই সঙ্গে তা আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য হবে আত্মঘাতী। আইনমন্ত্রীর অবস্থানের প্রতিবাদে শাহবাগে মিছিল সমাবেশ থেকে আগামী সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, আমি আগেও বলেছি এখনও বলব জামায়াতের বিচারের জন্য আইনের বিভিন্ন দিক নতুন করে দেখার দরকার আছে। অন্যথায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জামায়াতের বিচার থেকে সরকার সরে আসছে কিনা? কিংবা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন আলাপ-আলোচনা হতে পারে না। কোন সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা আপাতত সম্ভব নয় বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনটি কারণ উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি হিসেবে সাত মাস ধরে তদন্ত হয়েছে। দুই মাস ধরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতির কাজ চলছিল। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর এ বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কি তাহলে জামায়াতের বিচার থেকে সরে আসছে? আইনমন্ত্রী যে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো প্রথমত. আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই। দ্বিতীয়ত. জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়ে একটি মামলা ইতোমধ্যে আপীল বিভাগে আছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোন অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোন প্রভাব পড়বে কি না, তা দেখতে হবে। এ পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে। এখন এসব অন্য পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে সেক্ষেত্রে সময় লাগবে। তৃতীয়ত. অন্য আইনে বলা আছে, যদি কোন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি অপরাধ করে, তবে ওই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তা বা নিয়ন্ত্রককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হবে। জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তাঁদের ইতোমধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের আবার শাস্তি হলে তা আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না, তা বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী। আনিসুল হক অবশ্য দাবি করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর, কিন্তু অবশ্যই আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান প্রতিপালন করে। বিচার যাতে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য এসব বিষয়ে আইনের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবকিছু বিবেচনা করে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাঠগড়াায় দাঁড় করানোর বিষয়টি আরও ভাবনা-চিন্তা করে নিতে হবে। এখন সেটার সময় নয়। আজ জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হবে, কাল আইন পরিবর্তন করা হবে, আমি এর পক্ষে নই। আমাকে সারা পৃথিবীতে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কাদের মোল্লার বিষয়ে। কোন বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলুক, তা আমি চাই না।
তবে হঠাৎ সরকারের এ মন্ত্রীর জামায়াতের বিচার ও আইসিটি আইন সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো।
একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমে যে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ জ্ঞাপন করেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।’ শুক্রবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৯ ও ৩০ মে গণমাধ্যমে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, ১) আইসিটির আইনে সংগঠনের বিচারের কথা বলা হলেও শাস্তির কোনও উল্লেখ না থাকার কারণে এ মুহূর্তে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে না, ২) সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত একটি মামলা বিচারাধীন থাকায় এ মুহূর্তে আইসিটিতে জামায়াতের বিচার করা হলে ওই মামলায় প্রভাব পড়তে পারে এবং ৩) জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তাদের কয়েকজনের বিচার ও শাস্তি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার তাদের শাস্তি হলে আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এসব বিবেচনায় আইনমন্ত্রী এখনই জামায়াতের বিচার না করার পক্ষে তার অভিমত গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, একাত্তরের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর নেতিবাচক মন্তব্যে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করি ’৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততার কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসিটিতে যে বিচার প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে আইনমন্ত্রীর অজ্ঞতাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিকর এ বক্তব্যের কারণে তা বিঘিœত হবে। একই সঙ্গে গোটা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিলম্বিত করার জন্য জামায়াতে ইসলামী দেশে-বিদেশে যে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য সেক্ষেত্রেও ইন্ধন যোগাবে।
আমরা জানি মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে এ বিচারের ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা সব সময় উল্লেখ করেছেন। গত ২২ বছর ধরে আমরা ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য দলের বিচারের কথা বলছি। ব্যক্তির পাশাপাশি দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি সংগঠন এবং এসব দলের ঘাতক বাহিনীসমূহের বিচার নাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি প্রহসনে পরিণত হবে। ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের যেসব নেতার বিচার হয়েছে তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। জামায়াতের দলীয় দর্শন গণহত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। দলের বিচারের ক্ষেত্রে শাস্তি কী হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারকদের, আইনমন্ত্রীর নয়। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের জন্য অপরাধী সংগঠনের বিচার কিভাবে হয়েছে, কিভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে যদি আইনমন্ত্রী জ্ঞাত থাকতেন তাহলে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না। সুপ্রীমকোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত আপীলের সঙ্গে আইসিটিতে যে অপরাধে জামায়াতের বিচার হবে তার কোন সম্পর্ক নেই। চট্টগ্রামের আদালতে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচার চলাকালে আইসিটিতে তার বিচার চলমান ছিল। জামায়াতের আইনজীবী কখনও বলেননি এক ব্যক্তির দুই আদালতে একসঙ্গে বিচার হতে পারে না। কোন সংগঠন যদি একাধিক অপরাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হতে পারে, এটি সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, এজন্য আইনজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের কাছে বিচারপ্রত্যাশী সমগ্র জাতি, বিশেষভাবে ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের আকুল আহ্বান হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সব বাধা ও বিভ্রান্তি দ্রুত অপসারণ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং অঙ্গীকার পূরণ করুন। এ বিচারের ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের কালক্ষেপণ জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান শক্তিশালী করবে এবং একই সঙ্গে তা আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক অজয় রায়, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, ড. নুরন নবী, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, অধ্যাপিকা হামিদা বানু, শিল্পী হাশেম খান, স্থপতি রবিউল হুসাইন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, কলাম লেখক মমতাজ লতিফ, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, শিল্পী আবুল বারক আলভী, মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল, কাজী মুকুল, অধ্যাপক গাজী সালেহউদ্দিন, সাব্বির রহমান খান, এ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, কলাম লেখক সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ড. মোহাম্মদ সেলিম, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) ফজলুল হক, লেখক আলী আকবর টাবি, ডা. সৈয়দ শাফিকুল আলম, অধ্যাপিকা জারিনা রহমান খান, সাংবাদিক জুলফিকার আলি মানিক, ডা. শেখ বাহারুল আলম, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব, ডা. নুজহাত চৌধুরী, অধ্যাপক মোঃ আয়েশ উদ্দিন, এ্যাডভোকেট বায়েজিদ আক্কাস, সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, মহব্বত হোসেন খান, প্রভাষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাংবাদিক শওকত বাঙালী, এ্যাডভোকেট কেএম আবদুস সালাম, কবি জয়দুল হোসেন, খোন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ্, গোলাম মোহাম্মদ ঈদু, আবদুল গফ্ফার, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, শামসুল আলম মঞ্জু, মশিউর রহমান খোকন, এ্যাডভোকেট হাবিবউল্লা চৌধুরী, চন্দন শীল ও আনসার আহমদউল্লা।
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। যেখান থেকে আগামী ২ জুন আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। ওইদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ ব্যানারে তারা এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকী আক্তার, শামীম, সনাতন উল্লাহ ও শিবলী হাসান। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে ইমরান বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের বশে তিনি এসব কথা বলছেন। তিনি যে তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তা অমূলক। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। তার এ বক্তব্য গোটা জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আইনমন্ত্রীকে সংবিধান পুনরায় পড়ার উপদেশ দিয়ে তার উদ্দেশে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর ৩ ধারা সংশোধন করে সংগঠনের বিচারের সুযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আইনমন্ত্রী হয়ে কিভাবে এমন অযৌক্তিক বক্তব্য প্রদান করেন। এ আসলে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের নামান্তর। চট্টগ্রামেও আইনমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল সমবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত এবং এর নেতাদের বিচারে সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থানে অসন্তোষ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা সরকারকে যেকোন ধরনের কূটকৌশল পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। নগরীর চেরাগি চত্বর থেকে মিছিল বের করে গণজাগরণ মঞ্চ। মিছিলটি নগরীর মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবারও চেরাগি চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব শরীফ চৌহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের যুগ্ম সম্পাদক জয় সেন, যুব মৈত্রীর চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কায়সার আলম, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুজন বৈষ্ণব, জেলা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি পার্থ প্রতিম, সাবেক ছাত্রনেতা ইসমাইল আজাদ শাকিল, সংস্কৃতিকর্মী শিমুল দত্ত। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, আমরা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর আশ্বস্ত হয়েছিলাম। একাত্তরের ঘাতকদের একের পর এক ফাঁসির রায় আমাদের আশান্বিত করেছিল। খুনী-রাজাকারদের দল জামায়াতের বিচারের জন্য যখন তদন্ত শুরু হয়েছিল তখন আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। বক্তারা আরও বলেন, দেশের মানুষের বহু আকাক্সিক্ষত যুদ্ধাপরাধীর বিচার যেন এখন এক কূটকৌশলের খপ্পড়ে পড়েছে। নিজামী, সাঈদীর রায় ঘোষিত না হওয়া, জামায়াতের বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের মানুষকে হতাশ করেছে। আমরা যেন আবারও অন্ধকার যুগে ফিরে যাচ্ছি। রাজাকারমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যেন আবারও সুদূরপরাহত হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জামায়াতের বিচার নিয়ে কোন মারপ্যাঁচ এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন তালবাহানা শুধু সরকারের জন্য নয়, দেশের জন্যও বিপদ ডেকে আনবে। রাজাকাররা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলে তারা আবারও এদেশকে পাকিস্তান বানিয়ে ছাড়বে।
মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছে প্রগতিশীল ৩৫টি সংগঠন। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মন্ত্রীর এ বক্তব্য দূরভিসন্ধিমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, আমরা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর আশ্বস্ত হয়েছিলাম। একাত্তরের ঘাতকদের একের পর এক ফাঁসির রায় আমাদের আশান্বিত করেছিল। খুনী-রাজাকারদের দল জামায়াতের বিচারের জন্য যখন তদন্ত শুরু হয়েছিল তখন আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। মন্ত্রীর বক্তব্য জাতিতে ক্ষুব্ধ করেছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। যুক্ত বিবৃতি দেয়া সংগঠনের মধ্যে আছে প্রজন্ম ’৭১, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, গৌরব ’৭১, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, চেতনা ’৭১, জাগ্রত জনতা, অপরাজেয় বাংলা, কবিতা পরিষদ, বজ্রকণ্ঠ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, শহীদ রাসেল স্মৃতি পরিষদ, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম ও স্লোগান ’৭১।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, আমি আগেও বলেছি এখনও বলব জামায়াতের বিচারের জন্য আইনের বিভিন্ন দিক নতুন করে দেখার দরকার আছে। অন্যথায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জামায়াতের বিচার থেকে সরকার সরে আসছে কিনা? কিংবা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন আলাপ-আলোচনা হতে পারে না। কোন সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা আপাতত সম্ভব নয় বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনটি কারণ উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি হিসেবে সাত মাস ধরে তদন্ত হয়েছে। দুই মাস ধরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতির কাজ চলছিল। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর এ বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কি তাহলে জামায়াতের বিচার থেকে সরে আসছে? আইনমন্ত্রী যে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো প্রথমত. আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই। দ্বিতীয়ত. জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়ে একটি মামলা ইতোমধ্যে আপীল বিভাগে আছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোন অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোন প্রভাব পড়বে কি না, তা দেখতে হবে। এ পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে। এখন এসব অন্য পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে সেক্ষেত্রে সময় লাগবে। তৃতীয়ত. অন্য আইনে বলা আছে, যদি কোন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি অপরাধ করে, তবে ওই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তা বা নিয়ন্ত্রককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হবে। জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তাঁদের ইতোমধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের আবার শাস্তি হলে তা আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না, তা বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী। আনিসুল হক অবশ্য দাবি করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর, কিন্তু অবশ্যই আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান প্রতিপালন করে। বিচার যাতে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য এসব বিষয়ে আইনের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবকিছু বিবেচনা করে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাঠগড়াায় দাঁড় করানোর বিষয়টি আরও ভাবনা-চিন্তা করে নিতে হবে। এখন সেটার সময় নয়। আজ জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হবে, কাল আইন পরিবর্তন করা হবে, আমি এর পক্ষে নই। আমাকে সারা পৃথিবীতে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কাদের মোল্লার বিষয়ে। কোন বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলুক, তা আমি চাই না।
তবে হঠাৎ সরকারের এ মন্ত্রীর জামায়াতের বিচার ও আইসিটি আইন সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো।
একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমে যে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ জ্ঞাপন করেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।’ শুক্রবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৯ ও ৩০ মে গণমাধ্যমে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, ১) আইসিটির আইনে সংগঠনের বিচারের কথা বলা হলেও শাস্তির কোনও উল্লেখ না থাকার কারণে এ মুহূর্তে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে না, ২) সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত একটি মামলা বিচারাধীন থাকায় এ মুহূর্তে আইসিটিতে জামায়াতের বিচার করা হলে ওই মামলায় প্রভাব পড়তে পারে এবং ৩) জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তাদের কয়েকজনের বিচার ও শাস্তি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার তাদের শাস্তি হলে আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এসব বিবেচনায় আইনমন্ত্রী এখনই জামায়াতের বিচার না করার পক্ষে তার অভিমত গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, একাত্তরের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর নেতিবাচক মন্তব্যে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করি ’৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততার কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসিটিতে যে বিচার প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে আইনমন্ত্রীর অজ্ঞতাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিকর এ বক্তব্যের কারণে তা বিঘিœত হবে। একই সঙ্গে গোটা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিলম্বিত করার জন্য জামায়াতে ইসলামী দেশে-বিদেশে যে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য সেক্ষেত্রেও ইন্ধন যোগাবে।
আমরা জানি মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে এ বিচারের ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা সব সময় উল্লেখ করেছেন। গত ২২ বছর ধরে আমরা ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য দলের বিচারের কথা বলছি। ব্যক্তির পাশাপাশি দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি সংগঠন এবং এসব দলের ঘাতক বাহিনীসমূহের বিচার নাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি প্রহসনে পরিণত হবে। ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের যেসব নেতার বিচার হয়েছে তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। জামায়াতের দলীয় দর্শন গণহত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। দলের বিচারের ক্ষেত্রে শাস্তি কী হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারকদের, আইনমন্ত্রীর নয়। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের জন্য অপরাধী সংগঠনের বিচার কিভাবে হয়েছে, কিভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে যদি আইনমন্ত্রী জ্ঞাত থাকতেন তাহলে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না। সুপ্রীমকোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত আপীলের সঙ্গে আইসিটিতে যে অপরাধে জামায়াতের বিচার হবে তার কোন সম্পর্ক নেই। চট্টগ্রামের আদালতে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচার চলাকালে আইসিটিতে তার বিচার চলমান ছিল। জামায়াতের আইনজীবী কখনও বলেননি এক ব্যক্তির দুই আদালতে একসঙ্গে বিচার হতে পারে না। কোন সংগঠন যদি একাধিক অপরাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হতে পারে, এটি সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, এজন্য আইনজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের কাছে বিচারপ্রত্যাশী সমগ্র জাতি, বিশেষভাবে ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের আকুল আহ্বান হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সব বাধা ও বিভ্রান্তি দ্রুত অপসারণ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং অঙ্গীকার পূরণ করুন। এ বিচারের ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের কালক্ষেপণ জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান শক্তিশালী করবে এবং একই সঙ্গে তা আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক অজয় রায়, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, ড. নুরন নবী, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, অধ্যাপিকা হামিদা বানু, শিল্পী হাশেম খান, স্থপতি রবিউল হুসাইন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, কলাম লেখক মমতাজ লতিফ, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, শিল্পী আবুল বারক আলভী, মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল, কাজী মুকুল, অধ্যাপক গাজী সালেহউদ্দিন, সাব্বির রহমান খান, এ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, কলাম লেখক সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ড. মোহাম্মদ সেলিম, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) ফজলুল হক, লেখক আলী আকবর টাবি, ডা. সৈয়দ শাফিকুল আলম, অধ্যাপিকা জারিনা রহমান খান, সাংবাদিক জুলফিকার আলি মানিক, ডা. শেখ বাহারুল আলম, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব, ডা. নুজহাত চৌধুরী, অধ্যাপক মোঃ আয়েশ উদ্দিন, এ্যাডভোকেট বায়েজিদ আক্কাস, সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, মহব্বত হোসেন খান, প্রভাষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাংবাদিক শওকত বাঙালী, এ্যাডভোকেট কেএম আবদুস সালাম, কবি জয়দুল হোসেন, খোন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ্, গোলাম মোহাম্মদ ঈদু, আবদুল গফ্ফার, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, শামসুল আলম মঞ্জু, মশিউর রহমান খোকন, এ্যাডভোকেট হাবিবউল্লা চৌধুরী, চন্দন শীল ও আনসার আহমদউল্লা।
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। যেখান থেকে আগামী ২ জুন আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। ওইদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ ব্যানারে তারা এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকী আক্তার, শামীম, সনাতন উল্লাহ ও শিবলী হাসান। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে ইমরান বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের বশে তিনি এসব কথা বলছেন। তিনি যে তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তা অমূলক। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। তার এ বক্তব্য গোটা জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আইনমন্ত্রীকে সংবিধান পুনরায় পড়ার উপদেশ দিয়ে তার উদ্দেশে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর ৩ ধারা সংশোধন করে সংগঠনের বিচারের সুযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আইনমন্ত্রী হয়ে কিভাবে এমন অযৌক্তিক বক্তব্য প্রদান করেন। এ আসলে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের নামান্তর। চট্টগ্রামেও আইনমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল সমবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত এবং এর নেতাদের বিচারে সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থানে অসন্তোষ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা সরকারকে যেকোন ধরনের কূটকৌশল পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। নগরীর চেরাগি চত্বর থেকে মিছিল বের করে গণজাগরণ মঞ্চ। মিছিলটি নগরীর মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবারও চেরাগি চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব শরীফ চৌহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের যুগ্ম সম্পাদক জয় সেন, যুব মৈত্রীর চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কায়সার আলম, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুজন বৈষ্ণব, জেলা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি পার্থ প্রতিম, সাবেক ছাত্রনেতা ইসমাইল আজাদ শাকিল, সংস্কৃতিকর্মী শিমুল দত্ত। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, আমরা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর আশ্বস্ত হয়েছিলাম। একাত্তরের ঘাতকদের একের পর এক ফাঁসির রায় আমাদের আশান্বিত করেছিল। খুনী-রাজাকারদের দল জামায়াতের বিচারের জন্য যখন তদন্ত শুরু হয়েছিল তখন আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। বক্তারা আরও বলেন, দেশের মানুষের বহু আকাক্সিক্ষত যুদ্ধাপরাধীর বিচার যেন এখন এক কূটকৌশলের খপ্পড়ে পড়েছে। নিজামী, সাঈদীর রায় ঘোষিত না হওয়া, জামায়াতের বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের মানুষকে হতাশ করেছে। আমরা যেন আবারও অন্ধকার যুগে ফিরে যাচ্ছি। রাজাকারমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যেন আবারও সুদূরপরাহত হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জামায়াতের বিচার নিয়ে কোন মারপ্যাঁচ এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন তালবাহানা শুধু সরকারের জন্য নয়, দেশের জন্যও বিপদ ডেকে আনবে। রাজাকাররা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলে তারা আবারও এদেশকে পাকিস্তান বানিয়ে ছাড়বে।
মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছে প্রগতিশীল ৩৫টি সংগঠন। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মন্ত্রীর এ বক্তব্য দূরভিসন্ধিমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, আমরা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর আশ্বস্ত হয়েছিলাম। একাত্তরের ঘাতকদের একের পর এক ফাঁসির রায় আমাদের আশান্বিত করেছিল। খুনী-রাজাকারদের দল জামায়াতের বিচারের জন্য যখন তদন্ত শুরু হয়েছিল তখন আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। মন্ত্রীর বক্তব্য জাতিতে ক্ষুব্ধ করেছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। যুক্ত বিবৃতি দেয়া সংগঠনের মধ্যে আছে প্রজন্ম ’৭১, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, গৌরব ’৭১, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, চেতনা ’৭১, জাগ্রত জনতা, অপরাজেয় বাংলা, কবিতা পরিষদ, বজ্রকণ্ঠ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, শহীদ রাসেল স্মৃতি পরিষদ, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম ও স্লোগান ’৭১।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-05-31&ni=174500
No comments:
Post a Comment