Saturday, May 31, 2014

নষ্ট ও পচা লোকজন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে ॥ ড. কামাল নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজনীতিতে ফরমালিন ঢুকে গেছে

নষ্ট ও পচা লোকজন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে ॥ ড. কামাল
নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজনীতিতে ফরমালিন ঢুকে গেছে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। কালো টাকার মালিকদের হাতে চলে যাচ্ছে। তাদের কাছে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা জিম্মি হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কালো টাকা দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে এখন আর ভাল ছাত্র বা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা রাজনীতিতে আসতে চাইছেন না। দূষিত রাজনীতিতে টিকতে হলে কালো টাকা থাকা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। শনিবার বিএমএ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন এ সব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্রের এ দেশে বর্তমানে মানুষ অসহায়। তাদের যেন কিছুই করার ক্ষমতা নেই। সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্রের প্রকৃত মালিক ও ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কথা জনগণের অথচ তাদেরই অসহায়ত্ব স্বীকার করতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের দেশে জনগণ কখনও অসহায় হতে পারে না। ক্ষমতার প্রকৃত মালিক জনগণকে যদি অসহায়ের মতো থাকতে হয় সে দেশের ভবিষ্যত কি হবে। কোন দল বা কোন পরিবার যদি মনে করে যে তারা ক্ষমতার মালিক তাহলে ভুল করবে। এর তীব্র প্রতিবাদ করতে শহীদদেরও আত্মা কবর থেকে উঠে আসবে। মানুষ এখন অসহিষ্ণু হয়ে গেছে। এরশাদেরও পতন হয়েছিল মানুষ যখন অসহিষ্ণু হয়ে গিয়েছিল তখন। তাই এ সব মনে করেই সব দলকে রাজনীতি করতে হবে। সময়ের তাগিদে আর স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নেই নাগরিক ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিজের দেশকে রক্ষা করা ও ক্ষমতার প্রকৃত মালিককে তার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দাঁড়াতে হবে। যার জন্য কাজ করছে মাহমুদুর রহমান মান্না। সবাইকে তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে নামতে হবে। ড. কামাল বলেন, রাজনীতিতে বর্তমানে ফরমালিন ঢুকে গেছে। পচা আর নষ্ট লোকজন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফল নারায়ণগঞ্জ আর ফেনী। আগে যেখানে নীতি আর আদর্শ দিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এমপি হতে হতো। সেখানে এখন শহর এলাকায় ক্যাডার আর ৫ কোটি টাকার নিচে এমপি হওয়া যায় না। অনেকে আমায় বলে যে, আমি নাকি বড় বড় কথা বলি। দেশের অবস্থা দেখে মনে হয় এখন পকেটে হাজার হাজার কোটি কালো টাকা না নিয়ে বড় বড় কথা বলা যাবে না। মনে হয় ভবিষ্যতে শুধুমাত্র নীতি নিয়ে বড় কথা বলা নিষেধ করে দেয়া হবে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়কদের খুঁজে বের করার জন্য ব্যাংকারদের গুরু হিসেবে পরিচিত ইব্রাহীম খালেদের মতো লোকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আর তাঁকে বাঁচার জন্য মামলায় লড়তে হয়। যা বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়। সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা ডাকাতির কোন কূল কিনারা করতে পারেনি সরকার। এ অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে সবাইকে এক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সুশাসন ছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। অথচ বর্তমানে দেশে সুশাসন নেই যা নারায়ণগঞ্জের অপহরণ, খুন আর ফেনীর নৃশংসতা দুঃশাসনের ভয়াবহতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দেশজুড়েই গুম, খুন, সন্ত্রাস আর দুর্নীতির ছড়াছড়ি এখন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। সরকার এ সব নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা না করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে তা অনেক দিনে এ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। সংসদীয় ব্যবস্থার নামে দেশে অর্থ ও পেশীশক্তির কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এক ব্যক্তির শাসন কায়েম হয়েছে। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা বড় দলের নেত্রী হতে পারেন কিন্তু দেশের জন্য বড় এমন কি কাজ করেছেন? তাই অর্থবহ নির্বাচন আর জনকল্যাণমুখী গণতন্ত্রের লক্ষ্যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছি। তিনি বলেন, দুই দলের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সকল গণতন্ত্রমনা প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সংগঠনের সমন্বয়ে জাতীয় প্লাটফর্ম গড়তে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। গড়ার এখনই সময়। অনুষ্ঠানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম নাগরিক ঐক্যের কর্মকা-ের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment