Saturday, May 31, 2014

রাতে র‌্যাবের টহল বন্ধ এবং কার্যক্রম সঙ্কুচিত করা আত্মঘাতী স্বদেশ রায়

রাতে র‌্যাবের টহল বন্ধ এবং কার্যক্রম সঙ্কুচিত করা আত্মঘাতী
স্বদেশ রায়
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক বলতেন, ‘আনন্দবাজার যখন আমার প্রশংসা করে তখন বুঝবে আমি মুসলমানদের ক্ষতি করছি; আর আনন্দবাজার পত্রিকা যখন আমাকে সমালোচনা করবে তখন বুঝবে আমি মুসলমানদের জন্য ভাল কাজ করছি।’ তেমনি তারেক রহমানের মতো একজন একুশে আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় অভিযুক্ত, এ ছাড়া দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ এমনকি মাদক চোরাচালান নিয়েও যার সম্পর্কে কথা আছে- তিনি যখন র‌্যাবের বিলুপ্তি চান তখন একটি শিশুরও বুঝতে বাকি থাকা উচিত নয় যে, র‌্যাব বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, সন্ত্রাস দমনের জন্য, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এমনকি প্রতিবেশী দেশসমূহের সিকিউরিটির জন্য প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সরকার কি শিশুর থেকেও সরল। তারা এই সত্যটি বুঝতে পারল না। তারা ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকা থেকে র‌্যাবের টহল ও মানুষের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে যে চেকপোস্ট ছিল সেগুলো উঠিয়ে নিল! এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে এদের কার্যক্রম সঙ্কুচিত হবে।
সরকার বর্তমানে কিছুটা বিব্রত সেটা সকলেই জানেন। কারণ, র‌্যাবের তিনজনকে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ করেছেন নিহত সন্ত্রাসী নজরুলের শ্বশুর। তিনি বলেছেন, র‌্যাব ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে এটা করেছে। তিনি তাঁর জামাইকে ছেড়ে দেয়ার জন্য র‌্যাবকে ১২ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি এখানেই সকলে সত্য বলে ধরে নিচ্ছেন। সরকার কি নজরুলের শ্বশুরের ইনকাম ট্যাক্স ফাইলটি এনবিআর থেকে নিয়ে দেখেছে যে- তার কত কোটি সাদা টাকা আছে? যে লোকটি ১২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে চায় অর্থাৎ ১২ কোটি কালো টাকা ঘুষ দেয়া তার পক্ষে কোন বিষয় নয়, সে লোকটি কি দুর্বৃত্ত নয়? তাছাড়া র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দেয়া হয়েছে এটা তিনি জানলেন কিভাবে? তাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে কি রিমান্ডে নেয়া হয়েছে? এ সব কোন কিছু না করেই বিষয়টি সত্য হয়ে গেল। আর এ ধরনের একজন কালো টাকার মালিকের কথার ওপর ভিত্তি করে সব কিছুই বিচার করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে এটা অনেক বড় ক্রাইম। তবে র‌্যাবের বিষয়টি বা র‌্যাবকে জড়ানোর বিষয়টি এত হালকা করে সরকার কেন দেখছে- এটা বোঝা যাচ্ছে না। সরকার কি খুব নার্ভাস হয়ে গেছে? যে সরকার বা যে নেত্রী জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসের পাহাড় ঠেলে ক্ষমতায় এসেছেন, তিনি এত ছোট কিছুতে নার্ভাস হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন না- এটা ভাবা যায় না। তাই তিনি র‌্যাবের বিষয়টি ভেবে দেখবেন, এর পেছনে আরও কোন বড় ষড়যন্ত্র আছে কিনা?
একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, ২০১৩ সালে আট মাসজুড়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি যে ভয়াবহ সন্ত্রাস করেছিল সেটা মোকাবেলা করেছে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি। তিন বাহিনীর কারও অবদান খাটো নয়, যা ইতোপূর্বে এক লেখায় ১৯৭১ সালে পুলিশ ও ইপিআরের আত্মত্যাগের সঙ্গে তুলনা করেছি এবং এই তিন বাহিনীর ভেতর বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সব থেকে বেশি ভয় পায় র‌্যাবকে। তাই র‌্যাবকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হবে এটা এই সরকারকে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু একমাত্র শেখ হাসিনা ও দুই-একজন মন্ত্রী ছাড়া আর সবাই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসায় অনেক বেশি আত্মহারা হয়ে যান। ফলে এ সব দিক দেখা হচ্ছে না। সরকারের প্রতি অনুরোধ করব গত পাঁচ বছরে পত্র-পত্রিকাগুলো ভাল করে স্ক্যান করুন, কটা ছিনতাই হয়েছে। আমরা খবরের কাগজের লোকেরা ছিনতাইয়ের রিপোর্ট ছাপার বিষয়টি ভুলেই গেছি বলা চলে। এখন কি আর ব্যাংকে পাঁচ লাখের বেশি টাকা নিতে সঙ্গে পুলিশ নেয়া লাগে? লাগে না। এখন কি আর রাজপথে ব্যবসায়ী খুন হয়? হয় না। কিন্তু র‌্যাবের টহল তুলে নেয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে ব্যবসায়ী খুন হয়েছে এবং জামায়াত-বিএনপির বুদ্ধিজীবী যাঁরা টেলিভিশনের পর্দায় থাকেন তাঁরা থেকে শুরু করে তারেক রহমান, খালেদা জিয়া সবাই র‌্যাব নিষিদ্ধ চাচ্ছে কেন? তার কারণ তাঁরা জানেন, তাঁদের মতো দুর্নীতিপরায়ন, সন্ত্রাসী লালনকারী ও পরিচালনাকারীদের ডাকে রাজপথে লোক নামবে না। কিন্তু রাজধানীতে যদি সাত দিনে সাতজন ব্যবসায়ীকে খুন করা যায় তাহলে ব্যবসায়ী সমাজ রাজপথে নেমে আসবে, যা সামাল দেয়ার ক্ষমতা সরকারের নাও থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনেই সরকার হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে রাজধানীতে এমন হলে কী হবে- সেটা সহজেই বোঝা যায়। আর রাজধানীতে র‌্যাবের টহল না থাকলে, র‌্যাবের নিরাপত্তা চৌকি উঠিয়ে নিলে সাত দিনে সাতজন ব্যবসায়ীকে খুন করা বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে ডাল-ভাত। কারণ, জামায়াত-শিবিরের সবাই প্রফেশনাল কিলার। তবে বিএনপিতেও কিলারের সংখ্যা কম নয়। সায়েদাবাদে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো নেতা তাদের আছে। দা-সড়কি নিয়ে রাস্তায় নামার হুকুম দেয়ার মতো সন্ত্রাসী তাদের দলের বড় নেতা। গৃহযুদ্ধ করার ডাক দেয়ার যুবনেতা তাদের আছে। তাই র‌্যাব না থাকলে এ কাজ তারা অতি সহজে করতে পারবে।
তাছাড়া ২০১৩ সালে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে মার খেয়ে জামায়াত-বিএনপি কিছুটা দমে গেছে। কিন্তু তারা আবার শক্তি সঞ্চয় করছে। যে কোন সুবিধামতো সময়ে তারা আবার দেশজুড়ে সন্ত্রাস করবে। তারা দেখেছে দেশজুড়ে সন্ত্রাস করলেও সরকারকে নড়ানো যায় না রাজধানীতে সন্ত্রাস করতে না পারলে। তাছাড়া এবার তারা কৌশল বদলেছে। তাদের হত্যাকা-ের ধরন বদলেছে। এই সময়ে র‌্যাবের নিরাপত্তা চৌকি উঠিয়ে নিয়ে, র‌্যাবের টহল বন্ধ করে রাজধানীকে অরক্ষিত করার মতো যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে- এ সিদ্ধান্ত এখনই প্রত্যাহার করা উচিত। কারণ, রাজধানীতে জামায়াত-বিএনপির এই খুন, গুম, হত্যার সুযোগ সরকার করে দিতে পারে না; আর সাধারণ নাগরিককে নিরাপত্তাহীনও করতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, দেশের রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তকে বোকামি বললেও ভুল হবে না। এমনকি র‌্যাব-পুলিশের এই যৌথ টহলের কারণে গত পাঁচ বছরে কোন ঈদের সময় মার্কেটের সামনে ছিনতাই বা চাঁদাবাজিও হয়নি। সরকার কি নারায়ণগঞ্জের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য এ সব সাফল্যকে একদম ভুলে গেছে? নারায়ণগঞ্জ নিয়ে মিডিয়া অনেক বেশি তোলপাড় করেছে। তার দুটি কারণ- এক, ঘটনাটি বড়। দুই, মিডিয়ার সরকারবিরোধী অংশ জামায়াত-বিএনপির পক্ষে দলীয় কাজ করে। তাই সরকারের মনে রাখা উচিত রাজধানীর উপর হামলার জন্য জামায়াত ও বিএনপির নারায়ণগঞ্জ পাওয়া দরকার। যে কারণে তারা নিজেদের প্রার্থী শেষরাতে বসিয়ে দিয়ে আইভীকে সমর্থন দিয়েছিল। কারণ, আইভী বাস্তবে ড. কামাল ও মাহমুদুর রহমানের মতো বুদ্ধিজীবী আওয়ামী লীগার। গিরগিটির মতো প্রয়োজনে রঙ বদলাতে তাদের অসুবিধা হয় না। ড. কামাল পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে ফোন করে ’৭১-এ আত্মসমর্পণ করেন। আর মাহমুদুর রহমান মান্না নিশ্চয়ই জাসদ ছাত্রলীগে আসার আগে প্রগতিশীল কোন ছাত্র সংগঠন করতেন না। কোন্ ছাত্র সংগঠন করতেন তা অনেকে জানেন। মান্না-আখতার জুটি হলেও তিনি আখতারুজ্জামান নন। আর বেশিরভাগ এই ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যক্তিরাই কিন্তু টিভিপর্দায় তারেক রহমানের গলায় গলা মিলিয়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে বলছে। তাই সরকারের উচিত হবে, যার ভয়ে তুমি ভীত তাকে রুখে দাঁড়াও সে পালাবে তরাসে। বরং সরকারকে শক্ত হতে হবে। র‌্যাবের টহল আরও বাড়িয়ে রাজধানীসহ অন্যসব স্থানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। সাধারণ মানুষ র‌্যাবের বিপক্ষে নয়, সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলা যেটুকু খারাপ পরিস্থিতিতে গেছে তার বিপক্ষে। তারা এর উন্নতি চায়। তারা তাদের বিপদের বন্ধু হিসেবে র‌্যাবকে তাদের পাশে চায়।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment