পদ শূন্য থাকলেও নিয়োগ পাচ্ছে না যোগ্য প্রার্থীরা
সরকারের চাহিদা অনুযায়ী সুপারিশ করা হয় :পিএসসি
সাইদুর রহমান ও মাহবুব রনি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অথচ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্যপদ রয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার। এর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি প্রথম শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে। নন ক্যাডারে শূন্য পদ ১০ হাজারের বেশি।
পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, 'আমাদের কাছে যথেষ্ট যোগ্য প্রার্থী আছে। যোগ্যতা থাকলেও সরকার যত পদের চাহিদা দেয় তত শূন্যপদের বিপরীতে পিএসসি নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে প্রশাসনে কত আসন শূন্য আছে, তা জানা নেই। অনেক সময় পিএসসি সরকারকে শুন্য পদের চাহিদা চেয়ে পত্র দেয়।'
বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ; কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত নয় এমন প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ঘোষণা দেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১০ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় 'নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য (বিশেষ) বিধিমালা ২০১০' জারি করে। ২৮তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে এ বিধিমালা কার্যকর হয়। বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই চলমান বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এই বিধি মোতাবেক উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ শতাংশকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে পিএসসি। তবে মন্ত্রণালয়গুলো থেকে জনবলের চাহিদা পত্র না পাওয়ার কারণে প্রতি বছর কয়েক হাজার যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত ২৮ থেকে ৩৩তম বিসিএসের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই ছয় বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪০ হাজার ১২৩ প্রার্থী। এর মধ্যে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৬৩৫ জন। আর নন-ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হন ২১ হাজার ৪৮৮ প্রার্থী। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৪০ জন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
২৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হন ২ হাজার ৯১৫ প্রার্থী, ২৯তম বিসিএসে ৩ হাজার ৩৪০, ৩০তম বিসিএসে ৩ হাজার ৪৪৩, ৩১তম বিসিএসে ৩ হাজার ৪১৭, ৩২তম বিসিএসে ৯১১ জন এবং ৩৩তম বিসিএসে ৭ হাজার ৪৬২ প্রার্থী।
বিধি অনুযায়ী প্রতি ব্যাচে নন-ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ অর্ধেক সংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে পিএসসি। এ হিসেবে গত ছয় বছরে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণির পদে ১০ হাজার ৭৪৪ জন নিয়োগের জন্য উপযোগী ছিলেন; কিন্তু বিধির আওতাভুক্ত ৯ হাজার ৭০৪ জন বঞ্চিত হয়েছেন নিয়োগ থেকে। এক বিসিএস থেকে পরবর্তী বিসিএসের ফল প্রকাশের আগেই উত্তীর্ণদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। বিপুলসংখ্যক যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েছে। গত ৩১ এবং ৩২তম বিসিএস হতে ১২০ এবং ৬৬ জনকে নন ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।
পিএসসির সংশ্লিষ্টরা ইত্তেফাককে বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তার টালবাহানায় বিসিএস উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার পদে নিয়োগযোগ্যদের ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কারণ পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করা হলে তারা নিয়োগ বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত হবেন।
সাংবিধানিক অনুশাসন অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে ক্যাডার ও ক্যাডার বহির্ভূত ১ম ও ২য় শ্রেণির পদে নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রার্থী বাছাই করা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা বা অধিযাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ২৮টি ক্যাডারের বিপরীতে বিসিএস পরীক্ষার জন্য কমিশন আবেদন আহ্বান করে। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়টি বিসিএসে ১৮ হাজার ৬৩৫ জন বিসিএস ক্যাডার প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৩৫ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। অথচ সরকারি শূন্য পদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। সরকারি চাকরির মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১৩ লাখ ৭০ হাজার ১২৭। গত ৯ মার্চ জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমাত আরা সাদেক জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্যপদের সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৬৪ জন। শূন্যপদ পূরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। শূন্যপদে জনবল নিয়োগে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়-বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।' এসব খালি পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ৪০ হাজার ৪৬০টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৩০ হাজার ৫৩৬টি এবং তৃতীয় শ্রেণির এক লাখ ২৫ হাজার পদ রয়েছে। বাকি পদগুলো চতুর্থ শ্রেণির।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা, পিএসসির সময়মতো নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করা, আইনি জটিলতার কারণে সঠিক সময়ে লোক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সমস্যাসহ নানা কারণে এসব পদে লোক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। এছাড়াও তদবির, মামলা ও প্রশ্ন ফাঁসের কারণে অনেক দফতরের নিয়োগ আটকে আছে।
No comments:
Post a Comment