জাপান সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ॥ র্যাব বাতিল সম্ভব নয়
০ যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বিচার শেষ হবে
০ জামায়াতে ইসলামীর বিচার হবে হই চই করার কিছু নেই
০ জাপানের দেয়া ৬শ’ কোটি ডলার উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে
০ জামায়াতে ইসলামীর বিচার হবে হই চই করার কিছু নেই
০ জাপানের দেয়া ৬শ’ কোটি ডলার উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এবার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে পাল্টা খোঁচা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন নিজেই পচছেন। তাকে ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখা হচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রশ্নে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি চান মধ্যবর্তী নির্বাচন? আপনারা চাইলে দিতে পারি। তবে পদ্মা সেতুসহ উন্নয়নমূলক যে কাজ শুরু করেছি সেটা আমরা শেষ করতে চাই।’ র্যাব বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, র্যাব বাস্তবতা, বাতিল করা সম্ভব নয়।
গত ২৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বর্তমান মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পচতে সময় দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পচলোটা কে? নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উঁনি নিজেই তো পচে যাচ্ছেন, এখন তো সব জায়গায় ফরমালিন। ফরমালিন দিয়ে তাকে তাজা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিএনপিকে ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখার চেষ্টা করছি। না হলে এত কথা উঁনি কিভাবে বলছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী জাপানে চারদিনের সরকারী সফর শেষে শনিবার বিকেলে গণভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি তাঁর জাপান সফরের কার্যক্রম ছাড়াও চলমান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে বরং কথায় কথায় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত শেখ হাসিনার সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে আসছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করা ‘ভুল’ ছিল। কোন রাজনীতিক যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার দায় জনগণ নেবে কেন? তার ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে।’
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘যে নির্বাচন ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে, সে নির্বাচন অবৈধ হয় কিভাবে? বিদেশে ৪০ শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন বৈধ হলে বাংলাদেশে হবে না কেন?’ প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জন্মের ইতিহাস টেনে বলেন, যাঁরা বৈধতার প্রশ্ন আনে, তাদের জন্ম তো অবৈধভাবে। যাদের জন্ম অবৈধভাবে, তারা সব কিছুই অবৈধ দেখে।’
তার সরকারের বৈধতা প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর অবৈধ খুনী মোশতাককে দিয়েই তো জিয়া সেনাপ্রধান হয়। তার পর সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। জিয়া একাধারে সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন সেটা কোন আইনে? আর জিয়ার হাতেই জাগদল থেকে বিএনপির জন্ম হয়েছে রাজনীতির কোন নিয়ম মেনে?
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সংবিধানেই রয়েছে জানিয়ে এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘উনারা এলেই তো হতো। আর যাঁরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিলেন না কেন? আমরা তো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে শক্ত হাতে প্রশাসন চালিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছি।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বিচার শুরু হয়েছে যখন শেষও হবে। জাতির পিতার হত্যাকা-ের বিচারও শেষ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শেষ হবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন পর্যন্ত ফোন করেছিলেন। আরও অনেকের কাছ থেকেই ফোন এসেছে। কিন্তু আমাকে থামাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা রায় কার্যকর করেছে। বাকিদের বিচারও শেষ হবে।’ যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে উচ্চ আদালতে জামায়াতে ইসলামীর একটি বিচার চলছে। সেটা শেষ না হলে একই ধারার আরেকটি মামলা করা যায় না। ওই মামলা আগে নিষ্পন্ন হতে দিন। আইনমন্ত্রী যেটা বাস্তবসম্মত সেটাই বলেছেন। এটা নিয়ে হই চই করার কিছু নেই।’
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রবর্তন করেছিল। এখন সেই দলের নেত্রীই র্যাব বিলুপ্তির কথা বলছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, র্যাব এখন একটি বাস্তবতা। বললেই চট করে র্যাব বাতিল করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এখন র্যাব বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। অথচ তারাই র্যাব গঠন করেছিল। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় মানুষ মারা হয়েছে। তখন কেউ কথা বলেনি, এখন কেন র্যাবের বিরুদ্ধে কথা উঠছে! বললেই চট করে র্যাব বাতিল করা সম্ভব নয়, র্যাবতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভাল কাজও করছে।’
বিএনপির পাঁচ বছরের শাসনামলে এক হাজারেরও বেশি হত্যাকা- ঘটে র্যাবের হাতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে র্যাবকে আরও বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করতে থাকে। ধীরে ধীরে র্যাব মানুষের কাছে ভরসার একটি বাহিনীতেই পরিণত হয়। এ অবস্থায় কেউ চাইলেই র্যাবকে বন্ধ করে দেয়া যাবে না। র্যাবের কেউ কেউ কিছু কিছু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
নতুন সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত করেছি। উনি আসুক, আমরাও যাব। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে আমাদের মধ্যে আসা-যাওয়া থাকবে। সে সঙ্গে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যারও সমাধান হবে।’
বিদেশি অতিথিদের সম্মাননার সোনা চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সোনার পরিমাণ কত সেটা বড় কথা নয়। বিদেশী বন্ধুদের আমরা সম্মান দিয়েছি সেটাই বড় কথা। এটা নিয়ে বেশি হই চই করলে নিজেরাই চোর হয়ে যাব। এটা দেশের সম্মানের বিষয়। হঠাৎ কিছু লোক এটা নিয়ে বেশি হই চই করছে। তারা এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। এ ব্যাপারে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার, আমরা নিচ্ছি।’
নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। নূর হোসেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপি করে এখন আওয়ামী লীগ করছে। আমরা তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিএনপি হলে ব্যবস্থা নিত না। ফেনীতে নিজেদের লোক হওয়া সত্ত্বেও আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
