মেসির রক্তেই রয়েছে ফুটবল
|
স্নিতজেল নাপোলিতানা৷ আর্জেন্টাইনরা বলেন মিলানেসা এ লা নাপোলিতানা৷ বার্সেলোনায়ও পাওয়া যায়৷ মেসির সবচেয়ে প্রিয় খাবার৷ গরুর মাংস, ডিম, টমেটো, পনির প্রভৃতি দিয়ে তৈরি সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার ৷ বার্সেলোনায় গেলে ছেলের জন্য সপ্তাহে অন্তত দু-তিনবার খাবারটি তৈরি করতেই হয় সেলিয়াকে৷ মায়ের বিশ্বাস, এই স্নিতজেল নাপোলিতানা ও মেইট (আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী চা) খায় বলেই তাঁর ছেলে গোলের পর গোল করতে পারে৷
চকোলেট ও বিস্কুটও পছন্দ৷ বিশেষ করে আলফাজোরস (ক্যারামেলযুক্ত বিস্কুট) খুব পছন্দ মেসির৷ এতই পছন্দ যে শৈশবে আলফাজোরসের লোভ দেখিয়ে কোচরা তাঁকে দিয়ে গোল করিয়ে নিতেন৷ শর্ত ছিল, প্রতি গোলে একটি আলফাজোরস৷ একবার তো সেই লোভে এক ম্যাচে আট গোল করে বসল ছোট্ট মেসি৷ কোচও কথা রাখলেন৷ একসঙ্গে আটটি আলফাজোরস পেয়ে ছোট্ট মেসির সে কী আনন্দ!
সেলিয়া মারিয়া কুসিত্তিনি ওলিভেরা ডি মেসি৷ পুরো নামটা লম্বা। তবে মেসির মা সবার কাছে সেলিয়া নামেই পরিচিত৷ তাঁর বোনের নামও কম লম্বা নয়, মার্সেলা কুসিত্তিনি ডি বিয়ানকুচ্চি৷ মেসির সবচেয়ে প্রিয় খালা, ধর্ম মাও ৷ তাঁরই দুই ছেলে ম্যাক্সিমিলিয়ানো ও ইমানুয়েল এবং মেসি ও তাঁর দুই বড় ভাই মাতিয়াস ও রদ্রিগো ছিলেন শৈশবের খেলার সাথি৷ সুযোগ পেলেই বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত পাঁচজনের দলটি৷ সেলিয়া বলেন, ‘রোববারে আমি ও আমার বোন যখন আমাদের মায়ের বাড়িতে যেতাম, তখন এই পাঁচ ভাই বল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ত৷ দুপুরের খাবারের আগ পর্যন্ত তারা ফুটবলেই মেতে থাকত৷’
মেসির তখনো ১০ বছর হয়নি৷ তাঁর প্রিয় দাদিমা মারা যান৷ মেসির আজকের ‘মেসি’ হয়ে ওঠার পেছনে যদি গোড়াতে কারও প্রত্যক্ষ ভূমিকা থেকে থাকে, তা ওই দাদির৷ নাতিকে নিয়ে তিনিই মাঠে যেতেন। ছোট্ট বলে কেউ দলে নিতে চাইত না৷ কিন্তু কোচদের সঙ্গে পীড়াপীড়ি করে মেসিকে মাঠে নামিয়ে দিতেন দাদিই। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন আর চিৎকার করে বলতেন, ‘লিওকে পাস দাও, ছোট্ট ছেলেটাকে পাস দাও—সে গোল করতে পারে৷’ সেই ছোট্ট মেসিই আজ কত বড় তারকা! ফুটবলে সম্ভাব্য প্রায় সব অর্জন তাঁর পায়ের তলায় লুটোপুটি খাচ্ছে৷ স্বর্গ থেকে নাতির এত সাফল্য দেখে নিশ্চয়ই আনন্দাশ্রু ঝরে দাদিমার!
খুব ছোট্টটি থেকেই মেসি ছিলেন অবিশ্বাস্য। তখনো বয়স পাঁচ বছর হয়নি, কিন্তু তিনি এমনভাবে বল নিয়ন্ত্রণ করতেন যা অন্য কেউ পারত না। তা নিয়ে ঝামেলাও কম হয়নি। খালা মার্সেলার ভাষায়, ‘রাস্তায় খেলার সময় সে সব সময় বাড়ির সদর দরজায় বল মারত। প্রতিবেশীরা যেত চটে। তারা তাকে আস্তে খেলতে বলত।’
বোনের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সেলিয়া বললেন, ‘এ জন্য মেসির বড় শাস্তি ছিল, তাকে খেলতে যেতে না দেওয়া। তারপর শুরু হতো মেসির পীড়াপীড়ি। “না, মা প্লিজ, চিন্তা কোরো না, আমি সত্যিই ভালোভাবে খেলব। আমি কথা দিচ্ছি...আমাকে খেলতে যেতে দাও”।’
ফুটবলার হিসেবে যেমন, মানুষ হিসেবেও অনন্য মেসি। ছেলের আচার-স্বভাবে মুগ্ধ সেলিয়া, ‘আটলান্টিকের এপার-ওপার দুপারের মানুষই তাকে খুবই ভালোবাসে। কারণ, সে যেমন সাদামাটা, আন্তরিক, ভালো মানুষ; তেমনি সব সময় অন্যকে নিয়ে ভাবে। মা-বাবা, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজি, কাজিন— সবাইকে নিয়েই তার চিন্তা। নিজের চারপাশের সবাইকেই খুশি দেখতে চায় সে।’
শুধু স্বভাব নয়, মেজাজেও অসম্ভব রকমের শান্ত ফুটবল জাদুকর। শৈশব থেকেই তিনি কারও সঙ্গে ঝামেলায় যান না। যেমন শান্তশিষ্ট, তেমিন পরিশ্রমীও। কখনো আলসেমি করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
ভদ্রতা, বিনয়, লজ্জা—সেই ছোটবেলা থেকেই। আজও কোনো পরিবর্তন নেই। তারকাখ্যাতি তাঁকে মোটেও পাল্টাতে পারেনি। এটা তাঁর কাছে পাত্তাই পায় না। এ কারণেই ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলা, তাঁদের অটোগ্রাফ দেওয়া—কোনো কিছুতেই তাঁর বিরক্তি নেই।
ছেলেকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই সেলিয়ার, ‘বাড়িতে ফিরলে রাতে আমি ওর পাশে গিয়েই শুয়ে পড়ি। আমরা অনেকক্ষণ গল্প করি। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। রসিকতাও করি। বলি, পৃথিবীর সব মেয়েও তোকে এমন প্রশান্তি দিতে পারবে না। তখন সে লজ্জায় লাল হয়ে বলে, “কী যে বলো না মা!”’
মেসির ফুটবলের হাতেখড়িটা কোথায়, কার কাছে? এত ফুটবলশৈলী তিনি কোত্থেকে শিখেছেন? এটা কি ওর জিনের মধ্যেই ছিল? প্রশ্নগুলো অন্য সবার কাছে যেমন উত্তরহীন, তেমনি সেলিয়ার কাছেও, ‘আমি নিজেও জানি না, ওর বাবা নাকি দুই ভাই, না কাজিনদের কাছ থেকে রপ্ত করেছে। তবে আমাদের পরিবারের সবাই ফুটবল ভালোবাসে। আমি নিজেও একজন দারুণ ভক্ত। আমার আদর্শ ম্যারাডোনা। তার গড়ে ওঠা, গোল সবকিছু আমাকে গভীরভাবে টানে। তার সঙ্গে যখন সাক্ষাৎ হয়, আমি বলেছিলাম, আমার ছেলেও একদিন মস্ত বড় ফুটবলার হবে। তুমি তাকে প্রশিক্ষণ দিতে পারো। দেখুন, আজ সত্যিই তা হয়েছে। সে কতদূর এসেছে...৷’
অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যের মতো মেসির প্রথম ফুটবল পাঠটাও কেমন রহস্যে ঘেরা!
সূত্র: বিভিন্ন সময়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন, একাধিক ওয়েবসাইট ও লুকা কাইয়োনির বই মেসি৷
চকোলেট ও বিস্কুটও পছন্দ৷ বিশেষ করে আলফাজোরস (ক্যারামেলযুক্ত বিস্কুট) খুব পছন্দ মেসির৷ এতই পছন্দ যে শৈশবে আলফাজোরসের লোভ দেখিয়ে কোচরা তাঁকে দিয়ে গোল করিয়ে নিতেন৷ শর্ত ছিল, প্রতি গোলে একটি আলফাজোরস৷ একবার তো সেই লোভে এক ম্যাচে আট গোল করে বসল ছোট্ট মেসি৷ কোচও কথা রাখলেন৷ একসঙ্গে আটটি আলফাজোরস পেয়ে ছোট্ট মেসির সে কী আনন্দ!
সেলিয়া মারিয়া কুসিত্তিনি ওলিভেরা ডি মেসি৷ পুরো নামটা লম্বা। তবে মেসির মা সবার কাছে সেলিয়া নামেই পরিচিত৷ তাঁর বোনের নামও কম লম্বা নয়, মার্সেলা কুসিত্তিনি ডি বিয়ানকুচ্চি৷ মেসির সবচেয়ে প্রিয় খালা, ধর্ম মাও ৷ তাঁরই দুই ছেলে ম্যাক্সিমিলিয়ানো ও ইমানুয়েল এবং মেসি ও তাঁর দুই বড় ভাই মাতিয়াস ও রদ্রিগো ছিলেন শৈশবের খেলার সাথি৷ সুযোগ পেলেই বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত পাঁচজনের দলটি৷ সেলিয়া বলেন, ‘রোববারে আমি ও আমার বোন যখন আমাদের মায়ের বাড়িতে যেতাম, তখন এই পাঁচ ভাই বল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ত৷ দুপুরের খাবারের আগ পর্যন্ত তারা ফুটবলেই মেতে থাকত৷’
মেসির তখনো ১০ বছর হয়নি৷ তাঁর প্রিয় দাদিমা মারা যান৷ মেসির আজকের ‘মেসি’ হয়ে ওঠার পেছনে যদি গোড়াতে কারও প্রত্যক্ষ ভূমিকা থেকে থাকে, তা ওই দাদির৷ নাতিকে নিয়ে তিনিই মাঠে যেতেন। ছোট্ট বলে কেউ দলে নিতে চাইত না৷ কিন্তু কোচদের সঙ্গে পীড়াপীড়ি করে মেসিকে মাঠে নামিয়ে দিতেন দাদিই। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন আর চিৎকার করে বলতেন, ‘লিওকে পাস দাও, ছোট্ট ছেলেটাকে পাস দাও—সে গোল করতে পারে৷’ সেই ছোট্ট মেসিই আজ কত বড় তারকা! ফুটবলে সম্ভাব্য প্রায় সব অর্জন তাঁর পায়ের তলায় লুটোপুটি খাচ্ছে৷ স্বর্গ থেকে নাতির এত সাফল্য দেখে নিশ্চয়ই আনন্দাশ্রু ঝরে দাদিমার!
খুব ছোট্টটি থেকেই মেসি ছিলেন অবিশ্বাস্য। তখনো বয়স পাঁচ বছর হয়নি, কিন্তু তিনি এমনভাবে বল নিয়ন্ত্রণ করতেন যা অন্য কেউ পারত না। তা নিয়ে ঝামেলাও কম হয়নি। খালা মার্সেলার ভাষায়, ‘রাস্তায় খেলার সময় সে সব সময় বাড়ির সদর দরজায় বল মারত। প্রতিবেশীরা যেত চটে। তারা তাকে আস্তে খেলতে বলত।’
বোনের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সেলিয়া বললেন, ‘এ জন্য মেসির বড় শাস্তি ছিল, তাকে খেলতে যেতে না দেওয়া। তারপর শুরু হতো মেসির পীড়াপীড়ি। “না, মা প্লিজ, চিন্তা কোরো না, আমি সত্যিই ভালোভাবে খেলব। আমি কথা দিচ্ছি...আমাকে খেলতে যেতে দাও”।’
ফুটবলার হিসেবে যেমন, মানুষ হিসেবেও অনন্য মেসি। ছেলের আচার-স্বভাবে মুগ্ধ সেলিয়া, ‘আটলান্টিকের এপার-ওপার দুপারের মানুষই তাকে খুবই ভালোবাসে। কারণ, সে যেমন সাদামাটা, আন্তরিক, ভালো মানুষ; তেমনি সব সময় অন্যকে নিয়ে ভাবে। মা-বাবা, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজি, কাজিন— সবাইকে নিয়েই তার চিন্তা। নিজের চারপাশের সবাইকেই খুশি দেখতে চায় সে।’
শুধু স্বভাব নয়, মেজাজেও অসম্ভব রকমের শান্ত ফুটবল জাদুকর। শৈশব থেকেই তিনি কারও সঙ্গে ঝামেলায় যান না। যেমন শান্তশিষ্ট, তেমিন পরিশ্রমীও। কখনো আলসেমি করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
ভদ্রতা, বিনয়, লজ্জা—সেই ছোটবেলা থেকেই। আজও কোনো পরিবর্তন নেই। তারকাখ্যাতি তাঁকে মোটেও পাল্টাতে পারেনি। এটা তাঁর কাছে পাত্তাই পায় না। এ কারণেই ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলা, তাঁদের অটোগ্রাফ দেওয়া—কোনো কিছুতেই তাঁর বিরক্তি নেই।
ছেলেকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই সেলিয়ার, ‘বাড়িতে ফিরলে রাতে আমি ওর পাশে গিয়েই শুয়ে পড়ি। আমরা অনেকক্ষণ গল্প করি। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। রসিকতাও করি। বলি, পৃথিবীর সব মেয়েও তোকে এমন প্রশান্তি দিতে পারবে না। তখন সে লজ্জায় লাল হয়ে বলে, “কী যে বলো না মা!”’
মেসির ফুটবলের হাতেখড়িটা কোথায়, কার কাছে? এত ফুটবলশৈলী তিনি কোত্থেকে শিখেছেন? এটা কি ওর জিনের মধ্যেই ছিল? প্রশ্নগুলো অন্য সবার কাছে যেমন উত্তরহীন, তেমনি সেলিয়ার কাছেও, ‘আমি নিজেও জানি না, ওর বাবা নাকি দুই ভাই, না কাজিনদের কাছ থেকে রপ্ত করেছে। তবে আমাদের পরিবারের সবাই ফুটবল ভালোবাসে। আমি নিজেও একজন দারুণ ভক্ত। আমার আদর্শ ম্যারাডোনা। তার গড়ে ওঠা, গোল সবকিছু আমাকে গভীরভাবে টানে। তার সঙ্গে যখন সাক্ষাৎ হয়, আমি বলেছিলাম, আমার ছেলেও একদিন মস্ত বড় ফুটবলার হবে। তুমি তাকে প্রশিক্ষণ দিতে পারো। দেখুন, আজ সত্যিই তা হয়েছে। সে কতদূর এসেছে...৷’
অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যের মতো মেসির প্রথম ফুটবল পাঠটাও কেমন রহস্যে ঘেরা!
সূত্র: বিভিন্ন সময়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন, একাধিক ওয়েবসাইট ও লুকা কাইয়োনির বই মেসি৷
No comments:
Post a Comment