Wednesday, April 30, 2014

প্রতিক্রিয়া বিমান বসু, মিশ্রর বুথ দখলের আশঙ্কাই সত্যি হলো ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন

প্রতিক্রিয়া বিমান বসু, মিশ্রর 
বুথ দখলের আশঙ্কাই সত্যি হলো

ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৩০শে এপ্রিল— তিন দফার ভোটগ্রহণের মধ্যে বুধবারের ভোটগ্রহণ পর্বকে সবচেয়ে খারাপ পর্ব বলে চিহ্নিত করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার সাংবাদিকদের বিমান বসু বলেছেন, যতদূর খারাপ হওয়া সম্ভব ততদূর খারাপ নির্বাচন হলো তৃতীয় দফায়। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আশঙ্কার কথা জানিয়ে আগেই যে যে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম কমিশন তা নেয়নি। ফলে সকাল থেকেই একের পর এক বুথ থেকে বামফ্রন্টের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে, বুথ দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস ভোটারদের ভোট দিতে দেয়নি। 

সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষিত হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী অপর্যাপ্ত ছিল, যা ছিল তাও বাস্তবে ঠিকমতো মোতায়েন করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের বাকি যে সব ব্যবস্থা ছিল তাও কার্যকর করা হয়নি। মাইক্রো অবজার্ভার, ভিডিও রেকর্ডিং, ওয়েব কাস্টিং ব্যবস্থা— কোনোটাই কাজ করেনি।

মিশ্রের বক্তব্য, প্রথম দু’দফার ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো সম্ভাবনা নেই বুঝে তৃতীয় দফায় তৃণমূল পরিকল্পনা করেই নেমেছিল। এদিনের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী পর্যায়গুলিতে আমাদেরও প্রস্তুত হয়ে নামতে হবে। তৃতীয় দফার নির্বাচনে কমিশনের যে সব শিথিলতা ও ছিদ্র প্রকটভাবে দেখা গেল, তার থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশনেরও উচিত পরবর্তী দফাগুলিতে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ রাখার ব্যবস্থা করা। আর জনগণকেও শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সব পক্ষেরই সতর্কতা দাবি করছে এদিনের ঘটনাবলী।

আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণকে সম্পূর্ণ প্রহসন বলে উল্লেখ করে মিশ্র বলেছেন, কিছু বুথ বাদ দিলে আরামবাগে কার্যত কোনো ভোটগ্রহণই হয়নি। নির্বাচন কমিশন সেখানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বাকি লোকসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৮২৬টি বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করা হয়েছে। এটা কম বেশি ৫শতাংশের মতো হবে। তৃণমূলের সন্ত্রাস, ভোটারদের ভোটদানে বাধা এর চেয়েও অনেক বেশি বুথেই হয়েছে। কিন্তু পুনর্নির্বাচন দাবির কিছু প্রাকশর্ত আছে। আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের মতো সেগুলি বিবেচনা করেই সুনির্দিষ্ট কিছু বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছি।

এদিন দুপুর ১টার সময় প্রাথমিকভাবে পাওয়া খবরের ভিত্তিতেই বিমান বসু সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, আগে থেকে পরিকল্পনা করে তৃণমূল বুথ দখল করেছে। প্রথম দুই দফার ভোটগ্রহণ দেখার পরে আমরা এরকম ভোটগ্রহণ প্রত্যাশা করিনি। সকাল থেকে একের পর এক বুথে হামলা করে বামফ্রন্টের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার খবর পাচ্ছি। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কমিশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল। যেখানে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, সেখানেই নির্বাচন কমিশনের উচিত পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

বসু বলেন, আমরা আগে থেকেই আশঙ্কার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করতে বলেছিলাম ২০১৩সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনের ভিত্তিতে। সেই অনুযায়ী আমরা তালিকাও দিয়েছিলাম। কিন্তু তা মানা হয়নি। ২০০৯সাল এবং ২০১১সালের নির্বাচনের ভিত্তিতে স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করলে কাজ হবে কী করে!

তবে এসব সত্ত্বেও এদিন ভোটগ্রহণ হওয়া ৯টি লোকসভা কেন্দ্রেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রে বামফ্রন্টই জয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেছেন, আক্রমণ সন্ত্রাস সত্ত্বেও বহু মানুষ ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন। ৮০শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। এরজন্য আমরা মানুষকে অভিনন্দন জানাই।

তিনি বলেন, নির্বাচন ঘোষণার পরে আমাদের ৫জন কর্মী শহীদ হয়েছেন। আজও নির্বাচনে ৩৫জনের বেশি আহত হয়েছেন। আজ ৫জন বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গলসীতে একজনের অবস্থা গুরুতর। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবকাস্টিং ব্যবস্থাসহ পদ্ধতিগুলি ব্যর্থ হলেও মিডিয়াতেই দেখা গেছে ভোটারদের হাতে কালি লাগিয়ে তাদের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন শাসক দলের কর্মীরা। মিডিয়ার সেই রিপোর্টিং দেখে কমিশন প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দিয়েছে। শ্রীরামপুর কেন্দ্রে আমাদের বামফ্রন্টের প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায় ডোমজুড়ের বাঁকড়ার একটি বুথে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরেও নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবি করেন তাহলে সেটাকে অতিরঞ্জিত ছাড়া কী বলবো!
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=55526#sthash.BALsfLiQ.dpuf

No comments:

Post a Comment