Wednesday, April 30, 2014

নারায়ণগঞ্জে অপহৃত সেই ৭ জন ॥ লাশ মিলল শীতলক্ষ্যায় ০ প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনের পরিচয় জানা গেছে ০ বিকেল চারটা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ ০ পুলিশের ঘোষণা আর সাদা পোশাকে অভিযান নয়

নারায়ণগঞ্জে অপহৃত সেই ৭ জন ॥ লাশ মিলল শীতলক্ষ্যায়
০ প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনের পরিচয় জানা গেছে
০ বিকেল চারটা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
০ পুলিশের ঘোষণা আর সাদা পোশাকে অভিযান নয়
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ অপহরণের ৭৩ ঘণ্টা পর অপহৃত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ একে একে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ৩টায় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় প্রথমে প্যানেল মেয়র নজরুলের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। একই সময় নজরুলের লাশের সঙ্গে নদীর একই এলাকায় নির্দিষ্ট দূরত্বে আরও ৫টি লাশ নদীতে ভেসে ওঠে। প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের লাশ তাঁর ছোট ভাই আবদুস সালাম শনাক্ত করেছেন। শনাক্ত হওয়া অপর লাশগুলো হলো প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন এবং তাজুল ইসলামের। সন্ধ্যার বেশ পরে হাতের ব্রেসলেট ও তামার আংটি দেখে চন্দন সরকারের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ভাগ্নে প্রিয়তোষ সরকার। অপর লাশটি একই সঙ্গে অপহরণ হওয়া আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমের। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনও বাকি লাশ দু’টির পরিচয় শনাক্ত হয়নি। কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ অপহৃতদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের খবরে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় বিকেল ৪টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা সড়কের ওপর বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে সড়কটির মৌচাক থেকে সানারপাড় পর্যন্ত সড়ক একেবারেই ফাঁকা হয়ে যায়। যানজট ছড়িয়ে পড়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত।
গত রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ৩ সহযোগীকে নিয়ে নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম একটি প্রাইভেটকার যোগে বের হন। কাউন্সিলর নজরুলের গাড়ির ঠিক সামনেই নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকেই ২টি প্রাইভেটকারে থাকা ওই ৭ জন নিখোঁজ হন।
৪ সহযোগীসহ অপহৃত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং ব্যক্তিগত চালকসহ অপহৃত নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারকে উদ্ধারের দাবিতে বুধবারও দিনব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টা হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক থেকে সানারপাড় পর্যন্ত অংশে অবস্থান নিয়ে নজরুলের সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। দুপুর ২টায় নজরুলের সমর্থকরা ভোরের মধ্যে সহযোগীদেরসহ নজরুলকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে অবরুদ্ধ সড়ক থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু সাড়ে ৩টায় নজরুলসহ তাঁর সহযোগীদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের খবরে নজরুল ইসলামের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা আবারও রাস্তায় নেমে আসে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। না’গঞ্জে-আদমজী-শিমরাইল সড়কে পুলিশ ও র‌্যাব রাত ৯টার পর ১৫-২০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্র ভঙ্গ করে দিলে উক্ত সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
টানা তৃতীয় দিনের মতো আদালত বর্জন করে অপহৃত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের সন্ধান দাবিতে প্রথমে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে। পরে সকাল ১১টায় আইনজীবীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি অবরোধ করে। ওই সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসার সময় আইনজীবীদের বাধার মুখে পড়েন। পড়ে তিনি গাড়ি থেকে নেমে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান।
ওই সময় তিনি বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে আইনজীবীরা ডিআইজির আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেননি।
দুপুর ৩টায় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ৩টি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে বন্দর থানার ওসি আক্তার মোর্শেদ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে নদী থেকে একে একে ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি লাশের হাত-পা বাঁধা ছিল এবং লাশ যাতে নদীতে ডুবে থাকে সেজন্য বস্তার মধ্যে ১২ থেকে ২৪টি করে ইট দিয়ে সেগুলো লাশের দেহের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়।
প্রথমে পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এবং মুখে দাড়ি আছে এমন একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশটি নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বলে শনাক্ত করেন নিহতের ছোট ভাই আবদুস সালাম। নিহত নজরুলের হাত পিছ মোড়া করে এবং পা বাঁধা ছিল। লাশ যাতে ভেসে না ওঠে সেজন্য নজরুলের পেট ফেঁড়ে দেয়া হয়।
এরপর কাউন্সিলর নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপনের লাশ শনাক্ত করে তার ভাই রিপন। নজরুলের আরেক বন্ধু তাজুল ইসলামের লাশ শনাক্ত করে তার ভাই আনিস। অপহৃত আইনজীবী চন্দন সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশ শনাক্ত করে তার ২ ভাগ্নে আবু বকর ও সাঈদ। উদ্ধার অপর ২টি লাশের পরিচয় রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ওই ২টি লাশের একটি নজরুলের বন্ধু লিটন এবং গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের।
বন্দর থানার ওসি আক্তার মোর্শেদ বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিনগর এলাকার তীর থেকে ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যার ৪টির পরিচয় তাঁর স্বজনরা শনাক্ত করেছেন।

সাদা পোশাকে গ্রেফতার অভিযান আর নয়
বুধবার দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ এসে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, এখন থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাদা পোশাকে কোন গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করবে না। নারায়ণগঞ্জে এখন থেকে আর কোন গুমের ঘটনা ঘটবে না। পুলিশ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে কারা ৭ জনকে অপহরণ করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ইয়াছিন মিয়ার মালিকাধীন
পেট্রোল পাম্পে আগুন
নিজস্ব সংবাদদাতা সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে, কাউন্সিলর নজরুলের লাশ উদ্ধারের পর বিক্ষুব্ধ জনতা বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় মেসার্স শ্যামস ফিলিং স্টেশনে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া শ্যামস ফিলিং স্টেশনের পার্টনার। ইয়াছিন মিয়া নজরুল অপহরণ মামলার এজাহারভুক্ত ২নং আসামি।
শ্যামস ফিলিং স্টেশনের আরেক পার্টনার নাসিকের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ম-ল জানান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে ক্ষুব্ধ জনতা শ্যামস ফিলিং স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াসহ শ্যামস ফিলিং স্টেশনের ৫ জন পার্টনার রয়েছে। ডেমরা ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিক্ষুব্ধ জনতার কারণে আগুন নেভানো যাচ্ছে না।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-05-01&ni=171540

No comments:

Post a Comment