নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিএনপিই পচে গেছে
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ০১ জুন, ২০১৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিই পচে গেছে। বিএনপিকে এখন ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখা হচ্ছে। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়ে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী জানান, সে সময় প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সবাই গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল বলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে যে দলের জন্ম বরং তারাই অবৈধ।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি, এ অবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে কোনো মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার সুযোগ আছে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা যদি চান মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনারা যদি চান দেশে আবার সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি, দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ ফিরে আসুক তাহলে নির্বাচন দিতে আমার সমস্যা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, র্যাব এখন একটি বাস্তবতা। তাই বললেই চট করে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বাতিল করা সম্ভব নয়।
নিজের জাপান সফর প্রসঙ্গে শনিবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে নির্ধারিত সময় বিকাল চারটায় তিনি গণভবনের ব্যাঙ্কুয়েট হলে প্রবেশ করেন। প্রথমে ২০ মিনিটে তিন পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তৃতা পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী। এই লিখিত বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক জাপান সফর বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় জাপান সবসময় পাশে থাকবে। এ সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা। লিখিত বক্তব্যের পর দীর্ঘ এক ঘণ্টা শেখ হাসিনা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ রসিকতাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. দীপু মনি, কর্নেল (অব.) ফারুক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট আকিহিতো ও প্রধানমন্ত্রী শিন জো অ্যাবের সঙ্গে সাক্ষাতে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি সইয়ের কথা তুলে ধরে বলেন, দুই নেতাই বাংলাদেশ সফরের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জাপান বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে নানা ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমার এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাই।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার এ সফরে জাপানের সঙ্গে ২১ দফার যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষর হয়েছে। আগামী ৪-৫ বছরে বাংলাদেশকে ছয়শ’ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দেবে জাপান। এ অর্থ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পদ সম্পর্কে জাপানি প্রজন্মকে ধারণা দিতে দেশটিকে এক জোড়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার উপহার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। এছাড়া, দেশে আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে জাপানের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা জানান, জাপানে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক-প্যারা অলিম্পিকের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে শ্রমিক প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তার এ আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাস দেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখছে জানিয়ে দেশের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপের কথা জাপানি সম্রাট ও প্রধানমন্ত্রীকে জানান শেখ হাসিনা। এছাড়া, ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের ‘যুদ্ধ নয় শান্তি, ধ্বংস নয় উন্নয়ন’ মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘এ সরকার পচে গেছে, আরেকটু পচুক তারপর আন্দোলন’ এই ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিই পচে গেছে। তিনি উল্টো প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, আমাদের পচার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে!’ তিনি বলেন, এখন বিএনপিকেই ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
র্যাব বাতিল সম্ভব নয় : সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) এখন র্যাব বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। অথচ তারাই র্যাব গঠন করেছিল। অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় মানুষ মারা হয়েছে। তখন কেউ কথা বলেনি, এখন কেন র্যাবের বিরুদ্ধে কথা উঠছে! তিনি বলেন, বললেই চট করে র্যাব বাতিল করা সম্ভব নয়, র্যাব তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভালো কাজও করছে।
শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা কথা বলে, ওই রাজনৈতিক দলই (বিএনপি) র্যাব গঠন করে। প্রথমদিকে র্যাবের মাধ্যমে কেবল হত্যার কাজ করা হতো। বিএনপি’র পাঁচ বছরের শাসনামলে এক হাজারেরও বেশি হত্যাকাণ্ড হয় র্যাবের হাতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে র্যাবকে আরও বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করতে থাকে। ধীরে ধীরে র্যাব মানুষের কাছে ভরসার একটি বাহিনীতেই পরিণত হয়। এ অবস্থায় কেউ চাইলেই র্যাবকে বন্ধ করে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, র্যাবের কেউ কেউ কিছু কিছু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
জামায়াতের বিচার সময় মতোই হবে : জামায়াতের বিচার নিয়ে মন্ত্রীর (আইনমন্ত্রী) দেয়া আইনি ব্যাখ্যা সঠিক বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচার সময়মতোই হবে বলে জানান তিনি। এ সময় জামায়াতের বিচারসংক্রান্ত উচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি রিট আবেদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিচার শেষ হবে। আমাকে আমার মতো বিচার করতে দিন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো আমরাই শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় যেন কার্যকর না করি এজন্য জন কেরি, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনসহ প্রভাবশালী অনেকেই চাপ দিয়েছেন। তিনি নিজের দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেন, কই আমি তো তা থেকে সরে আসিনি! ক’জনের এমন সাহস থাকে। থাকে বঙ্গবন্ধুর কন্যার।
No comments:
Post a Comment