Friday, May 30, 2014

ঐশ্বর্যময় সুরের আবাহনে নজরুল সম্মেলন শুরু

ঐশ্বর্যময় সুরের আবাহনে নজরুল সম্মেলন শুরু
সংস্কৃতি সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার গ্রীষ্মের সন্ধ্যা। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ভেসে বেড়াল নজরুলের ঐশ্বর্যময় সঙ্গীতের নানা আঙ্গিকের সুর। সুরের এ জলসায় শোনায় কবির সৃষ্ট লোকজ বাংলার পল্লী সুর থেকে বৈচিত্র্যময় নানা রাগ-রাগিনীর সুরেলা মূর্ছনা। গানের সঙ্গে শ্রোতা বা দর্শকের জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক যোগায় নজরুলের কবিতা পাঠ এবং তাঁর গানের সুরে নৃত্য পরিবেশনা। আর এমন বর্ণিল আয়োজনের উপলক্ষ ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনে বাংলাদেশ নজরুলসঙ্গীত সংস্থা আয়োজিত নজরুল সম্মেলন।
দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের সূচনা হয় শুক্রবার। আয়োজনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, চিরকালই দ্রোহ ও ভালবাসায় নজরুল আমাদের জাগিয়েছেন। পথ দেখিয়েছেন। পরাধীনতার সময়ে তিনি শিকল ভাঙার গান রচনা করে আমাদের চেতনাকে উজ্জীবিত করেছেন। কিন্তু আমরা পরিপূর্ণভাবে নজরুলকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাঁকে ধারণ করতে বর্তমানে অস্থির ও হানাহানির সময় নজরুল দিকনির্দেশক হিসেব আমাদের পথ দেখাবেন। কল্যাণের সমাজ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখবে কবির সৃষ্টি। তাই চেতনায় ধারণ করতে পারলেই কেবল নজরুলকে স্মরণ করা স্বার্থক হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থার সভাপতি খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সঙ্গীত ভুবনের এক অনন্য নাম। যিনি তাঁর স্বল্পস্থায়ী কর্মকালে এক চিরকালীন আসন পেতে রেখে গেছেন সঙ্গীত পিপাসুদের চিত্তে, নন্দিত হয়েছেন শ্রোতাদের অকুণ্ঠ ভালবাসায়। আর তাঁর সেই গানকে সারাদেশে সঠিক বাণী ও সুরের গীত হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে নজরুলসঙ্গীত সংস্থা।
সংক্ষিপ্ত কথা শেষে শুরু হয় সঙ্গীতাসর। মঞ্চে আসেন সংস্থার শিল্পীরা। তিনটি সারিতে বিভক্ত হয়ে এক সুরে গেয়ে শোনান ‘দোলে ঝুলন দোলায়/দোলে আজি শাওনে।’ এর পর নজরুলের পল্লী সুর থেকে নির্বাচিত গান শোনান সঞ্জয় কবিরাজ। সুরেলা কণ্ঠে গীত হয় ‘মেঘলা নিশি ভোরে/মন যে কেমন করে।’ নুসরাত জাহান রুনার গাওয়া পল্লী সুরের সাঁওতাল আঙ্গিকের গানটি শ্রোতাদের হৃদয়ে ছড়িয়ে দেয় অপার মুগ্ধতা। মধুমাখা সুরে সুরে উচ্চারিত হয় ‘নাচের নেশায় ঘোর লেগেছে/নয়ন পড়ে ঢলে।’ মাকসুদুল রহমান মোহিত পরিবেশন করেন ‘ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি/শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে’ গানটি পরিবেশন করেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি। জোসেফ কমল রড্রিক্সের কণ্ঠে গীত হয় ‘কিশলয়ে রাঙা সজ্জা পাতিয়া/এলো কৃষ্ণ কানাইয়া’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শারমিন সাথী ইসলাম। এ ছাড়াও সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে একক কণ্ঠে গান শোনান- খালিদ হোসেন, খায়রুল আনাম শাকিল, নাসিমা শাহিন ফ্যান্সী, সুমন মজুমদার, আফরোজা খান মিতা, ছন্দা চক্রবর্তী, রেজাউর রহমান, ডালিয়া আহমেদ, সেলিনা হোসেন, শহীদ খান, মেহফুজ আল ফাহাদ, সুজন রহমান, মুস্তারী হোসেন পান্না, মাহফুজ হক চামেলী, এলবার্ট অনিমেষ, শরিফা শিরীন, সুরাইয়া আলম, পলি গুহ, রেজোয়ানুল হক, বৃষ্টি চৌধুরী ও রওশন আজমেরী খান। সমবেত কণ্ঠে ‘নবীন আশা জাগল যে রে আজ’ গানটি পরিবেশন করেন নজরুল ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা।
নজরুলের গানের সুরে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির প্রকাশে নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সামিনা হোসেন প্রেমা। নজরুলের কবিতা ও রচনা থেকে পাঠ করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং ডালি আহমেদ।
আজ শনিবার শেষ হবে নজরুল সম্মেলন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একই স্থানে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এ দিনের আয়োজনে থাকবে গান, পাঠ, আবৃত্তি ও নৃত্য। অংশ নেবেন প্রায় ৪০ জন শিল্পী। একক কণ্ঠে গান শোনাবেন ইয়াকুব আলী খান, ফেরদৌস আরা, জয়ন্তী লালা, মঈদুল ইসলাম, কল্পনা আনাম, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

চন্দ্রাবতী একাডেমির শিশুসাহিত্য সম্মেলন
ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার এই প্রতিপাদ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হলো চন্দ্রাবতী একাডেমি আয়োজিত দুই দিনব্যাপী শিশুসাহিত্য সম্মেলন। বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনের প্রথম দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয় তিনজন স্বনামধন্য লেখককে। তাঁরা হলেন এখলাসউদ্দিন আহ্মদ, সুকুমার বড়ুয়া, মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
দুই দিনের এ সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে প্রবন্ধপাঠ, আলোচনা ও ছড়া কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে দেশের শিশুসাহিত্যের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
বেঙ্গলে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত সন্ধ্যা ‘বরেন্দ্র ধ্রুপদশৈলী’
সুপ্রাচীন কাল থেকে এ উপমহাদেশের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত চর্চার সাফল্যে বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্থাৎ রাজশাহী জেলার বিশেষ অবদান রয়েছে। আর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের সমৃদ্ধ চর্চা ও ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সেই প্রয়াসের অংশ হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘বরেন্দ্র ধ্রুপদশৈলী’ শীর্ষক উচ্চাঙ্গসঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। উচ্চাঙ্গের এ গানের আসরে ধ্রুপদ ও খেয়াল পরিবেশন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী মৌসুমী বিশ্বাস ও গোল্ডেন মণ্ডল এবং শিক্ষক মোঃ আলমগীর পারভেজ, সলোক হোসেন ও ড. অসিত রায়। শুরুতেই পর পর তিনটি রাগে খেয়াল পরিবেশন করেন মৌসুমী বিশ্বাস (রাগ মধুবন্তি), গোল্ডেন মণ্ডল (রাগ ভিন্ন ষড়জ) ও সলোক হোসেন (রাগ বিহাগ)। শেষে আলমগীর পারভেজ ও ড. অসিত রায় মালকোষ ও মিয়া কি মলহার রাগে ধ্রুপদ গেয়ে শোনান। তবলায় সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম প্রধান। পাখোয়াজে ছিলেন ত্রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুষেন রায়।

আর্ট সেন্টারে আজ যৌথ প্রদর্শনী
ধানমণ্ডির ঢাকা আর্ট সেন্টারে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘লস্ট ইন দ্য আরবান ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন- ফাহমিদা ইনাম, এসএম এহসান, মনজুর রশিদ, কুন্তল বারৈ, মুজাহিদ মনজুর ও জাহিদ হাসান। সন্ধ্যা ৬টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, বিশেষ অতিথি থাকবেন আবুল বারক আলভী। প্রদর্শনী চলবে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত।

গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তি সন্ধ্যা
শুক্রবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’ শীর্ষক আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ নজরুল আবৃত্তি পরিষদ।
প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা। কবির সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও নজরুল বিশেষজ্ঞ রাজিয়া সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাসিম আহমেদ।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2014-05-31&ni=174518

No comments:

Post a Comment