Friday, May 30, 2014

'সিইও' নমোর টার্গেট লিস্ট

'সিইও' নমোর টার্গেট লিস্ট

MODI
গৌতম হোড়

নয়াদিল্লি: মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের জন্য দশ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷

একদিক থেকে এই ঘোষণা অভূতপূর্ব৷ কেননা, এত দিন সাধারণ মানুষের জন্য, দেশের জন্য বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বহু দফার কর্মসূচি ঘোষণা করে আসাটাই ছিল প্রধানমন্ত্রীর রেওয়াজ৷ কিন্ত্ত সেই পথ থেকে সরে এসে নিজের মন্ত্রীদের জন্যই কর্মসূচি বেঁধে দিলেন মোদী৷ তাঁর উদ্দেশ্যও স্পষ্ট৷ মন্ত্রীরা যে প্রকল্পই হাতে নিন না কেন, তাঁরা যেন নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তা শেষ করেন৷ এই কর্মসূচিতেই বলা আছে, সরকারি আমলাদের ওপর মন্ত্রীদের যেন অযথা নিয়ন্ত্রণ না-থাকে৷ উল্টে মন্ত্রীরা যেন আমলাদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে তাঁদের দিয়ে কাজটা করিয়ে নিতে পারেন৷ মন্ত্রীরা যেন দুর্নীতি রোধ করে, সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে কাজ করেন৷ সোজা কথায়, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, তাঁর মন্ত্রীরা যেন দ্রুত, সত্‍ ভাবে, দক্ষ অফিসারদের স্বাধীনতা দিয়ে, নির্দিষ্ট সময়ে কর্পোরেট সংস্কৃতি মেনে কাজ করে দেখাতে পারেন৷ তাই মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠকেই মোদী তাঁর মন্ত্রীদের বলেছেন, প্রত্যেককে একশো দিনের কাজের রোডম্যাপ ও অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করতে হবে এবং বকেয়া বিষয়গুলির দ্রুত সমাধান করতে হবে৷ একশো দিনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রত্যেক মন্ত্রী ও তাঁদের বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করবেন মোদী৷

কী বলা হয়েছে নমোর দশ দফা কর্মসূচিতে? আমলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে, যাতে তাঁরা কাজ করতে গিয়ে ভবিষ্যতে শাস্তির ভয় না-পান৷ তাঁদের কাজের সুবিধা দিতে হবে এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানাতে হবে৷ সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হল স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জল, বিদ্যুত্‍ ও রাস্তা৷ সরকারের কাজে স্বচ্ছতা আনতে টেন্ডার ও অন্য সরকারি কাজে ই-অকশন করতে হবে৷ বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকবে৷ পুরো প্রশাসনকে এমন ভাবে চাঙ্গা ও জনমুখী করে তুলতে হবে যাতে ভোট দেওয়া দেশবাসীর আশা পূরণ করা যায়৷ সেই সঙ্গে, পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে৷ সরকারি নীতির ভিত্তি যেন হয় স্থায়িত্ব ও দীর্ঘকালীন লাভ৷ অর্থনীতি নিয়ে যাবতীয় উদ্বেগ দূর করতে হবে৷ সমালোচকরা বলছেন, এ ভাবে মোদী লক্ষ্মণরেখার মধ্যে বেঁধে দিতে চেয়েছেন মন্ত্রীদের৷ কিন্ত্ত ঘটনা হল, এটাই তাঁর কাজের পদ্ধতি৷ গুজরাটে এ ভাবেই তিনি সাফল্য পেয়েছেন৷ আর তাই কেন্দ্রীয় স্তরেও তিনি সেই মডেল চালু করতে চলেছেন৷

যা দেখা যাচ্ছে, তাঁর এই মডেলে আমলাদের ভূমিকা অপরিসীম৷ কারণ, মোদীর অনুমোদনক্রমে বা নির্দেশে মন্ত্রীরা প্রকল্প হাতে নেবেন ঠিকই, কিন্ত্ত তা নির্দিষ্ট সময়ে রূপায়ণের কাজটা তো আমলারাই করবেন৷ সে কথা জানিয়েছেন বেঙ্কাইয়া নাইডুও, 'মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বলেছেন, দক্ষতার সঙ্গে প্রশাসন চালাতে হবে, কাজ করে দেখাতে হবে এবং প্রকল্পের সময় বেঁধে তা রূপায়ণ করতে হবে৷'

সাধারণত কোনও প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের এ ভাবে পাখিপড়ার মতো করে বোঝান না যে, তাঁদের কী ভাবে কোন কথা মাথায় রেখে কী কাজ করতে হবে৷ কিন্ত্ত মোদী পুরোপুরি অন্য ধাতের প্রধানমন্ত্রী৷ তাই তাঁর পথও আলাদা৷ তাই শপথগ্রহণের তিন দিনের মধ্যেই মন্ত্রীরা বুঝতে পেরেছেন, তাঁদের কাজ করে দেখাতে তো হবেই, সেটা করতে হবে প্রধানমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি অনুসরণ করেই৷ আর তাঁদের কাজের ওপর নিরন্তর নজর রাখবেন মোদী৷

প্রধানমন্ত্রী সাধারণত মন্ত্রীদের সঙ্গেই বৈঠক করেন৷ বিভাগীয় সচিবদের সঙ্গে খুব দরকার না-হলে কথা বলেন না৷ সব সচিবের সঙ্গে কোনও প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করছেন, এমন নজির সাম্প্রতিক অতীতে তো বটেই, দূর অতীতেও আছে কি না সন্দেহ৷ কিন্ত্ত মোদী এ সব ক্ষেত্রে প্রথাগত পথে হাঁটেন না বা চলতে পছন্দ করেন না৷ তিনি তাই ব্যতিক্রমী পথ নিয়ে সচিবদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন৷

বৃহস্পতিবার মন্ত্রীদের উদ্দেশে দশ দফা কর্মসূচি এবং মন্ত্রিসভা বৈঠকে মোদীর নির্দেশের পর এটা স্পষ্ট যে, সব মন্ত্রকের উপর প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি থাকবে৷ মন্ত্রীদের মতো কাজ করার ক্ষেত্রে আমলাদেরও দায়বদ্ধতা থাকবে৷ এই প্রবণতাটা নিঃসন্দেহে নতুন৷ দিল্লিতে আমলাদের প্রসঙ্গে একটা চালু কথা আছে৷ তাঁরা কাজ করার থেকে, কী ভাবে কোনও কাজ আটকে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে অত্যন্ত দক্ষ৷ কাজ আটকে দেওয়ার জন্য তাঁরা হাজারটা নিয়মকানুন দেখান, হাজার রকম প্রশ্ন তোলেন৷ সেই লাল ফিতের বাঁধন ভেঙে কর্পোরেট ধাঁচে আমলাদেরও কাজ করার সংস্কৃতি, দায়বদ্ধতা ও লক্ষ্য বেঁধে কাজ করার নীতি চালু করতে চাইছেন মোদী৷ এই লক্ষ্যে সফল হতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ভালোর দিকে অনেক পরিবর্তন আসবে৷

বিজেপি সূত্রের খবর, মোদী যে ভাবে কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন, তা থেকেই তাঁর মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ যেমন তিনি বলেছেন, এত কয়লা থাকা সত্ত্বেও ভারত কেন কয়লা আমদানি করবে? কেন পরিকাঠামোগত প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হবে? মন্ত্রীরাও বুঝে গিয়েছেন, মোদী ঠিক কী চাইছেন৷ এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর কথায়, 'এ ভাবে দশ দফা কর্মসূচি বেঁধে দেওয়া বা মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রীদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে আপত্তির কী আছে? একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের ওপরে মানুষের প্রত্যাশা অপরিসীম৷ সেটা আমাদের পূরণ করতেই হবে৷ আর অনেক মন্ত্রীই একেবারে নতুন৷ তাই তাঁদের এ ভাবে বোঝানোটা সত্যিই দরকার৷' মন্ত্রীরা মোদীর কথামতো সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নিতে শুরুও করে দিচ্ছেন৷ পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য সব আবেদন কম্পিউটারের মাধ্যমে করতে হবে৷ ই-আবেদনে স্বচ্ছতা থাকবে এবং একেবারে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সেই আবেদনের ফয়সালা করা হবে৷ সড়ক পরিবহণ ও জাহাজ মন্ত্রী নীতিন গড়করির কথায়, দেশের সব বন্দর, রাস্তা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো একেবারে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করাটাই হবে তাঁর অগ্রাধিকার৷

http://eisamay.indiatimes.com/nation/narendra-modi-new-employment-oppotunity/articleshow/35739125.cms?

No comments:

Post a Comment