নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে একাধিক সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয়
বাবার মতো দেশের জন্য প্রাণ দিল মিজান ॥ লাশ হস্তান্তর, স্বজনদের আহাজারি
নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, কক্সবাজার ও কুমিল্লা, ৩১ মে ১৪ ॥
বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের একাধিক স্থানে শসস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা তৎপর, আর এসব সংগঠনের সন্ত্রাসীরা মিয়ানমারে হামলাসহ অস্থিতিশীল করছে এমন অভিযোগে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে মিয়ানমার সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আশারতলীর বিপরীতে মিয়ানমারের ওপারে কয়েক হাজার রাউন্ড গুলিবিনিময় হয় মিয়ানমারের বিজিপি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে। এ সময় মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সদস্যও মারা যায় জঙ্গীদের হাতে। সীমান্তের লেবুছড়ি পয়েন্টের ৫৪ নাম্বার পিলারের কাছে মিয়ানমারের অংশে এ গুলির আওয়াজ শুনতে পায় খোদ বাংলাদেশীরা।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী সংগঠনগুলো বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে মিয়ানমারের এমন অভিযোগ থাকায় গত এপ্রিল থেকে সীমান্তের পানছড়ি, দোছড়ি, ভালুখাইয়া, জারুলছড়ি ও নিকু ছড়ি এলাকায় ৫টি ক্যাম্প করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২টি ক্যাম্প তৈরির কাজ সম্পন্ন হলেও জুন মাসে অন্য তিনটি ক্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
সীমান্তে বিদ্রোহীদের অবস্থানের কথা অস্বীকার করে নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবির জোন কমান্ডার শফিকুর রহমান (জি) বলেন, আমরা সতর্ক আছি, সীমান্তবর্তী ক্যাম্পগুলোকে এলার্ট করা হয়েছে।
বাবার মতো দেশের জন্য প্রাণ দিলেন সৈনিক মিজান ॥ বাবার মতোই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন বিজিবি সদস্য নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান মিজান। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিজানের পিতা শহীদ হন। সে সময় মিজান মায়ের গর্ভে ছিলেন। বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর বাহিনীর হাতে প্রাণ দিলেন নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান মিজান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বারের মোহনপুর ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মিজান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পিতার মতোই দেশের ভূখ- অটুট রাখতে জীবন দিলেন মিজানুর রহমান। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন মায়েরগর্ভে মিজানকে রেখে তাঁর বাবা যুদ্ধে শহীদ হন। মিজানের বাবা বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত নায়েক সুবেদার ছিলেন। সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন।
মিজানুর রহমান ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। গত ২ মাস আগে লালমনিরহাট থেকে তাঁকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ ব্যাট্যালিয়ানে বদলি করা হয়।
মৃত্যুকালে মিজান বৃদ্ধা মা রাবেয়া আক্তার (৬৫), স্ত্রী শামীমা আক্তার পারুল ও ৪ কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
মিজানের লাশ হস্তান্তর ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা পাইনছড়িতে বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণে নিহত পাইনছড়ি বিওপির নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদল। শনিবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটের সময় ঘটনাস্থল ৫২ পিলারের অন্তত ৩শ’ গজ ভেতরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে বিজিবির কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তার লাশ ফেরত দেয়ার কথা বলেও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী কথা রাখেনি। শনিবার বিকেলে ওই বিজিবি সদস্যের লাশ হস্তান্তর করে মিয়ানমার।
কক্সবাজার প্রতিনিধি পাইনছড়ির সীমান্ত অঞ্চল ঘরে এসে জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিজিবিকে অবহিত না করে সে দেশের অভ্যন্তরে জিরো পয়েন্টের অদূরে অসংখ্য সেনা মোতায়েন করেছে। কাঁটাতারের ঘেরার কাছাকাছি নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে মিয়ানমারের বিজিপির পাশাপাশি বর্মী সেনা টহল জোরদার করেছে সেদেশের কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বর্ডারগার্ডও (বিজিবি) প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্টে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করেছে। ওয়াকিবহাল মহল বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এসে সরকারী পোশাক পরিধেয় সশস্ত্র টহলরত অবস্থায় সীমান্তরক্ষী বিজিবিকে গুলি কর হত্যা করেছে। পর পর ২ দিন বৃহস্পতি এবং শুক্রবারও (২৯ ও ৩০ মে) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি সীমান্তের ৫০ ও ৫২ নং পিলারের নিকটবর্তী জিরো পয়েন্টে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিপি সদস্যরা কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশের দিকে থেমে থেমে অজস্র গুলিবর্ষণ করেছে। বর্তমানে সেখানে ওই ক্যাম্প ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন চৌকিতে অসংখ্য অতিরিক্ত বিজিপি মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। এ ছাড়াও দুই দেশের যৌথ স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করে সীমান্তে সেনাসদস্য মোতায়েন করে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব সৃষ্টি করছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্মী সেনারা ৬০ ও ৮২ মিলিমিটারের মর্টার সেল এবং হেভি মেশিনগান ব্যবহার করে টহল দিচ্ছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও মিয়ানমার সীমান্তে জিরো পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্ফ্যু জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পেছনে এটি কাদের ইঙ্গিত? কারা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফাঁয়দা হাসিল করতে চাইছে? এসব ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো অতীব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা ঘুরে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিজিবির টহল জোরদার দেখে সীমান্ত এলাকয় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি না থাকলেও তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিনা উস্কানিতে বাংলাদেশের সন্তান বর্ডার রক্ষাকারী একজন বিজিবি সদস্যকে এভাবে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমারের লাখ লাখ নাগরিক (রোহিঙ্গা) এদেশে বসবাস করছে, অন্তত ১০ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের বোঝা অহেতুক বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ অবস্থায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদল পার্শ্ববর্তী দেশের একজন সীমান্তরক্ষীকে গুলি করে হত্যা করাটা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি একগুঁয়েমি কা- দেখিয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করছেন অভিজ্ঞ মহল।
ইনফ্যানট্রি বিগ্রেডের সতর্ক অবস্থান ॥ ওদিকে দেশ রক্ষার্থে সরকারের উচ্চমহলের সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনীর ইনফ্যানট্রি ব্রিগেডের একটি দল নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্থান করছে এবং সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রুমা, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য সীমান্তের বিওপিগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিজিবি সদস্যরা স্থানীয়দের অভয় দিয়ে তাদের টহল জোরদার রেখেছে। বলা বাহুল্য, গত ২১ মে নাইক্ষ্যংছড়ির লেম্বুছড়ি সীমান্তে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিপি ব্যাপক অভিযোগ তুলে সীমান্তে সন্ত্রাসী বাহিনীর (বিচ্ছিন্নতাবাদী) তৎপরতা নিয়ে। বৈঠকে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার একমত পোষণের মাত্র পাঁচদিনের মাথায় ৫২ নং পিলার এলাকায় বিজিবির টহল দলের ওপর অতর্কিত হামলা করে মিয়ানমারের বিজিপি।
মিজানের বাড়িতে লাশের অপেক্ষা,
স্বজনদের আহাজারি ॥ নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানের (৪৩) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড়কামতা ইউনিয়নের ভৈষেরকোট-ভেলানগর গ্রামের বাড়িতে চলছে স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারি। গত শুক্রবার বিকেলে এ খবর বাড়িতে পৌঁছার পর থেকে তার মা বৃদ্ধা রাবেয়া আক্তার, স্ত্রী শামীমা আক্তার পারুল (৩৫) ও ৪ কন্যা সন্তানসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শনিবারও মিজানের বাড়িতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। বিকেলে মিজানের লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তরের খবর পাওয়ার পর থেকে তার বৃদ্ধা মা ও তার স্ত্রী-স্বজনরা এখন লাশের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।
বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের একাধিক স্থানে শসস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা তৎপর, আর এসব সংগঠনের সন্ত্রাসীরা মিয়ানমারে হামলাসহ অস্থিতিশীল করছে এমন অভিযোগে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে মিয়ানমার সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আশারতলীর বিপরীতে মিয়ানমারের ওপারে কয়েক হাজার রাউন্ড গুলিবিনিময় হয় মিয়ানমারের বিজিপি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে। এ সময় মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সদস্যও মারা যায় জঙ্গীদের হাতে। সীমান্তের লেবুছড়ি পয়েন্টের ৫৪ নাম্বার পিলারের কাছে মিয়ানমারের অংশে এ গুলির আওয়াজ শুনতে পায় খোদ বাংলাদেশীরা।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী সংগঠনগুলো বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে মিয়ানমারের এমন অভিযোগ থাকায় গত এপ্রিল থেকে সীমান্তের পানছড়ি, দোছড়ি, ভালুখাইয়া, জারুলছড়ি ও নিকু ছড়ি এলাকায় ৫টি ক্যাম্প করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২টি ক্যাম্প তৈরির কাজ সম্পন্ন হলেও জুন মাসে অন্য তিনটি ক্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
সীমান্তে বিদ্রোহীদের অবস্থানের কথা অস্বীকার করে নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবির জোন কমান্ডার শফিকুর রহমান (জি) বলেন, আমরা সতর্ক আছি, সীমান্তবর্তী ক্যাম্পগুলোকে এলার্ট করা হয়েছে।
বাবার মতো দেশের জন্য প্রাণ দিলেন সৈনিক মিজান ॥ বাবার মতোই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন বিজিবি সদস্য নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান মিজান। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিজানের পিতা শহীদ হন। সে সময় মিজান মায়ের গর্ভে ছিলেন। বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর বাহিনীর হাতে প্রাণ দিলেন নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান মিজান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বারের মোহনপুর ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মিজান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পিতার মতোই দেশের ভূখ- অটুট রাখতে জীবন দিলেন মিজানুর রহমান। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন মায়েরগর্ভে মিজানকে রেখে তাঁর বাবা যুদ্ধে শহীদ হন। মিজানের বাবা বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত নায়েক সুবেদার ছিলেন। সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন।
মিজানুর রহমান ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। গত ২ মাস আগে লালমনিরহাট থেকে তাঁকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ ব্যাট্যালিয়ানে বদলি করা হয়।
মৃত্যুকালে মিজান বৃদ্ধা মা রাবেয়া আক্তার (৬৫), স্ত্রী শামীমা আক্তার পারুল ও ৪ কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
মিজানের লাশ হস্তান্তর ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা পাইনছড়িতে বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণে নিহত পাইনছড়ি বিওপির নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদল। শনিবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটের সময় ঘটনাস্থল ৫২ পিলারের অন্তত ৩শ’ গজ ভেতরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে বিজিবির কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তার লাশ ফেরত দেয়ার কথা বলেও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী কথা রাখেনি। শনিবার বিকেলে ওই বিজিবি সদস্যের লাশ হস্তান্তর করে মিয়ানমার।
কক্সবাজার প্রতিনিধি পাইনছড়ির সীমান্ত অঞ্চল ঘরে এসে জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিজিবিকে অবহিত না করে সে দেশের অভ্যন্তরে জিরো পয়েন্টের অদূরে অসংখ্য সেনা মোতায়েন করেছে। কাঁটাতারের ঘেরার কাছাকাছি নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে মিয়ানমারের বিজিপির পাশাপাশি বর্মী সেনা টহল জোরদার করেছে সেদেশের কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বর্ডারগার্ডও (বিজিবি) প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্টে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করেছে। ওয়াকিবহাল মহল বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এসে সরকারী পোশাক পরিধেয় সশস্ত্র টহলরত অবস্থায় সীমান্তরক্ষী বিজিবিকে গুলি কর হত্যা করেছে। পর পর ২ দিন বৃহস্পতি এবং শুক্রবারও (২৯ ও ৩০ মে) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি সীমান্তের ৫০ ও ৫২ নং পিলারের নিকটবর্তী জিরো পয়েন্টে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিপি সদস্যরা কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশের দিকে থেমে থেমে অজস্র গুলিবর্ষণ করেছে। বর্তমানে সেখানে ওই ক্যাম্প ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন চৌকিতে অসংখ্য অতিরিক্ত বিজিপি মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। এ ছাড়াও দুই দেশের যৌথ স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করে সীমান্তে সেনাসদস্য মোতায়েন করে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব সৃষ্টি করছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্মী সেনারা ৬০ ও ৮২ মিলিমিটারের মর্টার সেল এবং হেভি মেশিনগান ব্যবহার করে টহল দিচ্ছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও মিয়ানমার সীমান্তে জিরো পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্ফ্যু জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পেছনে এটি কাদের ইঙ্গিত? কারা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফাঁয়দা হাসিল করতে চাইছে? এসব ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো অতীব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা ঘুরে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিজিবির টহল জোরদার দেখে সীমান্ত এলাকয় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি না থাকলেও তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিনা উস্কানিতে বাংলাদেশের সন্তান বর্ডার রক্ষাকারী একজন বিজিবি সদস্যকে এভাবে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমারের লাখ লাখ নাগরিক (রোহিঙ্গা) এদেশে বসবাস করছে, অন্তত ১০ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের বোঝা অহেতুক বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ অবস্থায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদল পার্শ্ববর্তী দেশের একজন সীমান্তরক্ষীকে গুলি করে হত্যা করাটা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি একগুঁয়েমি কা- দেখিয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করছেন অভিজ্ঞ মহল।
ইনফ্যানট্রি বিগ্রেডের সতর্ক অবস্থান ॥ ওদিকে দেশ রক্ষার্থে সরকারের উচ্চমহলের সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনীর ইনফ্যানট্রি ব্রিগেডের একটি দল নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্থান করছে এবং সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রুমা, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য সীমান্তের বিওপিগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিজিবি সদস্যরা স্থানীয়দের অভয় দিয়ে তাদের টহল জোরদার রেখেছে। বলা বাহুল্য, গত ২১ মে নাইক্ষ্যংছড়ির লেম্বুছড়ি সীমান্তে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিপি ব্যাপক অভিযোগ তুলে সীমান্তে সন্ত্রাসী বাহিনীর (বিচ্ছিন্নতাবাদী) তৎপরতা নিয়ে। বৈঠকে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার একমত পোষণের মাত্র পাঁচদিনের মাথায় ৫২ নং পিলার এলাকায় বিজিবির টহল দলের ওপর অতর্কিত হামলা করে মিয়ানমারের বিজিপি।
মিজানের বাড়িতে লাশের অপেক্ষা,
স্বজনদের আহাজারি ॥ নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানের (৪৩) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড়কামতা ইউনিয়নের ভৈষেরকোট-ভেলানগর গ্রামের বাড়িতে চলছে স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারি। গত শুক্রবার বিকেলে এ খবর বাড়িতে পৌঁছার পর থেকে তার মা বৃদ্ধা রাবেয়া আক্তার, স্ত্রী শামীমা আক্তার পারুল (৩৫) ও ৪ কন্যা সন্তানসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শনিবারও মিজানের বাড়িতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। বিকেলে মিজানের লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তরের খবর পাওয়ার পর থেকে তার বৃদ্ধা মা ও তার স্ত্রী-স্বজনরা এখন লাশের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment