Friday, May 30, 2014

শপথ নিতেই মোদির শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

শপথ নিতেই মোদির শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
সপ্তাহের কলামটা আগেভাগে তৈরি করার জন্য গত বুধবার কাগজ কলম নিয়ে বসেছি। বিষয়বস্তুর অভাব নেই তবু অগ্রাধিকার বলে কথা আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম এবারও প্রতিবেশী দেশ ভারত ঘুরব। টেলিভিশন অন করে ওই দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিউজ চ্যানেল NDTV ধরতেই দেখলাম খুব গুরুত্ব দিয়ে একটি সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে বর্তমান বিজেপি বা শ্রী নরেন্দ্রনাথ দামোদরদাস মোদি সরকারের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী টেলিভিশন তারকাসুন্দরী স্মৃতি ইরানীকে নিয়ে। কথাটা এমন যে শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতায় ভেজাল। বড় জটিল প্রশ্ন।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপিত হলে সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেসের এককালীন নেত্রী-মন্ত্রী এবং বর্তমান হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের একমাত্র মুসলিম মন্ত্রী নাজমা হেফতুল্লাহ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, স্মৃতির লেখাপড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে অথচ অতীতের কয়জন প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েট ছিলেন? বিজেপির সরকারের আরেক ডাকসাইটে মন্ত্রী উমা ভারতী সরাসরি আসমানের তারাটি সোনিয়া গান্ধীর দিকে ছুড়েছেন। সোনিয়া তো কংগ্রেস জোটের চেয়ারপার্সন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা কোন ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। বিষয়টি নৈতিকতা, দুই এফিডেভিডে দুই রকম তথ্য-এক এফিডেভিডে স্মৃতি ইরানী ঘোষণা করেছেন তিনি বি.কম ফাস্ট পার্ট পর্যন্ত পড়েছেন, আরেক এফিডেভিডে বলেছেন গ্র্যাজুয়েট। প্রশ্নটি এখানেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ ব্যক্তিগত তথ্যের ঘোষণা দিতে হয়। তাতে অসঙ্গতি দেখা গেলে বা ভুল তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারেন। টিভির চ্যানেল ঘোরাতে আমাদের চ্যানেল-২৪ এ চোখ পড়তেই দেখলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান জামায়াত-বিএনপি জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বক্তৃতা করছেন মুঞ্জিগঞ্জে। স্বাভাবিকভাবে কৌতূহল হলো বক্তৃতা শোনার। দেখলাম পুরো বক্তব্যই হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়ত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। অধিকাংশই ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে। মনে পড়ে এক সময় বেগম খালেদা জিয়ার লেখাপড়া বা শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এমনকি তাঁর জন্মতারিখ নিয়েও বেশ মুখরোচক খবর প্রচারিত হয়েছে পত্রিকার পাতায় পাতায়। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে কখনও শোনা গেছে তিনি ৮ সাবজেক্ট কম ম্যাট্রিক পাস, অর্থাৎ অঙ্ক আর উর্দুতে কেবল পাস করেছিলেন, বাকি সব ফেল। আবার কখনও প্রচার করা হয়েছে তিনি বিএ ক্লাস পর্যন্ত পড়েছেন। এর ওপর তীব্র সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করলে কিছুদিন নীরব থাকার পর বলা হলো তিনি স্বশিক্ষিত, অর্থাৎ নিজে নিজে লেখাপড়া শিখেছেন, কোন শিক্ষকের কাছে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েননি। কিন্তু দুর্মুখদের মুখ কি অত সহজে বন্ধ করা যায়? প্রশ্ন উঠল ঘরে বসে অক্ষর জ্ঞান লাভ বা নামতা মুখস্থ করা যায়, ম্যাট্রিকের অঙ্ক পরীক্ষায় পাস করা যায় না, উর্দু তো বিদেশী-বিজাতীয় ভাষা। তবে রাজনীতি করতে নাকি লেখাপড়া বা উচ্চতর ডিগ্রী প্রয়োজন নেই? কিন্তু হাইস্কুলের হেড মাস্টার হতে হলে বা এ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার হতে হলেও অন্তত গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাগে। তেমনি একজন শিক্ষামন্ত্রী দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা দেখভাল করে থাকেন- একেবারে প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী, যিনি শিক্ষামন্ত্রী হবেন তাঁর যদি উচ্চতর ডিগ্রী না থাকে তাহলে তো তাকে দিয়ে সমাজের শয়তানের দল তাদের সব কাজ করিয়ে নেবে। তাঁর প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকে। প্রধানমন্ত্রী হতেও নাকি ডিগ্রীর দরকার নেই। স্বশিক্ষিত হলেই চলে। কিন্তু যেহেতু বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজ, সেহেতু এক প্রধানমন্ত্রী অপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হলে নিজ মাতৃভাষা তো বলতে পারবেন না, বলতে হবে ইংরেজী ভাষায়, সেই জ্ঞানই যদি না থাকে তবে তো অন্যের সাহায্য নিতে হবে, তাতে করেও নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। তবে শোনা যায় স্মৃতি ইরানী লেখাপড়া ফেলে ভারতসুন্দরী হবার প্রতিযোগিতায় নমিনেশন পেয়েছিলেন, তবে হতে পারেননি। ভারতসুন্দরী হতে না পারলেও জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়াল ‘কিঁউ কি সাস ভি কভু বহু থি’-এর সফল সুন্দরী বউ হয়ে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণকারী শ্রী নরেন্দ্রনাথ মোদির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সুযোগও এসে গেল। গান্ধী পরিবারের ভবিষ্যত নেতা নেহেরু-ইন্দিরা-রাজিব-সোনিয়ার রক্ত শিরার বহনকারী দিল্লী ও আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপির টিকেটে নির্বাচনে নামলেন। হেরে গেছেন তাতে কি? রাহুল গান্ধীর সঙ্গে গান্ধী পরিবারের দীর্ঘদিনের প্রতিনিধিত্বকারী ‘আমেথি’ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেন তাই বা কম কি? লড়াইটা বড় কথা। তাই মোদির সরকারে এক লাফে শিক্ষামন্ত্রী। অবশ্য মোদির তাতে কোন প্রবেলম নেই। স্মৃতি ইরানী তো মাত্র শিক্ষাগত ডিগ্রীর ব্যাপারে দুইবার দুই রকম এফিডেভিড করেছেন, শ্রী নরেন্দ্রনাথ দামোদর দাস মোদি তো যৌবনে রীতিমতো মন্ত্রপড়ে, শাখা-সিদুঁর পরিয়ে, মালা বদল করে (স্ত্রী) যশোদাবেনকে সাত পাকে বেঁধেও পরে সন্ন্যাসব্রত নিয়ে তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তারপরও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হলেন, “মেরা ভারত মহান”-এর প্রধানমন্ত্রী হলেন। রাজনৈতিক জীবনের কোথাও স্বীকার করেননি তিনি বিবাহিত। এমনকি গুজরাটের চীফ মিনিস্টার হবার সময়ও না। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনে আদভানি-সুষমাদের ল্যাং মেরে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে যেতে ভাবলেন এবার ‘দাল মে কুচ কালা হায়’ রব উঠতে পারে। তাই নির্বাচনের আগেই স্বীকার করলেন তিনি বিবাহিত এবং তাঁর স্ত্রীর নাম যশোদাবেন, স্কুল শিক্ষিকা, সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন। কাজেই কংগ্রেস যতই বলুক তাকে মোদি ভাইর কিছু যায়-আসে না, স্মৃতি ইরানীর আসন টলারও কোন কারণে নেই। টলবে না। সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র।
ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনের (১৬তম পার্লামেন্ট নির্বাচন) দিকে তাকালে দেখা যাবে দশ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার পর সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী পাস করলেও দলের আসন মাত্র ৪৪। এরচেয়ে শোচনীয় পরাজয় ইতোপূর্বে কংগ্রেস আর কখনও দেখেনি। ঊনবিংশ শতকের ৮০ দশকে জন্ম নেয় কংগ্রেস বা ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস কোন নির্বাচনে এমন সঙ্কটের মুখোমুখি হয়নি। পক্ষান্তরে ভারতের লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে মোদির নেতৃত্বে বিজেপি এককভাবেই পেয়েছে ২৮২টি এবং জোটগতভাবে ৩৩২টি। একেবারেই নিরঙ্কুশ এবং নিরাপদ। কংগ্রেস ভোট পেয়েছে শতকরা ১৯ দশমিক ৩ ভাগ এবং বিজেপি ৩১ দশমিক ১ ভাগ। কংগ্রেসের এবারের নির্বাচনের স্লোগান ছিল ‘হার হাত শক্তি, হার হাত তরাক্কি’ (হাত ছিল কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক)। পক্ষান্তরে বিজেপির স্লোগান ছিল ‘এক ভারত, শক্তিশালী ভারত।’ কংগ্রেসের স্লোগানটি তুলনামূলকভাবে অধিক গণমুখী হলেও কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি জনমনে। কেন পারেনি এর উত্তর হয়ত আরও পরে পাওয়া যাবে। তবে সোনিয়া গান্ধী নিজেই স্বীকার করেছেন তাঁরা ভোটারদের পালস বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাছাড়া মিডিয়ায় কংগ্রেসের দুর্নীতির প্রচার। এখন ইন্ডিয়ান করপোরেট হাউসগুলোর জালে বন্দী (দু-একটি বাদে) ইন্ডিয়ান মিডিয়া যা বলেছে তা হলো মোদি ঝড়ে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া অর্থাৎ আঞ্চলিক দলের সমর্থন ছাড়া কংগ্রেস সংসদীয় বিরোধী দলেও বসতে পারবে না। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় বিরোধী দলে বসতে হলে অন্তত দশ শতাংশ আসন থাকতে হবে। এদিক থেকে কংগ্রেসের দরকার অন্তত ৫৪ আসন, যা তাদের নেই। এখন কোন আঞ্চলিক দল তাদের সমর্থন ঘোষণা করলে এবং ৫৪ আসন হলে তবেই বিরোধী দলে বসতে পারবে। আঞ্চলিক দলগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে কংগ্রেসের পরই রয়েছে তামিলনাডুর চীফ মিনিস্টার জয়ললিতার নেতৃত্বাধীন AIADMK-এর ৩৭ আসন, পশ্চিম বাংলার চীফ মিনিস্টার মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪ আসন, উড়িষ্যার চীফ মিনিস্টার নবীন পাটনায়কের নেতৃত্বাধীন বিজু জনতা দল ২০ আসন এবং মহারাষ্ট্রের শিবসেনা ১৮ আসনে জয় লাভ করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আঞ্চলিক দলগুলোর কেউ কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে সংসদীয় বিরোধী আসনে বসাবে না। কংগ্রেস তার সুদূরপ্রসারী কৌশল হিসেবে কোন আঞ্চলিক দল বা দলসমূহকে বসাবে তার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
কংগ্রেসের এই বিপর্যয়ে বাংলাদেশে একটি জোট (জামায়াত-বিএনপি) দারুণভাবে উত্তেজিত। তারা হালে পানি পেয়েছেন মনে হয়। তারা একটা জিনিস একেবারেই ভুলে গেছে যে, আরএসএস বা বিজেপি কেউই ভারতের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল নয়, যদিও আরএসএস ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। পক্ষান্তরে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি দলটি যাদের নিয়ে এবং জোট বেঁধেছে তাদের মধ্যে মুসলিম লীগ, জামায়াত এবং এমনকি ভাসানী ন্যাপের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ এবং নেজামে ইসলাম সরাসরি আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি জান্তা ও ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর, বীভৎস গণহত্যাকারী মিলিটারি ইয়াহিয়ার সহযোগী হিসেবে গণহত্যা, হত্যা, নারী নির্যাতন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় অংশ নিয়েছে। অতএব বিজেপির বিজয়ে বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত যে গোঁফে তা দিচ্ছে তা অত সহজ ব্যাপার নয়। তাছাড়া গুজরাটের মোদি এখন ‘মেরা ভারত মহান’-এর প্রধানমন্ত্রী। তিনি তা রাষ্ট্রের ইন্টারেস্ট আগে দেখবেন। তাছাড়া চরম মুসলিমবিরোধী এবং ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার জন্য দায়ী (যে দাঙ্গায় ২০০০ মুসলমানকে হত্যা, মতান্তরে দশ হাজার এবং দুই লাখ মুসলমানকে বাস্তুহারা করা এবং ৫০ হাজার আজও শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। ২০০২ সালের