Friday, May 2, 2014

বিএনপির চোরাগোপ্তা রাজনীতির কারণে গুম অপহরণ হচ্ছে গাজীপুরে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির চোরাগোপ্তা রাজনীতির কারণে গুম অপহরণ হচ্ছে
গাজীপুরে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ২ মে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যাদের চুরি করার অভ্যাস, চোর চোর মন আর যারা জ্বালাও পোড়াও, গুপ্তহত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, হত্যা-ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে- তারাই এই চোরাগোপ্তা হামলার রাজনীতি করে এবং সেটাই তারা করে যাচ্ছে। বিএনপি চোরাগোপ্তা রাজনীতি করে সরকারের পতন ঘটাতে চাচ্ছে। তাদের চোরাগোপ্তা রাজনীতির কারণে দেশে গুম অপহরণ হত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব গুম, হত্যা ও অপহরণের জন্য বিএনপিই দায়ী। তাদের এসব গুপ্ত হত্যা ও কর্মকান্ডের ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ এবং সাবধান থাকতে হবে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিএনপি নেত্রীকে বলব, ওনার ওই চোরাগোপ্তা হামলা আর আন্দোলনের পথ পরিহার করে উনি যেন স্বাভাবিকভাবে আন্দোলন করেন। উনি যেন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে জাতীয় শ্রমিকলীগ আয়োজিত মহান মে দিবস উপলক্ষে এক বিশাল শ্রমিক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী যা বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে তিনি তার উল্টোটা করেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে বন্ধ কলকারখানা খুলে দেবেন অথচ তিনি ক্ষমতায় গিয়ে আদমজীসহ হাজার হাজার কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা না খেয়ে মারা গেছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী দরিদ্র মানুষের জন্য। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করে তখন মেহনতী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়। জীবন-যাত্রা সুন্দর হয়।
জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহনমন্ত্রী ও শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান খান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, মাহবুবুল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান প্রমুখ। জনসভায় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই এদেশে ক্যু’ ও হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। রাজাকার আলবদরদের তিনি ক্ষমতায় বসিয়ে তাদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানিয়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। ঠিক তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই ধারা অব্যাহত রেখে লাখো শহীদদের রক্তভেজা পতাকা রাজাকারের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছি। তাদের বিচারের রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর করা হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্র রহমতে পারেনি, পারবেও না। কারণ আমরা বিজয়ী জাতি। তারা পরাজিতদের পদলেহনকারী। বাংলার মাটিতে তাদের স্থান নেই।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি করে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না এসে উনারা যে ভুল করেছেন, এদেশের সাধারণ মানুষ কেন সেজন্য খেসারত দেবে? আন্দোলনের নামে তারা বহু মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। গাড়িতে আগুন দিয়ে চালক, হেলপার ও যাত্রীদের হত্যা করেছে। তারা কোরান শরীফে আগুন দিয়েছে এবং মসজিদে হামলা চালিয়েছে। খালেদার হাতে কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের রক্ত। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হোক, উনি তা চান না। দেশের সব মানুষ যখন ভাল ও শান্তিতে থাকে তখন একজন ভাল থাকেন না। তার মনে তখন অশান্তি দেখা দেয়। তারা সাধারণ মানুষের মঙ্গল চিন্তা না করে নিজেদের ভাল থাকার কথা নিয়ে ভাবেন অথচ আওয়ামী লীগ এদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশ ও মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নিয়ত ভাল বলেই এদেশের সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে ও আরাম আয়েশে থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ সবসময় মেহনতী মানুষের কল্যাণে কাজ করে। কেউ কেউ কষ্টের জীবনযাপন করবে, অন্যদিকে কেউ বিলাসী জীবনযাপন করবে সেটা হতে পারবে না। বাংলাদেশে কেউ খাবে কেউ খাবে না তা হবে না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে মানবেতর জীবনযাপন না করে, তারা যাতে সুন্দর জীবন পায় আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। একদিকে কিছু জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবনযাপন করবে, অপর দিকে কিছু শ্রেণীর লোক শান শওকত আর আরাম-আয়েশে গা ভাসিয়ে চলবে তা হবে না। বাংলাদেশে এ বৈষম্য চলবে না। কেউ খাবে তো কেউ খাবে না, তা হবে না। আমরা ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছি। সবার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে বিনামূল্যে ৩০ কোটি বই বিতরণ করেছি। কৃষক, রিক্সাওয়ালা, বর্গাচাষী, দিন মজুর, বেকারসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে আমরা সে ব্যবস্থা করছি। ইতোমধ্যে মানুষের আয় ও জীবনমান বেড়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছি। বিনিযোগ বাড়িয়েছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এদেশের কোন মানুষ দরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকে আয় করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, বিএনপি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। নির্বাচন বন্ধ করতে না পেরে তিনি বিদেশী প্রভুদের কাছে ধর্ণা দেয়, বিদেশীদের কাছে নালিশ করে নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলে। তাতে কী হয়েছে? নালিশ করে তারা বালিশ পেয়েছে। ভাঙ্গা জুতার বাড়ি খেয়েছে। জনগণ নির্বাচন করে তাদের সেই নালিশের জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য বিএনপি নেত্রী আমেরিকার কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এতে আমেরিকা জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খালেদা জিয়ার লেখার জন্যই আমেরিকা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে। তিনি আর্টিক্যাল লেখেন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দিতে। কিন্তু পার্লামেন্টে যখন ধরলাম, তখন উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, উনি লেখেন নাই। উনি বললেন, ওনার লেখা না। আর, ওই পত্রিকা বলল, এটা খালেদা জিয়ার লেখা। তারা কনফার্ম করেছে। এরপরই আমেরিকা জিএসপি বন্ধ করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায় নাই। ওনার হৃদয়ে কী আছে? ওনার হৃদয়ে আছে, দেলে আছে, পেয়ারে পাকিস্তান। উনি পেয়ারে পাকিস্তান, হামারা পেয়ার পাকিস্তানই করে যাক। পরাজিত শক্তির কাছেই উনি থাকতে চান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস আর দুর্নীতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে আজ বিশ্বে বাংলাদেশ একটা উন্নয়নের রোল মডেল, সম্ভাবনাময় দেশ, এগিয়ে যাওয়ার দেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment