Friday, May 2, 2014

খালেদা-মোদি সেম-টু-সেম মুহম্মদ শফিকুর রহমান

খালেদা-মোদি সেম-টু-সেম
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
ভারতের পরবর্তী সরকারে কে যাবে- সেক্যুলার কংগ্রেস জোট না চরম উগ্র হিন্দুত্ববাদী ধর্মব্যবসায়ী বিজেপি জোট, এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও টেনশন কম নেই। সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা নেতৃত্বাধীন সেক্যুলার কংগ্রেস জোট জিতলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সেক্যুলার জোট খুশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এ দুই পলিটিক্যাল ফ্যামিলির মধ্যে সম্পর্ক আদর্শিক এবং ঐতিহাসিক। কংগ্রেস যেমন ভারতের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল, তেমনি আওয়ামী লীগও বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক শক্তি। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বা তাঁর পরিবার এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সম্পর্কও রাজনীতির চেয়েও আরও বেশি কিছু।
পক্ষান্তরে ভারতের চরম হিন্দুত্ববাদী ধর্ম ব্যবসায়ী বিজেপি জোট জিতলে বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থী ধর্মব্যবসায়ী বিএনপি জোট খুশি হবে তা দুইয়ে-দুইয়ে চারের মতো সত্য। বিজেপি’র প্রস্তাবিত প্রধানমন্ত্রী দাঙ্গাবাজ নরেন্দ্র মোদি আর বাংলাদেশের সন্ত্রাসী রাজনীতির গডমাদার খালেদা জিয়া সেম-টু-সেম। নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে মুসলমানদের বাক্স-পেটরা ধরিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বা অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের স্থলে রামমন্দির বানানোর অঙ্গীকার করেছেন। বাংলাদেশের ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর গডমাদার খালেদা জিয়া সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে একইভাবে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ বা আন্তর্জাতিক ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মোদি ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে অন্তত দশ হাজার মুসলমান হত্যার জন্যে দায়ী, তখন গুজরাট দাঙ্গার ওপর বিশ্লেষণেও বলা হয়েছে দুই হাজার মুসলমান হত্যা করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে কিংবা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে খালেদা জিয়া তাঁর দল ও সহযোগী স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডার নামিয়ে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুট, হত্যা, ধর্ষণের মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হয়।
মোদির টার্গেট যেমন ভারত থেকে মুসলমান তাড়িয়ে কংগ্রেসের ভোট কমানো, তেমনি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে আওয়ামী লীগের ভোট কমানো খালেদারও টার্গেট। বিষয়টি দেখতে হবে এভাবে যে, ভারতে বসবাসকারী মুসলমানরা বেশির ভাগই যদিও পাকিস্তানের প্রতি অপেক্ষাকৃত বেশি অনুগত তবু সেক্যুলারিজমের আদর্শে বিশ্বাসী দল হিসেবে কংগ্রেস তাদের কাছে কম বেশি বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ও সেক্যুলারিজমের আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ তাদের কাছে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। এইভাবে ভোটের সমীকরণ হয়ে আসছে অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল ধরে। এটি যেমন আদর্শিক, তেমনি নিরাপত্তার ব্যাপারটিও এখানে বড় ভূমিকা পালন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের হিন্দুরা যেমন স্বস্তিবোধ করে, তেমনি ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে সেখানকার মুসলমানরা স্বস্তিবোধ করে। আমি বলব না যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন ‘বাটপাড়ের’ হাতে কোন হিন্দু নির্যাতিত হয়নি, হয়েছে, কিন্তু তা আদর্শিক নয়, বৈষয়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। একই ঘটনা ভারতেও যে ঘটছে না তা নয়, সেখানেও ঘটেছে এবং তাও আদর্শিক নয়, সে সবও বৈষয়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এটাও বলব যে, বাংলাদেশে যেমন চরম হিন্দু বিদ্বেষী বিএনপিতে বাবু গয়েশ্বর রায়ের মতো হিন্দু আছেন, তেমনি ভারতের বিজেপিতেও মাঝে-মধ্যে দু’একটা ‘আবদুল’ দেখা যায়।
এর আগে একটি লেখা আমি বলেছিলামÑ ভোট হচ্ছে ভারতে টেনশন চলছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মিডিয়াতে-প্রিন্টিং এবং ইলেকট্রনিক। এদের কারও টার্গেট নেহাতই পেশাগত। যেহেতু প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্র হিসেবে ভারতে আগামীতে কোন্ দলের সরকার হবে কোন্ দলের হবে না, বিরোধী দলে যাবে, বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী জানতে চায়। চ্যানেলগুলো তাদের সেই চাহিদা পূরণ করার জন্যে ভারতের নির্বাচনের খবরাখবর কে কতটা ভাল করে দেখাতে পারছে তার একটা প্রতিযোগিতা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত ব্যাপারটা আদর্শিক। প্রথমেই বলেছি কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারলে আওয়ামী লীগ খুশি হবে। এর একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার (জনগণ অবশ্যই) আমাদের শরণার্থীদের যেমন আশ্রয় দিয়েছেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্যে গঠিত মুজিবনগর সরকারকে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছেন, এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, অন্ন-বস্ত্র-অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন; তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়েছেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে মিত্রবাহিনী দিয়ে আমাদের যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করেন। এমনকি প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতি ইন্দিরা পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ (ফাঁসির মঞ্চের কাছাকাছি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বিশ্ববিবেক পক্ষে আনতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। বিজয়ের পর শত্রুমুক্ত অথচ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন-পুনর্বাসন কার্যক্রমও সম্পন্ন করে দেন। যুদ্ধের নয় মাসে যেমন ভারতের পাশে ছিলেন তৃতীয় বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের আশা-ভরসার স্থল সোভিয়েট রাশিয়া, মুক্তিযুদ্ধে যেমন ভারতের পাশে থেকে আমাদের সাহায্য করেছে তেমনি পুনর্গঠন পুনর্বাসন কাজেও অবদান রাখে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ, ভারত ও সোভিয়েট রাশিয়া মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং যে বন্ধন আজও অটুট রয়েছে। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সময়ও বন্ধুত্বের পরীক্ষায় তারা এক শ’তে এক শ’ নম্বর পেয়ে পাস করেছে।
পক্ষান্তরে বিএনপি যেহেতু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে জন্ম নিয়েছেন সেহেতু দলটিও গঠিত হয়েছে পাকিস্তানী পরাজিত জল্লাদদের সহযোগী মুসলিম লীগ বা ভাসানী ন্যাপের নষ্ট-ভ্রষ্ট নেতা কর্মীদের নিয়ে। যে কারণে এ দলটিও পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের মতো চরম ভারত বিদ্বেষী। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রই সরাসরি ভারত বিরোধিতা করত। জাতিকে ভারতবিরোধী করার জন্যে নানানভাবে কর্মকা- পরিচালনা করেছে। এখনও যখনই খালেদা ক্ষমতায় গেছেন, কিভাবে ভারতের পূর্বাঞ্চল অশান্ত করা যায় তার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলে অস্ত্রের আনা-নেয়ায় সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
ভারতের সঙ্গে অবশ্যই এখনও অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, যেমন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এ সময়ের সবচে বড় রাজনৈতিক ইস্যু। যদিও শেখ হাসিনা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চুক্তি স্বাক্ষরের পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসার কারণে হয়নি। অবশ্য স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে অনেক সমস্যার সমাধান করেন, যে চুক্তির নাম ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি’। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনাও বাবার মতো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গঙ্গার পানির হিস্যা আদায়; পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে দীর্ঘদিনের পার্বত্য এলাকা অশান্ত পরিবেশের অবসান ঘটান। আর খালেদা বলেছিলেন কি তখন? আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে; পার্বত্য চট্টগ্রামও নাকি আর বাংলাদেশের অংশ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন অংশ হবে না? এটা অপ-প্রলাপ নয় কি? পার্বত্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আছে, মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়- গোটা বাংলাদেশের অগ্রগতিতেই অবদান রাখছে।
এবার ভারতের নির্বাচনী হাওয়া কোনদিকে বইছে তার কিছুটা আলোকপাত করছি। প্রথমেই যে বিষয়টি তুলে ধরতে চাই, তা হলো ভারতের করপোরেট বিজনেস হাউসগুলো নরেন্দ্র মোদির পক্ষে নেমেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ভারতের নিউজ টিভি চ্যানেল এনডিটিভি-তে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে ভারতের অন্যতম শিল্প গ্রুপ আদানির কর্ণধার সরাসরি মোদিকে সমর্থন দিলেন। অবশ্য প্রথম দিকে যেভাবে মোদি হাওয়া বইতে শুরু করেছিল তাতে ভাটার টান পড়েছে এখন। বিশেষ করে অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী প্রফেসর অমর্ত্য সেন, সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার, পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রকাশ্যে নরেন্দ্র মোদির বিপক্ষে মত দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা-নাতনি, সোনিয়া-রাজিব কন্যা ও কংগ্রেস জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী রাহুল গান্ধীর বোন শ্রীমতি প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র যেদিন থেকে মা সোনিয়া ও ভাই রাহুলের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন সেদিন থেকে গঙ্গার-যমুনার বানে মোদি হাওয়া খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে শুরু করেছে। কেবল অপরূপ সুন্দরী বলে নয়, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রিয়াংকা গান্ধীর ভুবনমোহিনী হাসি গোটা ভারতকে নাড়া দিয়েছে। যদিও তার মা ও ভাইয়ের নির্বাচনী এলাকা রায়বেরেলি ও আমেথির বাইরে যাননি তিনি, তবু তার ইমেজ রয়েছে ভারতের ১২০ কোটি মানুষের মধ্যে।
মোদি চালে ভুল করে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের ১২ কোটি ভোট অবজ্ঞা করেছেন, অপমান করেছেন। তেমনি প্রিয়াংকার স্বামী রবার্ট ভদ্রের বিরুদ্ধে কথা বলে এখন বেকায়দায় পড়েছেন। প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্রের পাল্টা আক্রমণে মোদি ও মোদির শিবির আজ বিপর্যন্ত ও পর্যুদস্ত। এমনকি অর্ধশতাব্দী আগে বিবাহ করে স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়া, অর্থাৎ স্ত্রী যশোদাবেনের প্রতি যে অবজ্ঞা-অবহেলা করেছেন, তা এতদিন গোপন করলেও অর্ধশতাব্দী পর এখন পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছে। এতদিন তো এমন ভাব দেখিয়েছেন যে তিনি বিয়েই করেননি, চিরকুমার। এখন কি জবাব দেবেন মোদি। তাছাড়া চরম সাম্প্রদায়িক মানুষ এই মোদি যে কিনা বলেন :
১. বাংলাদেশ থেকে যত লোক ভারতে গেছে, বসবাস করছে, আগামী ১৬ মের পর তাদের সবাইকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
২. হিন্দু হিসেবে আমি গর্বিত। হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলে উল্লেখ করলেও মোদি আরএসএস বা সংঘ পরিবারের ‘গরব সে কাহো, কে হাম হিন্দু হায়’- এই সেøাগানই সামনে চলে আসে।
৩. পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধেও বলেছেন।
এর জবাবে মমতা ব্যানার্জি মোদিকে ‘শয়তান’ ‘দাঙ্গাবাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন :
১. ওর প্রধানমন্ত্রী হওয়া ভারতের জন্য দুঃস্বপ্ন। ওর দৃষ্টি ভয়ঙ্কর, যেদিকে তাকাচ্ছে সব ধ্বংস করে যাচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) এই লোকটিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরায় আমরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গায় গর্ভবতী নারী, শিশুসহ ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কে তুমি, কোন্ হরিদাস? বাঙালী-অবাঙালীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছ বরং বাংলার মানুষ (পশ্চিম বাংলা) তোমাকেই ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তাছাড়া যে নিজের স্ত্রীকে দেখভাল করেননি তিনি কিভাবে ভারতীয়দের দেখবেন?
২. নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, Minorities have reasons to fear Modi. ... In July 2013 Sen had come out strongly against Modi, saying he didn’t want him to become Prime Minister as he didn’t have secular credentials. As an Indian citizen, I don’t want Modi as my PM.’ (Daily Star, 1st may 2014)
৩. উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, ‘Modi model means divided India model.’
৪. বিহারের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব বলেছেন যে, মোদিকে দেখে কসাই পর্যন্ত লজ্জা পায়, সে কিভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চায়?
মোদি প্রিয়াংকার স্বামী বরার্ট ভদ্র সম্পর্কে বলেছেন ,ভদ্র হরিয়ানা ও রাজস্থানে কংগ্রেস শাসনের ফলে লাভবান হয়েছেন।
জবাবে প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘মোদির গুজরাট উন্নয়নের মডেল হলো এই ভদ্রলোক মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে হাজার হাজার একর জমি নামমাত্র মূল্যে বন্ধুবান্ধবকে বিলিয়েছেন। (স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে বলেন) এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ইঁদুরের মতো ছটোছুটি করছেন। আমি জানতাম তারা মিথ্যার আশ্রয় নেবে, এটা নতুন নয়। মোদি আমার পরিবারকে অপমান করছে, আমার স্বামীকে অপমান করছে, আমি দুঃখ বোধ করছি, কিন্তু আমি আমার দিদি মা ইন্দিরাজীর কাছ থেকে শিখেছি, ‘তারা যত বেশি অপমান করবে, আমার পাল্টা আঘাত হানার শক্তিও ততই বাড়বে। কাজেই ‘জু কাহনা হ্যায়, উনকো (মোদি) কাহান দিয়ে জিয়ে, জু করনা হ্যায়, উনকো করনে দি জিয়ে; মুজহে দোই পরোয়া নেহি, ম্যায় আপনা কাম করতা হো, করতে রাহোঙ্গা।’
২০১৩ সালের ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছেন, ‘২০০২ সালে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার জন্যে তিনি অনুতপ্ত নন। বরং তাকে বহনকারী গাড়ি কোন কুকুর ছানাকে চাপা দিলে দুঃখ পাবেন, কিন্তু কোন মুসলমানকে চাপা দিলে দুঃখ পাবেন না।’
এর জবাবে মোদিরই সাবেক মিত্র জনতা দল শিবানন্দ তিহারি বলেছেন, ‘মোদির মানসিক চিকিৎসা করানো দরকার।’
এবার লক্ষ্য করুন এই চরম সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী দল বিজেপি- এর চরম মুসলিমবিরোধী উগ্রবাদী হিন্দু হবে ভারতের নেতা, যে ভারত জন্ম থেকে সেক্যুলার রাজনীতির মাধ্যমে দেশ চালিয়ে আসছে। আমাদের বাংলাদেশের দিকে তাকালেও দেখতে পাব যে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণহত্যা, নারী ধর্ষণের জন্য দায়ী নিজামী-সাকা-সাঈদীদের ছাড়িয়ে নিতে চান, গোলাম আযমের মতো জল্লাদকে মুক্ত করতে চান, এমনকি হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন, কোন রকম অনুশোচনা তার নেই- সেই তিনিও হতে চান সেক্যুলার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? অর্থাৎ খালেদা মোদি সেইম-টু-সেইম।
ঢাকা-২ মে ২০১৪
লেখক-ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment