Friday, May 30, 2014

দু’টাকার চাল প্রকল্প নিয়ে মোদীর দ্বারস্থ হচ্ছে মমতার সরকার

দু’টাকার চাল প্রকল্প নিয়ে মোদীর দ্বারস্থ হচ্ছে মমতার সরকার

rice
কৌশিক সরকার

বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক নির্বাচনী তরজা যাই হোক না কেন, তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে যে বিতর্কই উঠুক না কেন, কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের স্বাভাবিক পথেই হাঁটছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷

২ টাকা দেজি দরে গরিবদের চাল দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের সাহায্য চাইবে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর৷ বছরে অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টন চাল এবং ৩ লক্ষ টন গম বরাদ্দের আবেদন করবে কেন্দ্রকে৷ কারণ, রাজ্য চাইছে ওই প্রকল্পের আর্থিক দায় পুরোটাই মোদী সরকার বহন করুক, আগের মনমোহন সরকারকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও যা কানে তোলেনি৷

রাজ্যের ৩ কোটি ৩১ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের আওতায়৷ তার মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ হল দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী৷ এঁদের পরিবারকে সদস্যপিছু সপ্তাহে ২ কেজি চাল ও ৭৫০ গ্রাম আটা দেওয়া হয়৷ যার পুরো খরচই কেন্দ্রের৷ তাছাড়া জঙ্গলমহল এলাকাতেও কোনও আর্থিক মানদণ্ড ছাড়াই কেন্দ্রর চাল-গম পান সকলে৷ কিন্ত্ত বাকি যে ২ কোটি মানুষ এই খাদ্য পান, তাঁদের খরচ রাজ্য সরকারের৷ কারণ কেন্দ্রীয় যে প্রকল্প তাতে এই সুবিধা কেবলমাত্র দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীরাই পাবেন বলে নির্ধারিত রয়েছে৷ ২০১১ সালে তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, গরিবদের তিনি ২ টাকা কিলোয় চাল দেবেন৷ ক্ষমতায় আসার পর তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রেখে গরিবদের সেই আওতায় আনেন, তাবে তাঁরা দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী নন৷ সিঙ্গুরের জমিহারা পরিবারও রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের আওতায় আছে৷

এই অতিরিক্ত ২ কোটি মানুষকে চাল-গম দিতে রাজ্যের খরচ হয় মাসে ৯০ কোটি টাকা, বছরে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা৷ কারণ, রাজ্যের এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রর থেকে কোনও অতিরিক্ত বরাদ্দ মেলে না৷

রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বৃহস্পতিবার বলেন, 'রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের নয়া সরকারের কাছে অচিরেই দাবি জানানো হবে, বছরে ৫ লক্ষ টন চাল এবং ৩ লক্ষ টন গম অতিরিক্ত বরাদ্দ করুক কেন্দ্র৷ এই বিষয়ে আলোচনা করতে জুনের প্রথম সপ্তাহেই দিল্লি যাবেন রাজ্যের খাদ্য কমিশনার৷' খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'আগের সরকারকে আমরা বারে বারেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছিলাম৷ আমরা মনে করি, এই থেকে বড় খাদ্য সুরক্ষার প্রকল্প দেশে দ্বিতীয়টি নেই৷ এ বার দেখতে চাই নতুন সরকার কোন পথে হাঁটে৷'

বুধবারই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রীদের বলে দিয়েছেন, রাজ্যগুলির উত্থাপিত বিষয়গুলি যেন সরাসরি তাঁর দপ্তরের গোচরে আনা হয়৷ ওয়াকিবহালমহল মনে করছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতোই রাজ্যগুলির সঙ্গে সু-সম্পর্ক মেনে চলতে আগ্রহী৷ সেই কারণেই গোড়াতেই রাজ্যের বিষয়গুলি তাঁর গোচরে আনার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী৷

সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের স্বাভাবিক চাহিদা মেটাতে কেন্দ্র বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল বরাদ্দ করে থাকে৷ দু-টাকা কিলো চালের প্রকল্পের জন্য বছরে দরকার হয় অতিরিক্ত ৪.৫ লাখ টন৷ কেন্দ্রের বিগত সরকার এই অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ না করায় রাজ্যকে খোলা বাজার থেকে তা কিনতে হয়৷

এই প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে গরিবদের কাছে জনপ্রিয় করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ তাই যে সামাজিক প্রকল্প রাজনীতিতেও লাভজনক, আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও রাজ্য সরকার সেখান থেকে সরবে না বলেই মনে করছে তারা৷ ফলে 'আচ্ছে দিন' দেখার আশায় এ বার মোদীর কাছেই দরবার৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/mamata-govt-seeks-centres-help-to-provide-2-rupee/kg-rice-prjoect/articleshow/35736798.cms?

No comments:

Post a Comment