‘ক্রিমিয়া ভাগ্য’ বরণের পথে বাংলাদেশ
নায়ুযুদ্ধের পর ফের বিশ্বের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ দেয়ার মত কেউ ছিল না। এমনকি আমেরিকা নিজেও এক ধরনের আত্মতৃপ্তির মধ্যে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমেরিকার বিশ্বাসের খুঁটি নাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের ছোট রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নতুন করে ভাবতে বসেছেন।
দূরত্বের দিক থেকে ইউক্রেন বাংলাদেশ থেকে বেশ দূরে হলেও ভৌগলিক অবস্থান থেকে দুইয়ের বেশ মিল রয়েছে। সেই দিক থেকে ইউক্রেনের ঘটনা বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকদের মনে কিছুটা হলেও ভীতির সঞ্চার করেছে। ক্রিমিয়ার সেবাদাস সরকার একটি স্বায়ত্বশাসিত রাষ্ট্রকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করতে পারলে বাংলাদেশের একটি তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার তেমন কোনো কর্মযজ্ঞ ঘটাবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে? বর্তমানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে সরকার রয়েছে, তারা এ বছরের ৫ জানুয়ারির একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়। এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়, ৫০এর বেশি সংসদ সদস্য। প্রধান বিরোধী জোটের ভোটবর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সেই বিতর্কিত নির্বাচন।
ভোটারবিহিন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের জবাবদিহিতা নেই সাধারণ নাগরিকদের কাছে। ওই নির্বচনে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যে শুধু ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়। ফলে নাগকিদের চেয়ে ভারতের কাছেই এই সরকারের আনুগত্য বেশি। আর সেই জায়গা থেকেই সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ইউক্রেনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ। ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সেনাসদস্যদের অবস্থানের খবর পড়তে পড়তে অনেকেরই ১৯৭৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরে ফিরে যাবার কথা। স্থানীয় আফগানিদের ছদ্মাবরণে মাত্র এক হাজার রুশ সৈন্য সেদিন ঢুকে পড়েছিল আফগানিস্তানের কাবুলে। একেবারে বিনা বাধায় তারা সরকারি ভবন এবং প্রধান সামরিক ঘাঁটির দখল নিয়ে ফেলেছিলো। কোথাও কোনো প্রতিরোধ ছিল না। বরং ছিল সমর্থন আর সহযোগিতার হাত।
পশ্চিমাদের হুমকির মধ্যে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। ক্রিমিয়ার দৃশ্যটাও কার্যত একই রকমের ছিল। দূরে বসে মার্কিন-কানাডা আর পশ্চিমা শক্তির হুঁশিয়ারি, সতর্কতা থাকলেও ক্রিমিয়ার চিত্রটা ছিল সাড়ে তিন দশক আগের কাবুলের মতো। তাই পশ্চিমের অনেক মিডিয়া ক্রিমিয়ায় রুশ সেনাদের প্রবেশের সঙ্গে ১৯৭৯ সালের কাবুলের ঘটনার তুলনা করছেন। কাবুলে মাত্র সপ্তাহ তিনেকের ব্যবধানেই রুশ সেনার সংখ্যা স্ফীত থেকে স্ফীততর হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেটিই পরিণত হয়েছে রক্তাক্ত সামরিক ‘জবরদখলে’। একযুগ পর রুশ সেনারা যখন কাবুল ছেড়ে যায়, ততদিনে উপমহাদেশের রাজনীতিতে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। সেই ঝড় উপমহাদেশের রাজনীতির চরিত্রটাই অনেক পাল্টে দিয়েছে।
ইউক্রেনের ঘটনায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার বলেন, বার্লিন দেয়ালের পতনের পর গত পঁচিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে ইউরোপ। সেই সময়কার বিরোধটা ছিল পূর্ব আর পশ্চিমের। আর এখন ইউরোপই বিভক্তির মুখে। তিনি বলেন, পশ্চিম থেকে যত সতর্কতা হুমকি দেওয়া হোক না কেন, রাশিয়া তার কাজ কিন্তু বন্ধ করছে না। বরং রাশিয়ার কণ্ঠস্বর উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার গুটি হিসেবে ইউক্রেনকে ব্যবহার করেছে দীর্ঘদিন। সেই ইউক্রেন ইস্যুতেই পশ্চিমা রাজনীতির ক্ষমতা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। ক্রিমিয়ার ঘটনা শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেটা দক্ষিণ এশিয়ার তুলনামূলক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে নানানভাবে উসকানি দেবে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ। গত বছর সিরিয়া-ইরান ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বিপরীতে রাশিয়ার কূটনৈতিক অর্জন মস্কোকে আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে।
এরপর ক্রিমিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাশিয়া যে পথরেখা আঁকছে, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষমতার ভারসাম্যে অনেক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ইউক্রেন-ক্রিমিয়া বনাম রাশিয়া এই ত্রিমাত্রিক ক্ষমতা সম্পর্ক ও লড়াই এমন এক জায়গায় জড়িয়ে গেছে, যেখানে ব্যাপারটা শুধু ইউরোপ বনাম রাশিয়ার আন্তদ্বন্দ্বই নয়, এর সাথে সারা বিশ্বই জড়িয়ে গেছে। ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অংশ বটে। সাধারণভাবে ব্যাপারটা ক্রিমিয়ার সাথে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ ঝগড়ার মতো মনে হলেও এর সাথে রাশিয়া ও ইউরোপের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। আঞ্চলিকভাবে এবং একইসাথে বৈশ্বিকভাবে রাশিয়া এখনো পর্যন্ত বেশ শক্তিশালী হওয়ায় পুরো ব্যাপারটি অনেক জটিল হয়ে উঠেছে। এদিকে, ইউক্রেনের ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সর্বশেষ অস্ত্র ছিল কূটনৈতিক প্রক্রিয়া। যেখানে রাশিয়াকে কূপোকাত করতে গিয়ে ভেটো পাওয়ায় উল্টা নিরাপত্তা পরিষদকে বেখাপ্পা অবস্থায় ঠেলে দেয়। নিরাপত্তা পরিষদের ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতাগুলো এশিয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হিসেবে কাজ করে। কারণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় এর সংঘাতের আশঙ্কা জটিল হয়ে উঠতে পারে। আর এটি ঘটতে পারে এশিয়ার আঞ্চলিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোরই ভেতর থেকে। ইউক্রেনের ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্তত এ ঘটনা যে এ অঞ্চলের তুলনামূলক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে নানানভাবে উসকানি দেবে তাতে সন্দেহ নাই। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতা, ভারত-পাকিস্তান বিরোধ, চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাত এসবই উসকানির প্রাথমিক যোগান ও উপাদান। অবশ্য চীন-ভারত সীমান্তবিরোধ অন্যদের তুলনায় কিছুটা কম বটে। এশিয়ায় একমাত্র দেশ চীন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।
গেল বছর ভারতের সীমান্তের অন্তত ১৯ কিলোমিটার ভেতরে চীনা সেনারা ঢুকে পড়ে। এসব আচরণকে আরো প্ররোচিত করতে পারে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনা। ভারতের অরুণাচল রাজ্য নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে চীন মারাত্মক সোচ্চার হয়ে উঠেছে। দীর্ঘকাল ধরেই অরুণাচলের তাওয়াং এলাকার দাবি করে আসছে চীন। দুদেশের মধ্যে ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধের কথা স্মরণ করা যায়। সেসময় থেকে সীমান্তের ঠিক নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এই তাওয়াং অঞ্চলে চীন প্রভাব বিস্তার করে আসছে। চীন অরুণাচলের নাগরিকদের ভারতীয় পাসপোর্টে ভিসা দিতে অস্বীকার করে আসছে। উল্টা তারা স্ট্যাপল ভিসা দিতে চায়। ভারতীয় পাসপোর্ট দেখালেই চীনারা ম্যাপ দেখায়। এবং বুঝায় এটা চীনেরই অংশ। অবশ্য ভারতও এর কড়া জবাব দিয়ে আসছে।
কিছুদিন আগে মোদি বলেছেন, চীনকে তার ‘সম্প্রসারণবাদী চিন্তা’ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। তবে ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভারতের কোনো শক্ত অবস্থান নেই। এমনকি দেশটি এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। তার কারণ রাশিয়ার সাথে তার ঐতিহাসিকভাবে গভীর সম্পর্ক। অবশ্য রাশিয়ার দাবির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে ভারতকে অনুরোধও করেছিল ইউক্রেন। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার ঘটনার দিক থেকে শুধু চীন-ভারত বা ভারত-পাকিস্তান এভাবে তো বুঝাই যায়। সে বুঝটা তো চীন আর ভারতই বুঝে যাচ্ছে। কিন্তু চীন ও ভারতের প্রতিবেশি ছোট রাষ্ট্রগুলোর আরো বেশি বুঝা জরুরি হয়ে উঠেছে। ছোট্ট রাষ্ট্রগুলো কি ক্রিমিয়ার মতো বড় রাষ্ট্রগুলোর পেটে ঢুকে যাবে? ক্রিমিয়ার ভাষাগত ও নৃ-গোষ্ঠীগত মিলের জন্যই কি রাশিয়াকে ক্রিমিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে?
পুঁজির আঞ্চলিক বিতরণ ও ক্ষমতার স্বার্থ কি এর পেছনে কাজ করেনি? সে কারণে ভূ-রাজনীতি ও সীমান্তের আধিপত্যের দিক থেকে এ শিক্ষা কি এখন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়? স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো ধরনের বন্ধুসুলভ আচরণ পায়নি। এখন পর্যন্ত যেসব চুক্তি হয়েছে, তার প্রতিটিতেই ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়কারী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, ভারত গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানিপ্রবাহ বন্ধ রেখেছে। শুধু তিস্তা নয়, উজানের অভিন্ন ৫৪টি নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা। এসবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। একই কথা বলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ভারত গত ৪০-৪২ বছরে বাংলাদেশকে দেয়া কোনো ওয়াদাই রক্ষা করেনি। আর যারা ওয়াদা রক্ষা করে না, তারা মোনাফেক। ভারত আমাদের সঙ্গে মোনাফেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ কিছু পায়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন কী পাচ্ছে? পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। কৃষক আলুর দাম পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনাইদ সাকি বলেন, ৭৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানিয়েছে। আবার ১৯৮২ সালে ভারত গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে রংপুর অঞ্চলকে মরুভূমি বানানোর সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারা তিস্তায় বাঁধ দিয়ে ৫টি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছে। আরও ২৭টি বাঁধ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ভারত সরকার। ভারত আন্তর্জাতিক কোনো রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব করছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি করতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের কেউই কথা বলেন না। অবশ্য আওয়ামী লীগ কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলে না। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের সঙ্গে যত দেশবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তার বেশিরভাগই করেছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শোষণ করে আসছে ।
বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি পাহাড়সমান। বাংলাদেশের মালামাল ভারতের বাজারে ঢুকতেই পারছে না। শুল্ক ও অশুল্কের বেড়াজালে ভারত বাংলাদেশের পণ্য তার বাজারে ঢুকতে দিচ্ছে না । যদিও ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ৪৭টি আইটেম বিনা শুল্কে ভারত আমদানি করবে। কিন্তু সে সব আইটেমের এক-দশমাংশও ভারতে পাঠানো যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড় দিলেও প্রাদেশিক সরকারগুলো তাদের নিজস্ব শুল্ক কাঠামোর বাধার কারণে এসব মালামাল পাঠানো যাচ্ছে না। ভারত বাংলাদেশে যে রফতানি করে, তা বাংলাদেশের দশ গুণেরও বেশি। তাছাড়া চোরাই পথে ভারত থেকে আরো বেশি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ঢুকছে। তার ওপর শেখ হাসিনার সরকার উন্মুক্ত বর্ডার বাণিজ্য (হাট) শুরু করায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আরো পোয়াবারো । বাংলাদেশের যুবশক্তিকে ধ্বংস করার জন্য সীমান্ত পার হয়ে ফেনসিডিল, কোকেন, ইয়াবার মত মাদকদ্রব্য দেদারসে বাংলাদেশের বাজারে ঢুকছে। ওইসব মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে পাঠাবার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় শত শত ফেনসিডিল ও মদের কারখানা গড়ে উঠেছে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভারত তার টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে পাইকারিভাবে চালাতে পারলেও ভারত আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলও তার দেশে চালাতে দিচ্ছে না। ভারতের আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে কোনো সরকারই পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই শুধু ভারতীয় চ্যানেল দেখে। বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা ভারতীয় চ্যানেল ছাড়া নিজস্ব চ্যানেল তেমন দেখে না। এ দেশের ছেলে- মেয়েরা ভারতের সংস্কৃতি যত জানে, নিজ দেশের সংস্কৃতির সিকিভাগও জানে না তারা। দেশীয় কালচার তাদের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে যাচ্ছে। ভারতের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন জাতির জন্য আরো ভয়াবহ।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দরকষাকষির মূল হাতিয়ার ছিলো ট্রানজিট। কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই ভারতকে তা দিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশ এখন কোনো কিছুই আদায় করতে পারছে না নয়াদিল্লির কাছ থেকে। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রাপ্য ঠিক না করেই বিনা লাভে ভারতকে ট্রানজিট উপহার দেয়ার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারতকে বেনাপোল-ঢাকা-তামাবিল, হাতিবান্ধা-ঢাকা-তামাবিল, মংলা-বেনাপোল-হাতিবান্ধা ও চট্টগ্রাম পোর্ট-তামাবিল ইত্যাদি ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ অন্তত ১০টি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। তখন জাতীয় নিরাপত্তা বলে কিছুই থাকবে না। ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের অন্তত ২৫টি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী যখন দেখবে এইসব ট্রানজিট দ্বারা ভারত অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য পূর্বাঞ্চলে পাঠাচ্ছে, তখন তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ওইসব বহরে চোরাগোপ্তা হামলা চালাবেই। তখন ভারত সে অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে সেনা আক্রমণ চালাতে পারে ।
এই ঘটনা ঘটলে সেটি ইউক্রেনের ঘটনার সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, ভৌগলিক অবস্থার কারণে ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন বাংলাদেশের সহযোগিতা। অন্যদিকে এই অঞ্চলে ভারত নিজেকে নব্য সা¤্রাজ্যবাদি রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীকে সহযোগিতার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছে ভারত। সেই হিসেবে তাদের কাছে বাংলাদেশের ক্ষমতায় কারা থাকবে সেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ৪২ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে গত পাঁচবছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ভারত না চাইতেই অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্লেষকদের ধারণা হলো, ভারত ক্রিমিয়ার মত বাংলাদেশ দখল করবে না, তবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে এ দেশের স্বকীয়তা রাখবে না। ইতোমধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যেমে তার অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছে ভারত।
এই প্রতিবেদনের উপরের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে, এ দেশের যুবসমাজ এখন নিজের সংস্কৃতির চেয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আর এই কারণে দেশীয় কোনো আইডল তৈরি হচ্ছে না। এর ফলে ফ্যাশনসচেতন যুবসমাজের চাহিদা পূরণ করতে ভারতীয় পণ্যে সয়লাব হচ্ছে বাংলাদেশের বাজার। গত ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার ক্ষমতায় বসিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের হয়তো নামে স্বাধীনতা থাকবে, সীমন্ত রক্ষী থাকবে, কিন্তু কার্যত বাংলাদেশ হবে ভারতের একটি প্রদেশ। সেখানে ভারতীয় সংস্কৃতি, ভারতীয় পোশাক, ভারতীয় খাবার, ভারতীয় ভাষা সবই চলবে। আর আমাদের নিজস্বতা বা স্বকীয়তা বলে কিছুই থাকবে না। ইউক্রেনের মত একই অবস্থা বাংলাদেশে। যারাই ক্ষমতায় আসে, তারা নিজেদের একক সিদ্ধান্তে দেশ চালাতে পারে না। বর্তমান সরকার তো অতীতের সকল রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। কারণ ক্রিকেটের মত স্থানেও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বিদ্ধান্ত নিয়ে আসার প্রয়োজন হয় তাদের।
ইউক্রেনের সহায়তায় ইউরোপ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সহায়তায় কোনো দেশ নেই। আর আমাদের সেনাবাহিনীর এই মুহূর্তে যে অবস্থা, তাতে ইউক্রেনের অবস্থা হওয়াটা একেবারেই নিশ্চিত। পার্শ্ববর্তী দেশের সেনাবহিনী রাশিয়ার স্টাইলে যে কোনো ছুতায় যদি আমাদের দেশে ঢুকে পড়ে, আমাদের বর্তমান সেনাবাহিনী দুই হাত তুলে সবার আগে স্যারেন্ডার করে ফেলবে, এমন নেতিবাচক চিন্তা ভর করেছে মানুষের মনে। কারণ যারা ইন্ডিয়ান আর্মিকে রেজিস্ট করবে, সেই দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের নানা কৌশলে অনেক আগেই হত্যা করা হয়েছে। আর যারা বেঁচে ছিল, তাদের অনেকেই সেচ্ছা বা বাধ্যতামূলক অবসর। তবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা একটাই আর তা হল সাধারণ মানুষ। তারা প্রচ-ভাবে অপছন্দ করে পার্শ্ববর্তী দেশটাকে। এ দেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের হাত থেকে জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে ভারতের কালো থাবার ভিতরে যাওয়ার জন্য নয়। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণকে তোয়াক্কা করেন না। তাদের কাছে জনগণের কোনো মূল্য নেই। তারা তোয়াক্কা করেন ভারত সরকারকে। ফলে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
http://www.weeklylikhoni.com/ news.php?content_id=970
নায়ুযুদ্ধের পর ফের বিশ্বের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ দেয়ার মত কেউ ছিল না। এমনকি আমেরিকা নিজেও এক ধরনের আত্মতৃপ্তির মধ্যে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমেরিকার বিশ্বাসের খুঁটি নাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের ছোট রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নতুন করে ভাবতে বসেছেন।
দূরত্বের দিক থেকে ইউক্রেন বাংলাদেশ থেকে বেশ দূরে হলেও ভৌগলিক অবস্থান থেকে দুইয়ের বেশ মিল রয়েছে। সেই দিক থেকে ইউক্রেনের ঘটনা বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকদের মনে কিছুটা হলেও ভীতির সঞ্চার করেছে। ক্রিমিয়ার সেবাদাস সরকার একটি স্বায়ত্বশাসিত রাষ্ট্রকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করতে পারলে বাংলাদেশের একটি তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার তেমন কোনো কর্মযজ্ঞ ঘটাবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে? বর্তমানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে সরকার রয়েছে, তারা এ বছরের ৫ জানুয়ারির একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়। এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়, ৫০এর বেশি সংসদ সদস্য। প্রধান বিরোধী জোটের ভোটবর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সেই বিতর্কিত নির্বাচন।
ভোটারবিহিন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের জবাবদিহিতা নেই সাধারণ নাগরিকদের কাছে। ওই নির্বচনে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যে শুধু ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়। ফলে নাগকিদের চেয়ে ভারতের কাছেই এই সরকারের আনুগত্য বেশি। আর সেই জায়গা থেকেই সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ইউক্রেনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ। ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সেনাসদস্যদের অবস্থানের খবর পড়তে পড়তে অনেকেরই ১৯৭৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরে ফিরে যাবার কথা। স্থানীয় আফগানিদের ছদ্মাবরণে মাত্র এক হাজার রুশ সৈন্য সেদিন ঢুকে পড়েছিল আফগানিস্তানের কাবুলে। একেবারে বিনা বাধায় তারা সরকারি ভবন এবং প্রধান সামরিক ঘাঁটির দখল নিয়ে ফেলেছিলো। কোথাও কোনো প্রতিরোধ ছিল না। বরং ছিল সমর্থন আর সহযোগিতার হাত।
পশ্চিমাদের হুমকির মধ্যে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। ক্রিমিয়ার দৃশ্যটাও কার্যত একই রকমের ছিল। দূরে বসে মার্কিন-কানাডা আর পশ্চিমা শক্তির হুঁশিয়ারি, সতর্কতা থাকলেও ক্রিমিয়ার চিত্রটা ছিল সাড়ে তিন দশক আগের কাবুলের মতো। তাই পশ্চিমের অনেক মিডিয়া ক্রিমিয়ায় রুশ সেনাদের প্রবেশের সঙ্গে ১৯৭৯ সালের কাবুলের ঘটনার তুলনা করছেন। কাবুলে মাত্র সপ্তাহ তিনেকের ব্যবধানেই রুশ সেনার সংখ্যা স্ফীত থেকে স্ফীততর হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেটিই পরিণত হয়েছে রক্তাক্ত সামরিক ‘জবরদখলে’। একযুগ পর রুশ সেনারা যখন কাবুল ছেড়ে যায়, ততদিনে উপমহাদেশের রাজনীতিতে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। সেই ঝড় উপমহাদেশের রাজনীতির চরিত্রটাই অনেক পাল্টে দিয়েছে।
ইউক্রেনের ঘটনায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার বলেন, বার্লিন দেয়ালের পতনের পর গত পঁচিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে ইউরোপ। সেই সময়কার বিরোধটা ছিল পূর্ব আর পশ্চিমের। আর এখন ইউরোপই বিভক্তির মুখে। তিনি বলেন, পশ্চিম থেকে যত সতর্কতা হুমকি দেওয়া হোক না কেন, রাশিয়া তার কাজ কিন্তু বন্ধ করছে না। বরং রাশিয়ার কণ্ঠস্বর উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার গুটি হিসেবে ইউক্রেনকে ব্যবহার করেছে দীর্ঘদিন। সেই ইউক্রেন ইস্যুতেই পশ্চিমা রাজনীতির ক্ষমতা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। ক্রিমিয়ার ঘটনা শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেটা দক্ষিণ এশিয়ার তুলনামূলক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে নানানভাবে উসকানি দেবে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ। গত বছর সিরিয়া-ইরান ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বিপরীতে রাশিয়ার কূটনৈতিক অর্জন মস্কোকে আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে।
এরপর ক্রিমিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাশিয়া যে পথরেখা আঁকছে, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষমতার ভারসাম্যে অনেক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ইউক্রেন-ক্রিমিয়া বনাম রাশিয়া এই ত্রিমাত্রিক ক্ষমতা সম্পর্ক ও লড়াই এমন এক জায়গায় জড়িয়ে গেছে, যেখানে ব্যাপারটা শুধু ইউরোপ বনাম রাশিয়ার আন্তদ্বন্দ্বই নয়, এর সাথে সারা বিশ্বই জড়িয়ে গেছে। ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অংশ বটে। সাধারণভাবে ব্যাপারটা ক্রিমিয়ার সাথে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ ঝগড়ার মতো মনে হলেও এর সাথে রাশিয়া ও ইউরোপের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। আঞ্চলিকভাবে এবং একইসাথে বৈশ্বিকভাবে রাশিয়া এখনো পর্যন্ত বেশ শক্তিশালী হওয়ায় পুরো ব্যাপারটি অনেক জটিল হয়ে উঠেছে। এদিকে, ইউক্রেনের ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সর্বশেষ অস্ত্র ছিল কূটনৈতিক প্রক্রিয়া। যেখানে রাশিয়াকে কূপোকাত করতে গিয়ে ভেটো পাওয়ায় উল্টা নিরাপত্তা পরিষদকে বেখাপ্পা অবস্থায় ঠেলে দেয়। নিরাপত্তা পরিষদের ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতাগুলো এশিয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হিসেবে কাজ করে। কারণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় এর সংঘাতের আশঙ্কা জটিল হয়ে উঠতে পারে। আর এটি ঘটতে পারে এশিয়ার আঞ্চলিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোরই ভেতর থেকে। ইউক্রেনের ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্তত এ ঘটনা যে এ অঞ্চলের তুলনামূলক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে নানানভাবে উসকানি দেবে তাতে সন্দেহ নাই। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতা, ভারত-পাকিস্তান বিরোধ, চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাত এসবই উসকানির প্রাথমিক যোগান ও উপাদান। অবশ্য চীন-ভারত সীমান্তবিরোধ অন্যদের তুলনায় কিছুটা কম বটে। এশিয়ায় একমাত্র দেশ চীন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।
গেল বছর ভারতের সীমান্তের অন্তত ১৯ কিলোমিটার ভেতরে চীনা সেনারা ঢুকে পড়ে। এসব আচরণকে আরো প্ররোচিত করতে পারে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনা। ভারতের অরুণাচল রাজ্য নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে চীন মারাত্মক সোচ্চার হয়ে উঠেছে। দীর্ঘকাল ধরেই অরুণাচলের তাওয়াং এলাকার দাবি করে আসছে চীন। দুদেশের মধ্যে ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধের কথা স্মরণ করা যায়। সেসময় থেকে সীমান্তের ঠিক নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এই তাওয়াং অঞ্চলে চীন প্রভাব বিস্তার করে আসছে। চীন অরুণাচলের নাগরিকদের ভারতীয় পাসপোর্টে ভিসা দিতে অস্বীকার করে আসছে। উল্টা তারা স্ট্যাপল ভিসা দিতে চায়। ভারতীয় পাসপোর্ট দেখালেই চীনারা ম্যাপ দেখায়। এবং বুঝায় এটা চীনেরই অংশ। অবশ্য ভারতও এর কড়া জবাব দিয়ে আসছে।
কিছুদিন আগে মোদি বলেছেন, চীনকে তার ‘সম্প্রসারণবাদী চিন্তা’ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। তবে ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভারতের কোনো শক্ত অবস্থান নেই। এমনকি দেশটি এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। তার কারণ রাশিয়ার সাথে তার ঐতিহাসিকভাবে গভীর সম্পর্ক। অবশ্য রাশিয়ার দাবির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে ভারতকে অনুরোধও করেছিল ইউক্রেন। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার ঘটনার দিক থেকে শুধু চীন-ভারত বা ভারত-পাকিস্তান এভাবে তো বুঝাই যায়। সে বুঝটা তো চীন আর ভারতই বুঝে যাচ্ছে। কিন্তু চীন ও ভারতের প্রতিবেশি ছোট রাষ্ট্রগুলোর আরো বেশি বুঝা জরুরি হয়ে উঠেছে। ছোট্ট রাষ্ট্রগুলো কি ক্রিমিয়ার মতো বড় রাষ্ট্রগুলোর পেটে ঢুকে যাবে? ক্রিমিয়ার ভাষাগত ও নৃ-গোষ্ঠীগত মিলের জন্যই কি রাশিয়াকে ক্রিমিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে?
পুঁজির আঞ্চলিক বিতরণ ও ক্ষমতার স্বার্থ কি এর পেছনে কাজ করেনি? সে কারণে ভূ-রাজনীতি ও সীমান্তের আধিপত্যের দিক থেকে এ শিক্ষা কি এখন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়? স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো ধরনের বন্ধুসুলভ আচরণ পায়নি। এখন পর্যন্ত যেসব চুক্তি হয়েছে, তার প্রতিটিতেই ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়কারী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, ভারত গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানিপ্রবাহ বন্ধ রেখেছে। শুধু তিস্তা নয়, উজানের অভিন্ন ৫৪টি নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা। এসবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। একই কথা বলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ভারত গত ৪০-৪২ বছরে বাংলাদেশকে দেয়া কোনো ওয়াদাই রক্ষা করেনি। আর যারা ওয়াদা রক্ষা করে না, তারা মোনাফেক। ভারত আমাদের সঙ্গে মোনাফেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ কিছু পায়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন কী পাচ্ছে? পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। কৃষক আলুর দাম পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনাইদ সাকি বলেন, ৭৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানিয়েছে। আবার ১৯৮২ সালে ভারত গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে রংপুর অঞ্চলকে মরুভূমি বানানোর সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারা তিস্তায় বাঁধ দিয়ে ৫টি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছে। আরও ২৭টি বাঁধ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ভারত সরকার। ভারত আন্তর্জাতিক কোনো রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব করছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি করতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের কেউই কথা বলেন না। অবশ্য আওয়ামী লীগ কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলে না। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের সঙ্গে যত দেশবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তার বেশিরভাগই করেছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শোষণ করে আসছে ।
বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি পাহাড়সমান। বাংলাদেশের মালামাল ভারতের বাজারে ঢুকতেই পারছে না। শুল্ক ও অশুল্কের বেড়াজালে ভারত বাংলাদেশের পণ্য তার বাজারে ঢুকতে দিচ্ছে না । যদিও ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ৪৭টি আইটেম বিনা শুল্কে ভারত আমদানি করবে। কিন্তু সে সব আইটেমের এক-দশমাংশও ভারতে পাঠানো যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড় দিলেও প্রাদেশিক সরকারগুলো তাদের নিজস্ব শুল্ক কাঠামোর বাধার কারণে এসব মালামাল পাঠানো যাচ্ছে না। ভারত বাংলাদেশে যে রফতানি করে, তা বাংলাদেশের দশ গুণেরও বেশি। তাছাড়া চোরাই পথে ভারত থেকে আরো বেশি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ঢুকছে। তার ওপর শেখ হাসিনার সরকার উন্মুক্ত বর্ডার বাণিজ্য (হাট) শুরু করায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আরো পোয়াবারো । বাংলাদেশের যুবশক্তিকে ধ্বংস করার জন্য সীমান্ত পার হয়ে ফেনসিডিল, কোকেন, ইয়াবার মত মাদকদ্রব্য দেদারসে বাংলাদেশের বাজারে ঢুকছে। ওইসব মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে পাঠাবার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় শত শত ফেনসিডিল ও মদের কারখানা গড়ে উঠেছে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভারত তার টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে পাইকারিভাবে চালাতে পারলেও ভারত আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলও তার দেশে চালাতে দিচ্ছে না। ভারতের আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে কোনো সরকারই পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই শুধু ভারতীয় চ্যানেল দেখে। বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা ভারতীয় চ্যানেল ছাড়া নিজস্ব চ্যানেল তেমন দেখে না। এ দেশের ছেলে- মেয়েরা ভারতের সংস্কৃতি যত জানে, নিজ দেশের সংস্কৃতির সিকিভাগও জানে না তারা। দেশীয় কালচার তাদের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে যাচ্ছে। ভারতের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন জাতির জন্য আরো ভয়াবহ।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দরকষাকষির মূল হাতিয়ার ছিলো ট্রানজিট। কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই ভারতকে তা দিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশ এখন কোনো কিছুই আদায় করতে পারছে না নয়াদিল্লির কাছ থেকে। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রাপ্য ঠিক না করেই বিনা লাভে ভারতকে ট্রানজিট উপহার দেয়ার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারতকে বেনাপোল-ঢাকা-তামাবিল, হাতিবান্ধা-ঢাকা-তামাবিল, মংলা-বেনাপোল-হাতিবান্ধা ও চট্টগ্রাম পোর্ট-তামাবিল ইত্যাদি ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ অন্তত ১০টি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। তখন জাতীয় নিরাপত্তা বলে কিছুই থাকবে না। ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের অন্তত ২৫টি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী যখন দেখবে এইসব ট্রানজিট দ্বারা ভারত অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য পূর্বাঞ্চলে পাঠাচ্ছে, তখন তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ওইসব বহরে চোরাগোপ্তা হামলা চালাবেই। তখন ভারত সে অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে সেনা আক্রমণ চালাতে পারে ।
এই ঘটনা ঘটলে সেটি ইউক্রেনের ঘটনার সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, ভৌগলিক অবস্থার কারণে ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন বাংলাদেশের সহযোগিতা। অন্যদিকে এই অঞ্চলে ভারত নিজেকে নব্য সা¤্রাজ্যবাদি রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীকে সহযোগিতার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছে ভারত। সেই হিসেবে তাদের কাছে বাংলাদেশের ক্ষমতায় কারা থাকবে সেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ৪২ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে গত পাঁচবছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ভারত না চাইতেই অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্লেষকদের ধারণা হলো, ভারত ক্রিমিয়ার মত বাংলাদেশ দখল করবে না, তবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে এ দেশের স্বকীয়তা রাখবে না। ইতোমধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যেমে তার অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছে ভারত।
এই প্রতিবেদনের উপরের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে, এ দেশের যুবসমাজ এখন নিজের সংস্কৃতির চেয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আর এই কারণে দেশীয় কোনো আইডল তৈরি হচ্ছে না। এর ফলে ফ্যাশনসচেতন যুবসমাজের চাহিদা পূরণ করতে ভারতীয় পণ্যে সয়লাব হচ্ছে বাংলাদেশের বাজার। গত ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার ক্ষমতায় বসিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের হয়তো নামে স্বাধীনতা থাকবে, সীমন্ত রক্ষী থাকবে, কিন্তু কার্যত বাংলাদেশ হবে ভারতের একটি প্রদেশ। সেখানে ভারতীয় সংস্কৃতি, ভারতীয় পোশাক, ভারতীয় খাবার, ভারতীয় ভাষা সবই চলবে। আর আমাদের নিজস্বতা বা স্বকীয়তা বলে কিছুই থাকবে না। ইউক্রেনের মত একই অবস্থা বাংলাদেশে। যারাই ক্ষমতায় আসে, তারা নিজেদের একক সিদ্ধান্তে দেশ চালাতে পারে না। বর্তমান সরকার তো অতীতের সকল রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। কারণ ক্রিকেটের মত স্থানেও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বিদ্ধান্ত নিয়ে আসার প্রয়োজন হয় তাদের।
ইউক্রেনের সহায়তায় ইউরোপ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সহায়তায় কোনো দেশ নেই। আর আমাদের সেনাবাহিনীর এই মুহূর্তে যে অবস্থা, তাতে ইউক্রেনের অবস্থা হওয়াটা একেবারেই নিশ্চিত। পার্শ্ববর্তী দেশের সেনাবহিনী রাশিয়ার স্টাইলে যে কোনো ছুতায় যদি আমাদের দেশে ঢুকে পড়ে, আমাদের বর্তমান সেনাবাহিনী দুই হাত তুলে সবার আগে স্যারেন্ডার করে ফেলবে, এমন নেতিবাচক চিন্তা ভর করেছে মানুষের মনে। কারণ যারা ইন্ডিয়ান আর্মিকে রেজিস্ট করবে, সেই দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের নানা কৌশলে অনেক আগেই হত্যা করা হয়েছে। আর যারা বেঁচে ছিল, তাদের অনেকেই সেচ্ছা বা বাধ্যতামূলক অবসর। তবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা একটাই আর তা হল সাধারণ মানুষ। তারা প্রচ-ভাবে অপছন্দ করে পার্শ্ববর্তী দেশটাকে। এ দেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের হাত থেকে জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে ভারতের কালো থাবার ভিতরে যাওয়ার জন্য নয়। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণকে তোয়াক্কা করেন না। তাদের কাছে জনগণের কোনো মূল্য নেই। তারা তোয়াক্কা করেন ভারত সরকারকে। ফলে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
http://www.weeklylikhoni.com/
__._,_.___
No comments:
Post a Comment