র্যাবের তিন কর্মকর্তার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের কাছে নিশ্চয় অনেক তথ্য আছে। তারা সে তথ্য দিলে তদন্তের জন্য ভাল হয়।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ৪ দিনের জাপান সফরকে সফল উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাপান সফর সফল হয়েছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হলো। সফরকালে ২ দেশ যৌথ ইশতেহারে সই করেছি। জাপানের দেয়া ৬শ’ কোটি ডলার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখছে। জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’ জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ছাড়াও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ২৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বর্তমান মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পচতে সময় দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পচলোটা কে? নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উঁনি নিজেই তো পচে যাচ্ছেন, এখন তো সব জায়গায় ফরমালিন। ফরমালিন দিয়ে তাকে তাজা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিএনপিকে ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখার চেষ্টা করছি। না হলে এত কথা উঁনি কিভাবে বলছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী জাপানে চারদিনের সরকারী সফর শেষে শনিবার বিকেলে গণভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি তাঁর জাপান সফরের কার্যক্রম ছাড়াও চলমান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে বরং কথায় কথায় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত শেখ হাসিনার সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে আসছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করা ‘ভুল’ ছিল। কোন রাজনীতিক যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার দায় জনগণ নেবে কেন? তার ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে।’
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘যে নির্বাচন ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে, সে নির্বাচন অবৈধ হয় কিভাবে? বিদেশে ৪০ শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন বৈধ হলে বাংলাদেশে হবে না কেন?’ প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জন্মের ইতিহাস টেনে বলেন, যাঁরা বৈধতার প্রশ্ন আনে, তাদের জন্ম তো অবৈধভাবে। যাদের জন্ম অবৈধভাবে, তারা সব কিছুই অবৈধ দেখে।’
তার সরকারের বৈধতা প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর অবৈধ খুনী মোশতাককে দিয়েই তো জিয়া সেনাপ্রধান হয়। তার পর সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। জিয়া একাধারে সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন সেটা কোন আইনে? আর জিয়ার হাতেই জাগদল থেকে বিএনপির জন্ম হয়েছে রাজনীতির কোন নিয়ম মেনে?
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সংবিধানেই রয়েছে জানিয়ে এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘উনারা এলেই তো হতো। আর যাঁরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিলেন না কেন? আমরা তো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে শক্ত হাতে প্রশাসন চালিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছি।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বিচার শুরু হয়েছে যখন শেষও হবে। জাতির পিতার হত্যাকা-ের বিচারও শেষ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শেষ হবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন পর্যন্ত ফোন করেছিলেন। আরও অনেকের কাছ থেকেই ফোন এসেছে। কিন্তু আমাকে থামাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা রায় কার্যকর করেছে। বাকিদের বিচারও শেষ হবে।’ যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে উচ্চ আদালতে জামায়াতে ইসলামীর একটি বিচার চলছে। সেটা শেষ না হলে একই ধারার আরেকটি মামলা করা যায় না। ওই মামলা আগে নিষ্পন্ন হতে দিন। আইনমন্ত্রী যেটা বাস্তবসম্মত সেটাই বলেছেন। এটা নিয়ে হই চই করার কিছু নেই।’
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রবর্তন করেছিল। এখন সেই দলের নেত্রীই র্যাব বিলুপ্তির কথা বলছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, র্যাব এখন একটি বাস্তবতা। বললেই চট করে র্যাব বাতিল করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এখন র্যাব বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। অথচ তারাই র্যাব গঠন করেছিল। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় মানুষ মারা হয়েছে। তখন কেউ কথা বলেনি, এখন কেন র্যাবের বিরুদ্ধে কথা উঠছে! বললেই চট করে র্যাব বাতিল করা সম্ভব নয়, র্যাবতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভাল কাজও করছে।’
বিএনপির পাঁচ বছরের শাসনামলে এক হাজারেরও বেশি হত্যাকা- ঘটে র্যাবের হাতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে র্যাবকে আরও বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করতে থাকে। ধীরে ধীরে র্যাব মানুষের কাছে ভরসার একটি বাহিনীতেই পরিণত হয়। এ অবস্থায় কেউ চাইলেই র্যাবকে বন্ধ করে দেয়া যাবে না। র্যাবের কেউ কেউ কিছু কিছু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
নতুন সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত করেছি। উনি আসুক, আমরাও যাব। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে আমাদের মধ্যে আসা-যাওয়া থাকবে। সে সঙ্গে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যারও সমাধান হবে।’
বিদেশি অতিথিদের সম্মাননার সোনা চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সোনার পরিমাণ কত সেটা বড় কথা নয়। বিদেশী বন্ধুদের আমরা সম্মান দিয়েছি সেটাই বড় কথা। এটা নিয়ে বেশি হই চই করলে নিজেরাই চোর হয়ে যাব। এটা দেশের সম্মানের বিষয়। হঠাৎ কিছু লোক এটা নিয়ে বেশি হই চই করছে। তারা এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। এ ব্যাপারে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার, আমরা নিচ্ছি।’
নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। নূর হোসেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপি করে এখন আওয়ামী লীগ করছে। আমরা তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিএনপি হলে ব্যবস্থা নিত না। ফেনীতে নিজেদের লোক হওয়া সত্ত্বেও আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
র্যাবের তিন কর্মকর্তার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের কাছে নিশ্চয় অনেক তথ্য আছে। তারা সে তথ্য দিলে তদন্তের জন্য ভাল হয়।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ৪ দিনের জাপান সফরকে সফল উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাপান সফর সফল হয়েছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হলো। সফরকালে ২ দেশ যৌথ ইশতেহারে সই করেছি। জাপানের দেয়া ৬শ’ কোটি ডলার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখছে। জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’ জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ছাড়াও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment