Friday, May 30, 2014

পুড়ে মারা যাবার ১৭ দিন পর লাশ এলো ছয় বাংলাদেশীর

পুড়ে মারা যাবার ১৭ দিন পর লাশ এলো ছয় বাংলাদেশীর
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুড়ে মারা যাবার ১৭ দিন পর সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে ছয় বাংলাদেশীর লাশ । শুক্রবার বিকেলে এ সব লাশ হস্তান্তর করা হয় নিহতদের স্বজনদের কাছে। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব খন্দকার শওকত হোসেন। বাকি তিনটা লাশ পরে আসবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়-বেলা ৩টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০৪৪০ উড়োজাহাজে লাশগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। লাশ হস্তান্তরের সময় বিমানবন্দরে আসা স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহত এই ছয় জন হলেন, কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চাঁদেরচর গ্রামের সেলিম, কলাগাছিয়া গ্রামের মতিউর রহমান, তিতাস উপজেলার দুলারমপুর গ্রামের জালাল, একই উপজেলার কালিপুর গ্রামের শাহ আলম, ফেনীর জাকির হোসেন ও মাদারীপুরের মোঃ আক্কাস।
যে লাশগুলো এখনো বাংলাদেশে পৌঁছায়নি তারা হলেন, গাফ্ফার, বাহউদ্দিন ও নাজির হোসেন। এদের লাশ আনার জন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
লাশগুলো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নিহতদের পরিবারের কাছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বন্ড এর পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে লাশ বহন ও দাফনের জন্য দেয়া হয়। এছাড়াও পরবর্তী ধাপে প্রতি পরিবারকে ৩ লাখ টাকা করে দেয়া হবে বলেও জানান সচিব।
বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, বিমানের একটি ফ্লাইটে (বিজি ০৪০) বেলা সোয়া তিনটার দিকে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। সব নিযম কানুন শেষ করে লাশগুলো স্বজনদের কাছে দেয়া হয়।
সৌদি আরবের রিয়াদের শিফা সানাইয়া এলাকায় অবস্থিত ‘তিতাস ফার্নিচার’ নামের সোফা তৈরির একটি কারখানায় গত ১২ মে আগুন লাগলে এই ছয় জনসহ মোট নয়জন বাংলাদেশী মারা যান। তবে নিহত বাকি তিনজন গাফফার, নাজির ওরফে মিজান এবং বাহাউদ্দিনের বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ার কারণে লাশ পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বাকি তিনজনের লাশও দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের লাশ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা থেকে জানান, সৌদি আরবের রিয়াদে গত ১২ মে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত কুমিল্লার ৭ শ্রমিকের মধ্যে ৪ জনের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। শুক্রবার বিকেলে লাশ গ্রহণ করেন নিহতদের স্বজনরা।
লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারগুলোর মধ্যে চলছে মাতম। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। লাশগুলো একনজর দেখার জন্য তাদের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও এলাকার শত শত মানুষ বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শোকে মূহ্যমান এসব হতভাগ্য শ্রমিকদের মা-বাবা, স্ত্রী, অবুঝ সন্তান ও স্বজনরা। আজ শনিবার নিহতদের মরদেহ দাফন করা হবে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
রাত ৮টায় তিতাস উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সামিহা ফেরদৌসী ও হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জামিল জানান, লাশ শনিবার দাফন করা হবে। তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলোচনা চলছে।

হারিয়ে যাচ্ছে শুশুক

শাহীন রহমান ॥ দেশের শান্তশিষ্ট ও নিরীহ একটি জলজপ্রাণীর নাম শুশুক। প্রায় ২ দশক আগে দেশের সব বড় নদীতে অবাধ বিচরণ ছিল এ প্রাণীটির অথচ এখন শুশুক দেশের একটি বিপন্ন তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে শুশুক রক্ষায় এর অভয়ারণ্য নিশ্চিত করে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া না গেলে অচিরেই এ প্রাণীটি নদী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একসময়ে লঞ্চে বা স্টিমারে নদী পার হতে গেলেই শুশুকের দেখা মিলত। এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। অব্যাহতভাবে শুশুক নিধন আবাসস্থল ধ্বংস করার কারণেই নদী থেকে শুশুক বিলুপ্ত হচ্ছে।
একসময় নদীতে মাথা তুলে অস্তিত্ব জানান দিয়েই ডুব মারত ধূসর বর্ণের জলজপ্রাণী শুশুক বা ডলফিন। দেশের সব বড় নদ-নদীতেই অহরহ দেখা মিলত মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এ নিরীহ প্রাণীটির। কিন্তু নানা বৈরিতায় গত এক দশকে শুশুক স্থান করে নিয়েছে দেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছের আধিক্য আছে দেশের এমন সব নদীতে বছর দশেক আগেও প্রচুর শুশুকের দেখা মিলত। কিন্তু শুশুকের আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্রে ধ্বংস এবং বিচার বিবেচনাহীন শিকারের কারণে শুশুক বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় স্থান পেয়েছে। ১৯৯৪ সালের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন প্রথমবারের মতো শুশুক প্রজাতি দেশে সুরক্ষিত নয় বলে উল্লেখ করে। এর ঠিক দু’বছর পরে ১৯৯৬ সালে এটি বিপন্ন তালিকায় স্থান পায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবিএম মহসিন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বড় বড় নদীতে আগে তিন প্রজাতির শুশুকের দেখা মিলত। বিভিন্ন কারণে বর্তমানে এটি বিপন্নের তালিকায় স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মানদীতে যে প্রজাতি আগে সবচেয়ে বেশি দেখা মিলত তা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন অবস্থায়। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। তবে তিনি বলেন অন্য দু’প্রজাতির মিঠাপানির শুশুক বিপন্ন। শুধু রাজশাহীর চারঘাট, গোদাগাড়ি ও সারদা এলাকায় এখনও কিছু শুশুকের দেখা মেলে। এর বাইরে আর কোথাও শুশুক দেখা যায় না বলে উল্লেখ করেন। বলেন দ্রুত শুশুক রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না নেয়া হলে অচিরেই দেশের নদী থেকে প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচার বিবেচনাহীনভাবে শুশুক শিকার, নদীগুলোর নাব্য সঙ্কট ও দূষণ, যথেচ্ছ মাছ শিকার, নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জালের যথেচ্ছ ব্যবহার, অজ্ঞতাবশত শুশুক বধসহ নানা কারণে প্রাণীটি এখন একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীর দখল দূষণ নিয়ে আদালতের প্রদত্ত এক রায়েও বলা হয়েছে শিল্প এলাকা হতে নির্গত বর্জ্য নদীগুলোতে পড়ে সর্ব প্রকার মৎস্যসহ জলজপ্রাণী ও শুশুক সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শৈবাল বহু আগেই নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় শুশুকসহ জলজপ্রাণী রক্ষা করতে হলে নদী দূষণরোধের বিকল্প নেই।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-05-31&ni=174508

No comments:

Post a Comment