Friday, May 2, 2014

প্রিয়াঙ্কার ঘূর্ণি হানায় ধরাশায়ী হলেন নরেন্দ্র মোদি

প্রিয়াঙ্কার ঘূর্ণি হানায় ধরাশায়ী হলেন নরেন্দ্র মোদি
কাওসার রহমান ॥ প্রিয়াঙ্কার ঘূর্ণি আক্রমণে শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হলেন বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। সোনিয়া তনয়াকে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধের মাঠে নামিয়েই ভাল ফল পাচ্ছে কংগ্রেস। নির্বাচনী খেলার মাঠে মোদি ও বিজেপি নেতাদের ক্রমাগত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে যখন কংগ্রেস দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে মাঠে নামেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা। প্রিয়াঙ্কা মাঠে নেমেই ত্রিমুখী ঘূর্ণি আক্রমণ চালান মোদিও ওপর। আর এতেই পরাস্থ হন দোর্দ- প্রতাপে ব্যাটিং চালয়ে যাওয়া নরেন্দ্র মোদি। প্রিয়াঙ্কার এই শব্দযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পরাস্থ হয়ে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি নতি স্বীকার করে নেন। তিনি হার মানার ভঙ্গিতে বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা আমার কন্যার মতো। সে তার মা সোনিয়া গান্ধী ও ভাই রাহুল গান্ধীর মতো আমার প্রতিপক্ষ নয়।’ তিনি এটা বলেই শুধু ক্ষান্ত থাকেননি, প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে কোন প্রকার আক্রমণ বা বিষেদগার থেকে বিরত থাকার কথাও মিডিয়াকে জানিয়ে দেন।
প্রিয়াঙ্কার এই রাজনৈতিক আক্রমণে কংগ্রেস নেতত্বেই শুধু স্বস্তি ফিরে আসে না, বিজেপি নেতৃবৃন্দও বলতে বাধ্য হয়, প্রিয়াঙ্কার বলার স্টাইল আর আক্রমণ অনেক বেশি রাজনৈতিক। রাহুলের তুলনায় মানুষের সঙ্গে তার যোগসূত্র গড়ে তোলার ক্ষমতাও অনেক বেশি। ফলে প্রিয়াঙ্কার মোদি বিরোধী তোপ বেশি বেশি করে গণমাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিলম্বে হলেও নির্বাচনী মাঠে নেমে প্রিয়াঙ্কা পরিষ্কারভাবে বিজেপি তথা মোদিকে কিছুটা ঝাঁকুনি দিতে সক্ষম হয়েছে। এতদিন ভোটের প্রচারে মোদি যে একতরফাভাবে ওয়াকওভার পেয়ে আসছিল সেটাও বন্ধ হয়েছে। তবে তাঁকে নির্বাচনের মাঠে অনেক দেরিতে নামানো হয়েছে। আরও আগে মাঠে নামলে কংগ্রেস প্রিয়াঙ্কার হাত ধরে আরও সুফল পেতে পারত।
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, ভবিষ্যতে প্রিয়াঙ্কাই রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। কারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে প্রিয়াঙ্কার। তিনি সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারেন। প্রিয়াঙ্কাও মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য তার নিরাপত্তার জাল ছিন্ন করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। এখন থেকে তিনি গ্রামে গ্রামে যাবেন সাধারণ মানুষের কথা শুনবেন। সরকার অবশ্য তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিরাপত্তা কর্মীদের তাকে দূর থেকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রিয়াঙ্কা জানেন, কিভাবে বক্তব্য দিলে জনগণ তা গ্রহণ করবে। এ কারণেই অনেক কংগ্রেস নেতা আশাবাদী প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে। রাজনীতির মাঠে এখন ঘুরে ফিরে সেটাই আলোচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে যখন সরকার গঠনের দৌড়ে বিজেপিকে এগিয়ে রাখছিলেন, তখন নির্বাচনের প্রায় শেষপর্যায়ে এসে প্রচারের রণকৌশল পাল্টায় কংগ্রেস। রাহুল ও সোনিয়ার পাশাপাাশি প্রচারের মুখ্য মঞ্চে তুলে আনা হয় প্রিয়ঙ্কাকে। সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও ঝাঁঝালো করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শেষ চার ধাপের আগে নির্বাচনী মাঠে নেমেই প্রিয়াঙ্কা পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন প্রতিদ্বন্দ্বী মোদি শিবিরের বিলম্ব। তিনি প্রথমেই মহিলাদের মর্যাদার প্রশ্নে মোদিকে তীব্র কটাক্ষ করেন। বেঙ্গালোরুর এক মহিলার ফোনে আড়িপাতার যে অভিযোগ মোদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠেছিল, তার জের টেনে রায়বরেলিতে রাজীব কন্যা বলেন, ‘মহিলাদের ক্ষমতায়নের বুলি আউড়ে তলে তলে যারা মেয়েদের ফোনে আড়ি পাতেন, তাদের ভুলেও ক্ষমতায় আনবেন না। বরং এই ভোটেই ছুড়ে ফেলে দিন।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে এক তরুণীর ফোনে আড়িপাতা নিয়ে বিতর্কে জড়ান গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ উঠে, মোদির নির্দেশেই তরুণীর ফোনে আড়ি পেতেছিল গুজরাট প্রশাসন। গত বছর ২৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয় একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে এ ঘটনার তদন্ত করা হবে। ইতোমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
প্রিয়াঙ্কা আক্রমণে আসার পর তার উপস্থিতিও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বেড়ে গেছে। দিনভর ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ঘুরে ফিরে আসছে প্রিয়ঙ্কার এই আক্রমণ। প্রিন্ট মিডিয়াও ফলাও করে তার আক্রমণাত্মক বক্তৃতা প্রচার করছে।
প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি নজর এড়ায়নি বিরোধী শিবিরের। তাঁরা সমালোচনা করে বলছেন, রাহুলকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না বুঝেই প্রিয়ঙ্কাকে প্রচারে নামাতে হয়েছে কংগ্রেসকে। স্বভাবতই সেই জল্পনা খারিজ করে কংগ্রেস হাইকমান্ড বলছে, ভাইবোনের তালমিল সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, প্রিয়ঙ্কা প্রচার করলে দলের যে ভাল হবে, তা রাহুল জানেন।

http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment