Friday, May 2, 2014

প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে ছিটমহলে বাংলাদেশী বাসিন্দারা

প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে ছিটমহলে বাংলাদেশী বাসিন্দারা
এ রহমান মুকুল, দিনহাটা থেকে ॥ ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশী ছিটমহলের নাগরিকদের ওপর ভারতীয়দের নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। নিজেদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছিটমহল ঘেঁষা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা অকারণে মারপিট করাসহ আর্থিকভাবে জরিমানা করছে। নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলনকারী নেতাদেরও বিভিন্নভাবে হয়রানি রাস্তাঘাটে মারপিটের ঘটনা অহরহই ঘটছে এসব ছিটমহলে। অথচ প্রশাসনিকভাবে এসব দেখার কেউ নেই। ভারতের একেবারে ভেতরে এসব ছিটমহলের অবস্থান হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের কোনরকম সাহায্য-সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন না। ভারত সরকারও এদের কোনভাবে সহযোগিতা করছেন না। কারণ এরা বাংলাদেশী ছিটমহলের বাসিন্দা। ছিটমহলে বসবাসকারী বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। দেশের মধ্যে যেন আরেকটি দেশ। এরা কোন দেশের নাগরিক সেই পরিচয়টুকুও নেই। এ ছাড়াও বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত, পানীয়জল থেকে বঞ্চিত ছিটমহল নাগরিকরা। ছিটমহলের রাস্তাঘাটেরও বেহাল অবস্থা। বর্ষায় রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচল খুবই কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। কোন আইন না থাকায় খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের। তাও আবার মোটা অঙ্কের যৌতুক দিতে হচ্ছে। যৌতুকের টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হয়েই জমি বিক্রি করতে হয় মেয়ের বাবাকে। ছিটমহলের ছেলে-মেয়েদের ভারতীয় স্কুল-কলেজে ভর্তি করা হয় না। স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে হলে ভারতীয় কারও নাম-ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়।
শুক্রবার কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার অভ্যন্তরে অবস্থিত মধ্য মশালডাঙ্গা, পুয়াতুকুঠি, গোবরার ছোঁড়া, করণা, বাত্রিগছ, শিবপ্রসাদ, নলগ্রাম, কুচলিবাড়িসহ কয়েকটি ছিটমহলে সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এসব তথ্যই পাওয়া গেছে। ভারতের দিনহাটার অভ্যন্তরে ৩৭টি, জলপাইগুড়ি জেলার অভ্যন্তরে ১১টি এবং আলিপুর দুয়ারে ৬টি বাংলাদেশী ছিটমহল রয়েছে। এসব ছিটমহলে লোকসংখ্যা ১১ হাজার। এরা সকলেই হাসিনা-মনমোহন চুক্তির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে নাগরিকত্ব দিয়ে ভারতীয় হতে চায়। মধ্য মশালডাঙ্গা ছিটমহলে বসবাসকারী তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ করেন, তার ছেলে প্রতিবেশী একজনের হাঁসকে সাইকেল দিয়ে চাপা দিলে হাঁসটির একটি পা ল্যাংড়া হয়। এই ঘটনাটিতে কেন্দ্র করে হাঁসের মালিকের সঙ্গে বিরোধ বাধে। এই বিরোধকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় নাজিরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সুবোধ চন্দ্র বর্মন ও ওই এলাকার মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য সালিশ বৈঠক ডাকে। সালিশ বৈঠকে হাঁসের পা ল্যাংড়া করার শাস্তি হিসেবে তোফাজ্জলকে ২৫ হাজার রুপী জরিমানা করা হয়। এই জরিমানার অর্থ পঞ্চায়েত সদস্যকে না দিলে তোফাজ্জল ভারতের অভ্যন্তরে হাটবাজারে যেতে পারবে না এমনকি তাকে একঘরে করে রাখারাও হুমকি দেয়া হয়। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন এ ধরনের অনৈতিক সালিশের প্রতিবাদ করায় তাকে রাস্তায় আটক করে মারপিট করা হয় মর্মে অভিযোগে জানা যায়।
এ ব্যাপারে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপ্তিমান সেন গুপ্ত বলেন, ঘটনাটি খুবই তুচ্ছ। এটিকে মহলবিশেষ ফায়দা লুটতে ছিটমহলের বিষয়কে ভারতীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে নিয়ে গেছে। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে তিনি মনে করেন।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment