আমদানি কর ও দ্বিমুখী ভ্যাট আমদানিতে- নাগালের বাইরে বই ॥ জ্ঞানে বাধা সরিয়ে নিন
০ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে বই আমদানির ওপর কোন ধরনের ট্যাক্স থাকা উচিত নয়- অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
০ আমদানি করের ফলে মেডিক্যালের ৫০ হাজার টাকার বইয়ের দাম পড়ে দেড় লাখ টাকা
০ দেশে প্রচুর পাঠক রয়েছে কিন্তু ভাল বই পড়তে পারে না অধিক দামের কারণে
০ আমদানি করের ফলে মেডিক্যালের ৫০ হাজার টাকার বইয়ের দাম পড়ে দেড় লাখ টাকা
০ দেশে প্রচুর পাঠক রয়েছে কিন্তু ভাল বই পড়তে পারে না অধিক দামের কারণে
এম শাহজাহান ॥ প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, যেমন- সাহিত্য কিংবা চিকিৎসা শাস্ত্র যে কোন ক্ষেত্রই হোক জ্ঞানার্জনের জন্য মানসম্মত বইয়ের কোন বিকল্প নেই। বিকল্প নেই দেশে সব ধরনের বইয়ের সহজলভ্য এক্ষেত্রে অন্যতম চাহিদার জায়গা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পাঠ্য কিংবা অন্য কোন বই। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বিদেশ থেকে বই আমদানিতে কর, ভ্যাট আর শুল্কারোপের ফলে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাই যেন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের বছরে মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের জন্য সাধারণ মানুষকে একটি বিদেশী বই কিনতে গুনতে হচ্ছে বিশাল অঙ্কের অর্থ। দেশে বছরে ১০০ থেকে ১১০ কোটি টাকার বই আমদানি হচ্ছে। কর, ভ্যাট এবং বিভিন্ন ধরনের শুল্কারোপের ফলে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি খরচ। ফলে দাম বাড়ছে পাঠ্যপুস্তক, ক্ল্যাসিক, ফিকশন, নন ফিকশন, পপুলার সাইন্স এবং স্ট্যান্ডার্ড রেফারেন্সসহ সব ধরনের বইয়ের। শিক্ষাবিদরা বলছেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে বই আমদানি সম্পূর্ণ কর, ভ্যাট এবং শুল্কমুক্ত করতেই হবে। পাইরেসি বন্ধ এবং নিম্নমানের বইয়ের কবল থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা এবং সমাজে বইকে সহজলভ্য করতে বই আমদানি কর মুক্ত করা জরুরী।
‘ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়া’ চিকিৎসা বিদ্যার একটি প্রয়োজনীয় বই। চিকিৎসা বিদ্যা ও ওষুধপত্র নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এই বইটির সঙ্গে পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০ দেশের শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়া পড়ে চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন করছেন। তৈরি করছেন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। ব্রিটেনের শিক্ষার্থীদের কাছে বইটি সহজলভ্য হলেও বাংলাদেশের জন্য তা দুষ্প্রাপ্য। আমদানিকৃত এই বইটির সর্বশেষ সংস্করণের এক সেট মূলকপি পেতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে। কিন্তু ভ্যাট ও ট্যাক্সের বালাই না থাকলে এই বইটি ৫০ হাজার টাকা কমে বিক্রি হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ তো গেল মেডিক্যাল বইয়ের কথা। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ, এমবিএ, আইন এবং ইংলিশ মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বইয়ের দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আমদানিকৃত এসব বইয়ের দাম কমাতে হলে আসন্ন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটেই বইয়ের ওপর থেকে সব ধরনের কর, ভ্যাট এবং শুল্ক প্রত্যাহার করে নিতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বই আমদানির ওপর কোন ধরনের ট্যাক্স থাকা উচিত নয়। পাঠ্যপুস্তকসহ সব ধরনের বই করমুক্ত হতে হবে। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে আগে বই সহজলভ্য করা উচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে বইয়ের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়। জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই এবং ডিগ্রী পর্যন্ত বেতন মওকুফ করে দিয়েছে সরকার। এতকিছু করা গেলে আমদানির ওপর কর ও ভ্যাট কেন? তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারে বই আমদানি করমুক্ত করার পাশাপাশি উপকরণটি আরও সহজলভ্য করে দিতে হবে।