পর মোদি সাম্প্রতিককালে একবার শরণার্থী শিবির দেখতে গেছেন, গিয়েও বলেছেন, এটা কোন শরণার্থী শিবির নয়, মুসলমান বাচ্চা বানাবার কারখানা) এই মোদি বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে জায়গা দেবে এমনটি যারা ভাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। মোদি স্বশিক্ষিত নয়, তার ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী আছে, ৪০ বছর ধরে সরাসরি রাজনীতি করে, মোদি ভাল করেই জানেন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের পূর্বাঞ্চলের অস্থির সেভেন সিস্টারের সশস্ত্র গ্রুপ কিভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় পায়, কিভাবে ট্রাকে ট্রাকে পাকিস্তানী অস্ত্র গোলা-বারুদ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পাচার হয় বা পাকিস্তানী সন্ত্রাসী বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে? তাছাড়া ভারতের রাজনীতিতে সবসময় একটা জিনিস দেখা গেছে, কোন National crisis-এর চরম পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারী এবং বিরোধীদল এক হয়ে যায় এবং সংঘবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। অথচ বাংলাদেশে বিরোধিতার ক্ষেত্রে National crisis বা National interest কোন কিছুই সরকারী ও বিরোধী দলকে এক করতে পারে না। বরং জাতীয় স্বার্থ-বিরোধী শক্তিকে সমর্থন জোগায়। যেমন গত দেড় বছর ধরে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম-আযম-নিজামী, সাকা-সাঈদী, মুজাহিদ-মীর কাশেম আলীদের বিচার হচ্ছে। এটি ’৭৫-এরপর গত ৩৯ বছরের জাতীয় দাবিরই প্রতিফলন হলেও বিরোধী বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে-এর বিরোধিতা করছে, বলছে ক্ষমতায় গেলে বিচার বন্ধ হবে, গোলামদের ছেড়ে দেয়া হবে, ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়া হবে। ভারতে এ ধরনের মানসিকতা জাতীয় অপরাধ বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে কারগিল যুদ্ধের প্রতিফলন দেখা গেছে। যেমন মোদির শপথ অনুষ্ঠানে সোনিয়া-রাহুল গান্ধী উপস্থিত ছিলেন। শপথ আরও আগে হবার কথা ছিল, একটা তারিখও ঠিক হয়েছিল, কিন্তু ঐ দিনটি রাজিব গান্ধীর মৃত্যু দিবস হওয়ায় মোদি তার শপথ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেন। অথচ আমাদের বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট তাঁর ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে কেক কাটেন কখনও ৬০ কেজি, কখনও ৬৫ কেজি, এবার হয়ত ৭০ কেজি। পার্থক্যটাও এখানেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে (১৯৯৬-২০০১) গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দেব গৌড়া এবং আই কে গুজরাল। তারা কেউ কংগ্রেসী ছিলেন না।
ক্ষমতা কারও জন্যই চিরস্থায়ী ব্যাপার নয়। হারবে আবার উঠে দাঁড়াবে এটাই সংসদীয় রাজনীতির ডিকশনারি। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া (করপোরেটদের জালে বন্দী) এবং ঐ সব মিডিয়ায় কর্মরত কিছু সাংবাদিক এবং টিভির গলাবাজরা এতই উত্তেজিত যে কংগ্রেস তো গেছে, আর উঠতে পারবে না, এটা বলে তারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের দিকে তীরটা ছুড়ছে। এসব গলাবাজদের বেশিরভাগই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং আমলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই শিক্ষিত হয় বা বুদ্ধিজীবী হয় কিংবা আমলা হলেই সব জানে, এটাও বোকারাই মনে করে। তারা আওয়ামী লীগ বা ভারতের কংগ্রেসকে চেনে না। দুই দেশের এই দুই দলই জাতীয় প্রয়োজনে জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছে- কোন সামরিক ছাউনি থেকে নয়। ঢাকা ॥ ৩০ মে ২০১৪
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2014-05-31&ni=174538

No comments:

Post a Comment