Thursday, May 29, 2014

কৃষিজমি রক্ষায় আইন হচ্ছে ॥ আবাসন শিল্প-কারখানা বা অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না অমান্যকারীদের জেল জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রেখে আইনের খসড়া শেষ পর্যায়ে

কৃষিজমি রক্ষায় আইন হচ্ছে ॥ আবাসন শিল্প-কারখানা বা অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না
অমান্যকারীদের জেল জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রেখে আইনের খসড়া শেষ পর্যায়ে
হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের কৃষিজমি রক্ষায় অবশেষে আইন করা হচ্ছে। কৃষিজমি সুরক্ষা এবং ভূমি ব্যবহার আইন নামে এর খসড়া প্রণয়ন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রতিবছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ আইন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই খসড়া তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলমান ন্যাশনাল ল্যান্ড জোনিং প্রকল্পের (ফেজ-২) মাধ্যমে ৪০ জেলায় এলাকাভিত্তিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই আইনের এ খসড়াটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ল্যান্ড জোনিং প্রকল্পের (ফেজ-২) প্রকল্প পরিচালক শাহাদৎ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আইনের একটি কাঠামো দাঁড় করিয়েছি। এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি বছরের জুনের মধ্যেই এই জোনিং কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। তার পরই আইন প্রণয়নের পরবর্তী কার্যক্রম আরও দ্রুত এগোবে। সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি সংক্রান্ত এক সভায় কৃষিজমি সুরক্ষায় আইনের খসড়া প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরে জানানো হয়, কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য ন্যাশনাল ল্যান্ড জোনিং প্রকল্পের (ফেজ-২) মাধ্যমে ভূমির শ্রেণী অনুসারে জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের প্রথম পর্বে উপকূলীয় ১৯ জেলাসহ ২১ জেলায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য জেলা ছাড়া অবশিষ্ট ৪০ জেলায় জোনিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগামী জুনে এ জোনিং কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এটি শেষ হলে আইন প্রণয়নের পরবর্তী প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কৃষিজমিতে আবাসন, শিল্প-কারখানা, ইটভাটি বা অন্য কোন ধরনের অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেন, তা কৃষিজমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। দেশের যে কোন স্থানের কৃষিজমি এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে এবং কোনভাবেই তা ব্যবহারে পরিবর্তন আনা যাবে না। কোন অবস্থাতেই উর্বর জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেয়া যাবে না। যে কোন ধরনের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। আইনে বিচার ও দ- হিসেবে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী বা সহায়তাকারীর অনুর্ধ দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এ আইনের অধীনে অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোসযোগ্য হবে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা কিংবা বন ও মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা করতে পারবেন।
সূত্র জানায়, তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এই তিন-চতুর্থাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে কৃষি উৎপাদন ও কৃষিবিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। বাংলাদেশে বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। পরিসংখ্যান বলছে, মোট ৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর কৃষিজমি আছে। এ জমিতেই দেশের কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকেন এবং দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয় এ জমিতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য দ্বারা। কিন্তু প্রতিবছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৭৬২ মিলিয়ন হেক্টর। গত ৩৮ বছরের এ জমির পরিমাণ কমেছে ১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন হেক্টর। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য কৃষিজমি অকৃষিতে পরিণত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমি কমতে কমতে প্রান্তসীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। দিনে ২২০ হেক্টরের বেশি কৃষিজমি অকৃষি খাতে যাচ্ছে। বছরে কমছে ৮২ হাজার হেক্টর জমি, যা মোট জমির এক ভাগ। বছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ১ হাজার হেক্টর জমি। ৮০ শতাংশ সরকারী খাস জমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্মাণ কাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি। গেল ৩৭ বছরে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে। বাংলাদেশে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮০৪টি কৃষক পরিবার রয়েছে। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। কৃষিজমি অকৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ায় এ প্রান্তিক কৃষকরা সংসারের হিসাব মিলাতে পারছেন না। এসআরডিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভাগওয়ারি অকৃষি খাতে জমি চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অন্যান্য বিভাগের বেলায় দেখা যাচ্ছে রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১ হেক্টর, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬ হেক্টর, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১ হেক্টর, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমি প্রতিবছর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে।

http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment