আশিস নন্দী, বেশ হেয় করার সুরেই, বলছেন যে, বাংলা একশো বছর ধরে অনেকটা দুর্নীতিমুক্ত ছিল ও আছে, কারণ সেখানে এসসি, এসটি, ওবিসিরা সরকারি কাঠামোয় জায়গা পায়নি।মা মাটি মানুষের পরিবর্তন সরকার পশ্চিম বঙ্গের ওবিসিদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ করতে চলেছে, এই খবরে এখন দুনিয়া তোলপাড়।এই বাজেট বরাদ্দ কতটা হবে, কিসের মাপকাঠিতে হবে, তা নিয়ে আম জনগণের মাথাব্যথা নেই।
পলাশ বিশ্বাস
আশিস নন্দী, বেশ হেয় করার সুরেই, বলছেন যে, বাংলা একশো বছর ধরে অনেকটা দুর্নীতিমুক্ত ছিল ও আছে, কারণ সেখানে এসসি, এসটি, ওবিসিরা সরকারি কাঠামোয় জায়গা পায়নি।মা মাটি মানুষের পরিবর্তন সরকার পশ্চিম বঙ্গের ওবিসিদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ করতে চলেছে, এই খবরে এখন দুনিয়া তোলপাড়।এই বাজেট বরাদ্দ কতটা হবে, কিসের মাপকাঠিতে হবে, তা নিয়ে আম জনগণের মাথাব্যথা নেই।
বাংলায় তিন শতাংশ ব্রাহ্মণ, পাঁচ শতাংশ কায়স্থ বদ্যি, সতেরো শতাংশ তফসিলী ও সাত শতাংশ আদিবাসী বাদে সাতাইস শতাংশ মুসলমান।
বাকী একচল্লিশ শতাংশ হিন্দু ওবিসি।
মুসলমানদের জনসংখ্যার সিংহভাগও ওবিসি।
গড়পড়তা অন্ততঃ পন্চাশ শতাংশ জনগণের জন্য কি অর্দধেক বাজেট বরাদ্দ করবেন মমতা ব্যানার্জী?
না , ওবিসি ভোটব্যান্কের জাদুতে সারা দেশে যে ক্ষমতার রাজনীতি চলে তারই অনুসারী হয়ে মুখে আশ্বাসন ও কাজের বেলায় লবডন্কা নীতি অনুসরণ করবেন তিনি?
ভারত ভাগের এত বছর বাদে এই বাংলায় ওবিসিদের জন্য আলাদা বরাদ্দ ঘোষণায় তিনি কি আশিস নন্দীর বক্তব্যেরই সমর্থন করছেন না?
মন্ডল কমিশন রিপোর্ট কার্যকর করার দাবিতে সারা ভারতে জোর সওয়াল করেও কমরেড জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে সিপিএম একবারের জন্যেও বাংলায় ওবিসির অস্তিত্ব স্বীকার করেনি, এই তথ্য কি সত্য নয়?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জমি আন্দোলন বিপর্যয়ের মুখে ওবিসি ভোটব্যান্ক ধরে রাখতে সাত শতাংশ সংরক্ষণ ওবিসিদের জন্য ঘোষণা করলেন, কিন্তু চাকরি হল কত জনের?
বাংলায় মন্ডল কমিশন রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ওবিসি, তাঁদের জাতি প্রমাণপত্র জারী করার ক্ষেত্রে কি করেছে এ রাজ্যের প্রশাসন?
বুদ্ধবাবূ যেতে যেতে আরও দশ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ মুসলিম ওবিসিদের জন্য ঘোষণা করলেন, কিন্তু কাজের কাজ কতটা হল?
পশ্চিমবঙ্গে আরও আটটি মুসলিম সম্প্রদায়কে অনগ্রসর শ্রেণীভুক্ত (ওবিসি) করা হয়েছে। এতে ওবিসি তালিকাভুক্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১টি।
তালিকাভুক্ত মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ। নতুন করে তালিকাভুক্ত অনগ্রসর আটটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে দর্জি বা ওস্তাগার বা ইদ্রিসী, রাজমিস্ত্রি, ভাটিয়াড়া, ঢালি, তালপাখা বেনিয়া, মোল্লা, মুসলিম পেয়াদা ও বারুই। এর মধ্যে মোল্লাদের সংখ্যা বেশি। তাদের সংখ্যা ১৫ লাখ। নতুন তালিকাভুক্ত আট সম্প্রদায়ে মোট ২২ লাখ সদস্য রয়েছে।
ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজন চাকরি, শিক্ষা ও ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে আর্থিক সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকে। রাজ্যে এত দিন চাকরির ক্ষেত্রে সাত শতাংশ পদ ওবিসিভুক্তদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রাজ্য সরকার সম্প্রতি এই সংরক্ষণের হার আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
তালিকাভুক্ত মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ। নতুন করে তালিকাভুক্ত অনগ্রসর আটটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে দর্জি বা ওস্তাগার বা ইদ্রিসী, রাজমিস্ত্রি, ভাটিয়াড়া, ঢালি, তালপাখা বেনিয়া, মোল্লা, মুসলিম পেয়াদা ও বারুই। এর মধ্যে মোল্লাদের সংখ্যা বেশি। তাদের সংখ্যা ১৫ লাখ। নতুন তালিকাভুক্ত আট সম্প্রদায়ে মোট ২২ লাখ সদস্য রয়েছে।
ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজন চাকরি, শিক্ষা ও ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে আর্থিক সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকে। রাজ্যে এত দিন চাকরির ক্ষেত্রে সাত শতাংশ পদ ওবিসিভুক্তদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রাজ্য সরকার সম্প্রতি এই সংরক্ষণের হার আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
03 May 2012 01:36:39 PM
কলকাতা : পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে এবার রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর ভোট ব্যাঙ্ক সুনিশ্চিত করতে আরও একদফা উদ্যোগ নিল সরকার ৷
সরকারি চাকরিক্ষেত্রে মুসলমান জনগোষ্ঠির আরও ৩৩টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার ৷এর পাশাপাশি মোয়াজ্জেমদেরও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা ৷
অন্যান্য অণগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণে সংখ্যালঘুদের আরও অনেকগুলো সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে রাজ্য মন্ত্রিসভা সিলমোহর দিল বুধবার ৷আগামী বিধানসভা অধিবেশনেই এ বিষয়ে বিল আনতে চলেছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ৷
রাজেন্দ্রনাথ সাচার কমিটির রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর বেহাল অবস্থার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই অস্বস্তিতে পড়ে তৎকালীন বাম সরকার৷
এরপরই রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ মেনে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করে সংখ্যালঘুদেরও তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে গিয়ে এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারি চাকরির-ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের প্রায় পুরো অংশকেই ওবিসি কোটার আওতায় আনতে চলেছে রাজ্য
সরকার ৷
বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে সমীক্ষা প্রায় শেষ ৷আগে আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া ওবিসিদের মোট ৬৫টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় ছিল।
এবার আরও ৩৩টি অন্তর্ভুক্ত করা হল ৷আরও ৭/৮টি সম্প্রদায়কেও এর আওতায় আনা হবে ৷
এদিকে, ইমামদের সাম্নানিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এবার মোয়াজ্জেমদেরও ওয়াকফ বোর্ড ভাতা দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তিনি বলেন, তাদের মাসে ১ হাজার রুপি করে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। এরজন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সাহায্য করবে রাজ্য সরকার৷
সংখ্যালঘু সংরক্ষণের প্রশ্নে এদিন বিগত বাম সরকারকে সমলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিএম মুখে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বললেও তাদের সরকার এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি৷
সরকারি চাকরিক্ষেত্রে মুসলমান জনগোষ্ঠির আরও ৩৩টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার ৷এর পাশাপাশি মোয়াজ্জেমদেরও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা ৷
অন্যান্য অণগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণে সংখ্যালঘুদের আরও অনেকগুলো সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে রাজ্য মন্ত্রিসভা সিলমোহর দিল বুধবার ৷আগামী বিধানসভা অধিবেশনেই এ বিষয়ে বিল আনতে চলেছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ৷
রাজেন্দ্রনাথ সাচার কমিটির রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর বেহাল অবস্থার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই অস্বস্তিতে পড়ে তৎকালীন বাম সরকার৷
এরপরই রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ মেনে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করে সংখ্যালঘুদেরও তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে গিয়ে এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারি চাকরির-ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের প্রায় পুরো অংশকেই ওবিসি কোটার আওতায় আনতে চলেছে রাজ্য
সরকার ৷
বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে সমীক্ষা প্রায় শেষ ৷আগে আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া ওবিসিদের মোট ৬৫টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় ছিল।
এবার আরও ৩৩টি অন্তর্ভুক্ত করা হল ৷আরও ৭/৮টি সম্প্রদায়কেও এর আওতায় আনা হবে ৷
এদিকে, ইমামদের সাম্নানিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এবার মোয়াজ্জেমদেরও ওয়াকফ বোর্ড ভাতা দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তিনি বলেন, তাদের মাসে ১ হাজার রুপি করে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। এরজন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সাহায্য করবে রাজ্য সরকার৷
সংখ্যালঘু সংরক্ষণের প্রশ্নে এদিন বিগত বাম সরকারকে সমলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিএম মুখে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বললেও তাদের সরকার এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি৷
অমল সরকার লিখেছেন এই সময়েঃ
উচ্চশিক্ষায় আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মানুষের উন্নয়নেও একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই প্রথম ওবিসিদের জন্য রাজ্য সরকারের বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ সেই স্বাধীনতার পর থেকে এত কাল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন তথা পরিকল্পনা বাজেটে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ থাকছে৷ আগামী সোমবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে বাজেট পেশ করতে চলেছেন তাতে অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দফতরের বাজেটে ওবিসিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দের সংস্থান থাকছে৷ অর্থ দন্তর ইতিমধ্যেই অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দপ্তরের বাজেটে এ জন্য পৃথক খাত বা বাজেট হেড খোলার অনুমতি দিয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দন্তরের পরিকল্পনা খাতেও ওবিসিদের জন্য পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হবে৷
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করার মতোই বাজেটে পৃথক বরাদ্দের সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক তাত্পর্য অসীম৷ এর মাধ্যমে অত্যন্ত অনগ্রসর মানুষের বসবাসের এলাকায় উন্নয়নে বাড়তি অর্থ খরচ হবে, যার সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাবে গরিব মুসলিম জনতা৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত যে ১৪৪টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ৮৬টিই হল অনগ্রসর মুসলিম৷ ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ওই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বসবাসের এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করা হতে পারে৷ এ ছাড়া রাস্তাঘাট, পানীয় জলের মতো সম্পূর্ণ পৃথক প্রকল্পও হাতে নেওয়া যেতে পারে৷ জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি মুসলিম, এমন এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ দিয়ে থাকে৷ পরিকল্পনার অভাবে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ ওই প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷
বাজেট বরাদ্দ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বারের জন্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দলিতদের উন্নয়নে নয়া দিশা পেতে পারে৷ বদলে যেতে পারে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্যও৷ সমাজের এই অংশের মানুষের হয়ে রাজনীতি করার সুবাদেই উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম-মায়াবতী, বিহারে লালু-নীতীশ, তামিলনাড়ুতে করুণানিধি-জয়ললিতা, কর্নাটকে দেবগৌড়া-ইয়েদুরাপ্পারা লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পেরেছেন৷ শ্রেণি সংগ্রামের রাজনীতিতে অভ্যস্ত সিপিএম-সিপিআইসহ বামপন্থী দলগুলি দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করেছে৷ এমনকী পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি বলে কিছু নেই, এমন দাবিও করা হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের তরফে৷ তাদের ঘুম ভাঙে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর৷ ঘুরে দাঁড়াতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওবিসিদের খুশি করতে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিলেও হাওয়া ঘোরেনি৷ বুদ্ধদেববাবুর দেখানো পথকেই রাজ্য রাজনীতিতে দলের ভিত মজবুত করতে হাতিয়ার করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷
মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী অর্থবর্ষের বাজেট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রকেই এই ব্যাপারে পথপ্রদর্শক হতে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লি থেকে সাড়া না-মেলায় রাজ্য সরকার নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরের সচিব সঞ্জয় থাড়ে বৃহস্পতিবার বলেন, 'কয়েকটি রাজ্যে ওবিসি'দের জন্য পৃথক দন্তর আছে৷ আমাদের রাজ্যে ওবিসি'দের নিয়ে ভাবনাচিন্তাই শুরু হয়েছে কয়েক বছর হল৷ তাই এখনই পৃথক দন্তর খোলার সুযোগ নেই৷ তাই ওবিসি'দের উন্নয়নে জোর দিতে বিভাগীয় বাজেটেই পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হচ্ছে৷'
বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ হলে কী ভাবে উপকৃত হতে পারেন ওবিসিভুক্ত মানুষেরা? অনগ্রসর কল্যাণ দন্তর সূত্রে বলা হচ্ছে, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের মতো জনসংখ্যাকে মাপকাঠি করা হলে পশ্চিমবঙ্গে বাজেটের এক-চতুর্থাংশই ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবর্ষেই উন্নয়ন খাতে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে৷ চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরে ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল৷ এ বছর তা বৃদ্ধি করে ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে৷ এখন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের মাত্র ২৩ কোটি টাকা ওবিসিভুক্ত মানুষের কল্যাণে খরচ হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রি ও পোস্টম্যাট্রিক বৃত্তিপ্রদান প্রকল্পে রাজ্যের দেয় ২১ কোটি টাকা৷ এ ছাড়া বছর কয়েক হল ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক হস্টেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ তিনটি ইতিমধ্যে হয়েও গিয়েছে৷ ন'টি নির্মীয়মাণ৷ এই খাতে বরাদ্দ আছে ২ কোটি টাকা৷ এ রাজ্যে প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ পায় ১ লাখ ওবিসি ছাত্রছাত্রী৷ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী পায় পোস্টম্যাট্রিক স্কলারশিপ৷
উচ্চশিক্ষায় আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মানুষের উন্নয়নেও একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই প্রথম ওবিসিদের জন্য রাজ্য সরকারের বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ সেই স্বাধীনতার পর থেকে এত কাল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন তথা পরিকল্পনা বাজেটে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ থাকছে৷ আগামী সোমবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে বাজেট পেশ করতে চলেছেন তাতে অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দফতরের বাজেটে ওবিসিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দের সংস্থান থাকছে৷ অর্থ দন্তর ইতিমধ্যেই অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দপ্তরের বাজেটে এ জন্য পৃথক খাত বা বাজেট হেড খোলার অনুমতি দিয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দন্তরের পরিকল্পনা খাতেও ওবিসিদের জন্য পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হবে৷
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করার মতোই বাজেটে পৃথক বরাদ্দের সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক তাত্পর্য অসীম৷ এর মাধ্যমে অত্যন্ত অনগ্রসর মানুষের বসবাসের এলাকায় উন্নয়নে বাড়তি অর্থ খরচ হবে, যার সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাবে গরিব মুসলিম জনতা৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত যে ১৪৪টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ৮৬টিই হল অনগ্রসর মুসলিম৷ ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ওই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বসবাসের এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করা হতে পারে৷ এ ছাড়া রাস্তাঘাট, পানীয় জলের মতো সম্পূর্ণ পৃথক প্রকল্পও হাতে নেওয়া যেতে পারে৷ জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি মুসলিম, এমন এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ দিয়ে থাকে৷ পরিকল্পনার অভাবে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ ওই প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷
বাজেট বরাদ্দ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বারের জন্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দলিতদের উন্নয়নে নয়া দিশা পেতে পারে৷ বদলে যেতে পারে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্যও৷ সমাজের এই অংশের মানুষের হয়ে রাজনীতি করার সুবাদেই উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম-মায়াবতী, বিহারে লালু-নীতীশ, তামিলনাড়ুতে করুণানিধি-জয়ললিতা, কর্নাটকে দেবগৌড়া-ইয়েদুরাপ্পারা লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পেরেছেন৷ শ্রেণি সংগ্রামের রাজনীতিতে অভ্যস্ত সিপিএম-সিপিআইসহ বামপন্থী দলগুলি দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করেছে৷ এমনকী পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি বলে কিছু নেই, এমন দাবিও করা হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের তরফে৷ তাদের ঘুম ভাঙে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর৷ ঘুরে দাঁড়াতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওবিসিদের খুশি করতে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিলেও হাওয়া ঘোরেনি৷ বুদ্ধদেববাবুর দেখানো পথকেই রাজ্য রাজনীতিতে দলের ভিত মজবুত করতে হাতিয়ার করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷
মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী অর্থবর্ষের বাজেট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রকেই এই ব্যাপারে পথপ্রদর্শক হতে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লি থেকে সাড়া না-মেলায় রাজ্য সরকার নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরের সচিব সঞ্জয় থাড়ে বৃহস্পতিবার বলেন, 'কয়েকটি রাজ্যে ওবিসি'দের জন্য পৃথক দন্তর আছে৷ আমাদের রাজ্যে ওবিসি'দের নিয়ে ভাবনাচিন্তাই শুরু হয়েছে কয়েক বছর হল৷ তাই এখনই পৃথক দন্তর খোলার সুযোগ নেই৷ তাই ওবিসি'দের উন্নয়নে জোর দিতে বিভাগীয় বাজেটেই পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হচ্ছে৷'
বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ হলে কী ভাবে উপকৃত হতে পারেন ওবিসিভুক্ত মানুষেরা? অনগ্রসর কল্যাণ দন্তর সূত্রে বলা হচ্ছে, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের মতো জনসংখ্যাকে মাপকাঠি করা হলে পশ্চিমবঙ্গে বাজেটের এক-চতুর্থাংশই ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবর্ষেই উন্নয়ন খাতে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে৷ চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরে ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল৷ এ বছর তা বৃদ্ধি করে ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে৷ এখন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের মাত্র ২৩ কোটি টাকা ওবিসিভুক্ত মানুষের কল্যাণে খরচ হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রি ও পোস্টম্যাট্রিক বৃত্তিপ্রদান প্রকল্পে রাজ্যের দেয় ২১ কোটি টাকা৷ এ ছাড়া বছর কয়েক হল ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক হস্টেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ তিনটি ইতিমধ্যে হয়েও গিয়েছে৷ ন'টি নির্মীয়মাণ৷ এই খাতে বরাদ্দ আছে ২ কোটি টাকা৷ এ রাজ্যে প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ পায় ১ লাখ ওবিসি ছাত্রছাত্রী৷ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী পায় পোস্টম্যাট্রিক স্কলারশিপ৷
লিখেছেন কান্চা ইলাইয়াঃ
বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, তফসিলি জাতি এবং তফসিলি জনজাতির লোক'জয়পুর সাহিত্য উৎসবে সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর এই মন্তব্যে এই সব বর্গের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, মর্মাহতও। তাঁদের মনে হয়েছে, আশিসবাবু তাঁদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে দুর্নীতির দায়ে দায়ী করেছেন। তিনি অবশ্য বলতে চেয়েছিলেন, একটা দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী সাম্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। কিন্তু তিনি কথাগুলো বলেছেন খুব অদ্ভুত ভাবে।
লিখেছেন কান্চা ইলাইয়াঃ
আশিস নন্দী শিক্ষাজগতের মানুষ, বিদ্বজ্জন হিসাবে সম্মানিত। তিনি একটি বিশেষ চিন্তাধারার শরিক। অনেকাংশে বাঙালি বিদ্যাজীবীদের নেতৃত্বে এই ধারার গবেষকরা 'জাতীয়তাবাদী' পণ্ডিতদের থেকে স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছেন এবং এক ভিন্ন ধরনের তত্ত্ব নির্মাণ করেছেন। তাঁরা সর্বদাই দাবি করেন যে, তাঁদের অবস্থান নিম্নবর্ণের পক্ষে। কিন্তু অম্বেডকরের পথ থেকে তাঁরা সর্বদা দূরে থেকেছেন এবং এটা নিশ্চিত করেছেন যে, অন্তত বাংলার নাগরিক সমাজে যেন নীচের তলা থেকে, বিশেষ করে শূদ্র, নমঃশূদ্র এবং আদিবাসীদের মধ্যে থেকে এক জনও বিদ্বৎসভায় উঠে না আসেন। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘকাল ক্ষমতাসীন ভদ্রলোক কমিউনিস্টদের থেকে নিজেদের আলাদা বলে জাহির করেছেন বটে, কিন্তু রাজ্যে পশ্চাৎপদ বর্গের মানুষের জন্য সংরক্ষণ যাতে কার্যকর না হয়, সেই চেষ্টায় তাঁরাও দশকের পর দশক শরিক থেকেছেন।
লিখেছেন কান্চা ইলাইয়াঃ
তিনি এবং তাঁর মতো ভদ্রলোক পণ্ডিতরা যে রাজ্য থেকে এসেছেন সেখানে রাষ্ট্রশক্তির সদর দফতরের নাম 'রাইটার্স বিল্ডিং'। তথাকথিত সাবঅল্টার্নরা যাতে সেখানে ক্ষমতার অংশী হতে পারে, সে জন্য তাঁরা তাঁদের লেখালিখিতে কতটা সত্যিকারের চেষ্টা করেছেন? কমিউনিজম এবং সেকুলারিজমের ছদ্মবেশে জাতপাতের যে প্রতিপত্তি বাংলায় চলে, তা নিয়ে তাঁদের বিস্তর লেখা উচিত ছিল। এবং আশিস নন্দীর এই ভাবে বাঙালি বিদ্যাজীবীদের এ কথা বলার দরকার ছিল না যে, 'ওবিসি, এসসি, এসটি'রা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' আর বাঙালি ভদ্রলোকরা 'সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণ', এবং ওবিসি, এসসি, এসটি'রা ক্ষমতার বলয়ে ঢুকলে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণদের মিলনের সম্ভাবনা দেখা দিত। এটা কোদালকে কোদাল বলা নয়। এটা হল, কোদালকে কুকুর বলা।
নব্বইয়ের দশকে মণ্ডল আন্দোলনের পরে অম্বেডকর গোটা ভারতে বন্দিত হয়েছেন, কেবল পূর্ব ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ওড়িশা ছাড়া। পশ্চিমবঙ্গে এখনও উচ্চবর্ণ বাঙালি ভদ্রলোকের আধিপত্য। তাঁদের ভুবনে এখনও বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের জয়জয়কার। হ্যাঁ, গাঁধী এবং নেহরুকেও তাঁরা মান্য করেন। কিন্তু চিন্তানায়ক হিসাবে অম্বেডকর তাঁদের কাছে অচ্ছুত। অথচ তিনি যখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন, তখন ক'জন বঙ্গসন্তান সেখানে পিএইচ ডি করেছেন, তা-ও আবার অর্থনীতিতে? অম্বেডকর তাঁর সময়ের বহু বাঙালি বিদ্বজ্জনের চেয়ে বড় পণ্ডিত ছিলেন, বাঙালি বিদ্যাজীবীরা তবু তাঁকে অচ্ছুত করে রাখলেন কেন? কী বাংলায়, কী ইংরেজিতে, কোনও ভাষাতেই বাঙালি তাঁকে নিয়ে চর্চা করল না; এবং পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি, এসসি, এসটি'রা ক্ষমতার বলয়ে ঢুকতে পারল না এই দুটি ঘটনার কি কোনও অন্তর্নিহিত সম্পর্ক নেই?
আর উচ্চবর্ণ 'সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত' কেন? সেটা কি এই কারণে যে, তাঁরা একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে বাস করেন, যে জগৎটা ওবিসি বা এসসি এসটি'দের জগতের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রাচীন ভারতে যাঁরা খাদ্য উৎপাদন করতেন, তাঁদের শূদ্র বা চণ্ডাল বলা হত। যাঁরা উৎপন্ন পণ্য ভোগ করতেন, তাঁদের বলা হত ব্রাহ্মণ (ভূদেবতা)। কালক্রমে তাঁরা নানা নামে সম্মানিত হন। যেমন, বম্বে প্রদেশে ব্রাহ্মণদের উপাধি বা পদবি হল পণ্ডিত, দেশমুখ, সরদেশাই, দেশপাণ্ডে, ইত্যাদি। ব্রিটিশ আমলে শূদ্র এবং চণ্ডালদের অনেক অংশকে 'ক্রিমিনাল' অর্থাৎ স্বভাবত অপরাধপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এখন আবার তাঁদের এক গোত্রে ফেলে 'সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' আখ্যা দেওয়া হচ্ছে!
আশিস নন্দী একটা ভাল কাজ করেছেন। ভদ্রলোকের আলোচনাসভায় তিনি জাতপাতের প্রশ্নটাকে এনে দিয়েছেন। আর্থিক, সামাজিক এবং চেতনাগত দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোন জাত বা সম্প্রদায়ের দায় কতখানি, সেই বিতর্কটা শুরু হয়েছে। অনেকে অবশ্য সেই বিতর্কে যেতে চাইছেন না, আশিসবাবুর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটা নিয়েই তাঁদের মাথাব্যথা। দলিত-বহুজন সমাজের বিদ্যাজীবীদের দায়িত্ব এই মামলার বিরোধিতা করা এবং জাতপাত ও দুর্নীতির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কে যোগ দেওয়া। আমরা যদি এই বিতর্কটা চালিয়ে যেতে পারি, অনেক জঞ্জাল বেরিয়ে আসবে।
হিন্দু সমাজের থাকবন্দি কাঠামোটা দানা বাঁধার পর থেকে এই বিষয়ে একটা সত্যিকারের বিতর্ক কখনও হয়নি। তার কারণ, বিদ্যাজীবীরা বরাবর এসেছেন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য, এই তিন বর্গ থেকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কিছু তারতম্য দেখা গেছে বটে, কিন্তু জাতপাতের সামগ্রিক ছবিটা মোটের ওপর একই। আমার 'পোস্ট-হিন্দু ইন্ডিয়া' বইতে আমি যাকে 'সামাজিক চোরাচালান' (সোশাল স্মাগ্লিং) বলেছি, সেই বাণিজ্য এবং নিয়ন্ত্রণের দ্বৈত কৌশলে কারা জাতীয় সম্পদকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে? আজেবাজে মামলা করে আমাদের ঐতিহাসিক সমস্যাগুলির সমাধান করা যাবে না।
রাজ্য সরকারের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিয়োগে ৮৩৪ জনের মধ্যে মুসলিম মাত্র ১৬ জন! | ||||
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী আবদুস সাত্তার | ||||
জাইদুল হক, আপনজন নিউজ এজেন্সি, কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের কিভাবে সংরক্ষণ দেওয়া যায় না নিয়ে যেমন বিস্তর আলোচনা চলছে সরকারি মহলে তেমনি সাম্প্রতিক চাকুরি নিয়োগে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক গ্রুপ ডি বিভাগে সাম্প্রতিক কর্মী নিয়োগে আবারও মুসলিমদের নগণ্য নিয়োগের দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। গত ১৬ মার্চ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সরকারি দফতরের লোয়ার ডিভিশন কর্মী নিয়োগের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মুসলিমদের হার দু শতাংশেরও কম। বিভিন্ন দফতরের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিযোগের যে দুটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মোট নিয়োগের সংখ্যা হল ৮৩৪ জন। এর মধ্যে মুসলিম মাত্র ১৬ জন। মাস কয়েক আগে কলকাতা পুলিশে নিয়োগে মুসলিমদের স্বল্প সংখ্যক উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী আবদুস সাত্তারকে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ২০০১ জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার হার ২৫.৫ % সেখানে চাকুরিতে নগণ্য উপস্থিতি কেন সে প্রশ্ন সাচার কমিটির রিপোর্টেও উঠে এসেছে। কিন্তু সরকারের তরফে বারে বারে বলা হযেছে সাচার কমিটির রিপোর্ট ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে প্রকৃত তথ্য অধরাই থেকে গেছে। এরপর রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রথমে মুসলিমদেরকে হতাশ করে দেয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, চাকুরিতে মুসলিমদের সংরক্ষণ দিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। আর জাতিগতভাবে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার নানা অসুবিধার কথাও তিনি তুলে ধরেন। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হলে তিনি ঘূরে গিয়ে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা। এবং পরবর্তীতে ওবিসি-র আওতায় কম আয়ভুক্ত মুসলিমদের সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেন। এ রাজ্যে মুসলিমদের মধ্যে ওবিসি আওতাভুক্ত হল ২ শতাংশের মতো। তাদের মধ্যে আবার বেশি আয়ের মুসলিমরা সংরক্ষণ পাবে না। শিক্ষা সহ বিভিন্ন জরুরি দফতরে আবার এই সংরক্ষণ প্রযোজ্য নয়। এ নিয়ে প্রখ্যাত আই.এ.এস নুরুল হককে অনগ্রসর জাতি হিসাবে মুসলিমদের কিভাবে চিহ্নিত করা যায় তার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকুরিতে কেন মুসলিমদের ৩ শতাংশ উপস্থিতি সে বিষয়ে বরাবরই পাশ কাটিয়ে চলেছেন কি মুখ্যমন্ত্রী কি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী। তারা বারে বারে বলার চেষ্টা করেছেন সাচার কমিটিতে উল্লেখ হওয়া চাকুরিতে মুসলিমদের নগণ্য উপস্থিতি সঠিক নয়। এর প্রত্যুত্তরে তারা সঠিক তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন নি। আসলে তারা ঠারে ঠোরে বলতে চেয়েছেন এ রাজ্যে সরকারি চাকুরিতে মুসলিমদের ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য রাখা হয়নি। কিন্তু তথ্য জানার আইন আসার পর এখন অনেক সরকারি তথ্যই সাধারণ জনগণের হাতে আসতে থাকায় তাদের বক্তব্য আর ধোপে টিকছে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ দু দফায় গ্রুপ-ডি লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসট্যান্ট নিয়োগ করে বিভিন্ন দফতরে। এই নিয়োগ করা হয় ২০০৬ সালে ক্লার্কশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ভিত্তিতে। এ বছর ওই পরীক্ষায় সফল হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০. নোটিশ নং: A-37- PSC (A) এই তালিকায় প্রথমে উল্লেখ করা হয় 'SECRETARIAT OF THE PUBLIC SERVICE COMMISSION, WEST BENGAL' দফতরের কথা। এই দফতরে যে ৩৬ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে একজনও মুসলিমের স্থান হয়নি। তার পর দেওয়া হয় 'P & A R DEPARTMENT,(C C WING),BLOCK-I, 2ND FLOOR, WRITERS' BUILDINGS, KOLKATA – 700 001. ' দফতরের নিয়োগ তালিকা। এই তালিকায় রয়েছে ৫২০ জনের নাম। তার মধ্যে মুসলিম স্থান পেয়েছে মাত্র ১৩ জন। অর্থাৎ পিএসসির দুই দফতর মিলিয়ে মোট নিয়োগের সংখ্যা ৫৫৬ আর মুসলিম নিয়োগ মাত্র ১৩! অর্থাৎ মুসলিম নিয়োগের হার মাত্র ২.৩%। নিয়োগ তালিকায় স্থান পাওয়া ওই ১৩ মুসলিম হলেন: ১. হাসনাল হক। ২. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ৩. কায়েস আলি মিয়া। ৪. আবদুল্লাহ নিসার। ৫. সেখ মনিরুল হক। ৬. শামিম ইয়াসমিন। ৭. তানিয়া গাজি। ৮. সেখ মুহাম্মদ শফিক। ৯. মুহাম্মদ নাসিম। ১০. সৈয়দ নাসিরুদ্দিন। ১১. ফকরুদ্দিন সরদার। ১২. সেখ সাহেব আলি ১৩. মসিউর রহমান। এরপর সম্প্রতি ২০০৬ সালের ক্লার্কশিপ পরীক্ষার ভিত্তিতে লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ১৬ মার্চ, ২০১০। নোটিশ নং: A-61/PSC (A) . এই তালিকায় রয়েছে মোট ২৭৮ জনের নাম। তার মধ্যে মুসলিম মাত্র ৩ জন! অর্থাৎ মুসলিম নিয়োগের হার এক শতাংশেরও কম। প্রথমেতালিকায়স্থানপায় 'WEST BENGAL LEGISLATIVE ASSEMBLY SECRETARIAT, "ASSEMBLY HOUSE", KOLKATA –1.' বিভাগে নিয়োগকৃতদের। এই তালিকায় মোট ১০ জনের নাম থাকলেও একজনও মুসলিমের স্থান হয়নি।
এর পরের তালিকায় রয়েছে 'FOOD & SUPPLIES DIRECTORATE UNDER THE FOOD & SUPPLIES DEPARTMENT, "KHADYA BHABAN" (1ST FLOOR), 11/A, MIRZA GHALIB STREET, KOLKATA –87. ' বিভাগে নিয়োগকৃতদের নাম। এতে রয়েছে ২৬৮ জনের তালিকা। তার মধ্যে মাত্র তিনজন হলেন মুসলিম। এই তিনজন হলেন : ১. সেখ দীন ইসলাম। ২. মুহাম্মদ নাসিমুদ্দিন। ৩. মো. মুদাস্সার।
সম্প্রতি খাদ্য সরবরাহ বিভাগে নিয়োগ নিয়ে স্বজন পোষণের অভিযোগ ওঠে। আর এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর মুসলিম বৈষম্যের অভিযোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। কারণ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী মহল বারে বারে চাকুরিতে এ রাজ্যে মুসলিম বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসছিলেন। এবার সেই অভিযোগ আরও দৃঢ় হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে। সেই সঙ্গে তারা দাবি তুলে আসছেন এ রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে চাকরি দিতে হবে মুসলিমদের, তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে এই তালিকা বেশ ভাবিয়ে তুলতে পারে বাম সরকারকে।
এমনিতেই বামফ্রন্টের বরাবরের মুসলিম ভোট ব্যাংক-এ ব্যাপক ধস নেমেছে। সামনে ২০১১ সালে বিধান সভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। কারণ রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের ওপর নির্ভর করছে ২০১১ সালে কে এ রাজ্যে চালকের আসনে বসবে। ৩২ বছরের শাসন করে আসা বাম সরকার না তৃণমূল-কংগ্রেস জোট? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বামজোটের অন্তর্গত ফরোয়ার্ড ব্লক দল মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য জোর সওয়াল করে আসছে। বিশেষ করে তাদের নেতা অশোক ঘোষ জোরালো করে মুসলিম সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাম সহ বিভিন্ন মহলে ব্যক্ত করেছেন। বলে রাখা ভাল, খাদ্য মন্ত্রক ফরোয়ার্ড ব্লক-এর অধীনে রয়েছে। একদিকে যখন চাকুরিতে মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য জোর সওয়াল করে চলেছেন শ্রী অশোক ঘোষ মহাশয় তখন তার দলের অধীনে থাকা দফতরে নিয়োগে ২৬৮ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন মুসলিম স্থান পেয়েছে। এর পর অশোক ঘোষের মুসলিম সংরক্ষণের বিষয়ে সওয়াল নিয়ে প্রকৃত আন্তরিকতার প্রশ্নে ঘোর সন্দেহ দেখা দিতে পারে। আগামী ২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের আগে এভাবে চাকরিতে মুসলিমদের করুণ উপস্থিতি চলতে থাকলে তা ক্রমশই বাম সরকারের চিন্তা হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ রাজ্যে সার্বিক ভাবে পশ্চাদপদ ঘোষণা করে সমগ্র মুসলিমদের সংরক্ষণের আওতাভুক্ত না করলে এই চিত্রের কোন হেরফের হবে না বলে সমাজবিদ ও অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। উচ্চশিক্ষায় ওবিসি তাস মুখ্যমন্ত্রীর
এই সময়: এমএ, বিএ, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ম্যানেজমেন্ট- উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় কোর্সে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য ১৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার৷ এই সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বিধানসভার আসন্ন বাজেট অধিবেশনেই একটি বিল পেশ করতে চলেছে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দপ্তর৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার মহাকরণে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জানান, 'আগামী শিক্ষাবর্ষেই (জুন-জুলাইয়ে শুরু) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার৷' উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও ঘোষণা করেন, ওবিসি'দের সংরক্ষণের এই সুবিধা দিলেও সাধারণ ক্যাটিগরির জন্য বরাদ্দ আসনে ভাগ বসানো হবে না৷ তাদের রক্ষাকবচ হিসাবে সমস্ত কোর্সেই আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ এ জন্য পরিকাঠামো গড়তে আগামী অর্থবর্ষে ১ হাজার কোটি টাকা এবং পরের ৬ বছর প্রতি বছরে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে৷
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নিতান্তই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ২২ মাসের শাসনে এর থেকে বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ আর একটিও নেই৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট তো বটেই, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে ভবিষ্যত্ সব নির্বাচনের জন্যই তৃণমূলের যাত্রাপথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে৷ এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমীকরণ বদলে যাওয়াও অসম্ভব নয়৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ১৪৪টি আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণি ওবিসি তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে অতি অনগ্রসর ৬৬টি শ্রেণির সব ক'টিই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের৷ ১৭ শতাংশ সংরক্ষণের ১০ শতাংশই এই অংশের জন্য বরাদ্দ৷ বাকি ৭৮টি শ্রেণির মধ্যেও ২০টি শ্রেণি মুসলিম৷ এই অংশের জন্য বরাদ্দ বাকি ৭ শতাংশ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এ রাজ্যে প্রথম বার ওবিসি'দের জন্য আসন সংরক্ষণ হতে চলেছে৷ এ জন্য গত বছর রাজ্যের পঞ্চায়েত দন্তর পঞ্চায়েত এলাকায় ওবিসি সুমারি করে৷ তাতে জানা গিয়েছে, গ্রাম বাংলার ২৪ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ এই শ্রেণিভুক্ত, যার সিংহভাগই মুসলিম৷ ফলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত সিদ্ধান্তের সুবাদে এই প্রথম গরিব মুসলিমরা এ রাজ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার-সহ উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় কোর্সে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে৷ একই সুবিধা পাবে অন্যান্য ধর্মের পিছিয়ে থাকা অংশ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা৷ সিপিএম তো বটেই, একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেসের দুর্গ মালদহ, মুর্শিদাবাদেও সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত ভোটের ময়দানে বড় হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের৷ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয়ের আঁচ পেয়ে বামফ্রন্ট সরকার ওবিসি ভোটকে হাতিয়ার করতে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের মাত্রা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছিল৷ কিন্ত্ত সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উচ্চ শিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ চালু করার ঘোর বিরোধী ছিলেন৷ তাঁর সময়ে অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী উপেন কিস্কু তিন বার মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পেশ করলেও বুদ্ধদেববাবুর আপত্তিতে তা খারিজ হয়ে যায়৷ আরও আগে, বামফ্রন্ট সরকারের জন্মলগ্নে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রের গঠিত কমিটির (বিন্দেশ্বরী প্রসাদ কমিটি) কাছে দাবি করা হয়েছিল, এ রাজ্যে ওবিসি বলে কিছু নেই৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এত কাল অনুপস্থিত ধর্ম এবং জাতের এই মিশেলকে অবশ্য শিক্ষাঙ্গনের সকলেই বাঁকা চোখে দেখতে নারাজ৷ যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মতে, 'পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষের সামাজিক ক্ষমতায়নের এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত কমই আছে৷' তিনি আরও বলেন, অনেক রাজ্য আগেই এই সুবিধা দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওবিসি'দের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে আসন বৃদ্ধির একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল৷ সরকারি চাকরিতে ওবিসি'দের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ আগের সরকারই চালু করে গিয়েছে৷ যদিও বিগত কয়েক বছর যাবত্ সরকারি দপ্তরে নিয়োগ কার্যত বন্ধ৷ তবে চাকরিতে সংরক্ষণ কার্যকর করার চেয়ে শিক্ষায় তা বলবত্ করা অনেক কঠিন৷ উচ্চ শিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করতে প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আসন বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে ব্রাত্যবাবু জানিয়েছেন৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে অনুন্নত শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, সাধারণ ক্যাটিগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন অক্ষুণ্ণ রাখলেই শুধু হবে না, বর্ধিত আসনেরও তফসিলি এবং তফসিলি উপজাতি ভুক্তদের জন্য সাংবিধানিক বিধান মেনে যথাক্রমে ২২ ও ৬ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে৷ স্বভাবতই শুধু ১৭ শতাংশ আসন বাড়িয়ে ওবিসি সংরক্ষণ কার্যকর করা সম্ভব নয়৷ রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে এখন ৬ লাখ ১০ হাজার আসন আছে৷ সংরক্ষণের সুবিধা দিতে তা ৪৫ শতাংশ বাড়িয়ে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার নতুন আসন সৃষ্টি করতে হবে৷ আর তার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরবাড়ি-সহ নানা পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন৷ স্বভাবতই এর সঙ্গে বিপুল আর্থিক দায় জড়িয়ে৷ বিরোধীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে একান্তে সরকারি কোষাগারের বিনিময়ে তৃণমূলের ভোট কেনার চেষ্টা বললেও প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি ভোট রাজনীতির কথা ভেবেই৷ আর্থিক বোঝার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীও এড়িয়ে যাননি৷ তিনি বলেন, 'আগামী আর্থিক বছরে এ জন্য এক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ থাকবে৷ পরের ৬ বছর ৬০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হবে পরিকাঠামো গড়তে৷' মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের শতাধিক প্রকল্প আছে যা থেকে শিক্ষার প্রসার-সহ সামাজিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়৷ দিল্লির এই ধরনের কোন প্রকল্প থেকে কত টাকা পাওয়া যেতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
কেন পিছিয়ে জানতে চায় নয়াদিল্লী
পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানরা শিক্ষা ও চাকরিতে খুবই পিছিয়ে
পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এত খারাপ কেন? কেন বঞ্চিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায়? সংখ্যালঘু বিষয়ক এক সম্মেলনে কথা শুরুর আগেই কেন্দ্রের কাছে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো রাজ্য কমিশনকে। রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্য অবশ্য এতে অস্বস্তিবোধ করেননি। উল্টো তারাও যে কেন্দ্রের সঙ্গে অনেকটাই একমত, তা জানিয়ে দেন।
শুধু তাই নয়, রাজ্য কমিশনের চেয়ারম্যান সঈদ সাজিদ জাহির আদনান পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তার সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হোক। আমি ওদের (বাম সরকার) হয়ে ওকালতি করতে আসিনি। বিধিবদ্ধ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে রাজ্যে সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান, উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। তিনি জানান, আগের চেয়ে অবস্থা ভালো হলেও আরও অনেক বেশি ভালো হওয়া উচিত ছিল। সম্প্রতি সংখ্যালঘু বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লী এসেছিলেন আদনান। সঙ্গে ছিলেন কমিশনের দুই সদস্য কল্যাণ চৌধুরী ও নারায়ণ প্রসাদ জৈন। সম্মেলনে অন্য রাজ্য বলার পর পশ্চিমবঙ্গ বলতে শুরু করতেই বাম রাজত্বে সংখ্যালঘুদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন করেন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান মুহম্মদ সফি কুরেশী। তখনই ওই জবাব দেয় রাজ্য কমিশন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী সলমান খুরশিদ ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। পরে আদনান বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলমানরা শিক্ষায় খুবই পিছিয়ে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের আরও উদ্যোগ দরকার। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী, আনসারি, মুমিন, হাজামসহ পিছিয়ে পড়া (ওবিসি) মুসলমানদের চাকরিতে যে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেছেন, তা আরও আগে হলে ভালো হতো। তবে চাকরিতে মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ও মানসিক কারণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ মুসলমানই গরীব। ফলে পড়াশোনার বদলে ছোট থেকেই জরি, বিড়ির মতো কাজে লগে পড়ে। তাছাড়া মুসলমানদের মানসিকতাই ব্যবসায়, চাকরিতে নয়। এখন অবশ্য মানসিকতা বদলাচ্ছে। রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের প্রকৃত সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে। জনসংখ্যার ২৫.২ শতাংশ মুসলমান বলে যে তথ্য রয়েছে তা স�� িক নয়। একই অবস্থা বৌদ্ধ, শিখ, জৈনদের ক্ষেত্রেও। কমিশনের অন্যতম সদস্য কল্যাণবাবু বলেন, দার্জিলিংসহ পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে সংখ্যালঘুদের ৭০ শতাংশ বৌদ্ধ। সব মিলিয়ে রাজ্যে ০.৩ শতাংশ বৌদ্ধ। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বৌদ্ধরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সব সরকারই সংখ্যালঘুদের সঙ্গে রাজনীতি করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগায়। এর বদল হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা। -বর্তমান পত্রিকা 02 FEBRUARY 2013পশ্চিমবঙ্গ কোন পথে?
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে কিছুদিন আগে। দীর্ঘ বামপন্থী শাসনের অবসানে নতুন সরকার পেয়েছি আমরা। ভোটের আগে অনেক হিসাব করেছিলাম কি কি পেয়েছি আর কি কি পাইনি। শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে যদি ভালো করে লক্ষ করি আর তুলনা করি বাকী রাজ্যগুলির তাহলে দেখব আমরা কতটা পিছিয়ে পড়েছি। তবে আমি এখন সেই তুলনায় যাচ্ছি না। এখন যে বিষয় টা তুলে ধরতে চাইছি সেটা অন্য বিষয়।
আমাদের দেশের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোই ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে মুখে যাই বলুক না কেন। মুসলিম এলাকায় মুসলিম প্রার্থীর প্রচলন তো এরাই করেছে। আর এই রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। দীর্ঘ বামপন্থী শাসনে মুসলিম তোষণ হয়েছে। যদিও তাতে মুসলিমদের কতটা লাভ হয়েছে সেটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। তবে যেটা হয়েছে সেটা হল কট্টরপন্থীদের প্রশয় দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বিভিন্ন সময়।
বুদ্ধবাবুর সময়ে তো মরিয়া চেষ্টা হয়েছিল যাতে ওবিসি কোটার আড়ালে মুসলিম সংরক্ষন করা যায় ভারতের সংবিধান কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে মুসলিম তুষ্টিকরণও হয়। কিন্তু তার ছন্দপতন হল সরকারের পতনের মাধ্যমে।
কিন্তু হায়! আরও তোষণ বাড়ল নতুন সরকার এসে। মমতা দিদির সরকার তো আরও নতুন উদ্যমে মুসলিম তোষণ শুরু করলো। ইমাম, মোয়াজ্জেমদের ভাতা, শুধুমাত্র মুসলিম ছাত্রীদের জন্য সাইকেল, স্কলারশিপ, হজ করতে ভরতুকি বাড়ানো, মুসলিমদের জন্য আলাদা নগর ইত্যাদি অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ত ভাবছেন যে এতে মুসলিম মন হয়ত গদগদ হবে। কিন্তু যে ক্ষতিটা হচ্ছে সেটা উনি বুঝছেন না বা বুঝতে চাইছেন না। চাহিদা আকাশ ছোঁয়া হচ্ছে, দাবী বাড়ছে, প্রভাব বাড়ছে, মানসিক শক্তি বাড়ছে। লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান ধরণের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। তাই সিঁদুরে মেঘ, আকাশ লাল। আমরা কোন পথে?
|
No comments:
Post a Comment