Tuesday, April 1, 2014

যশোবন্তের প্রশ্ন ‘শিশুসুলভ’, মানুষ তাঁকে ভুলে গিয়েছেন: চিদম্বরম

যশোবন্তের প্রশ্ন ‘শিশুসুলভ’, মানুষ তাঁকে ভুলে গিয়েছেন: চিদম্বরম

chidambaram
এই সময়: বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহার আঠেরো দফা প্রশ্নকে 'শিশুসুলভ' বলে উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদম্বরম৷ নয়াদিল্লিতে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম বলেন, 'যশোবন্ত যে আঠেরোটি প্রশ্ন করেছেন তার বেশিরভাগ নিতান্তই শিশুসুলভ৷ যশোবন্ত সিনহার কথা লোকে ভুলে গিয়েছেন৷ আমার মনে হয়, মানুষের বিস্মৃতিতেই তাঁর থাকা উচিত্‍৷'

রবিবারই যশোবন্ত সিনহা অভিযোগ করেন, 'ইতিহাস চিদম্বরমকে স্মরণ করবে বিনষ্টকারী হিসাবে, মনে রাখবে দেশের বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা, আত্ম-অহঙ্কার, উদ্ধত্য এবং অর্থহীন লম্বা-চওড়া দাবি করার জন্য৷ তিনি সব গ্রহণযোগ্যতাই হারিয়েছেন৷' সোমবার তারই উত্তর দেন চিদম্বরম৷

ইউপিএ সরকার এবং অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির বোঝা পরবর্তী সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন সিনহা৷ অর্থনীতির পতনের জন্যও চিদম্বরমকেই দায়ী করেন তিনি৷ যদিও অর্থনীতির পতন হয়েছে, এমন অভিযোগ নস্যাত্‍ করে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর দাবি, এখন অর্থনীতির অবস্থা কমবেশি স্থায়ী৷ অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের রেটিং কমে যায়নি৷ কুড়ি মাস আগেও দেশের অর্থনীতি নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এখন আর তা নেই৷ তিনি বলেন, 'এখন অর্থনীতিতে স্থায়িত্ব রয়েছে এবং তার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়েছে৷'

রাষ্ট্রায়ত্ত তেলসংস্থাগুলিতে প্রদেয় ভর্তুকির বড় অংশ আটকে রেখেছে সরকার৷ এই দায় পরবর্তী সরকারের উপরে পড়বে, তাই পরবর্তী সরকার আর্থিক সঙ্কটে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

সিনহা বলেন, এনডিএ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫ শতাংশ, তারা মসনদ ছাড়ার সময় সেই হার ৮ শতাংশে পৌঁছে যায়, আর এখন সেই হার পাঁচ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে৷' ২০০৮-০৯ সালে অর্থনীতিতে স্থায়িত্ব ছিল, কিন্ত্ত ভোটের কথা মাথায় রেখে সরকার দেদার খরচ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী না হওয়ায় দেশকে আরও বেশি করে ঘাটতির দিকে চিদম্বরম ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে সিনহা প্রশ্ন করেন, যে পরিমাণ আয়ের কথা সরকার বলেছিল, কেন তারা তা করতে পারল না৷ উত্তরে বিগত কয়েক বছরের সাফল্য সম্বন্ধে চিদম্বরম বলেন, 'আমরা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করেছি, আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল আর্থিক ঘাটতি ধরে রাখা৷ ২০১৪ অর্থবর্ষ শেষ করব এই হার পরিকল্পনামতো ৪.৬ শতাংশে বেঁধে রেখেই৷'

মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে এনেছেন বলে দাবি করেছেন চিদম্বরম৷ তবে সরকারের গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা যোজনার ফলে অর্থ ব্যয় হলেও কোনও সম্পদ সৃষ্টি না হয়ে তা মূল্যবৃদ্ধির কারণ হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কারণ এই ধরনের জনমোহিনী প্রকল্পের ফলে কৃষি, নির্মাণের মতো শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রে উত্‍পাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে৷

মোদী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, এই আশাতেই শেয়ারসূচকে উত্থান হচ্ছে, টাকার দাম বাড়ছে বলে যে দাবি করা হচ্ছিল, কয়েকদিন আগেই তা খারিজ করে দেন অর্থমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ইউপিএ সরকার যে পদক্ষেপ করেছে এবং তিনি ভোট অন অ্যাকাউন্টস বক্তৃতায় যে দিশা দেখিয়েছেন, তার জেরেই বাজার চাঙ্গা হয়েছে৷ ইকোনমিক টাইমসে সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় তিনি দাবি করেন, 'দেশের ভিত্তির উপরে নির্ভর করেই বাজার উঠছে, অন্য কোনও কারণে নয়৷' অর্থমন্ত্রীর দাবি খারিজ করে যশোবন্ত সিনহা বলেন, চিদম্বরম ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না, এ কথা জানার পরেই বাজার উঠতে শুরু করেছে৷ পাল্টা হিসাবে মোদীকে লক্ষ্য করে চিদম্বরমের মন্তব্য, বিজেপি এবং মোদীর ধনতন্ত্রের ব্র্যান্ড আসলে সরকার ও বণিকমহলের ঘনিষ্ঠতা৷ তিনি বলেন, 'মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্ব ইউপিএ-র অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্বচ্ছন্দই রয়েছে, কিন্ত্ত নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য আরও বেশি কারণ সরকার ও বণিকের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাই তাঁর ধনতন্ত্রের ব্র্যান্ড৷'

প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নির্বাচনে কমিশনে পাঠানোর কোনও প্রয়োজনই ছিল না বলে তিনি মনে করেন৷ তাঁর মতে, ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারটিও থেমে থাকা উচিত নয়৷

No comments:

Post a Comment