অপহরণ এখন বড় আতঙ্ক ॥ লাশ মিলছে ফিরছে মানুষ
০ শত্রুতা, চাপ প্রয়োগ, মুক্তিপণ, রাজনীতি এই চার কারণে অপহরণ হচ্ছে
০ দ্রুত এ অবস্থা থেকে বের না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে- বিশেষজ্ঞ মত
০ দ্রুত এ অবস্থা থেকে বের না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে- বিশেষজ্ঞ মত
রাজন ভট্টাচার্য ॥ বাবার জন্য পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পাঞ্জাবি কিনেছিলেন সুস্মিতা। নানা কারণে তা পরা হয়নি। আর কোন দিনও পাঞ্জাবি পরা হবে না বাবা চন্দন কুমারের। মুহূর্তের মধ্যেই যেন সবকিছু স্মৃতি হয়ে গেল। বাবাকে হারিয়ে চারপাশ জুড়ে নেমে এসেছে নিকষ অন্ধকার। অনরবত চোখে জল। পাজর ভাঙ্গা কষ্ট। তা ছাড়া দিনভর সবাই এক কথাই বলছেন, খুব ভাল মানুষ ছিলেন তিনি। তবে, কেন তাকে অপহরণ শেষে হত্যা করা হলো? কে দেবে এ প্রশ্নের জবাব? স্বামী হারিয়ে স্ত্রী অর্চনা সরকারও এখন বাকরুদ্ধ। যেন কাঁদতেও ভুলে গেছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িপাড়ার বাসভবনে এখন সুনসান নীরবতা।
মিলছে লাশ। ফিরছে মানুষ। কেউ কেউ একেবারেই নিখোঁজ, দিনের পর দিন। কোন খোঁজ মিলছে না। পাঁচ বছরে অপহরণের সংখ্যা ২৬৮। চলতি বছরের প্রায় তিন মাসে অপহৃত বা গুম হয়েছেন ৩৯ জন। এসব ঘটনায় কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে অভিযোগের তীর। কখনও প্রভাব খাটিয়ে নিজ দলের লোকদের অপহরণ ও গুমসহ হত্যা করা হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা পূর্বশত্রুতার জের বা অর্থ আদায়ের জন্যও ঘটছে এরকম নাশকতা। রাজনীতির কারণে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কোন কোন ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে হত্যার পর আতঙ্কে সামাজিক সব ঘটনাই অপহরণে রূপ নিচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যেকোন মূল্যে রাষ্ট্রকে এসব ঘটনার দায় নিতে হবে। উন্মোচন করতে হবে অপহরণ, খুন ও গুমের রহস্য। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করার পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আইনের শাসন। অন্যথায় সমাজ ও অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
চার কারণে বাড়ছে অপহরণ, গুম ও খুন
পরিসংখ্যান বা ঘটনাপ্রবাহ বলছে সুনির্দিষ্ট কোন কারণে অপহরণ, গুম বা খুনের ঘটনা ঘটছে না। প্রতিটি ঘটনার মোটিভ ভিন্ন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণের পর কয়েকজন উদ্ধার হলেও প্রকৃত ঘটনা রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে। শত্রুতা, চাপ প্রয়োগ, মুক্তিপণ আদায় ও রাজনীতি সংক্রান্ত অপহরণের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিজ দলের লোকদের অপহরণ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সাতজন অপহরণের ঘটনা এক্ষেত্রে বড় প্রমাণ। যদিও অপহৃত সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। ঘটনার পর পরই অভিযোগের তীর ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের দিকে। তাকে প্রধান আসামি করে প্যানেল মেয়র নজরুলের স্ত্রী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করেছিলেন। রাজনীতির কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সমালোচনা আছে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও। কারও কারও অভিযোগ এসব বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনেকটাই গা ছাড়া ভাব ফুটে ওঠে।
বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, চোরাগোপ্তা হামলা করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে। তাই পরিকল্পিতভাবে হত্যা ও গুমের ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অর্থের বিনিময়ে অপহরণ, গুম ও হত্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারও কারও ধারণা, কিছু কিছু অপহরণের ঘটনার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হতে পারে। অস্থির পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অপহরণের পর উদ্ধারের ক্ষেত্রে কিছু ঘটনায় দেখা গেছে একই মোটিভ। কালো কাপড় দিয়ে চোখ পেঁচিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যাচ্ছে অপহরণকারীরা। তবে প্রশ্ন উঠেছে আলোচিত অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অপরাধীদের গ্রেফতারে সফলতা না থাকায়। তবে কি প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে চেইন অব কমান্ডের ঘাটতি দেখা দিয়েছে? যার সুযোগ নিচ্ছে প্রতিপক্ষ শক্তি অর্থাৎ জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীও।
পুরান ঢাকা পথকে অপহৃত এক ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের পর অপহরণে জড়িত অভিযোগে দুই নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বংশাল থেকে তুলে নেয়া হয় মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাকিমকে (৫৫)। শনিবার ভোরে তাকে জুরাইনের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি আপন চাচাত ভাইকে টেলিফোনে এক মেয়েকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রায় ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার হওয়ার পর অপরাধীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। সম্প্রতি মিরপুরের বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী পলিন নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস ১০ দিনের মাথায় ফিরে আসেন। একই ঘটনা ঘটেছে মিরপুরের আহাদের ক্ষেত্রে। তাঁরা জানিয়েছেন, কোন বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের অপহরণ করা হয়নি। ১৮ এপ্রিল অপহৃত হন আবু বকর সিদ্দিক। ৩৫ ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। চোখে কালো কাপড় বেঁধে অপহরণকারীরা তাঁকে মিরপুর ফেলে যায়। তাঁর কাছে মুক্তিপণসহ ঘটনার নেপথ্যে আনুমানিক বিভিন্ন তথ্য দেয়া হলেও প্রকৃত ঘটনা রহস্য বের হয়নি। ভালুকায় অপহৃত তিন ভাই বাড়ি ফিরে এলেও তাদের ক্ষেত্রেও প্রকৃত ঘটনা আড়ালে রয়ে গেছে।
গাজীপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাধাই চন্দ্র ম-ল ও তার ভাই কেদারী চন্দ্র ম-লকে অপহরণ করার পর ছেড়ে দেয়া হয়। সোমবার ভালুকায় অস্ত্রেরমুখে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কামাল হোসেন ও আবু বকর সিদ্দিক স্বপনকে অপহরণ করে। পেশায় তারা দুজনেই শিক্ষক। টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে যুবলীগ নেতাসহ দুইজনকে অপহরণ করা হয়। কক্সবাজারের রাঙ্গুনিয়ায় বখাটে মোহাম্মদ সাইফুল ডিগ্রী পড়ুয়া ছাত্রী তসলিমা আক্তারকে অপহরণ করে। নাটোরে অপহৃত এক ভটভটি কামাল হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অপহরণের ৪০ ঘণ্টা পর অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন নূর ইসলাম (৪০)। নারায়ণগঞ্জে অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পরে সাভারের নবীনগর থেকে উদ্ধার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় র্যাব-৪ এর একটি দল চোখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাভারের নবীনগরের নিরিবিলি এলাকায় বিসমিল্লাহ হোটেলের পাশ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। ঢাকার আশুলিয়া জামগড়া এলাকা থেকে অপহৃত দুইজনকে কালিহাতীর পাইকড়া গ্রাম থেকে উদ্ধার এবং ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃতদের উদ্ধার ও চারজনকে গ্রেফতার এবং অপহরণের কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস আটক করা হয়। গাজীপুর থেকে অপহরণের ৩দিন পর অপহৃত গার্মেন্টস কর্মীসহ ৫ অপহরণকারীকে বুধবার রাতে টাঙ্গাইল পৌরশহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ।
মানিকগঞ্জের সদর উপজেলা থেকে অপহরণের দুইদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ায় সিয়াম নামের (৪) বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। অপহৃত ছোটভাইকে হত্যার পর স্কুলছাত্র বড়ভাইকে অপহরণের এক সপ্তাহ বাদে আহতাবস্থায় বাড়ির কাছে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই স্কুলছাত্রের নাম মোবারক হোসেন রাকিব (১৪)। সে শ্রীপুর উপজেলার বরমী বয়েজ হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং বরমী বাসস্ট্যান্ড এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। অপহরণের দু’দিন পর অপহৃত আরেক স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তার নাম মোঃ আকরামুল আলম দীপু (১৫)। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আবুল বাসার (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলাইয়াপুর ইউনিয়নের উত্তর আলাইয়াপুর গ্রামের বাড়ির সামনে চা দোকান থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে লোক মারফত ৫ লাখ টাকা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে ধামরাইয়ের জয়পুরা এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে রেজাউল করিম (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়।
গেল রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে মামলায় হাজিরা দিয়ে নিজের গাড়িতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড হয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন প্যানেল মেয়র ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। ওই সময় তাঁর তিন সহযোগী লিটন, স্বপন ও তাজুল এবং গাড়িচালক জাহাঙ্গীরকে গাড়িসহ অপহরণ করা হয়। বাসায় ফেরার পথে একই জায়গা থেকে গাড়িসহ অপহৃত হন আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও গাড়িচালক ইব্রাহীম। অপহরণের ৭৩ ঘণ্টা পর শীতলক্ষ্যা থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
হত্যা, গুম ও অপহরণরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয় প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক আইজি এএসএম শাহজাহান জনকণ্ঠকে বলেন, সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনীতির উর্ধে থেকে কাজ করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পাশাপাশি যেকোন মূল্যে এসব ঘটনার নিবারণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার বা আইনের আওতায় আনতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। তাদের ওপর মানুষের আস্থা কমবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শতভাগ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। সাবেক এ পুলিশ প্রধান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হবে অপরাধীদের খুঁজে বের করা। জনজীবনের উন্নতি ঘটানো, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এ ছাড়া সব কাজে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা জরুরী। তিনি বলেন, অপহরণ ও গুম জাতীয় সমস্যা দলীয় নয়। তাই দল ও মত নির্বিশেষে এজন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আইনের শাসন না থাকলে কেউ নিরাপদ নয়। এজন্য এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষকে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক
‘পরিস্থিতি শান্ত না হলে আসামি ধরা যাচ্ছে না’- নারায়ণগঞ্জে অপহরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত্রে শুক্রবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর এ বক্তব্যের পর পরই বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। একজন মন্ত্রী হিসেবে এমন বক্তব্য দিতে পারেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। বলা হচ্ছে- গত সময়ে এ রকম যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হয়েছে। আস্থা ফেরার পর থেমেছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। বাস্তবতা হলো- সিক্স মার্ডার ও এবি সিদ্দিক অপহরণ মামলায় কোন কুল কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তাঁর চার সহযোগী অপহরণ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটক ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে পুলিশ। অভিযানের সময় বাড়িতে ছিলেন না নূর হোসেন। এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা খোঁজখবর করছি। তদন্ত চলছে। আসামি বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তেমনটি মনে করি না। তিনি দেশেই আছেন। শনিবার নজরুল ইসলাম হত্যার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তিনি বলেন, শুধু এজাহারে নাম থাকলেই আসামি গ্রেফতার করা যায় না। ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে এজাহার ছাড়াও কাউকে গ্রেফতার করা যায়। যদিও নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, নূর হোসেনকে গ্রেফতার করার।
আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষর কতটা জরুরী
গুম থেকে সব মানুষকে রক্ষা করা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক একটি রেজুলেশন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯২ সালে গ্রহণ করে। ২০০৭ সালে এ সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি (কনভেনশন) সম্পাদন করা হয়। এ চুক্তিতে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং যুদ্ধ, জরুরী অবস্থা, চরম রাজনৈতিক বিপর্যয়সহ কোন অবস্থাতেই কাউকে গুম করার বৈধতা নেই বলা হয়। ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪২টি রাষ্ট্র এর পক্ষ হয়েছে। ৯৩টি রাষ্ট্র এটি স্বাক্ষর করেছে। আমাদের দেশে এ আন্তর্জাতিক চুক্তিটি অনুসমর্থন তো দূরের কথা, এটি স্বাক্ষরই করেনি বাংলাদেশ। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধে এ সরকার আগের নির্বাচনের সময় নির্বাচনী ইশতেহারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এমন বাস্তবতায় সব পক্ষ থেকেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার দাবি উঠেছে।
মিলছে লাশ ফিরছে মানুষ
চলতি বছরের প্রায় তিন মাসে অপহৃত বা গুম হয়েছেন ৩৯ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজন ফিরেছেন জীবিত অবস্থায়, ১২ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ২৩ জনের কোন খোঁজ মেলেনি। তাঁরা বেঁচে আছেন, নাকি মরে গেছেন, সেটিও জানে না পরিবার।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে অপহরণের সংখ্যা ২৬৮। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৪৬, ২০১১ সালে ৫৯, ২০১২ সালে ৫৬, ২০১৩ সালে ৬৮ ও চলতি বছরে অপহরণের সংখ্যা ৫৩ জন। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিরে এসেছে ২৪ জন। এখনও নিখোঁজ ১৮৭ জন। ২০১০ সালের ২৫ জুন ঢাকার শেরেবাংলা নগর থেকে অপহৃত হন ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার বিএনপির নেতা চৌধুরী আলম। চার বছর হলেও এখনও তাঁর খোঁজ নেই। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনা ঘটলেও এখন অপহরণ ও গুমের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে।
এসব বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরেই আমরা অপহরণ বা গুমের সংস্কৃতি দেখছি। অধিকাংশ সময়ই রাষ্ট্রের কোন বাহিনীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এসব ঘটনার কোন বিচার হয় না। জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হয় না। বরং দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাগুলো অস্বীকার করছে। এ কারণে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অন্যরাও এতে উৎসাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব ঘটনাই যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে তা মনে হয় না। এখানে এমন একটি পক্ষ হয়ত রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা শুরু করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। পরস্পর দোষারোপ না করে গুম-খুনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনের অপহরণ করে হত্যার পর সে নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে শনিবার বরগুনায় এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। মিজানুর বলেন, এ রকম একটি বিষয় নিয়ে যদি শুধু রাজনৈতিক খেলা চলতে থাকে, তাহলে কিন্ত সমস্যার উত্তরণ সম্ভব হবে না। পারস্পরিক দোষারোপ সমস্যার সমাধান না। ‘মানুষ অপহৃত হচ্ছে, গুম হচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। আটক বাণিজ্য চলছে। এসব বন্ধ করুন, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, আহ্বান জানান তিনি।
আসকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৩৯টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের চারজন, ছাত্রদলের তিনজন, জামায়াত-শিবিরের দুই, বিএনপির ১১, ব্যবসায়ী তিন, চাকরিজীবী চার এবং সাধারণ নাগরিক ১১ জন রয়েছেন। এ ৩৯ জনের মধ্যে ১২ জনের লাশ উদ্ধার হয়। অপহরণের পর ছেড়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরীসহ চারজনকে। অন্য ২৩ জনের খোঁজ নেই। র্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই মাস হয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত পানামা পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেডের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক (সিকিউরিটি সুপারভাইজার) মফিজউদ্দিনের।
২০১৩ সালে ৬৮ জনকে অপহরণের তথ্য আছে আসকে। এর মধ্যে পরে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার এবং ছয়জন ছাড়া পেলেও ৫৫ জনেরই খোঁজ নেই। গত বছরের ২৭ নবেম্বর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার পথে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায় সাবেক সাংসদ এবং লাকসাম বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরকে। চার মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁদের খোঁজ মেলেনি। ২০১৩ সালে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতাও আছেন। ২০১২ সালে অপহৃত হয়েছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে ৩৪ জনের খোঁজ নেই। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি নিখোঁজ হন। ২০১১ সালে অপহৃ হন ৫৯ জন। এর মধ্যে ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়। পরে ছেড়ে দেয়া হয় চারজনকে। ৩৯ জনের কোন খোঁজ নেই। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা কেএম শামীম আক্তার ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার পল্টন থেকে নিখোঁজ হন। এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি। ২০১০ সালে ৪৬ জনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জনের নিখোঁজ নেই। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যুক্তিতে রাষ্ট্র টিকে থাকে। রাষ্ট্র টিকে থাকার বড় উপাদান হলো মানুষের নিরাপত্তা। বাস্তবতা হলো, এখন মানুষের নিরাপত্তা নেই। সবাই আতঙ্কিত। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়া উচিত। যে কারণেই অপহরণ হয়ে থাকুক না কেন তা বের করতে হবে। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে গুম, হত্যা অপহরণসহ এসব অপতৎপরতা বন্ধ করা উচিত। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করার পাশাপাশি আস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। অন্যথায় সমাজ ও অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
মিলছে লাশ। ফিরছে মানুষ। কেউ কেউ একেবারেই নিখোঁজ, দিনের পর দিন। কোন খোঁজ মিলছে না। পাঁচ বছরে অপহরণের সংখ্যা ২৬৮। চলতি বছরের প্রায় তিন মাসে অপহৃত বা গুম হয়েছেন ৩৯ জন। এসব ঘটনায় কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে অভিযোগের তীর। কখনও প্রভাব খাটিয়ে নিজ দলের লোকদের অপহরণ ও গুমসহ হত্যা করা হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা পূর্বশত্রুতার জের বা অর্থ আদায়ের জন্যও ঘটছে এরকম নাশকতা। রাজনীতির কারণে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কোন কোন ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে হত্যার পর আতঙ্কে সামাজিক সব ঘটনাই অপহরণে রূপ নিচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যেকোন মূল্যে রাষ্ট্রকে এসব ঘটনার দায় নিতে হবে। উন্মোচন করতে হবে অপহরণ, খুন ও গুমের রহস্য। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করার পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আইনের শাসন। অন্যথায় সমাজ ও অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
চার কারণে বাড়ছে অপহরণ, গুম ও খুন
পরিসংখ্যান বা ঘটনাপ্রবাহ বলছে সুনির্দিষ্ট কোন কারণে অপহরণ, গুম বা খুনের ঘটনা ঘটছে না। প্রতিটি ঘটনার মোটিভ ভিন্ন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণের পর কয়েকজন উদ্ধার হলেও প্রকৃত ঘটনা রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে। শত্রুতা, চাপ প্রয়োগ, মুক্তিপণ আদায় ও রাজনীতি সংক্রান্ত অপহরণের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিজ দলের লোকদের অপহরণ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সাতজন অপহরণের ঘটনা এক্ষেত্রে বড় প্রমাণ। যদিও অপহৃত সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। ঘটনার পর পরই অভিযোগের তীর ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের দিকে। তাকে প্রধান আসামি করে প্যানেল মেয়র নজরুলের স্ত্রী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করেছিলেন। রাজনীতির কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সমালোচনা আছে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও। কারও কারও অভিযোগ এসব বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনেকটাই গা ছাড়া ভাব ফুটে ওঠে।
বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, চোরাগোপ্তা হামলা করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে। তাই পরিকল্পিতভাবে হত্যা ও গুমের ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অর্থের বিনিময়ে অপহরণ, গুম ও হত্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারও কারও ধারণা, কিছু কিছু অপহরণের ঘটনার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হতে পারে। অস্থির পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অপহরণের পর উদ্ধারের ক্ষেত্রে কিছু ঘটনায় দেখা গেছে একই মোটিভ। কালো কাপড় দিয়ে চোখ পেঁচিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যাচ্ছে অপহরণকারীরা। তবে প্রশ্ন উঠেছে আলোচিত অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অপরাধীদের গ্রেফতারে সফলতা না থাকায়। তবে কি প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে চেইন অব কমান্ডের ঘাটতি দেখা দিয়েছে? যার সুযোগ নিচ্ছে প্রতিপক্ষ শক্তি অর্থাৎ জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীও।
পুরান ঢাকা পথকে অপহৃত এক ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের পর অপহরণে জড়িত অভিযোগে দুই নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বংশাল থেকে তুলে নেয়া হয় মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাকিমকে (৫৫)। শনিবার ভোরে তাকে জুরাইনের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি আপন চাচাত ভাইকে টেলিফোনে এক মেয়েকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রায় ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার হওয়ার পর অপরাধীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। সম্প্রতি মিরপুরের বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী পলিন নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস ১০ দিনের মাথায় ফিরে আসেন। একই ঘটনা ঘটেছে মিরপুরের আহাদের ক্ষেত্রে। তাঁরা জানিয়েছেন, কোন বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের অপহরণ করা হয়নি। ১৮ এপ্রিল অপহৃত হন আবু বকর সিদ্দিক। ৩৫ ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। চোখে কালো কাপড় বেঁধে অপহরণকারীরা তাঁকে মিরপুর ফেলে যায়। তাঁর কাছে মুক্তিপণসহ ঘটনার নেপথ্যে আনুমানিক বিভিন্ন তথ্য দেয়া হলেও প্রকৃত ঘটনা রহস্য বের হয়নি। ভালুকায় অপহৃত তিন ভাই বাড়ি ফিরে এলেও তাদের ক্ষেত্রেও প্রকৃত ঘটনা আড়ালে রয়ে গেছে।
গাজীপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাধাই চন্দ্র ম-ল ও তার ভাই কেদারী চন্দ্র ম-লকে অপহরণ করার পর ছেড়ে দেয়া হয়। সোমবার ভালুকায় অস্ত্রেরমুখে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কামাল হোসেন ও আবু বকর সিদ্দিক স্বপনকে অপহরণ করে। পেশায় তারা দুজনেই শিক্ষক। টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে যুবলীগ নেতাসহ দুইজনকে অপহরণ করা হয়। কক্সবাজারের রাঙ্গুনিয়ায় বখাটে মোহাম্মদ সাইফুল ডিগ্রী পড়ুয়া ছাত্রী তসলিমা আক্তারকে অপহরণ করে। নাটোরে অপহৃত এক ভটভটি কামাল হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অপহরণের ৪০ ঘণ্টা পর অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন নূর ইসলাম (৪০)। নারায়ণগঞ্জে অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পরে সাভারের নবীনগর থেকে উদ্ধার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় র্যাব-৪ এর একটি দল চোখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাভারের নবীনগরের নিরিবিলি এলাকায় বিসমিল্লাহ হোটেলের পাশ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। ঢাকার আশুলিয়া জামগড়া এলাকা থেকে অপহৃত দুইজনকে কালিহাতীর পাইকড়া গ্রাম থেকে উদ্ধার এবং ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃতদের উদ্ধার ও চারজনকে গ্রেফতার এবং অপহরণের কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস আটক করা হয়। গাজীপুর থেকে অপহরণের ৩দিন পর অপহৃত গার্মেন্টস কর্মীসহ ৫ অপহরণকারীকে বুধবার রাতে টাঙ্গাইল পৌরশহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ।
মানিকগঞ্জের সদর উপজেলা থেকে অপহরণের দুইদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ায় সিয়াম নামের (৪) বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। অপহৃত ছোটভাইকে হত্যার পর স্কুলছাত্র বড়ভাইকে অপহরণের এক সপ্তাহ বাদে আহতাবস্থায় বাড়ির কাছে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই স্কুলছাত্রের নাম মোবারক হোসেন রাকিব (১৪)। সে শ্রীপুর উপজেলার বরমী বয়েজ হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং বরমী বাসস্ট্যান্ড এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। অপহরণের দু’দিন পর অপহৃত আরেক স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তার নাম মোঃ আকরামুল আলম দীপু (১৫)। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আবুল বাসার (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলাইয়াপুর ইউনিয়নের উত্তর আলাইয়াপুর গ্রামের বাড়ির সামনে চা দোকান থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে লোক মারফত ৫ লাখ টাকা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে ধামরাইয়ের জয়পুরা এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে রেজাউল করিম (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়।
গেল রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে মামলায় হাজিরা দিয়ে নিজের গাড়িতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড হয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন প্যানেল মেয়র ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। ওই সময় তাঁর তিন সহযোগী লিটন, স্বপন ও তাজুল এবং গাড়িচালক জাহাঙ্গীরকে গাড়িসহ অপহরণ করা হয়। বাসায় ফেরার পথে একই জায়গা থেকে গাড়িসহ অপহৃত হন আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও গাড়িচালক ইব্রাহীম। অপহরণের ৭৩ ঘণ্টা পর শীতলক্ষ্যা থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
হত্যা, গুম ও অপহরণরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয় প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক আইজি এএসএম শাহজাহান জনকণ্ঠকে বলেন, সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনীতির উর্ধে থেকে কাজ করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পাশাপাশি যেকোন মূল্যে এসব ঘটনার নিবারণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার বা আইনের আওতায় আনতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। তাদের ওপর মানুষের আস্থা কমবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শতভাগ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। সাবেক এ পুলিশ প্রধান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হবে অপরাধীদের খুঁজে বের করা। জনজীবনের উন্নতি ঘটানো, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এ ছাড়া সব কাজে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা জরুরী। তিনি বলেন, অপহরণ ও গুম জাতীয় সমস্যা দলীয় নয়। তাই দল ও মত নির্বিশেষে এজন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আইনের শাসন না থাকলে কেউ নিরাপদ নয়। এজন্য এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষকে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক
‘পরিস্থিতি শান্ত না হলে আসামি ধরা যাচ্ছে না’- নারায়ণগঞ্জে অপহরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত্রে শুক্রবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর এ বক্তব্যের পর পরই বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। একজন মন্ত্রী হিসেবে এমন বক্তব্য দিতে পারেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। বলা হচ্ছে- গত সময়ে এ রকম যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হয়েছে। আস্থা ফেরার পর থেমেছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। বাস্তবতা হলো- সিক্স মার্ডার ও এবি সিদ্দিক অপহরণ মামলায় কোন কুল কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তাঁর চার সহযোগী অপহরণ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটক ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে পুলিশ। অভিযানের সময় বাড়িতে ছিলেন না নূর হোসেন। এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা খোঁজখবর করছি। তদন্ত চলছে। আসামি বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তেমনটি মনে করি না। তিনি দেশেই আছেন। শনিবার নজরুল ইসলাম হত্যার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তিনি বলেন, শুধু এজাহারে নাম থাকলেই আসামি গ্রেফতার করা যায় না। ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে এজাহার ছাড়াও কাউকে গ্রেফতার করা যায়। যদিও নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, নূর হোসেনকে গ্রেফতার করার।
আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষর কতটা জরুরী
গুম থেকে সব মানুষকে রক্ষা করা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক একটি রেজুলেশন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯২ সালে গ্রহণ করে। ২০০৭ সালে এ সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি (কনভেনশন) সম্পাদন করা হয়। এ চুক্তিতে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং যুদ্ধ, জরুরী অবস্থা, চরম রাজনৈতিক বিপর্যয়সহ কোন অবস্থাতেই কাউকে গুম করার বৈধতা নেই বলা হয়। ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪২টি রাষ্ট্র এর পক্ষ হয়েছে। ৯৩টি রাষ্ট্র এটি স্বাক্ষর করেছে। আমাদের দেশে এ আন্তর্জাতিক চুক্তিটি অনুসমর্থন তো দূরের কথা, এটি স্বাক্ষরই করেনি বাংলাদেশ। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধে এ সরকার আগের নির্বাচনের সময় নির্বাচনী ইশতেহারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এমন বাস্তবতায় সব পক্ষ থেকেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার দাবি উঠেছে।
মিলছে লাশ ফিরছে মানুষ
চলতি বছরের প্রায় তিন মাসে অপহৃত বা গুম হয়েছেন ৩৯ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজন ফিরেছেন জীবিত অবস্থায়, ১২ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ২৩ জনের কোন খোঁজ মেলেনি। তাঁরা বেঁচে আছেন, নাকি মরে গেছেন, সেটিও জানে না পরিবার।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে অপহরণের সংখ্যা ২৬৮। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৪৬, ২০১১ সালে ৫৯, ২০১২ সালে ৫৬, ২০১৩ সালে ৬৮ ও চলতি বছরে অপহরণের সংখ্যা ৫৩ জন। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিরে এসেছে ২৪ জন। এখনও নিখোঁজ ১৮৭ জন। ২০১০ সালের ২৫ জুন ঢাকার শেরেবাংলা নগর থেকে অপহৃত হন ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার বিএনপির নেতা চৌধুরী আলম। চার বছর হলেও এখনও তাঁর খোঁজ নেই। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনা ঘটলেও এখন অপহরণ ও গুমের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে।
এসব বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরেই আমরা অপহরণ বা গুমের সংস্কৃতি দেখছি। অধিকাংশ সময়ই রাষ্ট্রের কোন বাহিনীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এসব ঘটনার কোন বিচার হয় না। জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হয় না। বরং দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাগুলো অস্বীকার করছে। এ কারণে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অন্যরাও এতে উৎসাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব ঘটনাই যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে তা মনে হয় না। এখানে এমন একটি পক্ষ হয়ত রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা শুরু করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। পরস্পর দোষারোপ না করে গুম-খুনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনের অপহরণ করে হত্যার পর সে নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে শনিবার বরগুনায় এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। মিজানুর বলেন, এ রকম একটি বিষয় নিয়ে যদি শুধু রাজনৈতিক খেলা চলতে থাকে, তাহলে কিন্ত সমস্যার উত্তরণ সম্ভব হবে না। পারস্পরিক দোষারোপ সমস্যার সমাধান না। ‘মানুষ অপহৃত হচ্ছে, গুম হচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। আটক বাণিজ্য চলছে। এসব বন্ধ করুন, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, আহ্বান জানান তিনি।
আসকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৩৯টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের চারজন, ছাত্রদলের তিনজন, জামায়াত-শিবিরের দুই, বিএনপির ১১, ব্যবসায়ী তিন, চাকরিজীবী চার এবং সাধারণ নাগরিক ১১ জন রয়েছেন। এ ৩৯ জনের মধ্যে ১২ জনের লাশ উদ্ধার হয়। অপহরণের পর ছেড়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরীসহ চারজনকে। অন্য ২৩ জনের খোঁজ নেই। র্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই মাস হয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত পানামা পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেডের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক (সিকিউরিটি সুপারভাইজার) মফিজউদ্দিনের।
২০১৩ সালে ৬৮ জনকে অপহরণের তথ্য আছে আসকে। এর মধ্যে পরে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার এবং ছয়জন ছাড়া পেলেও ৫৫ জনেরই খোঁজ নেই। গত বছরের ২৭ নবেম্বর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার পথে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায় সাবেক সাংসদ এবং লাকসাম বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরকে। চার মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁদের খোঁজ মেলেনি। ২০১৩ সালে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতাও আছেন। ২০১২ সালে অপহৃত হয়েছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে ৩৪ জনের খোঁজ নেই। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি নিখোঁজ হন। ২০১১ সালে অপহৃ হন ৫৯ জন। এর মধ্যে ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়। পরে ছেড়ে দেয়া হয় চারজনকে। ৩৯ জনের কোন খোঁজ নেই। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা কেএম শামীম আক্তার ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার পল্টন থেকে নিখোঁজ হন। এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি। ২০১০ সালে ৪৬ জনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জনের নিখোঁজ নেই। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যুক্তিতে রাষ্ট্র টিকে থাকে। রাষ্ট্র টিকে থাকার বড় উপাদান হলো মানুষের নিরাপত্তা। বাস্তবতা হলো, এখন মানুষের নিরাপত্তা নেই। সবাই আতঙ্কিত। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়া উচিত। যে কারণেই অপহরণ হয়ে থাকুক না কেন তা বের করতে হবে। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে গুম, হত্যা অপহরণসহ এসব অপতৎপরতা বন্ধ করা উচিত। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করার পাশাপাশি আস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। অন্যথায় সমাজ ও অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment