চিঠিপত্রে প্রয়াত ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম ভাষাসৈনিক
অজয় রায়
বড় ছেলে সঞ্জীবের ডাকনাম ছিল ‘খেপু’ -তাই তাকে কখনও খেপু, কখনও সঞ্জীব আবার কখনও ‘গু ফবধৎ ংড়হ’ বলে চিঠিতে সম্বোধন করেছেন। বাংলা ও ইংরেজী দু’ভাষাতেই ধীরেন্দ্র নাথ পুত্রকে লিখেছেন। ১৯৬৪ সালে ৩ নবেম্বর একটি ছোট চিঠিতে বড় ছেলেকে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত জানচ্ছেন যে তিনি ৮১তম বর্ষে উপনীত হয়েছেন। বলেছেন যে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৬ কার্ত্তিক, ১২৯৩ বাংলা। ইংরেজীতে লেখা চিঠিতে বাংলা সন দেয়া ছিল ‘১৬ঃয কধৎঃরশ, ১৭৩৪.’ চিঠিতে পরিবারের সবাইকেসহ বিশ্বের সকল মানুষকে ভালবাসা আর আশীর্বাদ করেছেন, ’ .. .. ও ঢ়ৎধু ষবঃ ঃযবৎব নব ঢ়বধপব রহ ঃযব ড়িৎষফ ...
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিল তাঁর সকল কর্মের প্রেরণাÑএক কথাই তিনি ১৯৬৮ সালে ১ জানুয়ারিতে লেখা বড় ছেলেকে জানাচ্ছেন-খবঃ ঃযবৎব নব ঢ়বধপব রহ ঃযব ড়িৎষফ. খবঃ ঃযব ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ঃড়ষবৎধঃরড়হ ঢ়ৎবাধরষ ঁঢ়ড়হ ঃযব যিড়ষব ড়িৎষফৃ
যা দেবী শান্তিরূপেন সর্বভূতেষু সংস্থিতা,
নমস্তৈস্যঃ নমস্তৈস্যঃ নমঃ নমঃ
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি,।
১৯৬৯-এর গণ আন্দোলন যখন চলছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ভূমিকার কথা লিখে জানিয়েছেন পুত্র সঞ্জীবকে :
ৃ
গু ফবধৎ কযবঢ়ঁ,
—— ঞযরং পড়ঁহঃৎু যধং ঢ়ধংংবফ ঃযৎড়ঁময ঢ়ড়ষরঃরপধষ ংঃৎরভব. ওঃ রং ৎবধষষু ড়িহফবৎভঁষ ঃযধঃ ংঃঁফবহঃং যধাব ংযড়হি পড়ঁৎধমব ঁহঢ়ধৎধষষবষ রহ ঃযব যরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ. উধপপধ রিষষ নব ৎবসবসনবৎবফ ধং ঃযব ভরৎংঃ পরঃু রহ ঃযব ড়িৎষফ যিবহ যরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযরং ৎবাড়ষঁঃরড়হ রিষষ নব ৎিরঃঃবহ.”
সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, মাঝে মাঝে তিনি গ্রামে যান ও গ্রামের নিঃস্তবদ্ধতা উপভোগ করেন, যদিও নানা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে গ্রাম খ-বিখ- Ñ ফলে শান্তি অনেকটাই তিরোহিত। (পুত্র সঞ্জীব দত্তকে লেখা ২৬/০২/১৯৬৯ তারিখের চিঠি)
১৭-০৯-১৯৬৯ তারিখে গ্রামের বাড়ি রামাইল থেকে ‘খেপুকে’ ইংরেজীতে এক দীর্ঘ পত্র লেখেন শ্রীযুক্ত দত্ত। সেখানে তাঁর ছেলেবেলার কথা লিখেছেন। তা থেকে আমরা জানতে পারি যে ১৮৯৪ সালের নবেম্বর মাসে গ্রামের বাড়ি কসবা থেকে নবীনগরে চলে আসেন Ñ শ্রীদত্তের বাবা কসবা থেকে নবীনগরে বদলি হওয়ার কারণে। এখানে তিনি নবীনগর এইচ. ই. স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরৎ চন্দ্র চৌধুরী স্নেহময় ও দয়ালু হলেও অন্য একজন শিক্ষকের শিক্ষা দানের নীতি ছিল ” ঝঢ়ধৎব ঃযব ৎড়ফ, ংঢ়ধৎব ঃযব ঈযরষফ ” . আমাকে একবার তিনি ৩০টি বেত মেরেছিলেন। আমার বাবা এজন্য তাঁকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, হিন্দুরা তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল, গীতার শিক্ষা তাদের কাছে পৌঁছায় নি। নানা কুসংস্কার ছিল, ছিল অস্পৃশ্যতার অভিশাপ। সে সময় থেকেই আমার মধ্যে বিদ্রোহের চেতনা স্ফুরিত হতে থাকে। বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে ১০ বছর বয়সে তাঁর বড় ভাই ও অন্যদের সাথে নিজেরা মুরগির মাংস রেঁধে খেয়েছিলেন, পারিবারিক প্রথার বিরুদ্ধে।
শ্রীদত্তের পিতা ভাল মানুষ হলেও নানাদিক থেকে রক্ষণশীল সংস্কারাবদ্ধ মানুষ ছিলেন। তবে তাঁর বড় ভাই সাহসী ও সৎপ্রকৃতির উদার মানুষ ছিলেন। দুঃখের বিষয় অল্প বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা ছোটবেলা থেকেই জাগ্রত ছিল। ১৮৯৯ সালে ‘বুওর’ যুদ্ধ শুরু হয় Ñ ব্রিটিশদের পরাজয়ে শ্রীদত্ত আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন।
এই চিঠি থেকে আমরা শ্রীদত্তের জীবনের একটি দিকের পরিচয় পাই:
১। তরুণ বয়স থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন;
২। তরুণ বয়সেই স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন;
৩। দেশে (আহমেদাবাদ ও বোম্বে) বস্ত্রশিল্প প্রবর্তিত হলে তিনি ব্রিটিশ তৈরি কাপড় পরা বর্জন করেন ও দেশীয় মোটা কাপড় পরতে শুরু করেন, যা তিনি আজীবন পালন করেছিলেন;
৪। সে সময় থেকে তিনি বিদ্যাসাগর ও বঙ্কিম চন্দ্রের লেখা পড়তে শুরু করেন। বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ... ... কার্লাইডের লেখাও ... ... ।
৫। তখনকার মাস্টারমশাইদের সরল ও আদর্শ চলন, বিশেষ করে নবীনগর স্কুলের হেড মাস্টার শ্রী চন্দ্রকান্ত ঘোষ ... ... প্রমুখ শিক্ষকেরা তাঁর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল;
৬। পিতা সম্বন্ধে লিখেছেন যে তিনি (ধীরেন্দ্র দত্তের পিতা) দরিদ্র ছোটখাট সরকারী চাকুরে ছিলেন, তবে তাঁর সত্যের প্রতি অনুরাগ ও সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসা ধীরেন্দ্র নাথের জীবনাদর্শন গঠনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল। পরে শ্রীদত্ত যখন গীতার সাথে পরিচিত হন, তখন মনে প্রতীতি জন্মে যে তাঁর পিতৃদেব ছিলেন গীতায় দ্বাদশ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘প্রকৃত শক্তির’ প্রতীক;
৭। এ চিঠি থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালে (১৬ কার্ত্তিক, ১২৯৩ বাংলা);
৮। তাঁর বড়দিদির চরিত্র থেকেও তিনি শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তাঁর (বড়দির) সম্পর্কে শ্রীদত্ত বলেছেন,
”.... ঝযব রহযবৎরঃবফ ধষষ য়ঁধষরঃরবং ড়ভ সু ভধঃযবৎ. জবমধৎফ ্ ৎবংঢ়বপঃ ভড়ৎ ড়িসধহযড়ড়ফ মবহবৎধঃবফ রহ সু ষরভব ভৎড়স যবৎ পড়হফঁপঃ ধহফ ংঃরষষ যরহমবং রহ সব. .. .. ”
তারপর কুমিল্লা থেকে ১৯৬৯ সালের ৭ ডিসেম্ব পুত্র সঞ্জীবকে আর একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন। এবারের ভাষা ব্াংলা। এর আগে ছোট্ট একটি চিঠিতে পুত্রকে জানিয়েছিলেন যে তিনি পাকিস্তানের বার কাউন্সিলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, এবং এই সুবাদে দেশের নানাস্থান পরিভ্রমণ করে চমৎকৃত হয়েছেন, তবে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য তাঁকে বেদনার্ত করেছে। এই পরিভ্রমণ থেকে তিনি দেশকে আরও ভালভাবে চিনতে পেরেছেন্। (সঞ্জীব দত্তকে লেখা চিঠি ১৬/১১/৬৯)
সঞ্জীবকে লেখা এই বাংলা চিঠিটি থেকে জানা যায়:
... ... ১৯০৪ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করে কলকাতায় রিপন কলেজে (পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পরিবর্তিত) এফএ (ঋঅ) ক্লাসে ভর্তি হন। কলেজের দরিদ্র অবস্থা তাঁকে পীড়িত করলেও অধ্যাপকদের জ্ঞান ও বক্তৃতা প্রদান তাঁকে চমৎকৃত করে। শিক্ষকদের অনেকের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন:
১. জানকীনাথ ভট্টাচার্য ঝঢ়বপঃবৎ’ পড়াতেন ধৌম্যমান ঋষির মত পড়াইতেন (অন্য ক্লাসের অনেক ছাত্র আসতো।)
২. লাল গেপাল চক্রবর্তী: গরষঃড়হ ও ঈড়সবং পড়াতেন
৩. সুরেন্দ্রনাথ ব্যণার্জী : ঐবষঢ়ং ঊংংধুং
৪. হারাণ ব্যণার্জী : গণিত
৫. গঙ্গাদাস ব্যণার্জী : বিজ্ঞান
‘তাঁরা ছিলেন ত্যাগী ও ঋষি। আমি বিশ্বাস করি তাহাদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পাইয়াছি বলিয়াই আমি তাঁহাদের ত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়াছিলাম।’
ক্স শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এক সময়ের একটি দৈব ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পরীক্ষায় ভাল প্রস্তুতি না থাকায় তিনি স্থির করেছিলেন যে ঋঅ পরীক্ষা সেবার দেবেন না। কিন্তু একদিন শয়নাবস্থায় চিন্তামগ্ন ছিলেন সে সময় হঠাৎ এক যুবক সামনে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চা পরীক্ষা দাও, তুমি কোন পরীক্ষায় ফেল হইবে না।” তিনি পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আল্ৗেকিকভাবে ভাল পরীক্ষা দিলেন, বিশেষ করে ‘সংস্কৃত’ বিষয়ে, যে বিষয়ে তার প্রস্তুতি ছিল সব চাইতে খারাপ। কিন্তু পরীক্ষার হলে মা সরস্বতীর স্ত্রোত্র পাঠ করে Ñ পরীক্ষার উত্তর মনে হতে থাকায় ভাল পরীক্ষা হলো। তিনি সাফল্যের সাথে ঋঅ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। সেবার অনেক ভাল ভাল মেধাবী ছাত্র উত্তীর্ণ হয় নাই। এটিকে তাঁর জীবনের একটি দৈব ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছিলেন।
ক্স এ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য: ‘‘এই দৈব ঘটনা ও পরে অনেক দৈব ঘটনা আমার জীবনে ঘটিয়াছে। তা সত্ত্বেও পরবর্তীকালের পৃথিবীর ঘটনার আবর্তনে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস হারাইয়া ফেলিয়াছি। আনুষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি আমার কোন শ্রদ্ধা নাই; তবে নীতিধর্মের প্রতি আমি এখনও বিশ্বাস হারাই নাই। (সঞ্জীব দত্তকে লেখা চিঠি ০৭/১২/১৯৬৯)
এর পর একটি চিঠিতে (০৪/০১/১৯৭০) কুমিল্লার নামক্রা উকিল কামিনী কুমার দত্তের (সাধারণভাবে পরিচিত কে. কে. দত্ত) উল্লেখ আছে। ১১ বছর আগে তিনি পরলোক গমন করেছেন। . .. ‘‘রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতেন, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে পরম সহিষ্ণুতা । কিন্তু পাকিস্তান কিংবা ভারতে তাহা দেখিতে পাই না। ”
কামিনী দত্ত প্রসঙ্গে দুঃখের সাথে বলেছেন, তিনি টহবিঢ়ঃ, টহ যড়হড়ঁৎবফ ধহফ টহংঁহম - আমারও তাহাই ঘটিবে। তবে পৃথিবীর কোটি কোটি ব্যক্তির বেলায় ইহাই প্রযোজ্য। তাতে দুঃখ নাই।
চিঠির একস্থানে কতিপয় হিন্দু নেতৃবৃন্দের পড়হভবৎবহপব এর কথা আছে, সেখানে তিনি উপস্থিত থাকলেও সম্মেলনের বক্তব্যের সাখে একমত হন নাই। এখানে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের কথাটি উঠে এসেছে: ‘সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।’ ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী সকল মানুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রীয় জীবনে ও সমাজ জীবনে। এই ব্যবস্থায় শ্রেণী ও সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতার কোন স্থান নেই। তাঁর উপদেশ ছিল Ñ সংখ্যালঘুদের উচিত নিজেদের কোন দল গঠন না করে সংখ্যাগোরিষ্ঠ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়া ও যুক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা।
