একরাম হত্যাকান্ড ॥ ফেনীর মানুষের কান্না থামেনি
মাস্টারপাড়ার বাড়িতে, মসজিদে মসজিদে ভক্ত শুভানুধ্যায়ীদের ঢল ॥ সমস্বরে আওয়াজ- খুনীদের বিচার চাই
রাজন ভট্টাচার্য/ওছমান হারুন মাহমুদ, ফেনী থেকে ॥ সকাল থেকেই ফেনীর আকাশে মেঘ। এখানকার মানুষের মতোই প্রকৃতির মনও যেন ভাল নেই। বিষণ্ন। অন্ধকার আকাশ। থেমে থেমে বৃষ্টি। দমকা হাওয়া। কখনও ঝড়ো বাতাস। চারদিকে যেন কিসের শূন্যতা আর হাহাকার। শহরজুড়ে অনেকটাই নিস্তব্দতা। শুক্রবার ফেনী ও ফুলগাজী শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মসূচী। প্রতিটি কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আয়োজনে। তবে সব আয়োজন থেকেই উচ্চারিত হয়েছে এখানকার মানুষের কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা। সমস্বরে সবাই একরাম হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। আবেগঘন বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় বাসিন্দারা কতটা ভালবাসতেন নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে। এক কথায় জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। ফেনীর রাজনীতিতে তাঁর শূন্যতা যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না। কেউই একবারের জন্যও ভাবতে পারছেন না একরাম নেই। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সবার কথা এক, একরাম আছেন। দাফতরিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক কাজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। কখনও ঢাকা, চট্টগ্রাম, কখনও দেশের বাইরে কিংবা ফেনী। একরামের ফিরে আসার অপেক্ষা করেন অনেকে...।
আবেগ আর ভালবাসা যতই থাক, একরাম নেই তাই সত্য। বাস্তব। একথা মেনে না নেয়ার কোন উপায় আছে? শুক্রবার তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় ফেনীর আকাশে উঠেছে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের ১০ লাখ হাত। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মসজিদে-মসজিদে নেমেছিল মানুষের ঢল। সবাই তাঁর জন্য হাত তুলে দোয়া চেয়েছেন। প্রিয় নেতার জন্য অঝোরে কেঁদেছেন কেউ কেউ। কোন নেতার মৃত্যুতে এত কান্না, আবেগ, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ যেন আর কখনই দেখেনি এখানকার মানুষ। চোখে জল নিয়ে বাবার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে একরামের অবুঝ শিশু সন্তানরাও হাত তুলেছিল। ‘যেখানেই থাক; বাবা যেন ভালো থাকে। নিরাপদে থাকে। শান্তিতে ঘুমোতে পারে।’ নিষ্পাপ শিশুদের যারা এতিম করেছে, পিতৃস্নেহ থেকে সারাজীবনের জন্য বঞ্চিত করেছে তাদের কি বিচার হবে? এ প্রশ্নই এখন সবার। একরামের শিশু সন্তানদের কচিকচি হাতগুলো যখন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে তোলা হয়েছে তখন বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবেই। ধরা পড়বে খুনীরা। পার পাবে না নির্দেশদাতারাও; এমন বিশ্বাস শহরবাসীর।
ছুটির দিন। সকাল থেকেই ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। বলতে গেলে পায়ে পায়ে মানুষের ঢল নেমেছিল এ মহল্লায়। সবার গন্তব্য নূরুল হক মাস্টারের বাসা। মহল্লার নাম মাস্টারপাড়া। নিহত উপজেলা চেয়ারম্যানের বাবা নূরুল হক ছিলেন পেশায় শিক্ষক। সবাই চেনেন তাঁকে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন তিনি। তাঁর শূন্যতায়ও একরামদের বাসাটি মাস্টারবাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বাবা নেই। সন্তান ও জনপ্রতিনিধি একরামুল হক একরামকেও হত্যা করা হয়েছে। রয়ে গেছেন শুভানুধ্যায়ীরা। তাই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে মহল্লাবাসী, ব্যবসায়ী বন্ধুমহল, পরিচিত জন সবাই ভিড় জমিয়েছিলেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে। চারতলা বাড়ির তিনতলায় থাকেন একরামের স্ত্রী ও সন্তানরা। অন্য ফ্ল্যাটে থাকেন একরামের ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। একরামের মা নেই। স্বজনহারা মানুষকে; কিইবা সান্ত¡না দেবার আছে। একরামের স্ত্রী তাসমিন আক্তারের চোখে তো শুধু স্মৃতি-আর স্মৃতি। হাজারও স্মৃতি, ফেলে আসা আতীত আর ভবিষ্যত পরিকল্পনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে রাত দিন। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। শত সান্ত¡না আর পাশে থাকার আশ্বাস তো অবুঝ শিশুদের পিতৃস্নেহ ফিরে পাওয়া যাবে না। স্ত্রীও ফিরে পাবেন না তাঁর সবচেয়ে প্রিয়জন; বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন একরামকে। তবুও বাঁচতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সন্তানদের মানুষ করতে হবে। একথাই ছিল সান্ত¡না জানাতে আসা সবার মুখে মুখে।
সবাই যখন সান্ত¡না আর আলোচনায় ব্যস্ত, তখন ঘর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একরামের হাজারও স্মৃতি। বাবার ছবি বার বার দেখছে একরামের তিন সন্তান। বেড়াতে যাওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ মুহূর্তের ছবি, সন্তান কোলে একরাম, রাজনৈতিক কর্মসূচীর হাজারও ছবি তাঁর বাসার এ্যালবামজুড়ে। দেয়ালজুড়ে বড় বড় ছবিও টাঙানো আছে। এখন সবকিছুই যেন জীবন্ত। কথা বলছে। এই বুঝি ফুলগাজী থেকে ফিরলেন একরাম, গাড়ির শব্দ শুনলেই মন ‘ছাত’ করে ওঠে। এই বুঝি বাসার কলিং বেল বাজলো। একরামের কলিং বেল বাজানোর বিশেষত্ব ছিল। এরকম শব্দ হলেই স্ত্রী তাসমিন বুঝতে পারতেন এ আর কেউ নেই তাঁর স্বামীই এসেছেন। তবে মামলা ও আসামিদের গ্রেফতার নিয়ে একরামের পরিবারের সদস্যদের আছে চাপা ক্ষোভ। কষ্ট। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা মুখ খুলতে পারছেন না। নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে। হয়ত বিচারের বাণীও নিভৃতে কাঁদবে এক সময়।
একজন বিশ্বাস ঘাতকের গল্প
হিন্দু পৌরাণে আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- ‘তোমাকে বধিবে যে, গকুলে বাড়িছে সে।’ পৌরাণের একথাটি মিলে গেছে একরাম হত্যাকান্ডের বেলায়। এখানেও যাকে বিশ্বাস করে রাস্তা থেকে তুলে এনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন এমনকি রাজনৈতিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেই বেলাল হোসেন বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে শেষ পর্যন্ত একরামকে বধ করেছে।
প্রাণ দিয়ে একরামকে বিশ্বাসের মূল্য শোধ করতে হয়েছে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেই বিশ্বাস ঘাতক একরামের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু একবারের জন্যও এ ঘাতককে চিনতে পারেননি অন্ধ বিশ্বাসী একরাম।
এক সময়ে সমাজের বখাটেদের একজন ছিলেন বেলাল হোসেন। একরাম তাকে হাত ধরে ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত করেন। সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলে থাকা অবস্থায় তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন একরাম। একপর্যায়ে তাদের দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে- বেলাল ছায়ার মতো একরামের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। এর পুরস্কার হিসেবে বেলালকে আনন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন একরাম। এর মধ্য দিয়ে বেলাল আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার দিনের কথা। ২০ মে সকালে ফুলগাজী থেকে ফেনীর মাস্টারপাড়ায় একরামের বাসায় আসেন বেলাল হোসেন। একসঙ্গে এক টেবিলে বসে নাস্তা করেন তারা। খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একরামের গতিবিধি নজরে রাখা এবং সেদিন কোন আর্মস ও কোন ধরনের পোশাক, কোন গাড়ির কোন সিটে তিনি বসেছেন এসব তথ্য কিলারদের জানানোর দায়িত্ব ছিল তার ওপর। যা সঠিকভাবে পালনও করেছেন তিনি।
একরাম বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাঁর পেছন পেছন মোটরসাইকেলে ডায়াবেটিস হাসপাতালে আসেন বেলাল। এই হাসপাতালে গাড়ি থেকে নেমে একরাম তাঁর কিছু কাগজপত্র সই করান। তখন এই ঘাতক সঙ্গেই ছিল। হাসপাতাল থেকে একরাম বের হওয়ার পর বেলাল তাঁর গাড়ি অনুসরণ করে শহরের রেলগেট পর্যন্ত যান। এর মাত্র পাঁচশ গজ সামনে বিলাসী সিনেমা হলের কাছে ওঁৎপেতে ছিল কিলাররা। অর্থাৎ যম দূতের মুখের সামনে পর্যন্ত একরামের যাওয়া নিশ্চিত করেছিলেন বেলাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই একরামকে গুলি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে কিলাররা। যখন একরামসহ দাউ দাউ করে গাড়ি জ্বলছিল ঠিক তখন এর পাশ দিয়েই বেলাল দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল দিয়ে আনন্দপুরের দিকে যায়। সেখানে গিয়ে বন্ধুদের বলে, একরামকে সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ কথাশুনে রাকিব নামে একরামের এক ঘনিষ্ঠজন তাকে জিজ্ঞেস করে একরাম পুড়ে মারা গেলে তুমি এখানে কেন? একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা বেলালের আনন্দপুরের ইসলামপুরের বাড়িতে আগুন দেয়। প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় বেলাল। দেশ ত্যাগের চেষ্টা ছিল তার। কিন্তু বিধিবাম। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ফেনীতে আনে। সে পুলিশকে বলেছে, প্রাণভয়ে সে পালিয়ে ছিল। একরাম হত্যার সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
একই অবস্থা জাহিদ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও। যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন একরাম সেই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বানিয়েছিলেন জাহিদ চৌধুরীকে। প্রত্যাশা ছিল ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সার্বিকভাবে দলকে সুসংগঠিত করা। তা হয়নি। শিষ্যরাই গুরুকে হত্যার জন্য ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়।
বন্ধুত্বে ফাটল
জয়নাল হাজারীকে হটানোর পর একরাম ও বর্তমান সাংসদ নিজাম হাজারী হরিহর আত্মা হিসেবে কাজ করেছেন। বন্ধুত্বের গভীরতা এতই ছিল যে, ঠিকাদারি বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক শলাপরামর্শ এক সঙ্গেই করতেন। এক হয়ে পথ চলতেন। মেয়র নির্বাচনে নিজামের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে প্রচার চালিয়েছেন। তখন নিজাম হাজারী ফেনীর পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের এ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাল দৃষ্টিতে দেখেননি অনেকে। নিজাম হাজারীর থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর কবীর আদেল নারদ মনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নিজামকে কান কথা বলে, কুবুদ্ধি দিয়ে বন্ধুত্বে ফাটল ধরানোর কাজটি এগিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে আদেল তার মিশনে সফলকাম হন। নিজেও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হয়ে অবস্থান পাকা করেন। দূরত্ব বেড়ে যায় একরাম ও মিজানের মধ্যে। এ দূরত্বের সূত্র ধরে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের প্রথমদিকে একরামকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেননি নিজাম। পরবর্তীতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে একরামের নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করেছিলেন সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী। এখানেই শেষ নয়। আদেল কূটকৌশল চেলে একরামকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে জাহিদকে ফুঁসলিয়ে তোলে। একরাম থাকলে জাহিদ রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না এমনকি ইউনিয়ন বা উপজেলা নির্বাচন করার সুযোগ থাকবে না জাহিদের। জাহিদ বিষয়টি লুফে নিয়ে বিভিন্নজনের সহযোগিতায় একরামকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ মে একরাম নিহত হন।
পুলিশ তুমি কার?
দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুলিশের ধর্ম হলেও একরামকে যখন হত্যা করা হচ্ছিল এর ঠিক ৫০০ গজ দূরে অর্থাৎ সদর হাসপাতাল মোড়ে পুলিশের টহল গাড়ি অবস্থান করছিল। একরামের পেছনে ফুলগাজী উপজেলার গাড়িতে থাকা তাঁর সহযাত্রীরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে হাসপাতাল মোড়ে অবস্থানরত পুলিশকে বিষয়টি জানালেও তারা এগিয়ে আসেনি। গাড়িতে থাকা ইউসুফ ও তার সঙ্গীরা একরামকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে পুলিশের হাতেপায়ে ধরে। তবুও পাষণ্ড হৃদয় গলেনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই একরামকে পুড়িয়ে কিলাররা বীরদর্পে হেঁটে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গাড়িতে আগুন দেয়ার আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে একরামকে বাঁচানো যেত। ঘটনার পর পর খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ফেনী পুলিশ ৩০ জনকে আটক করে। ২৮ জনকে মুচলেখা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে দুইজনকে আটক দেখায়। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। পরবর্তীতে একটি ভিডিওফুটেজ প্রকাশিত হওয়ায় মামলার মোড় ঘুরে যায়। চিহ্নিত হয় কিলাররা। সব মিলিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে পুলিশ তুমি কার।
পাঁচ দিনের রিমান্ডে বেলাল
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরাম হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেনকে (৪৫) পাঁচদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ শুক্রবার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খাইরুল আমিনের আদালতে বেলালকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আবুল কালাম আজাদ জানান, বুধবার রাত ৩টার দিকে একরামুল হক একরাম (৪৭) হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বেলালকে গ্রেফতার করে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ফেনী থানার অধীনে ফেনী পুলিশ লাইনে হস্তান্তর করা হয়।
রাজন ভট্টাচার্য/ওছমান হারুন মাহমুদ, ফেনী থেকে ॥ সকাল থেকেই ফেনীর আকাশে মেঘ। এখানকার মানুষের মতোই প্রকৃতির মনও যেন ভাল নেই। বিষণ্ন। অন্ধকার আকাশ। থেমে থেমে বৃষ্টি। দমকা হাওয়া। কখনও ঝড়ো বাতাস। চারদিকে যেন কিসের শূন্যতা আর হাহাকার। শহরজুড়ে অনেকটাই নিস্তব্দতা। শুক্রবার ফেনী ও ফুলগাজী শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মসূচী। প্রতিটি কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আয়োজনে। তবে সব আয়োজন থেকেই উচ্চারিত হয়েছে এখানকার মানুষের কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা। সমস্বরে সবাই একরাম হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। আবেগঘন বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় বাসিন্দারা কতটা ভালবাসতেন নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে। এক কথায় জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। ফেনীর রাজনীতিতে তাঁর শূন্যতা যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না। কেউই একবারের জন্যও ভাবতে পারছেন না একরাম নেই। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সবার কথা এক, একরাম আছেন। দাফতরিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক কাজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। কখনও ঢাকা, চট্টগ্রাম, কখনও দেশের বাইরে কিংবা ফেনী। একরামের ফিরে আসার অপেক্ষা করেন অনেকে...।
