Wednesday, April 30, 2014

‘শান্ত’ লাভপুর ৪০ হাজার লিড দেবে, বলছেন নিশ্চিন্ত মনিরুল

‘শান্ত’ লাভপুর ৪০ হাজার লিড দেবে, বলছেন নিশ্চিন্ত মনিরুল

mqdefault
কমলেশ চৌধুরী ও হেমাভ সেনগুপ্ত

লাভপুর (বীরভূম): দুপুর গড়িয়ে বিকেল, ভোটগ্রহণ পর্ব প্রায় শেষের পথে৷ নবগ্রামের বাড়িতে বসে লস্যির গ্লাসে আয়েসি চুমুকের সঙ্গে মনিরুল ইসলামের মুখে শুধুই শান্তির কথা৷ তিনি বলছেন, 'আজ কিন্ত্ত কোনও চ্যানেল লাভপুরের গণ্ডগোল দেখাতে পারছে না৷ মানুষ শান্তিতেই ভোট দিয়েছেন৷' এলাকায় খুন-জখম হলেও হয়তো শাসকদলের নেতা হিসেবে তাঁকে শান্তির বাণীই আওড়াতে হত৷ তবে সত্যিই সারা রাজ্যের নজর থাকা লাভপুর তো বটেই, গোটা বীরভূম জেলায় তেমন কোনও হিংসার খবর ছিল না বুধবার৷

এই জেলায় দু'টি লোকসভা কেন্দ্র বীরভূম ও বোলপুরে ভোট হয়েছে এ দিন৷ বোলপুরে অবশ্য দুপুর না-হতেই ভোটে প্রহসনের অভিযোগ তুলে ৩০০-এরও বেশি বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেন সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম৷ তাঁর দেওয়া তথ্যই বলছে, লাভপুর বিধানসভা এলাকায় সেই বুথের সংখ্যাটা বড়জোর ৮-১০টি৷ আর যে বুথগুলিতে রামবাবু আবার ভোটগ্রহণ চান, সেগুলি পড়েছে নানুর, বোলপুরের পাশাপাশি বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, আউসগ্রামে৷

বিকেল পর্যন্ত লাভপুর থানায় নির্বাচনী অশান্তির একটি মাত্র অভিযোগ জমা পড়েছে৷ সেটা বিরোধীদের এজেন্টকে বসতে না-দেওয়া নিয়েই৷ সকাল ছ'টা নাগাদ বিপ্রটিকুরি গ্রামের হাইস্কুল বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট হয়ে ঢুকতে যান সঞ্জিত্‍ ভট্টাচার্য৷ অভিযোগ, তখন তৃণমূলের লোকজন তাঁকে রাস্তায় ফেলে বাঁশ, লোহার রড দিয়ে পেটায়৷ মাথায় তিনটি সেলাই পড়েছে সঞ্জিত্‍বাবুর৷ ঘটনাস্থল ঘুরে এসে লাভপুর থানার ওসি দেবাশিস ঘোষ বলেন, 'আমরা অভিযোগ পেয়ে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছি৷ কিন্ত্ত অভিযুক্তরা পালিয়ে গিয়েছে৷ আমরা ধরার চেষ্টা করছি৷' বিপ্রটিকুরি গ্রামে গিয়ে অবশ্য দেখা হয়ে গেল তৃণমূলের নিধু দাসের সঙ্গে, মারধরে যিনি অন্যতম অভিযুক্ত৷ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আর এক অভিযুক্ত ঝুলন দাস৷ নিধুবাবু বলেন, 'উনি সাইকেলে যাচ্ছিলেন৷ ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে মাথা ফেটেছে৷' লাভপুরে অন্য অভিযোগটি সন্ধে নাগাদ জানান রামচন্দ্র ডোম নিজেই৷ তিনি বলেন, 'রাইপুর গ্রামে আমাদের মহিলা ভোটকর্মী তৃণমূলের লোকজনের হাতে বেধড়ক মারধর খেয়ে আহত৷ হাসপাতালে ভর্তি৷'

মনিরুল ইসলাম অবশ্য দুপুরে জানিয়েছিলেন, 'বিরোধীরা উল্টে রাইপুরে আমাদের পার্টি অফিস ভেঙে দিয়েছে৷ আমি শুনেই ছেলেদের শান্ত করতে ছুটে গিয়েছিলাম৷ সব জায়গায় ছেলেদের বলেছি, বিরোধীরা যেন কিছু বলার সুযোগ না পায়৷' লাভপুরের বিধায়কের পাশে দিনভর দেখা গেল রমজান আলিকে, যিনি ১৮ বছর সিপিএমের বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন৷ ছিলেন লাভপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক৷

বিধায়ক বললেন, 'লাভপুরে যা উন্নয়ন হচ্ছে, এর পর বিরোধীদের সবাই আমাদের দলে চলে আসবে৷ সামনের বিধানসভা ভোটে সিপিএম ৯৫ শতাংশ বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে না৷' বিরোধীদের পুনর্নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গ তুললে বললেন, 'এমনিতেই ৪০ হাজার লিড পাব লাভপুর থেকে, পুনর্নির্বাচন হলে মার্জিন আরও বাড়বে৷' স্ত্রী রোসুলা, ছেলে আসিফ, মেয়ে ফারহিনকে নিয়ে সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন তিনি৷ বাকি দিনটা পার্টি অফিস আর গাড়ি নিয়ে এলাকা চক্কর মেরে কাটালেন৷

লাভপুরের অনেক তৃণমূল কর্মীর অবশ্য আরও একটা অনিশ্চিত দিন কাটল৷ লাঘাটার দেবাশিস ওঝা সকালে আক্ষেপ করছিলেন, 'নির্বাচন কমিশন এত আশ্বাস দিল! অথচ, বহু বুথে তো কেন্দ্রীয় বাহিনীই দেখতে পেলাম না৷' দলের ঘরছাড়া চয়ন, রামকুমার, সুজন, হিরণদের মতো অনেকে ভোট দিতেও পারলেন না৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রত গোষ্ঠীর ভূমিকায় রাগে-ক্ষোভে 'নির্দল' হয়ে যাওয়া তৃণমূল কর্মী বিরাজুল শেখ বুথ থেকে বেরিয়ে খোলাখুলিই বললেন, 'ভোটটা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই দিয়েছি৷'

বোলপুর কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি উঠলেও তেমন অভিযোগ ছিল না কোনও দলেরই৷ বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে৷ তিনি বলেন, 'ভোট ভালোই হয়েছে৷' তবে এ জন্য সবার প্রতি তাঁর 'আই লাভ ইউ' বার্তার সাফল্য দাবি করছেন অভিনেতা জয়৷ বীরভূমের অভিনেত্রী প্রার্থী, তৃণমূলের শতাব্দী রায় বলেন, 'আমি খুশি যে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে পেরেছেন৷ বেশি ভোট পড়া শুভ সঙ্কেত৷' সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য অভিযোগ করেন, 'কেন্দ্রীয় বাহিনী বহু বুথে ছিল না৷ যেখানে ছিল, সেখানে তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে৷'

মণিরুলের লাভপুরই যদি শান্ত থাকে, তবে আর ঝামেলা খুঁজে লাভ কি?
http://eisamay.indiatimes.com/election-news/monirul-hussain-sure-of-tmc-win-at-birbhum/articleshow/34440995.cms?

No comments:

Post a Comment