ক্স এখানে পুনরায় তিনি শান্তিময় পৃথিবীর কথা বলেছেন।
(চিঠিটি এখানেই শেষ হয়েছে)১
১ সুত্র আমার কাছে একটি হলুদ খাতায় আমার স্বহস্থে চিঠিটির কপি। এটি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছি আমার মনে নেই।
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিল তাঁর সকল কর্মের প্রেরণাÑএক কথাই তিনি ১৯৬৮ সালে ১ জানুয়ারিতে লেখা বড় ছেলেকে জানাচ্ছেন-খবঃ ঃযবৎব নব ঢ়বধপব রহ ঃযব ড়িৎষফ. খবঃ ঃযব ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ঃড়ষবৎধঃরড়হ ঢ়ৎবাধরষ ঁঢ়ড়হ ঃযব যিড়ষব ড়িৎষফৃ
যা দেবী শান্তিরূপেন সর্বভূতেষু সংস্থিতা,
নমস্তৈস্যঃ নমস্তৈস্যঃ নমঃ নমঃ
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি,।
১৯৬৯-এর গণ আন্দোলন যখন চলছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ভূমিকার কথা লিখে জানিয়েছেন পুত্র সঞ্জীবকে :
ৃ
গু ফবধৎ কযবঢ়ঁ,
—— ঞযরং পড়ঁহঃৎু যধং ঢ়ধংংবফ ঃযৎড়ঁময ঢ়ড়ষরঃরপধষ ংঃৎরভব. ওঃ রং ৎবধষষু ড়িহফবৎভঁষ ঃযধঃ ংঃঁফবহঃং যধাব ংযড়হি পড়ঁৎধমব ঁহঢ়ধৎধষষবষ রহ ঃযব যরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ. উধপপধ রিষষ নব ৎবসবসনবৎবফ ধং ঃযব ভরৎংঃ পরঃু রহ ঃযব ড়িৎষফ যিবহ যরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযরং ৎবাড়ষঁঃরড়হ রিষষ নব ৎিরঃঃবহ.”
সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, মাঝে মাঝে তিনি গ্রামে যান ও গ্রামের নিঃস্তবদ্ধতা উপভোগ করেন, যদিও নানা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে গ্রাম খ-বিখ- Ñ ফলে শান্তি অনেকটাই তিরোহিত। (পুত্র সঞ্জীব দত্তকে লেখা ২৬/০২/১৯৬৯ তারিখের চিঠি)
১৭-০৯-১৯৬৯ তারিখে গ্রামের বাড়ি রামাইল থেকে ‘খেপুকে’ ইংরেজীতে এক দীর্ঘ পত্র লেখেন শ্রীযুক্ত দত্ত। সেখানে তাঁর ছেলেবেলার কথা লিখেছেন। তা থেকে আমরা জানতে পারি যে ১৮৯৪ সালের নবেম্বর মাসে গ্রামের বাড়ি কসবা থেকে নবীনগরে চলে আসেন Ñ শ্রীদত্তের বাবা কসবা থেকে নবীনগরে বদলি হওয়ার কারণে। এখানে তিনি নবীনগর এইচ. ই. স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরৎ চন্দ্র চৌধুরী স্নেহময় ও দয়ালু হলেও অন্য একজন শিক্ষকের শিক্ষা দানের নীতি ছিল ” ঝঢ়ধৎব ঃযব ৎড়ফ, ংঢ়ধৎব ঃযব ঈযরষফ ” . আমাকে একবার তিনি ৩০টি বেত মেরেছিলেন। আমার বাবা এজন্য তাঁকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, হিন্দুরা তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল, গীতার শিক্ষা তাদের কাছে পৌঁছায় নি। নানা কুসংস্কার ছিল, ছিল অস্পৃশ্যতার অভিশাপ। সে সময় থেকেই আমার মধ্যে বিদ্রোহের চেতনা স্ফুরিত হতে থাকে। বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে ১০ বছর বয়সে তাঁর বড় ভাই ও অন্যদের সাথে নিজেরা মুরগির মাংস রেঁধে খেয়েছিলেন, পারিবারিক প্রথার বিরুদ্ধে।
শ্রীদত্তের পিতা ভাল মানুষ হলেও নানাদিক থেকে রক্ষণশীল সংস্কারাবদ্ধ মানুষ ছিলেন। তবে তাঁর বড় ভাই সাহসী ও সৎপ্রকৃতির উদার মানুষ ছিলেন। দুঃখের বিষয় অল্প বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা ছোটবেলা থেকেই জাগ্রত ছিল। ১৮৯৯ সালে ‘বুওর’ যুদ্ধ শুরু হয় Ñ ব্রিটিশদের পরাজয়ে শ্রীদত্ত আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন।
এই চিঠি থেকে আমরা শ্রীদত্তের জীবনের একটি দিকের পরিচয় পাই:
১। তরুণ বয়স থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন;
২। তরুণ বয়সেই স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন;
৩। দেশে (আহমেদাবাদ ও বোম্বে) বস্ত্রশিল্প প্রবর্তিত হলে তিনি ব্রিটিশ তৈরি কাপড় পরা বর্জন করেন ও দেশীয় মোটা কাপড় পরতে শুরু করেন, যা তিনি আজীবন পালন করেছিলেন;
৪। সে সময় থেকে তিনি বিদ্যাসাগর ও বঙ্কিম চন্দ্রের লেখা পড়তে শুরু করেন। বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ... ... কার্লাইডের লেখাও ... ... ।
৫। তখনকার মাস্টারমশাইদের সরল ও আদর্শ চলন, বিশেষ করে নবীনগর স্কুলের হেড মাস্টার শ্রী চন্দ্রকান্ত ঘোষ ... ... প্রমুখ শিক্ষকেরা তাঁর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল;
৬। পিতা সম্বন্ধে লিখেছেন যে তিনি (ধীরেন্দ্র দত্তের পিতা) দরিদ্র ছোটখাট সরকারী চাকুরে ছিলেন, তবে তাঁর সত্যের প্রতি অনুরাগ ও সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসা ধীরেন্দ্র নাথের জীবনাদর্শন গঠনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল। পরে শ্রীদত্ত যখন গীতার সাথে পরিচিত হন, তখন মনে প্রতীতি জন্মে যে তাঁর পিতৃদেব ছিলেন গীতায় দ্বাদশ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘প্রকৃত শক্তির’ প্রতীক;
৭। এ চিঠি থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালে (১৬ কার্ত্তিক, ১২৯৩ বাংলা);
৮। তাঁর বড়দিদির চরিত্র থেকেও তিনি শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তাঁর (বড়দির) সম্পর্কে শ্রীদত্ত বলেছেন,
”.... ঝযব রহযবৎরঃবফ ধষষ য়ঁধষরঃরবং ড়ভ সু ভধঃযবৎ. জবমধৎফ ্ ৎবংঢ়বপঃ ভড়ৎ ড়িসধহযড়ড়ফ মবহবৎধঃবফ রহ সু ষরভব ভৎড়স যবৎ পড়হফঁপঃ ধহফ ংঃরষষ যরহমবং রহ সব. .. .. ”
তারপর কুমিল্লা থেকে ১৯৬৯ সালের ৭ ডিসেম্ব পুত্র সঞ্জীবকে আর একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন। এবারের ভাষা ব্াংলা। এর আগে ছোট্ট একটি চিঠিতে পুত্রকে জানিয়েছিলেন যে তিনি পাকিস্তানের বার কাউন্সিলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, এবং এই সুবাদে দেশের নানাস্থান পরিভ্রমণ করে চমৎকৃত হয়েছেন, তবে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য তাঁকে বেদনার্ত করেছে। এই পরিভ্রমণ থেকে তিনি দেশকে আরও ভালভাবে চিনতে পেরেছেন্। (সঞ্জীব দত্তকে লেখা চিঠি ১৬/১১/৬৯)
সঞ্জীবকে লেখা এই বাংলা চিঠিটি থেকে জানা যায়:
... ... ১৯০৪ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করে কলকাতায় রিপন কলেজে (পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পরিবর্তিত) এফএ (ঋঅ) ক্লাসে ভর্তি হন। কলেজের দরিদ্র অবস্থা তাঁকে পীড়িত করলেও অধ্যাপকদের জ্ঞান ও বক্তৃতা প্রদান তাঁকে চমৎকৃত করে। শিক্ষকদের অনেকের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন:
১. জানকীনাথ ভট্টাচার্য ঝঢ়বপঃবৎ’ পড়াতেন ধৌম্যমান ঋষির মত পড়াইতেন (অন্য ক্লাসের অনেক ছাত্র আসতো।)
২. লাল গেপাল চক্রবর্তী: গরষঃড়হ ও ঈড়সবং পড়াতেন
৩. সুরেন্দ্রনাথ ব্যণার্জী : ঐবষঢ়ং ঊংংধুং
৪. হারাণ ব্যণার্জী : গণিত
৫. গঙ্গাদাস ব্যণার্জী : বিজ্ঞান
‘তাঁরা ছিলেন ত্যাগী ও ঋষি। আমি বিশ্বাস করি তাহাদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পাইয়াছি বলিয়াই আমি তাঁহাদের ত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়াছিলাম।’
ক্স শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এক সময়ের একটি দৈব ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পরীক্ষায় ভাল প্রস্তুতি না থাকায় তিনি স্থির করেছিলেন যে ঋঅ পরীক্ষা সেবার দেবেন না। কিন্তু একদিন শয়নাবস্থায় চিন্তামগ্ন ছিলেন সে সময় হঠাৎ এক যুবক সামনে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চা পরীক্ষা দাও, তুমি কোন পরীক্ষায় ফেল হইবে না।” তিনি পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আল্ৗেকিকভাবে ভাল পরীক্ষা দিলেন, বিশেষ করে ‘সংস্কৃত’ বিষয়ে, যে বিষয়ে তার প্রস্তুতি ছিল সব চাইতে খারাপ। কিন্তু পরীক্ষার হলে মা সরস্বতীর স্ত্রোত্র পাঠ করে Ñ পরীক্ষার উত্তর মনে হতে থাকায় ভাল পরীক্ষা হলো। তিনি সাফল্যের সাথে ঋঅ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। সেবার অনেক ভাল ভাল মেধাবী ছাত্র উত্তীর্ণ হয় নাই। এটিকে তাঁর জীবনের একটি দৈব ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছিলেন।
ক্স এ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য: ‘‘এই দৈব ঘটনা ও পরে অনেক দৈব ঘটনা আমার জীবনে ঘটিয়াছে। তা সত্ত্বেও পরবর্তীকালের পৃথিবীর ঘটনার আবর্তনে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস হারাইয়া ফেলিয়াছি। আনুষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি আমার কোন শ্রদ্ধা নাই; তবে নীতিধর্মের প্রতি আমি এখনও বিশ্বাস হারাই নাই। (সঞ্জীব দত্তকে লেখা চিঠি ০৭/১২/১৯৬৯)
এর পর একটি চিঠিতে (০৪/০১/১৯৭০) কুমিল্লার নামক্রা উকিল কামিনী কুমার দত্তের (সাধারণভাবে পরিচিত কে. কে. দত্ত) উল্লেখ আছে। ১১ বছর আগে তিনি পরলোক গমন করেছেন। . .. ‘‘রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতেন, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে পরম সহিষ্ণুতা । কিন্তু পাকিস্তান কিংবা ভারতে তাহা দেখিতে পাই না। ”
কামিনী দত্ত প্রসঙ্গে দুঃখের সাথে বলেছেন, তিনি টহবিঢ়ঃ, টহ যড়হড়ঁৎবফ ধহফ টহংঁহম - আমারও তাহাই ঘটিবে। তবে পৃথিবীর কোটি কোটি ব্যক্তির বেলায় ইহাই প্রযোজ্য। তাতে দুঃখ নাই।
চিঠির একস্থানে কতিপয় হিন্দু নেতৃবৃন্দের পড়হভবৎবহপব এর কথা আছে, সেখানে তিনি উপস্থিত থাকলেও সম্মেলনের বক্তব্যের সাখে একমত হন নাই। এখানে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের কথাটি উঠে এসেছে: ‘সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।’ ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী সকল মানুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রীয় জীবনে ও সমাজ জীবনে। এই ব্যবস্থায় শ্রেণী ও সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতার কোন স্থান নেই। তাঁর উপদেশ ছিল Ñ সংখ্যালঘুদের উচিত নিজেদের কোন দল গঠন না করে সংখ্যাগোরিষ্ঠ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়া ও যুক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা।
ক্স এখানে পুনরায় তিনি শান্তিময় পৃথিবীর কথা বলেছেন।
(চিঠিটি এখানেই শেষ হয়েছে)১
১ সুত্র আমার কাছে একটি হলুদ খাতায় আমার স্বহস্থে চিঠিটির কপি। এটি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছি আমার মনে নেই।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment