Wednesday, April 30, 2014

গুম আর খুনে স্তব্ধ নারায়ণগঞ্জ

গুম আর খুনে স্তব্ধ নারায়ণগঞ্জ

সোহরাব হাসান, নারায়ণগঞ্জ থেকে | আপডেট: ০৩:০২, মে ০১, ২০১৪সকালে ‘বন্ধন’ পরিবহনের বাসটি নারায়ণগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে থামতেই চারদিকে থমথমে ভাব। সবার চেহারায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তিন দিন আগে সাত সাতটি মানুষ শহর থেকে হারিয়ে গেছেন অথবা হারিয়ে ফেলা হয়েছে। সবার জিজ্ঞাসা—এরপর কে? এভাবেই কি নারায়ণগঞ্জ শহর চলবে? একদা সন্ত্রাসের জনপদ বলে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ কি ফের গুম, খুন আর অপহরণের চারণভূমিতে পরিণত হবে?
বাসস্ট্যান্ড থেকে সোজা চলে আসি চাষাঢ়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিসে। সেখানেও সেই একই আলোচনা —গুম হওয়া সাতজনের খোঁজ নিতে সাংবাদিক সহকর্মীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে টেলিফোন করেন। কিন্তু কেউ কোনো সুসংবাদ দিতে পারেন না।
এদিকে মঙ্গলবার থেকেই স্থানীয় প্রশাসনে তৎপরতা। ঢাকা থেকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জে এসে দফায় দফায় বৈঠক করেন অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। গতকাল দুপুরে সহকর্মী আসিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে যখন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যাই; দেখি, তিনি তখনো আলোচনা করছিলেন। বাইরে আইনজীবীদের বিক্ষোভ চলছে। তাঁদের দাবি, ‘অবিলম্বে আইনজীবী চন্দন সরকারকে ফিরিয়ে দিন।’ চন্দন সরকারের মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘আমার বাবার কী অপরাধ? কেন তাঁকে গুম করা হলো?’ এর আগে আইনজীবীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ডিআইজিকে এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘অপহূতদের উদ্ধারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও একটি সংবাদ দিলেন যে এখন থেকে আর সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করবেন না। জিজ্ঞেস করি, ‘এ সিদ্ধান্ত কি কেবল নারায়ণগঞ্জের জন্য, না সারা দেশে?’ তিনি জবাব দিলেন, সারা দেশে। এর মাধ্যমে ডিআইজি স্বীকার করে নিলেন, এতদিন সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করতেন। সেই গ্রেপ্তারকৃতদের কতজন ফিরে এসেছেন, কতজন আসেননি, সে তথ্য জানার অধিকার নিশ্চয়ই দেশবাসীর আছে।
গতকাল দুই দফায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল থামিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ মানুষ। প্রথম দফায় গত রোববার গুম হওয়া সাতজনের সন্ধানের দাবিতে, দ্বিতীয় দফায় কলাগাছিয়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সেই সাতজনের মধ্যে ছয়জনের লাশ পাওয়ার খবরে বিক্ষুব্ধ হয়ে। নদীর তীরে স্বজনদের আহাজারি আর বুকফাটা কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে আসে। শত শত নারী-পুরুষ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষমাণ ছিলেন। জীবিত মানুষ নয়, লাশের অপেক্ষা। নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী বারবার একজন সাংসদের নাম ধরে সবার কাছে প্রশ্ন রাখেন, কেন তিনি তাঁর স্বামীকে এভাবে মেরে ফেললেন?
এরপরই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক বন্ধ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট সড়কও।
কিছুদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। প্রায় প্রতিদিন শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে লাশ ভাসতে দেখা যায়। এককালের প্রাচ্যের ডান্ডি এখন গুম, খুন ও আতঙ্কের শহর। নদীতে ভাসছে লাশ আর তীরে স্বজনের আহাজারি। এমনকি অন্য এলাকায় খুন করে খুনিরা নারায়ণগঞ্জে ফেলে রেখে যায়। কেননা, এখানে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মিলে নারায়ণগঞ্জে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। যেমনটি হয়েছিল ১৯৯৬-২০০১ সালে।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই কয়েক দিন আগে গুম হন। সেই গুমের ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হলে ৩৫ ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা তাঁকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পুলিশ এখনো কোনো অপরাধীকে ধরতে পারেনি অথবা ধরতে চায়নি।
আবু বকর সিদ্দিক উদ্ধার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জবাসী কিছুটা স্বস্তিবোধ করে। কিন্তু তাদের সেই স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে একই জায়গা থেকে প্রথমে গুম হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ পাঁচজন। এর কিছুক্ষণ পর অপহরণ করে
Prothom Alo

No comments:

Post a Comment