Tuesday, May 6, 2014

ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি চলে না: মোদী

ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি চলে না: মোদী
modiji
এই সময়: এই ভোট তাঁর কাছে ম্যারাথন দৌড়ের মতো৷ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই রকম গতি বজায় রাখতে না পারলে তীরে এসেও তরী ডুবতে পারে৷ তাই এক ইঞ্চি জমিও তিনি বিনা যুদ্ধে ছাড়ছেন না৷ সামনে থেকে দলকে যেমন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তেমনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি দেশের নানাবিধ সিদ্ধান্ত নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন৷ যদিও নিজেকে মনে করেন দিল্লি রাজনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে 'বহিরাগত'৷ কারণ ৫০ বছর তিনি শুধু ঘুরে বেরিয়ে নানা মানুষের মঙ্গে মিশেছেন, রাজনীতিটা সেভাবে করেননি৷ সেটাই তাঁর ইউএসপি৷

সেই ম্যান অফ দ্য মোমেন্ট- নরেন্দ্ররভাই দামোদরদাস মোদী৷ 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাত্‍কারে জানালেন তাঁর ষোড়শ লোকসভা জয়ের রণনীতি৷ আবার খোলামেলা উত্তর দিলেন দেশ চালানো বিষয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কেও৷

এই ভোটে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী, সে প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সাফ জবাব, 'কংগ্রেসের নেতৃত্ব হিসেবে গান্ধী পরিবারের প্রাসঙ্গিকতা৷ কংগ্রেস এ বার লড়াই করছে ১০০টি আসন পাওয়ার জন্য৷ আমার ধারণা ওরা এ বার তা-ও পাবে না৷ আর সেই অনুমান যদি সত্যি হয়, তা হলে ওই দলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য৷'

সাম্প্রতিক অতীতে তিনি একাধিকবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে নেমেছেন৷ দাদা রাহুলকে সরিয়ে ভোটের পর বোনকে কংগ্রেস সামনে নিয়ে আসতে পারে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে জানান, এ রকম কিছু ঘটবে কি না, তা কংগ্রেস ঠিক করবে৷ তবে গান্ধী পরিবারের বাইরে যদি একটা জাতীয় দল নেতৃত্বের বিষয়ে ভাবতে না পারে, তা হলে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যের৷

মুসলিমদের তাঁর প্রতি ভয় ও ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যার প্রসঙ্গ যে উঠবে, তা তাঁর অজানা ছিল না৷ কিন্ত্ত তাতেও তিনি ভাবিত নন৷ অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, 'কংগ্রেস ও অন্য কিছু দল সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করছে৷ তবে এতে কোনও লাভ নেই৷ এ ভাবে এখন আর ভাবাই ঠিক নয়, যে একটি সম্প্রদায় উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে আগ্রহ দেখাবে না৷ ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিই গত ৬০ বছরে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করেছে৷ কিন্ত্ত সেই রাজনীতি এখন আর চলবে না৷ তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে৷'

বারবারই বললেন, তিনি গুজরাটে যেমন উন্নয়ন ও সুশাসনের ভিত্তিতে পর পর তিন বার জিতেছেন, সেই একই অস্ত্রে দেশ চালাতে চান৷ তবে মন্ত্রিসভা কেমন হবে, আমলাতন্ত্রের উপর তিনি কতটা ভরসা করবেন, তার জবাব দেননি৷ সংক্ষিপ্ত উত্তর, 'প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিক, কিন্ত্ত এখনও জবাব দেওয়ার সময় আসেনি৷' ১৬ মে-র আগে তিনি এ সব নিয়ে ভাবতে নারাজ৷

তবে আড়িপাতা কমিশন নিয়ে কেন্দ্র সম্প্রতি যে পদক্ষেপ করে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী আইমন্ত্রী কপিল সিবালকে একহাত নিয়েছেন৷ 'সিবাল আইনজীবী৷ তিনি তাঁর আইনি পাণ্ডিত্যকে কাজে লাগিয়ে নিজের দল ও ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন৷ সে কারণে তাঁর কাছে দেশের মর্যাদার থেকে আমাকে দোষী প্রমাণিত করাটা বেশি প্রয়োজন৷' মোদীর মতে, 'সিবাল একমাত্র আইনমন্ত্রী যিনি 'পোটেনশিয়াল অ্যাকিউজড' (সম্ভাব্য অভিযুক্ত) বলে কোনও শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে তুলসীরাম প্রজাপতি-সহ আরও কিছু মামলায় আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে চলেছেন৷' এরই পাশাপাশি জানান, সিবিআই যে ভাবে রাজনীতির নাগপাশে জড়িয়ে গেছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানকে কংগ্রেস যে ভাবে চালাচ্ছে, তাতে বদল আনতেই হবে৷ সিবিআইকে রাজনীতির বাইরে আনা তাঁর অন্যতম বড় কাজ হবে বলে জানাতে দ্বিধা করলেন না৷

মোদী যে ভাবে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন, 'মা-বেটা-বেটি-দামাদজি' কাউকেই ছাড়ছেন না, সে ক্ষেত্রে রবার্ট ভাদরার জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে তাঁর পদক্ষেপ কী হবে? রবার্ট কি কোনও ইমিউনিটি বা রক্ষাকবচ পাবেন? 'প্রশ্নই ওঠে না৷ আইনের উর্ধ্বে কেউ-ই নন৷ এমনকি আমিও নই৷'

সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী জানালেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাঁর সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল প্রত্যেকের জন্য কর্মসংস্থান৷ আর পরিবশেকে বাঁচিয়ে রেখে কী ভাবে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া যায় তা সুনিশ্চিত করা৷ অর্থাত্‍ পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র মেলার ক্ষেত্রে যে দেরি হচ্ছে, যার ফলে বহু শিল্প আটকে আছে, সে বিষয়ে তিনি বিশেষ যত্নশীল হবেন৷ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যও তাঁর অন্য পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন৷

দেশের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি চিন্তিত৷ বললেন, 'সব থেকে বড় ভয় মাওবাদীরা৷ তবে কোনও সন্ত্রাসকেই আমি বরদাস্ত করি না৷ তা দমনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হবে৷'

'অব কি বার, মোদী সরকার' সত্যিই যদি হয়, সে ক্ষেত্রে দেশের বিদেশনীতিতে কী কী পরিবর্তন আসবে? কোনও রাখঢাক না-করেই বললেন, 'পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তখনই ভালো হতে পারে, যদি তারা সন্ত্রাসবাদকে আন্তরিক ভাবে দমনের চেষ্টা করে৷ তবে শুধু অতীতে আটকে থাকা আমাদের উচিত নয়৷ যদি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কোনও সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়, তা হলে তাকে গুরুত্ব দিতেই হবে৷' তবে তিনি চিনের বিষয়ে বেশি উত্‍সাহী৷ আর আমেরিকার তাঁকে ভিসা না-দেওয়ার বিষয় কি দু'দেশের সম্পর্কের মধ্যে কোনও প্রভাব ফেলবে? তিনি তা মানতে চাইলেন না৷ বললেন, 'ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কোনও এক জন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না৷ এই দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক মিত্রতা আছে৷'

স্বাভাবিক ভাবেই এল আর একটি প্রশ্ন৷ ২০০৪, ২০০৯ সালেও তো জনমত সমীক্ষা, বুথফেরত সমীক্ষাগুলি এনডিএ-র পক্ষে হাওয়া বলেছিল৷ এ বারও তাই... তা হলে কীসের থেকে এত আত্মবিশ্বাস? 'ভিড় দেখুন আমার সভায়৷ মিডিয়া রিপোর্ট দেখুন৷ কংগ্রেসের ভয় দেখুন৷ এ রকমটা আগে দেখা যায়নি৷' প্রশ্নের উত্তর এ ভাবেই খুঁজে নিতে হল৷ তাঁর আত্মবিশ্বাস বলছিল, এ বার হিসাব আর গড়বড় হচ্ছে না৷ হবে না৷

No comments:

Post a Comment