মোদি সরকার ও দক্ষিণ এশিয়া
এম এম খালেদ সাইফুল্লা
ভারতে ভোটের ইতিহাসে কংগ্রেসকে সবচেয়ে বড় লজ্জায় ডুবিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন এক সময়ের চা বিক্রেতা মোদি। আর ১৯৮৪ সালের পর এবারই ভারত দেখলো সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার। নরেন্দ্র মোদিসহ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৪৪ জন। মোদির মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন ৭ নারী। মন্ত্রিসভায় কোনো বাঙালির স্থান হয়নি। আর মুসলমানদের মধ্যে থেকে মন্ত্রী নেওয়া হয়েছে মাত্র একজন। শপথ নেওয়ার আগে মোদি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, 'আসুন সবাই মিলে ভারতকে শক্তিশালী করি।' গৌরবোজ্জ্বল ভারত গড়তে চান মোদি। সেটা করতে হলে তাকে উগ্র হিন্দুত্ববাদ পরিহার করে সম্পূর্ণ অসামপ্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিতে এক নতুন যুগের সূচনা হলো। হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বিজেপির 'মোদি অধ্যায়ে' ভারত কোন পথে চলবে তা নিয়ে স্বদেশে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংশয় দেখা দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে বিরাজ করছিল উত্কণ্ঠা। এ উত্কণ্ঠার অবসানে মোদি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানকে যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা চমত্কারিত্বের দাবি রাখে। ভারতের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি লোককে আমন্ত্রণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে লেখক-শিল্পীসহ বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে জড়িতদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় শপথ অনুষ্ঠানে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা পাকিস্তান নামে শুচিবাইগ্রস্ত বলে ধারণা করা হয়। সে ধারণা পালটে দিতে মোদি শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। স্বদেশের তামিল জনগোষ্ঠীর বিরূপ মনোভাবের মুখেও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রাজা পক্ষেকে এনেছেন শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপ্রধান যোগ দিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানে। এসেছেন মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীও। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরে থাকায় তাঁর পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মোদি আমলে যে ভালো সম্পর্ক রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে তারই ইশারা দেওয়া হলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শপথ পর্বে। আমাদের বিশ্বাস, ভারতের নতুন সরকারের এই ইতিবাচক পথযাত্রা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে চুক্তি, মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নসহ অমীমাংসিত সব বিষয়ের সুরাহার ক্ষেত্রে নতুন সরকার যত্নবান হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের দ্রুত অগ্রযাত্রার স্বার্থে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রাসঙ্গিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিদায়ী কংগ্রেস সরকারের মধ্যে যে সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করেছে মোদি সরকারের মধ্যে তা অনুভূত হবে না, আমরা এমনটিই দেখতে চাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে—সার্ক চেতনার ভিত্তিতে এই এলাকার দেশগুলোর সম্পর্ক বলিষ্ঠকরণে দিল্লির নতুন সরকার তাত্পর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।
ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকা উচিত। নতুন সরকার সেই সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্তসহ অন্যান্য সমস্যা মোদি সরকার সমাধান করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি বদলালে তা হবে বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। যদিও মোদি ইতোমধ্যে তিস্তার পানির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। দেখা যাক কী হয়?
বাংলাদেশের জনগণ আশা করে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিরোধাত্মক বিভিন্ন ইস্যু দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে নিরাশ করবেন না। মোদির বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে হাতে হাত ধরে চলবে এটা নিশ্চয়ই আশা করা যায়।
আঞ্চলিক বৃহত্ ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার দৃঢ় পদক্ষেপ নিলে সার্ক প্রায় অকার্যকর সংস্থা থেকে গতিশীল সংস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে। ভারত-বাংলাদেশ উন্নততর সম্পর্ক আঞ্চলিক সহযোগিতা সমপ্রসারণেও গতিশীল উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে।
ঢাকা
No comments:
Post a Comment