আবেগ আর ভালবাসা যতই থাক, একরাম নেই তাই সত্য। বাস্তব। একথা মেনে না নেয়ার কোন উপায় আছে? শুক্রবার তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় ফেনীর আকাশে উঠেছে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের ১০ লাখ হাত। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মসজিদে-মসজিদে নেমেছিল মানুষের ঢল। সবাই তাঁর জন্য হাত তুলে দোয়া চেয়েছেন। প্রিয় নেতার জন্য অঝোরে কেঁদেছেন কেউ কেউ। কোন নেতার মৃত্যুতে এত কান্না, আবেগ, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ যেন আর কখনই দেখেনি এখানকার মানুষ। চোখে জল নিয়ে বাবার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে একরামের অবুঝ শিশু সন্তানরাও হাত তুলেছিল। ‘যেখানেই থাক; বাবা যেন ভালো থাকে। নিরাপদে থাকে। শান্তিতে ঘুমোতে পারে।’ নিষ্পাপ শিশুদের যারা এতিম করেছে, পিতৃস্নেহ থেকে সারাজীবনের জন্য বঞ্চিত করেছে তাদের কি বিচার হবে? এ প্রশ্নই এখন সবার। একরামের শিশু সন্তানদের কচিকচি হাতগুলো যখন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে তোলা হয়েছে তখন বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবেই। ধরা পড়বে খুনীরা। পার পাবে না নির্দেশদাতারাও; এমন বিশ্বাস শহরবাসীর।
ছুটির দিন। সকাল থেকেই ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। বলতে গেলে পায়ে পায়ে মানুষের ঢল নেমেছিল এ মহল্লায়। সবার গন্তব্য নূরুল হক মাস্টারের বাসা। মহল্লার নাম মাস্টারপাড়া। নিহত উপজেলা চেয়ারম্যানের বাবা নূরুল হক ছিলেন পেশায় শিক্ষক। সবাই চেনেন তাঁকে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন তিনি। তাঁর শূন্যতায়ও একরামদের বাসাটি মাস্টারবাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বাবা নেই। সন্তান ও জনপ্রতিনিধি একরামুল হক একরামকেও হত্যা করা হয়েছে। রয়ে গেছেন শুভানুধ্যায়ীরা। তাই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে মহল্লাবাসী, ব্যবসায়ী বন্ধুমহল, পরিচিত জন সবাই ভিড় জমিয়েছিলেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে। চারতলা বাড়ির তিনতলায় থাকেন একরামের স্ত্রী ও সন্তানরা। অন্য ফ্ল্যাটে থাকেন একরামের ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। একরামের মা নেই। স্বজনহারা মানুষকে; কিইবা সান্ত¡না দেবার আছে। একরামের স্ত্রী তাসমিন আক্তারের চোখে তো শুধু স্মৃতি-আর স্মৃতি। হাজারও স্মৃতি, ফেলে আসা আতীত আর ভবিষ্যত পরিকল্পনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে রাত দিন। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। শত সান্ত¡না আর পাশে থাকার আশ্বাস তো অবুঝ শিশুদের পিতৃস্নেহ ফিরে পাওয়া যাবে না। স্ত্রীও ফিরে পাবেন না তাঁর সবচেয়ে প্রিয়জন; বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন একরামকে। তবুও বাঁচতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সন্তানদের মানুষ করতে হবে। একথাই ছিল সান্ত¡না জানাতে আসা সবার মুখে মুখে।
সবাই যখন সান্ত¡না আর আলোচনায় ব্যস্ত, তখন ঘর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একরামের হাজারও স্মৃতি। বাবার ছবি বার বার দেখছে একরামের তিন সন্তান। বেড়াতে যাওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ মুহূর্তের ছবি, সন্তান কোলে একরাম, রাজনৈতিক কর্মসূচীর হাজারও ছবি তাঁর বাসার এ্যালবামজুড়ে। দেয়ালজুড়ে বড় বড় ছবিও টাঙানো আছে। এখন সবকিছুই যেন জীবন্ত। কথা বলছে। এই বুঝি ফুলগাজী থেকে ফিরলেন একরাম, গাড়ির শব্দ শুনলেই মন ‘ছাত’ করে ওঠে। এই বুঝি বাসার কলিং বেল বাজলো। একরামের কলিং বেল বাজানোর বিশেষত্ব ছিল। এরকম শব্দ হলেই স্ত্রী তাসমিন বুঝতে পারতেন এ আর কেউ নেই তাঁর স্বামীই এসেছেন। তবে মামলা ও আসামিদের গ্রেফতার নিয়ে একরামের পরিবারের সদস্যদের আছে চাপা ক্ষোভ। কষ্ট। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা মুখ খুলতে পারছেন না। নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে। হয়ত বিচারের বাণীও নিভৃতে কাঁদবে এক সময়।
একজন বিশ্বাস ঘাতকের গল্প
হিন্দু পৌরাণে আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- ‘তোমাকে বধিবে যে, গকুলে বাড়িছে সে।’ পৌরাণের একথাটি মিলে গেছে একরাম হত্যাকান্ডের বেলায়। এখানেও যাকে বিশ্বাস করে রাস্তা থেকে তুলে এনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন এমনকি রাজনৈতিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেই বেলাল হোসেন বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে শেষ পর্যন্ত একরামকে বধ করেছে।
প্রাণ দিয়ে একরামকে বিশ্বাসের মূল্য শোধ করতে হয়েছে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেই বিশ্বাস ঘাতক একরামের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু একবারের জন্যও এ ঘাতককে চিনতে পারেননি অন্ধ বিশ্বাসী একরাম।
এক সময়ে সমাজের বখাটেদের একজন ছিলেন বেলাল হোসেন। একরাম তাকে হাত ধরে ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত করেন। সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলে থাকা অবস্থায় তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন একরাম। একপর্যায়ে তাদের দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে- বেলাল ছায়ার মতো একরামের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। এর পুরস্কার হিসেবে বেলালকে আনন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন একরাম। এর মধ্য দিয়ে বেলাল আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার দিনের কথা। ২০ মে সকালে ফুলগাজী থেকে ফেনীর মাস্টারপাড়ায় একরামের বাসায় আসেন বেলাল হোসেন। একসঙ্গে এক টেবিলে বসে নাস্তা করেন তারা। খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একরামের গতিবিধি নজরে রাখা এবং সেদিন কোন আর্মস ও কোন ধরনের পোশাক, কোন গাড়ির কোন সিটে তিনি বসেছেন এসব তথ্য কিলারদের জানানোর দায়িত্ব ছিল তার ওপর। যা সঠিকভাবে পালনও করেছেন তিনি।
একরাম বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাঁর পেছন পেছন মোটরসাইকেলে ডায়াবেটিস হাসপাতালে আসেন বেলাল। এই হাসপাতালে গাড়ি থেকে নেমে একরাম তাঁর কিছু কাগজপত্র সই করান। তখন এই ঘাতক সঙ্গেই ছিল। হাসপাতাল থেকে একরাম বের হওয়ার পর বেলাল তাঁর গাড়ি অনুসরণ করে শহরের রেলগেট পর্যন্ত যান। এর মাত্র পাঁচশ গজ সামনে বিলাসী সিনেমা হলের কাছে ওঁৎপেতে ছিল কিলাররা। অর্থাৎ যম দূতের মুখের সামনে পর্যন্ত একরামের যাওয়া নিশ্চিত করেছিলেন বেলাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই একরামকে গুলি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে কিলাররা। যখন একরামসহ দাউ দাউ করে গাড়ি জ্বলছিল ঠিক তখন এর পাশ দিয়েই বেলাল দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল দিয়ে আনন্দপুরের দিকে যায়। সেখানে গিয়ে বন্ধুদের বলে, একরামকে সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ কথাশুনে রাকিব নামে একরামের এক ঘনিষ্ঠজন তাকে জিজ্ঞেস করে একরাম পুড়ে মারা গেলে তুমি এখানে কেন? একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা বেলালের আনন্দপুরের ইসলামপুরের বাড়িতে আগুন দেয়। প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় বেলাল। দেশ ত্যাগের চেষ্টা ছিল তার। কিন্তু বিধিবাম। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ফেনীতে আনে। সে পুলিশকে বলেছে, প্রাণভয়ে সে পালিয়ে ছিল। একরাম হত্যার সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
একই অবস্থা জাহিদ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও। যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন একরাম সেই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বানিয়েছিলেন জাহিদ চৌধুরীকে। প্রত্যাশা ছিল ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সার্বিকভাবে দলকে সুসংগঠিত করা। তা হয়নি। শিষ্যরাই গুরুকে হত্যার জন্য ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়।
বন্ধুত্বে ফাটল
জয়নাল হাজারীকে হটানোর পর একরাম ও বর্তমান সাংসদ নিজাম হাজারী হরিহর আত্মা হিসেবে কাজ করেছেন। বন্ধুত্বের গভীরতা এতই ছিল যে, ঠিকাদারি বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক শলাপরামর্শ এক সঙ্গেই করতেন। এক হয়ে পথ চলতেন। মেয়র নির্বাচনে নিজামের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে প্রচার চালিয়েছেন। তখন নিজাম হাজারী ফেনীর পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের এ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাল দৃষ্টিতে দেখেননি অনেকে। নিজাম হাজারীর থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর কবীর আদেল নারদ মনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নিজামকে কান কথা বলে, কুবুদ্ধি দিয়ে বন্ধুত্বে ফাটল ধরানোর কাজটি এগিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে আদেল তার মিশনে সফলকাম হন। নিজেও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হয়ে অবস্থান পাকা করেন। দূরত্ব বেড়ে যায় একরাম ও মিজানের মধ্যে। এ দূরত্বের সূত্র ধরে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের প্রথমদিকে একরামকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেননি নিজাম। পরবর্তীতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে একরামের নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করেছিলেন সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী। এখানেই শেষ নয়। আদেল কূটকৌশল চেলে একরামকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে জাহিদকে ফুঁসলিয়ে তোলে। একরাম থাকলে জাহিদ রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না এমনকি ইউনিয়ন বা উপজেলা নির্বাচন করার সুযোগ থাকবে না জাহিদের। জাহিদ বিষয়টি লুফে নিয়ে বিভিন্নজনের সহযোগিতায় একরামকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ মে একরাম নিহত হন।
পুলিশ তুমি কার?
দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুলিশের ধর্ম হলেও একরামকে যখন হত্যা করা হচ্ছিল এর ঠিক ৫০০ গজ দূরে অর্থাৎ সদর হাসপাতাল মোড়ে পুলিশের টহল গাড়ি অবস্থান করছিল। একরামের পেছনে ফুলগাজী উপজেলার গাড়িতে থাকা তাঁর সহযাত্রীরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে হাসপাতাল মোড়ে অবস্থানরত পুলিশকে বিষয়টি জানালেও তারা এগিয়ে আসেনি। গাড়িতে থাকা ইউসুফ ও তার সঙ্গীরা একরামকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে পুলিশের হাতেপায়ে ধরে। তবুও পাষণ্ড হৃদয় গলেনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই একরামকে পুড়িয়ে কিলাররা বীরদর্পে হেঁটে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গাড়িতে আগুন দেয়ার আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে একরামকে বাঁচানো যেত। ঘটনার পর পর খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ফেনী পুলিশ ৩০ জনকে আটক করে। ২৮ জনকে মুচলেখা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে দুইজনকে আটক দেখায়। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। পরবর্তীতে একটি ভিডিওফুটেজ প্রকাশিত হওয়ায় মামলার মোড় ঘুরে যায়। চিহ্নিত হয় কিলাররা। সব মিলিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে পুলিশ তুমি কার।
পাঁচ দিনের রিমান্ডে বেলাল
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরাম হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেনকে (৪৫) পাঁচদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ শুক্রবার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খাইরুল আমিনের আদালতে বেলালকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আবুল কালাম আজাদ জানান, বুধবার রাত ৩টার দিকে একরামুল হক একরাম (৪৭) হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বেলালকে গ্রেফতার করে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ফেনী থানার অধীনে ফেনী পুলিশ লাইনে হস্তান্তর করা হয়।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-05-31&ni=174504
No comments:
Post a Comment