ভারত কি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী ?
ড. আবু আহমেদ তাওসীফ
সম্প্রতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে দেশে-বিদেশে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে ভারতের সরাসরি হস্তেক্ষেপ বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র-বিন্দুতে নিয়ে এসেছে। ১৯ দলীয় জোটনেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। সার্বভৌমত্ব যা ইংরেজীতে ঝঙঠঊজঊএঘঞণ ল্যাটিন ঝঁঢ়ধৎধহঁং হতে আগত, এর অর্থ চরম ক্ষমতা। ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ইৎরঃধহহরপধ বলা হয়েছে:- ঝড়াবৎবরমহঃু, রহ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ঃযবড়ৎু, ঃযব ঁষঃরসধঃব ড়াবৎংববৎ, ড়ৎ ধঁঃযড়ৎরঃু, রহ ঃযব ফবপরংরড়হ-সধশরহম ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ ঃযব ংঃধঃব ধহফ রহ ঃযব সধরহঃবহধহপব ড়ভ ড়ৎফবৎ.
আমেরিকার খ্যাতনামা অধ্যাপক বার্জেস এর মতে, “সার্বভৌমত্ব হচ্ছে প্রত্যেক প্রজা ও সকল প্রকার সংঘের উপর মৌলিক, চরম, অসীম ও সর্বাতœক ক্ষমতা। রাষ্ট্র যখন নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনি দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উপর সামাজ্যবাদ, ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো দানবের মত আক্রমন চালায়। তখন সার্বভৌম রাষ্ঠ্র তার আসল রুপ, ক্ষমতা ও বৈশিষ্ঠ হারাতে থাকে। এমন রাষ্ঠ্রকেই বলা হয় নতজানু রাষ্ঠ্র। আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র দ্বারা দারুণভাবে আধিপত্যবিস্তারের বিস্তারের শিকারে পরিনত। এই কাজে তারা এদেশের এক শ্রেনীর তথাকথিত সুশীল সমাজ, ,মিডিয়া, এনজিও, প্রগতিশীল!দের উপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এরা তাদেও বেতনভূক্ত কর্মচারী। এটা দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বেও জন্য ভয়াবহ হুমকি। আর গোটা বিষয়টি পরিচালনায় কলকাঠি নাড়ছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ”র”।
“মেইন ক্যাম্প” না পড়ে সম্ভবত হিটলারের জার্মানিকে বুঝা যেমন অসম্ভব, ঠিক ভারতকে বুঝতে হলে জওহারলাল নেহেরুর রচনা কৌশল পড়তে হবে। সেখান থেকে জানা যায় ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে ভারত মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর ইন্দিরাগান্ধী এক জনসভায় বলেছিলেন “ভারত কোনদিনই পাকিস্তানের অস্তিত্বকে স্বীকার করবে না। ভারতের নেতৃবৃন্দ সব সময় বিশ্বাস করে যে পাকিস্তানের সৃষ্টি হওয়া উচিত হয়নি এবং পাকিস্তানের বেঁেচ থাকার অধিকার নেই”। এই বক্তব্য স্বাধীনতার আগের হলেও,এ ভাষণে বাংলাদেশকে বিজড়িত করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভ’মিকা ছিল সম্প্রাসারণবাদী। চিন্তায় ছিল বল প্রয়োগে অখ-ভারতের আদর্শ ও ধারণা বাস্তবায়ন। ভারত বিশ্বাস করে একটি সার্বভৌম দেশের অধিকার কে নেহেরু মতবাদ প্রয়োগ করা।
যেটি এবার ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে হয়েছে। আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার ভারত হস্তক্ষেপ করবে। যদি নিয়ন্ত্রণ ন্যায়সম্মত না হয়, তবে অবশ্যই বল প্রয়োগ করতে হবে, এ থেকে ভারতকে প্রতিরোধ করা যাবে না, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আইনগত চুক্তি বা দলিলাদির বন্ধন দ্বারা ভারতকে নির্বৃত করা যাবে না, বরং দুর্বল ও ক্ষুদ্র দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দিবে এবং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌন সম্মতি আদায় করবে।” ( সুত্র: ইন্ডিয়া ডকটিন)
অবিভক্ত উপমহাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ঢাকায় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে জোর করে দৃঢ় রূপে দাবী উত্থাপন করা হয়। এ ঘটনার পেছনে সংস্থাটির নাম দেয়া হয় উপমহাদেশ পুনরুজ্জীবন আন্দোলন (মুভমেন্ট ফর রিভাইবাল অব দি সাব-কন্টিনেন্ট)। পরবর্তীতে ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯১ সালে দলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং অতিথি সেবক ছিল ঐ একই দল, এবং কংগ্রেস দলের একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাকে আনা হয়েছিল ভারত থেকে, তিনি ক্রমাতœকভাবে উল্লেখ করেন যে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির জন্য দায়ী। তাঁর এ বক্তব্য দ্বি-জাতি তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে এবং উদ্দেশ্য হল, বাংলাদেশও দক্ষিণ এশিয়াতে নূতন চিন্তাধারা দিয়ে দেশগুলোকে গিলে ফেলা। সেই পথ ধরে ভারতের শিল্পী, সাহিত্যিক সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীগণ বাংলাদেশে আগমন করে বিভিন্ন সভা সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে।
অবাঞ্চিতভাবে পুনঃযুক্তভারত এবং একটি যুক্তবাংলার ইচ্ছাপ্রকাশ করে, বিশ্লেষণে একই নীতির কথা প্রচার করে। ভারতের বুদ্ধিজীবী শিব নারয়ণ রায় আগ্রহান্বিত হয়ে যুক্ত বাংলার কথা বলেছিলেন। একটি সাপ্তাহিকরে সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেছিলেন বাংলার উভয় অংশের যুক্ত হওয়া অবশ্যম্ভাবীয় কিন্তু তিনি উভয় বাংলার যুক্ত হওয়া সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি, তাছাড়া ভারত শাসিত বাংলা স্বাধীন হয়ে যাবে, নাকি বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হবে, নাকি বাংলাদেশ ভারত শাসিত বাংলার সঙ্গে একত্র হয়ে পশ্চিম বাংলা শাসন করবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশের যুক্তকরণ, যুক্তবাংলা অথবা উপমহাদেশের পুনঃপ্রবর্তন অথবা যুক্ত ভারত যাই হোক না কথাগুলো সব একই।”
ভারত বরাবরই প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্ব পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘন করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এর প্রমান এখন অসংখ্য। বি.এস.এফ কতৃক সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশী বেসামরিক লোকদের গনহাওে হত্যা, বিডিয়ার ধ্বংশ, তিস্তা-ফারাক্কা, টিপাইমুখ, সহ নানা ইস্যু প্রমাণ করে ভারত তাদের সম্প্রসারণশীল আক্রমণাতœক নীতি প্রশমনের কোন চিন্তা আপাতত করছে না। ইতোমধ্যে ভারত প্রত্যক্ষভাবে সীমানা লঙ্ঘন তালপট্রি দ্বীপ নিয়েছে। ভারত এককভাবে বঙ্গোপসাগরের ১৯০০০ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের এলাকা তাদের প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য পরিবেষ্টিত সীমানার অর্ন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। ভারত আজ নিলো তো দু’টো তেল ক্ষেত্র, কাল নিয়ে যাবে সোনাদিয়া দ্বীপ। ভারত আশুগঞ্জ পোর্ট এখন দিব্যি ব্যবহার করে চলছে। মংলা পোর্ট চাইলে এখনই ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম পোর্ট নিয়ে নেবে সে ঘোষণা দিয়েই রেখেছে। নারায়নগঞ্জে নিজেরাই পোর্ট বানানোর জন্য টেন্ডার করেছে ভারত।
খাল-নদী-জমি ভরাট করে বিদ্যুত কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গেলো সড়ক পথে। এরপরে নিবে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে একটা করিডোর- পারাপার করবে অস্ত্র ও সৈন্য। চুয়াত্তরে বেরুবাড়ি নিয়ে নিলেও বাংলাদেশকে চুক্তি মোতাবেক ফেরত দেয় নি দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। দু’বছর আগে সীমান্তে জমি বিনিময় চুক্তিতে আড়াই গুণ নিয়ে গেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ও গত ৪৩ বছর ধরে ভারত কঠোরভাবে আগ্রাসনের চেষ্টাই করছে। নয়াদিল্লী খুব সহজভাবে বিবেচনা করেছিল যে সার্বভৌম নূতন ও অপরিপক্ক প্রতিবেশীকে ধ্বংস করে তাদের ধন সম্পদ বৃদ্ধি করবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান পরাজিত হলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢাকা অধিকার করে যে সম্পদ লুন্ঠন করেছে তা থেকে সহজেই বুঝা যায় বাংলাদেশের পরিণতিতে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ ও কর্তৃত্ব করার পরিকল্পনা, এদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক সমূলে ধবংস করার প্রচেষ্টা, তৃতীয় দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নষ্ট করাসহ ভারত সবকিছু আরম্ভ কওে দিয়েছে খুব নগ্নভাবে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বেও উপর ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে দেশের সাধারণ জনগন।
প্রথমটি হলো- ”ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) গত সপ্তাহের দিকে ঢাকার শাহজালাল আস্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারত ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের (আইএম) এক সদস্যকে প্রকাশ্য দিবালোকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের দাবি, জিয়াউর রেহমান ওরফে ওয়াকাস নামের ওই ব্যক্তি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করছিলেন। এ খবরটি বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমের নজরে আসেনি। গত ১৫ এপ্রিল টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গ্রেফতারের পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) তাকে ধরে নিয়ে গেছে।
আর এ খবরটি জানেন না বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি ১৬ এপ্রিল সচিবালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি এখনো বিষয়টি জানি না। পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তার মত করেই বলেছেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার। গতকাল সোমবার সকালে এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি হাসান মাহমুদ বলেন, হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। আমরাও বিষয়টি জানি না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা রটনা। কোন দেশের কোন গণমাধ্যম কি লিখলো না লিখলো তা নিয়ে চিন্তভাবনার সময় নেই। ‘র’ কর্মকর্তারা ঢাকা বিমানবন্দরে ৬ ফুট লম্বা লোকটির ছবি দেখে উল্লসিত হয়ে ওঠেন। পত্রিকাটি জানায়, এরপর ‘র’ কোনো প্রমাণ না রেখেই তাকে ভারতে নিয়ে যায়। তবে কিভাবে ভারত বাংলাদেশ থেকে তাকে নিয়ে গেল তা টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়নি।
এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘র’ কোন কথাবার্তা ছাড়াই রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এলাকার একটি গ্রামে ঢুকে আরডিএস উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কোন আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এটা একটি স্বাধীন দেশের ভূখন্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত। বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি ) সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আ. ল. ম. ফজলুর রহমান এর মতে বিমানবন্দর থেকে ‘র’ একজনকে ধরে তাদের দেশে নিয়ে গেছে এর ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে একটি ক্লারিফিকেশন দেয়া উচিত। ভারতীয় এজেন্টের লোকজন সরকারকে না জানিয়ে এটা করে থাকলে আমাদের জন্য এলার্মিং। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এ দেশের জন্য হুমকির। এ ঘটনা মেনে নেযা যায় না।সুরক্ষিত শাহজালাল বিমানবন্দরে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে বলতেই হবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা বলয় ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। ( সংগ্রাম-২২- এপ্রিল ২০১৪)
দ্বিতীয়টি হলো- গত ২০ এপ্রিল-২০১৪-” আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা সুব্রহ্মনিয়ন বলেন, -বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে আমি চরম উদ্বিগ্ন। আমার ধারণা মতে, বাংলাদেশি জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ভারতে বসবাস করে। তবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর পরিসংখ্যান এবং এর জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি। তিনি বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড দাবী করেন। উল্লেখ্য ২০১২ সালের গত ১৬ জুলাই ভারতীয় ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসে (ডিএনএ) প্রকাশিত ‘হাউ টু ওয়াইপআউট ইসলামিক টেরর’ শিরোনামে এক নিবন্ধে সুব্রহ্মনিয়মের ওই প্রস্তাব আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও হার্ভার্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ডিসেম্বর হার্ভার্ড সামার স্কুলের কর্মকর্তারা বৈঠক করে তাকে দেয়া দুটি কোর্স কেড়ে নেয়। হার্ভার্ডে ‘কোয়ানটিটেটিভ মেথডস ইন ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস’ এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইস্ট এশিয়া’ শীর্ষক দুটি বিষয় ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন এই অর্থনীতিবিদ। এছাড়া বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের কারণে ভারতে মোসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে- গত বছর এমন মন্তব্য করে আলোচনার ঝড় তোলেস বিজেপি নেতা সুব্রহ্মনিয়ন স্বামী।”( বাংলামেইল)
এর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বাংলাদেশীদেও সম্পকে হুংকার ছুড়লেন স্বয়ং নরেন্দ্রমোদী নিজেই। তিনি বললেন-বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদেও তল্লি-তল্পা গুছিয়ে রাখতে, ১৬ মের পর তাদেওকে ভারত ছাড়তে হবে। এই হুংকাওে সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে।” অথচ বছরের পর বছর ভারতীয় রাজনীতিবিদরা গালাগাল করে আসছে, ‘গরিব বাংলাদেশিরা’ সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, ওখানে কাজ করছে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে। তবে প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, -”৫ লাখ ভারতীয় বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশে কাজ করছে অন্তত ৫ লাখ ভারতীয়। তারা বছরে প্রায় ৩৭১ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩০ হাজার কোটি টাকা ভারতে পাঠাচ্ছে। এরা ভারতে ৩৭১.৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন।
এটা আগামী কয়েক বছরে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।‘দি সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেসব ভারতীয়রা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে আসা। সরকারি তথ্যমতে, অধিকাংশই কাজের সন্ধানে আসে এবং তারা বেশিরভাগই কাজ করে এনজিও, গার্মেন্ট এবং টেক্সটাইল শিল্পে। এসব ভারতীয়রা তাদের নিজ দেশে ৩৭১.৬ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠায় এবং এ রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণটা আগামী কয়েক বছরে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ( সুত্র: আরটিএনএন) আরো আশংকার খবর হলো- বাংলাদেশের পোশাকশিল্প হুমকির মুখে-রিপোটে বলা হয়-”রাজনৈতিক অস্থি’রতা, পোশাক কারখানা ধস ও একের পর এক অগ্নিকান্ডের কারণে ক্রেতাদের একটা বড় অংশ গত এক বছরে বাংলাদেশের পোশাক খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এ খাতের ৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার চলে গেছে ভারতে। ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে বাজার খুঁজতে শুর“ করেছেন ক্রেতারা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প।
শুধু তাই নয়, ভারত ২০১৩ সালে যে নতুন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছে যা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। প্রতি মৌসুমে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন পণ্যের অর্ডার আসে বাংলাদেশে। রপ্তানি আয়ের ৭৮ শতাংশই আসে দেশের পোশাকশিল্প থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশ এ সব অর্ডার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে”। ( মানব জমিন) কথিত আছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ভারত পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করে আসছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু আওয়ামী লীগ নেতা নীরবে ভারতের দুষ্কর্মে সহযোগিতা করেছে, ফলে জাতি শুধু প্রভূত্ত্বের পরিবর্তন করে ক্রীতদাসের শ্রেণীভুক্ত হয়েছে। ভারতের বর্তমান লক্ষ্য ক্রমান্বয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রকে ক্ষয় করা, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোকে পঙ্গু করে দেয়া এবং ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা। ভারতীয় গোয়েন্দারা ক্রমে ক্রমে অলক্ষিতে প্রশাসনের সকল শাখায় প্রবেশ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র এবং স্যাটেলাইট মিডিয়া, সংস্কৃতিক অঙ্গন, আমলাতান্ত্রিক, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। কাজেই ভারত মুক্তভাবে প্রচারের কাজ চালাতে পারে, ধ্বংসাতœক ও সন্ত্রাসী কাজের ব্যাপারে নিজের উপর কোন বিপদসম্ভাবনার ঝুঁকি না নিয়ে অভীষ্টলক্ষ্যে অভ্যন্তরে খুব সহজেই ঢুকতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সেই অরাজক অধ্যায়টি অতিক্রম করছে। আমাদের ঘুম এখনই না ভাঈলে পরে খুব আতœচিৎকার ও কোন কাজে আসবেনা।
বিশিষ্ট কলামিষ্ট জনাব ফরহাদ মযহার লিখেছেন-” দিল্লি¬ যদি ‘জঙ্গি’ ইসলাম প্রতিরোধের নামে ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার বোকামি অব্যাহত রাখে, তাহলে তার পরিণতি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও আরও রক্তাক্ত হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। এ আগুনে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের জগৎ ও জীবনকে বিচার করার জন্য যেমন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিজের বলে গণ্য করে আর সেই সূত্রে সনাতন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও লোকায়ত জ্ঞানের সঙ্গে কোনো বিরোধ দেখে না, ঠিক একইভাবে ইসলামও তার মনোজাগতিক ও ইহলৌকিক জগতের অংশ। এই জগতের বিরুদ্ধে দিল্লি ও শেখ হাসিনা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শেখ হাসিনার জামায়াত-বিরোধিতা আসলে ইসলাম-বিরোধিতারই নামান্তর। এই সত্য না বোঝার কোনো কারণ নাই।”
সুতরাং আমাদের ইতিহাস অনেক গৌরবের। অনেক ঐতিয্যমন্ডিত আবার অনেক বেদনা-বিদুর ও বটে। এই জনপদের মানুষের ইতিহাস অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের। এই বিস্ময়কর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় নিকট-অতীতে এখানে আর্যদের আগ্রাসন, ইংরেজদের শোষন আর এদেশীয় মিরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার মোকাবেলায় তীব্রতর লড়াই হয়েছে। প্রাণ দিয়েছে বটে মান বিকিয়ে দেয়নি। এই জাতি রক্তে মাংসে সংগ্রামী, আস্তিতে স্বাধীনচেতা আর মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে এক আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করেনা। কিন্তু এই চেতনা ও মূল্যেবোধের উপর আঘাত হয়েছে অসংখ্যবার। এই আঘাতের যাত্রা ১৬৩৪ সালে বাংলায় বানিজ্য করার নামে বৃটিশ বেনীয়ারা এখানে এসে ইঈ-হিন্দু মৈত্রী গড়ে তুলে মুলত: মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। এরই অংশ হিসেবে নবাব সিরাউদৌলার পতন, এখন আবার এদেশীয় মিরজাফর ও ঘসেটি বেগমরা ক্ষমতার লোভে অন্যের নিকট দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর গনতন্ত্র বন্ধক দিয়ে এই জনপদে যে বিভক্তি তৈরী করে আমাদেও জাতীয় ঐক্যেকে ধ্বংশ করা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই আজ আমজনতাকে ঈমান ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে রুখে দাড়াতে হবে।
লেখক- কলামিষ্ট ও বিশ্লেষক।
http://www.parisvisionnews. com/2011-10-19-15-40-00/111- political/10104-2014-05-01-13- 27-01.html
ড. আবু আহমেদ তাওসীফ
সম্প্রতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে দেশে-বিদেশে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে ভারতের সরাসরি হস্তেক্ষেপ বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র-বিন্দুতে নিয়ে এসেছে। ১৯ দলীয় জোটনেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। সার্বভৌমত্ব যা ইংরেজীতে ঝঙঠঊজঊএঘঞণ ল্যাটিন ঝঁঢ়ধৎধহঁং হতে আগত, এর অর্থ চরম ক্ষমতা। ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ইৎরঃধহহরপধ বলা হয়েছে:- ঝড়াবৎবরমহঃু, রহ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ঃযবড়ৎু, ঃযব ঁষঃরসধঃব ড়াবৎংববৎ, ড়ৎ ধঁঃযড়ৎরঃু, রহ ঃযব ফবপরংরড়হ-সধশরহম ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ ঃযব ংঃধঃব ধহফ রহ ঃযব সধরহঃবহধহপব ড়ভ ড়ৎফবৎ.
আমেরিকার খ্যাতনামা অধ্যাপক বার্জেস এর মতে, “সার্বভৌমত্ব হচ্ছে প্রত্যেক প্রজা ও সকল প্রকার সংঘের উপর মৌলিক, চরম, অসীম ও সর্বাতœক ক্ষমতা। রাষ্ট্র যখন নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনি দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উপর সামাজ্যবাদ, ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো দানবের মত আক্রমন চালায়। তখন সার্বভৌম রাষ্ঠ্র তার আসল রুপ, ক্ষমতা ও বৈশিষ্ঠ হারাতে থাকে। এমন রাষ্ঠ্রকেই বলা হয় নতজানু রাষ্ঠ্র। আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র দ্বারা দারুণভাবে আধিপত্যবিস্তারের বিস্তারের শিকারে পরিনত। এই কাজে তারা এদেশের এক শ্রেনীর তথাকথিত সুশীল সমাজ, ,মিডিয়া, এনজিও, প্রগতিশীল!দের উপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এরা তাদেও বেতনভূক্ত কর্মচারী। এটা দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বেও জন্য ভয়াবহ হুমকি। আর গোটা বিষয়টি পরিচালনায় কলকাঠি নাড়ছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ”র”।
“মেইন ক্যাম্প” না পড়ে সম্ভবত হিটলারের জার্মানিকে বুঝা যেমন অসম্ভব, ঠিক ভারতকে বুঝতে হলে জওহারলাল নেহেরুর রচনা কৌশল পড়তে হবে। সেখান থেকে জানা যায় ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে ভারত মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর ইন্দিরাগান্ধী এক জনসভায় বলেছিলেন “ভারত কোনদিনই পাকিস্তানের অস্তিত্বকে স্বীকার করবে না। ভারতের নেতৃবৃন্দ সব সময় বিশ্বাস করে যে পাকিস্তানের সৃষ্টি হওয়া উচিত হয়নি এবং পাকিস্তানের বেঁেচ থাকার অধিকার নেই”। এই বক্তব্য স্বাধীনতার আগের হলেও,এ ভাষণে বাংলাদেশকে বিজড়িত করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভ’মিকা ছিল সম্প্রাসারণবাদী। চিন্তায় ছিল বল প্রয়োগে অখ-ভারতের আদর্শ ও ধারণা বাস্তবায়ন। ভারত বিশ্বাস করে একটি সার্বভৌম দেশের অধিকার কে নেহেরু মতবাদ প্রয়োগ করা।
যেটি এবার ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে হয়েছে। আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার ভারত হস্তক্ষেপ করবে। যদি নিয়ন্ত্রণ ন্যায়সম্মত না হয়, তবে অবশ্যই বল প্রয়োগ করতে হবে, এ থেকে ভারতকে প্রতিরোধ করা যাবে না, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আইনগত চুক্তি বা দলিলাদির বন্ধন দ্বারা ভারতকে নির্বৃত করা যাবে না, বরং দুর্বল ও ক্ষুদ্র দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দিবে এবং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌন সম্মতি আদায় করবে।” ( সুত্র: ইন্ডিয়া ডকটিন)
অবিভক্ত উপমহাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ঢাকায় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে জোর করে দৃঢ় রূপে দাবী উত্থাপন করা হয়। এ ঘটনার পেছনে সংস্থাটির নাম দেয়া হয় উপমহাদেশ পুনরুজ্জীবন আন্দোলন (মুভমেন্ট ফর রিভাইবাল অব দি সাব-কন্টিনেন্ট)। পরবর্তীতে ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯১ সালে দলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং অতিথি সেবক ছিল ঐ একই দল, এবং কংগ্রেস দলের একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাকে আনা হয়েছিল ভারত থেকে, তিনি ক্রমাতœকভাবে উল্লেখ করেন যে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির জন্য দায়ী। তাঁর এ বক্তব্য দ্বি-জাতি তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে এবং উদ্দেশ্য হল, বাংলাদেশও দক্ষিণ এশিয়াতে নূতন চিন্তাধারা দিয়ে দেশগুলোকে গিলে ফেলা। সেই পথ ধরে ভারতের শিল্পী, সাহিত্যিক সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীগণ বাংলাদেশে আগমন করে বিভিন্ন সভা সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে।
অবাঞ্চিতভাবে পুনঃযুক্তভারত এবং একটি যুক্তবাংলার ইচ্ছাপ্রকাশ করে, বিশ্লেষণে একই নীতির কথা প্রচার করে। ভারতের বুদ্ধিজীবী শিব নারয়ণ রায় আগ্রহান্বিত হয়ে যুক্ত বাংলার কথা বলেছিলেন। একটি সাপ্তাহিকরে সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেছিলেন বাংলার উভয় অংশের যুক্ত হওয়া অবশ্যম্ভাবীয় কিন্তু তিনি উভয় বাংলার যুক্ত হওয়া সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি, তাছাড়া ভারত শাসিত বাংলা স্বাধীন হয়ে যাবে, নাকি বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হবে, নাকি বাংলাদেশ ভারত শাসিত বাংলার সঙ্গে একত্র হয়ে পশ্চিম বাংলা শাসন করবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশের যুক্তকরণ, যুক্তবাংলা অথবা উপমহাদেশের পুনঃপ্রবর্তন অথবা যুক্ত ভারত যাই হোক না কথাগুলো সব একই।”
ভারত বরাবরই প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্ব পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘন করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এর প্রমান এখন অসংখ্য। বি.এস.এফ কতৃক সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশী বেসামরিক লোকদের গনহাওে হত্যা, বিডিয়ার ধ্বংশ, তিস্তা-ফারাক্কা, টিপাইমুখ, সহ নানা ইস্যু প্রমাণ করে ভারত তাদের সম্প্রসারণশীল আক্রমণাতœক নীতি প্রশমনের কোন চিন্তা আপাতত করছে না। ইতোমধ্যে ভারত প্রত্যক্ষভাবে সীমানা লঙ্ঘন তালপট্রি দ্বীপ নিয়েছে। ভারত এককভাবে বঙ্গোপসাগরের ১৯০০০ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের এলাকা তাদের প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য পরিবেষ্টিত সীমানার অর্ন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। ভারত আজ নিলো তো দু’টো তেল ক্ষেত্র, কাল নিয়ে যাবে সোনাদিয়া দ্বীপ। ভারত আশুগঞ্জ পোর্ট এখন দিব্যি ব্যবহার করে চলছে। মংলা পোর্ট চাইলে এখনই ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম পোর্ট নিয়ে নেবে সে ঘোষণা দিয়েই রেখেছে। নারায়নগঞ্জে নিজেরাই পোর্ট বানানোর জন্য টেন্ডার করেছে ভারত।
খাল-নদী-জমি ভরাট করে বিদ্যুত কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গেলো সড়ক পথে। এরপরে নিবে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে একটা করিডোর- পারাপার করবে অস্ত্র ও সৈন্য। চুয়াত্তরে বেরুবাড়ি নিয়ে নিলেও বাংলাদেশকে চুক্তি মোতাবেক ফেরত দেয় নি দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। দু’বছর আগে সীমান্তে জমি বিনিময় চুক্তিতে আড়াই গুণ নিয়ে গেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ও গত ৪৩ বছর ধরে ভারত কঠোরভাবে আগ্রাসনের চেষ্টাই করছে। নয়াদিল্লী খুব সহজভাবে বিবেচনা করেছিল যে সার্বভৌম নূতন ও অপরিপক্ক প্রতিবেশীকে ধ্বংস করে তাদের ধন সম্পদ বৃদ্ধি করবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান পরাজিত হলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢাকা অধিকার করে যে সম্পদ লুন্ঠন করেছে তা থেকে সহজেই বুঝা যায় বাংলাদেশের পরিণতিতে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ ও কর্তৃত্ব করার পরিকল্পনা, এদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক সমূলে ধবংস করার প্রচেষ্টা, তৃতীয় দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নষ্ট করাসহ ভারত সবকিছু আরম্ভ কওে দিয়েছে খুব নগ্নভাবে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বেও উপর ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে দেশের সাধারণ জনগন।
প্রথমটি হলো- ”ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) গত সপ্তাহের দিকে ঢাকার শাহজালাল আস্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারত ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের (আইএম) এক সদস্যকে প্রকাশ্য দিবালোকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের দাবি, জিয়াউর রেহমান ওরফে ওয়াকাস নামের ওই ব্যক্তি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করছিলেন। এ খবরটি বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমের নজরে আসেনি। গত ১৫ এপ্রিল টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গ্রেফতারের পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) তাকে ধরে নিয়ে গেছে।
আর এ খবরটি জানেন না বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি ১৬ এপ্রিল সচিবালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি এখনো বিষয়টি জানি না। পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তার মত করেই বলেছেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার। গতকাল সোমবার সকালে এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি হাসান মাহমুদ বলেন, হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। আমরাও বিষয়টি জানি না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা রটনা। কোন দেশের কোন গণমাধ্যম কি লিখলো না লিখলো তা নিয়ে চিন্তভাবনার সময় নেই। ‘র’ কর্মকর্তারা ঢাকা বিমানবন্দরে ৬ ফুট লম্বা লোকটির ছবি দেখে উল্লসিত হয়ে ওঠেন। পত্রিকাটি জানায়, এরপর ‘র’ কোনো প্রমাণ না রেখেই তাকে ভারতে নিয়ে যায়। তবে কিভাবে ভারত বাংলাদেশ থেকে তাকে নিয়ে গেল তা টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়নি।
এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘র’ কোন কথাবার্তা ছাড়াই রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এলাকার একটি গ্রামে ঢুকে আরডিএস উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কোন আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এটা একটি স্বাধীন দেশের ভূখন্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত। বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি ) সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আ. ল. ম. ফজলুর রহমান এর মতে বিমানবন্দর থেকে ‘র’ একজনকে ধরে তাদের দেশে নিয়ে গেছে এর ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে একটি ক্লারিফিকেশন দেয়া উচিত। ভারতীয় এজেন্টের লোকজন সরকারকে না জানিয়ে এটা করে থাকলে আমাদের জন্য এলার্মিং। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এ দেশের জন্য হুমকির। এ ঘটনা মেনে নেযা যায় না।সুরক্ষিত শাহজালাল বিমানবন্দরে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে বলতেই হবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা বলয় ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। ( সংগ্রাম-২২- এপ্রিল ২০১৪)
দ্বিতীয়টি হলো- গত ২০ এপ্রিল-২০১৪-” আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা সুব্রহ্মনিয়ন বলেন, -বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে আমি চরম উদ্বিগ্ন। আমার ধারণা মতে, বাংলাদেশি জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ভারতে বসবাস করে। তবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর পরিসংখ্যান এবং এর জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি। তিনি বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড দাবী করেন। উল্লেখ্য ২০১২ সালের গত ১৬ জুলাই ভারতীয় ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসে (ডিএনএ) প্রকাশিত ‘হাউ টু ওয়াইপআউট ইসলামিক টেরর’ শিরোনামে এক নিবন্ধে সুব্রহ্মনিয়মের ওই প্রস্তাব আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও হার্ভার্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ডিসেম্বর হার্ভার্ড সামার স্কুলের কর্মকর্তারা বৈঠক করে তাকে দেয়া দুটি কোর্স কেড়ে নেয়। হার্ভার্ডে ‘কোয়ানটিটেটিভ মেথডস ইন ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস’ এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইস্ট এশিয়া’ শীর্ষক দুটি বিষয় ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন এই অর্থনীতিবিদ। এছাড়া বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের কারণে ভারতে মোসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে- গত বছর এমন মন্তব্য করে আলোচনার ঝড় তোলেস বিজেপি নেতা সুব্রহ্মনিয়ন স্বামী।”( বাংলামেইল)
এর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বাংলাদেশীদেও সম্পকে হুংকার ছুড়লেন স্বয়ং নরেন্দ্রমোদী নিজেই। তিনি বললেন-বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদেও তল্লি-তল্পা গুছিয়ে রাখতে, ১৬ মের পর তাদেওকে ভারত ছাড়তে হবে। এই হুংকাওে সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে।” অথচ বছরের পর বছর ভারতীয় রাজনীতিবিদরা গালাগাল করে আসছে, ‘গরিব বাংলাদেশিরা’ সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, ওখানে কাজ করছে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে। তবে প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, -”৫ লাখ ভারতীয় বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশে কাজ করছে অন্তত ৫ লাখ ভারতীয়। তারা বছরে প্রায় ৩৭১ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩০ হাজার কোটি টাকা ভারতে পাঠাচ্ছে। এরা ভারতে ৩৭১.৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন।
এটা আগামী কয়েক বছরে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।‘দি সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেসব ভারতীয়রা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে আসা। সরকারি তথ্যমতে, অধিকাংশই কাজের সন্ধানে আসে এবং তারা বেশিরভাগই কাজ করে এনজিও, গার্মেন্ট এবং টেক্সটাইল শিল্পে। এসব ভারতীয়রা তাদের নিজ দেশে ৩৭১.৬ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠায় এবং এ রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণটা আগামী কয়েক বছরে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ( সুত্র: আরটিএনএন) আরো আশংকার খবর হলো- বাংলাদেশের পোশাকশিল্প হুমকির মুখে-রিপোটে বলা হয়-”রাজনৈতিক অস্থি’রতা, পোশাক কারখানা ধস ও একের পর এক অগ্নিকান্ডের কারণে ক্রেতাদের একটা বড় অংশ গত এক বছরে বাংলাদেশের পোশাক খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এ খাতের ৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার চলে গেছে ভারতে। ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে বাজার খুঁজতে শুর“ করেছেন ক্রেতারা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প।
শুধু তাই নয়, ভারত ২০১৩ সালে যে নতুন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছে যা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। প্রতি মৌসুমে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন পণ্যের অর্ডার আসে বাংলাদেশে। রপ্তানি আয়ের ৭৮ শতাংশই আসে দেশের পোশাকশিল্প থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশ এ সব অর্ডার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে”। ( মানব জমিন) কথিত আছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ভারত পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করে আসছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু আওয়ামী লীগ নেতা নীরবে ভারতের দুষ্কর্মে সহযোগিতা করেছে, ফলে জাতি শুধু প্রভূত্ত্বের পরিবর্তন করে ক্রীতদাসের শ্রেণীভুক্ত হয়েছে। ভারতের বর্তমান লক্ষ্য ক্রমান্বয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রকে ক্ষয় করা, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোকে পঙ্গু করে দেয়া এবং ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা। ভারতীয় গোয়েন্দারা ক্রমে ক্রমে অলক্ষিতে প্রশাসনের সকল শাখায় প্রবেশ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র এবং স্যাটেলাইট মিডিয়া, সংস্কৃতিক অঙ্গন, আমলাতান্ত্রিক, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। কাজেই ভারত মুক্তভাবে প্রচারের কাজ চালাতে পারে, ধ্বংসাতœক ও সন্ত্রাসী কাজের ব্যাপারে নিজের উপর কোন বিপদসম্ভাবনার ঝুঁকি না নিয়ে অভীষ্টলক্ষ্যে অভ্যন্তরে খুব সহজেই ঢুকতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সেই অরাজক অধ্যায়টি অতিক্রম করছে। আমাদের ঘুম এখনই না ভাঈলে পরে খুব আতœচিৎকার ও কোন কাজে আসবেনা।
বিশিষ্ট কলামিষ্ট জনাব ফরহাদ মযহার লিখেছেন-” দিল্লি¬ যদি ‘জঙ্গি’ ইসলাম প্রতিরোধের নামে ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার বোকামি অব্যাহত রাখে, তাহলে তার পরিণতি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও আরও রক্তাক্ত হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। এ আগুনে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের জগৎ ও জীবনকে বিচার করার জন্য যেমন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিজের বলে গণ্য করে আর সেই সূত্রে সনাতন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও লোকায়ত জ্ঞানের সঙ্গে কোনো বিরোধ দেখে না, ঠিক একইভাবে ইসলামও তার মনোজাগতিক ও ইহলৌকিক জগতের অংশ। এই জগতের বিরুদ্ধে দিল্লি ও শেখ হাসিনা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শেখ হাসিনার জামায়াত-বিরোধিতা আসলে ইসলাম-বিরোধিতারই নামান্তর। এই সত্য না বোঝার কোনো কারণ নাই।”
সুতরাং আমাদের ইতিহাস অনেক গৌরবের। অনেক ঐতিয্যমন্ডিত আবার অনেক বেদনা-বিদুর ও বটে। এই জনপদের মানুষের ইতিহাস অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের। এই বিস্ময়কর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় নিকট-অতীতে এখানে আর্যদের আগ্রাসন, ইংরেজদের শোষন আর এদেশীয় মিরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার মোকাবেলায় তীব্রতর লড়াই হয়েছে। প্রাণ দিয়েছে বটে মান বিকিয়ে দেয়নি। এই জাতি রক্তে মাংসে সংগ্রামী, আস্তিতে স্বাধীনচেতা আর মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে এক আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করেনা। কিন্তু এই চেতনা ও মূল্যেবোধের উপর আঘাত হয়েছে অসংখ্যবার। এই আঘাতের যাত্রা ১৬৩৪ সালে বাংলায় বানিজ্য করার নামে বৃটিশ বেনীয়ারা এখানে এসে ইঈ-হিন্দু মৈত্রী গড়ে তুলে মুলত: মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। এরই অংশ হিসেবে নবাব সিরাউদৌলার পতন, এখন আবার এদেশীয় মিরজাফর ও ঘসেটি বেগমরা ক্ষমতার লোভে অন্যের নিকট দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর গনতন্ত্র বন্ধক দিয়ে এই জনপদে যে বিভক্তি তৈরী করে আমাদেও জাতীয় ঐক্যেকে ধ্বংশ করা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই আজ আমজনতাকে ঈমান ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে রুখে দাড়াতে হবে।
লেখক- কলামিষ্ট ও বিশ্লেষক।
http://www.parisvisionnews.
No comments:
Post a Comment