Friday, May 30, 2014

প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় কাঁধে তুলে ব্যবস্থা নিন ॥ আল্টিমেটাম জাফর ইকবালের সঙ্গে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে হাজারো শিক্ষার্থী

প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় কাঁধে তুলে ব্যবস্থা নিন ॥ আল্টিমেটাম
জাফর ইকবালের সঙ্গে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে হাজারো শিক্ষার্থী
স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় কাঁধে নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবস্থান কর্মসূচী থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে, যদি এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার দায় কাঁধে নিয়ে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আগামী শুক্রবার আবার শহীদ মিনারে অবস্থান নেবেন তাঁরা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বৃষ্টির মধ্যেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ শিক্ষাবিদরা। একে একে এসে সেখানে যোগ দেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, একাই বসে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম দেখে বুকটা ভরে গেছে। প্রশ্ন ‘ফাঁস’ হওয়ায় দেশ বড় বিপর্য়ের মুখে পড়েছে। উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বহু দাবি করেছি, আমার দাবি কে শোনে?
সম্প্রতি কয়েকটি নিবন্ধে এইচএসসির কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনে তার পক্ষে ‘প্রমাণ’ তুলে ধরেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক। এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে চারটি নিবন্ধ লেখেন তিনি। তবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, গত ১০ এপ্রিল ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ওই পরীক্ষা স্থগিত করার পর থেকে নির্ধারিত দিন সকালে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন তাঁরা। নিজেও নিবন্ধ লিখে অধ্যাপক জাফর ইকবালের লেখার জবাব দেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করার পর ২৩ মে অনশনে বসার ঘোষণা দেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। ওদিন তিনি বলেন, আমি শহীদ মিনার কিংবা এ রকম কোন জায়গায় খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে থাকব। হাতে একটা প্ল্যাকার্ড রাখব। সেখানে লিখব- প্রশ্ন ফাঁস মানি না, মানব না। আমাদের ছেলেমেয়েদের অসৎ হতে দেব না। ঘোষণা অনুসারেই শুক্রবার স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সকাল ৮টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে বসেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে যোগ দেন জাফর ইকবালের সঙ্গে, ছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও। যোগ দেন ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকরা। অবস্থান কর্মসূচীর প্রতি সংহতি জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, আমার সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম আছে। তারা আমার আগে থেকেই আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। আমি আন্দোলন করতে পারি না। আমি তাদের সঙ্গে আছি। কর্মসূচী চলাকালে সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে ভিজেই কর্মসূচী চালিয়ে যান জাফর ইকবালসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গান গেয়ে, সেøাগান দিয়ে ও গণমাধ্যমকে সাক্ষাতকার দেন তাঁরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ (ঢামেক) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অধ্যাপক জাফর ইকবালের সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেন। ‘প্রশ্ন ফাঁস মানি না, মানব না’, ‘ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন, ধ্বংস হতে দেব না’, ‘একেকটি প্রশ্ন ফাঁস মানে একেকটি স্বপ্নের মৃত্যু’, ‘প্রশ্ন ফাঁসের দায় সরকারকে নিতে হবে’ এসব প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। বিভিন্ন ধরনের দলীয় সঙ্গীতে অংশ নেন তারা। এর মধ্যে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে’ গানটির সঙ্গে জাফর ইকবাল সুর মেলান। অবস্থান শেষে লেখক-অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বহু দাবি করেছি। কিন্তু আমার দাবির কথা কে শুনে? আমার দেশে এটা হবে তা কেমন করে মানা যায়? দেশের সব মানুষ জানে, এটা অন্যায়, তাই প্রতিবাদ করছি। এ ঘটনার প্রতিবাদ না করলে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে যাবে।
তরুণরা ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্ব দেবে, জাতির ইতিহাস রচনা করবে। তারা যদি পড়াশোনা না করে পরীক্ষার আগের রাতে ফেসবুকে বসে থাকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়, তাহলে এটা তাদের জন্য যেমন অসম্মানজনক জাতির জন্যও মহাবিপর্যয়কর। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি’ বলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এমন বক্তব্য সম্পর্ক তিনি বলেন, সরকারের একজন মন্ত্রীর অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে প্রশ্ন যে ফাঁস হয়েছে তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত বুয়েটের শিক্ষার্থীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নের বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলকে অবহিত করেছে। ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস: মানি না মানব না’ শীর্ষক ফেসবুক গ্রুপের সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগ করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-05-31&ni=174502

No comments:

Post a Comment