জানা গেছে, ভ্যাট ও করারোপের কারণে দেশে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আমদানিকৃত বই। দেশে দুইভাবে বই আমদানি হয়। এর একটি হচ্ছে সরকারী পর্যায়ে বই আমদানি। দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে বই আমদানি করে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া আমদানিকারকরা বাণিজ্যিক ভাবে বই আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করছে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (আমদানি) সূত্র জানায়, এটির কোন সঠিক তথ্য তাদের কাছে নেই। যে কেউ বই আমদানি করতে পারে। তার পরও আমদানিকারকদের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে কাছাকাটি একটি ধারণা দেন সংগঠনটির সাবেক সদস্য কেএম নূরুল ইসলাম আজাদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো হয় এ রকম বইয়ের ৯০ শতাংশ আমদানি হচ্ছে।
টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৩৫-৪০ কোটি টাকা। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিবিএ, এমবিএ, আইন, ডিকশনারি এবং রেফারেন্স বই আসছে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকার। এছাড়া পশ্চিম বঙ্গ থেকে বিভিন্ন লেখকের বই আসছে। যার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। বিদেশী জার্নাল, গবেষণা, পপুলার সাইন্সসহ বিভিন্ন ধরনের বই আসছে ১০-১৫ কোটি টাকার। এভাবে সারা বছরে প্রায় ১০০-১১০ থেকে কোটি টাকার বই আমদানি হচ্ছে। এসব বই আমদানিতে ২০-২৫ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। তিনি বলেন, বই আমদানিতে সব ধরনের কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের শিক্ষা বিস্তারে বইয়ের দাম না বাড়িয়ে বরং কমাতে হবে।
জানা গেছে, আমদানির ওপর উচ্চহারের ট্যাক্স, ভ্যাট ও শুল্কারোপের কারণে দেশে বইয়ের দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন বাজেটে আমদানিকৃত বইয়ের ওপর থেকে সব ধরনের ট্যাক্স, ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত এক দশকে শিক্ষায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। শিক্ষিত মানেই এখন আর স্বাক্ষর জ্ঞান নয়। চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাহিত্যসহ শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইংরেজী মাধ্যমের ক্ষুদে ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বলার ঢং-ই বলে দেয় আমরাও জানি। অবাক হয়ে বিশ্ব দেখছে এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এই শিক্ষা অর্জনের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে বই। এছাড়া গবেষণা, জ্ঞানার্জন এবং চলতি বিশ্বের খুঁটিনাটি জানতেও বইয়ের বিকল্প কিছু নেই। তবে সেই বই এখন আর সহজে মিলছে না।
আমদানিকৃত বইতে
যেভাবে কর ও ভ্যাট
আদায় করা হয়
পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে কর ও ভ্যাট আদায় না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোন্ বইটি পাঠ্যপুস্তক আর কোন্টি তা নয়, সেটি নির্ধারণ করতে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় কাস্টমস কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় পাঠ্যপুস্তক থেকেও কর ও ভ্যাট আদায় করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, আমদানি করা বইয়ের ওপর ৩৫ শতাংশ মোট ভ্যাট, ১৫ শতাংশ ডিরেক্ট ভ্যাট, ৩ শতাংশ এ্যাডভান্স ইনকাম ভ্যাট, ৪ শতাংশ উন্নয়ন ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানিকারকরা কোন পথ খুঁজে না পেয়ে চড়ামূল্যে বাজারে এসব বই বিক্রি করছেন। এতে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমদানি করা বইগুলোর ওপর মাত্রাতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের কারণে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, বাংলাবাজার ও নয়াপল্টনের বইয়ের মার্কেটসহ সারাদেশের বইয়ের দোকানগুলো পাইরেসি করা বইয়ে ভরে গেছে। নীলক্ষেতের সব বইয়ের দোকানে শেলফভর্তি পাইরেটেড বই অবাধে চড়ামূল্যে বিক্রি হচ্ছে। চড়ামূল্যের সুযোগে একদল আত্মস্বীকৃত আমদানিকারক বিদেশী ও দেশী বই পাইরেসি করার মতো অনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছেন। যা ভয়াবহ পরিস্থিতির পথ সুগম করছে। এ কারণে কোন নতুন উদ্যোক্তা বই প্রকাশনার কাজে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
অপরদিকে পাইরেসি করা বইয়ের চড়ামূল্য রাখছেন এসব ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে নিউমার্কেটের জিনাত বুক সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএএস মোহাম্মদ ফয়সাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত বইয়ের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের কারণে পাইরেসি বেশি হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে বই আমদানির ওপর থেকে কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে বইয়ের দাম কমে আসবে। তখন বিশ্বের নামকরা প্রকাশকরা বাংলাদেশে মূল বই বিক্রি করতে এগিয়ে আসবেন। ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বই আমদানি সহজ করায় ভারতে পাইরেসি তেমন হয় না। ফলে ওখানে অরিজিনাল বইয়ের বিশাল মার্কেট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও প্রচুর পাঠক রয়েছে। সরকার এ দিকটায় নজর দিলে পাইরেসি বন্ধ হবে, অরিজিনাল বইয়ের বাজার সৃষ্টি হবে। কম দামে শিক্ষার্থীরা বই কিনতে পারবেন। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে কর ও ভ্যাট রাখা হয়নি। কিন্তু এ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট দিতে হচ্ছে। আবার বইটি বিক্রির সময় ভ্যাট কেটে নেয়া হচ্ছে।
এভাবে কর ও ভ্যাট মওকুফ করার পরও দুবার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি নিয়ে ইতোপূর্বে বই আমদানিকারকরা বহুবার বসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে এবার আসছে বাজেটে আমদানির ওপর কর ও ভ্যাট না কমালে বইয়ের দাম আরও বাড়বে। নীলক্ষেতের ক্যাপিটাল বুক সেন্টারের ছাপাধিকারী মোহাম্মদ এএইচ আয়নাল জনকণ্ঠকে বলেন, বইয়ের ওপর ট্যাক্স থাকার কারণেই পাইরেসি হচ্ছে। নিম্নমানের এসব বই পড়ে চোখের অসুখে ভুগছে। এটা বন্ধ করতে হলে বইয়ের দাম কমাতে হবে। আর সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমদানি করা বইয়ের ওপর শুল্ক এত বেশি যে ১ লাখ টাকার বই কিনলে ৩৫-৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। তাই কাস্টমারদের পক্ষে মূল বই কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বইয়ের বড়
মার্কেট
ভারত
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (আমদানি) জানিয়েছে, দেশের ৯৭ ভাগ বই ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বাকি ৩ শতাংশ বই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ বিদেশী বই ইউএসএ, ইউকে ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে ভারত। মেডিক্যাল বই, ডিকশনারি ও আইনের বই সবচেয়ে বেশি করে যুক্তরাজ্য। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং বই জার্মান এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি করা হয়। ভারত এসব দেশে থেকে বই সংগ্রহ করে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রফতানি করে। এছাড়া ভারতীয় লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখা উপন্যাস, কবিতা ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন বাংলাদেশ আমদানি করছে। অভিযোগ রয়েছে, কর ও ট্যাক্স আরোপ করায় এসব বই পাইরেসি করে বিক্রি করা হচ্ছে এবং দামও বেড়ে যাচ্ছে।
সরকারী সিদ্ধান্তের
অপেক্ষায়
এনবিআর
পাঠ্যপুস্তক বই আমদানির ওপর কর ও ভ্যাট নেয়া হচ্ছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এটা নেয়ার নিয়ম নেই। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইংলিশ মিডিয়ামসহ সকল ধরনের পাঠ্যপুস্তক আমদানি শুল্ক ফ্রি করা হয়েছে। তবে অনেক সময় কোনটা পাঠ্যপুস্তক আর কোনটা নয়, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারে বই আমদানি কর ও ভ্যাটমুক্ত করতে হলে সরকারী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। বাজেটে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলে এনবিআর তা বাস্তবায়ন করবে।
জানা গেছে, দেশে ৪০-৫০ জন বিদেশী বইয়ের আমদানিকারক আছেন। যাঁরা দিন দিন বই আমদানিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এর কারণ হিসেবে অধিক শুল্ক ও পাইরেসিকে দায়ী করেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া এমন কোন দেশ নেই, যেখানে আমদানি করা বইয়ের ওপর বেশি হারে শুল্কারোপ করা হয়। ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালের গ্রেড ফাইভে ভারতীয় যে গণিত বইটির দাম ৮০০ টাকা। তার ফটোকপি বই বিক্রি হয় ৩৫০-৪০০ টাকায়। একই শ্রেণীর জাতীয় পাঠক্রমের ইংরেজী ভার্সনে যে গণিত বইটি পড়ানো হয়, সেটির দাম পড়ে ৩৮০-৪০০ টাকা। আর ফটোকপি পাওয়া যায় ১৫০ টাকায়। এছাড়া চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য পাঠ্য ও রেফারেন্স বইয়ের চাহিদা মেটে আমদানি করা বইয়ে। এমনও বই আছে, যার দাম হলো মেসে বা হলে থাকা একজন শিক্ষার্থীর সারা মাসের খরচের দ্বিগুণ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত দাম দিয়ে বিদেশী বই কেনা সম্ভব হয় না। অনেকের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফটোকপিই ভরসা। রাজধানীর নীলক্ষেতে ফটোকপি করা বই আসল বইয়ের আদলে বাঁধাই করে বিক্রি করা হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকতার হোসেন বলেন, আমদানি করা বইয়ের দাম এত বেশি যে, ফটোকপি কিংবা পাইরেসি বই-ই তাদের ভরসা। তিনি বলেন, ফটোকপি ও পাইরেসি বই পড়তে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমদানি করা বইয়ের দাম কমাতে হবে। অভিভাবকরা বলছেন, ছাত্রছাত্রী বা পাঠকের কাছে আসল বা মূল বইয়ের আলাদা একটা আবেদন থাকে। কিন্তু অস্বাভাবিক দামের কারণে তাঁরা ফটোকপি বা নকল বই কিনে কাজ চালিয়ে নেন। আমদানিতে কর ও শুল্ক কমানো হলে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাম মূল্যে বই পড়তে পারবে।
‘ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়া’ চিকিৎসা বিদ্যার একটি প্রয়োজনীয় বই। চিকিৎসা বিদ্যা ও ওষুধপত্র নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এই বইটির সঙ্গে পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০ দেশের শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়া পড়ে চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন করছেন। তৈরি করছেন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। ব্রিটেনের শিক্ষার্থীদের কাছে বইটি সহজলভ্য হলেও বাংলাদেশের জন্য তা দুষ্প্রাপ্য। আমদানিকৃত এই বইটির সর্বশেষ সংস্করণের এক সেট মূলকপি পেতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে। কিন্তু ভ্যাট ও ট্যাক্সের বালাই না থাকলে এই বইটি ৫০ হাজার টাকা কমে বিক্রি হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ তো গেল মেডিক্যাল বইয়ের কথা। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ, এমবিএ, আইন এবং ইংলিশ মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বইয়ের দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আমদানিকৃত এসব বইয়ের দাম কমাতে হলে আসন্ন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটেই বইয়ের ওপর থেকে সব ধরনের কর, ভ্যাট এবং শুল্ক প্রত্যাহার করে নিতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বই আমদানির ওপর কোন ধরনের ট্যাক্স থাকা উচিত নয়। পাঠ্যপুস্তকসহ সব ধরনের বই করমুক্ত হতে হবে। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে আগে বই সহজলভ্য করা উচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে বইয়ের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়। জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই এবং ডিগ্রী পর্যন্ত বেতন মওকুফ করে দিয়েছে সরকার। এতকিছু করা গেলে আমদানির ওপর কর ও ভ্যাট কেন? তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারে বই আমদানি করমুক্ত করার পাশাপাশি উপকরণটি আরও সহজলভ্য করে দিতে হবে।
জানা গেছে, ভ্যাট ও করারোপের কারণে দেশে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আমদানিকৃত বই। দেশে দুইভাবে বই আমদানি হয়। এর একটি হচ্ছে সরকারী পর্যায়ে বই আমদানি। দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে বই আমদানি করে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া আমদানিকারকরা বাণিজ্যিক ভাবে বই আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করছে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (আমদানি) সূত্র জানায়, এটির কোন সঠিক তথ্য তাদের কাছে নেই। যে কেউ বই আমদানি করতে পারে। তার পরও আমদানিকারকদের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে কাছাকাটি একটি ধারণা দেন সংগঠনটির সাবেক সদস্য কেএম নূরুল ইসলাম আজাদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো হয় এ রকম বইয়ের ৯০ শতাংশ আমদানি হচ্ছে।
টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৩৫-৪০ কোটি টাকা। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিবিএ, এমবিএ, আইন, ডিকশনারি এবং রেফারেন্স বই আসছে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকার। এছাড়া পশ্চিম বঙ্গ থেকে বিভিন্ন লেখকের বই আসছে। যার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। বিদেশী জার্নাল, গবেষণা, পপুলার সাইন্সসহ বিভিন্ন ধরনের বই আসছে ১০-১৫ কোটি টাকার। এভাবে সারা বছরে প্রায় ১০০-১১০ থেকে কোটি টাকার বই আমদানি হচ্ছে। এসব বই আমদানিতে ২০-২৫ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। তিনি বলেন, বই আমদানিতে সব ধরনের কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের শিক্ষা বিস্তারে বইয়ের দাম না বাড়িয়ে বরং কমাতে হবে।
জানা গেছে, আমদানির ওপর উচ্চহারের ট্যাক্স, ভ্যাট ও শুল্কারোপের কারণে দেশে বইয়ের দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন বাজেটে আমদানিকৃত বইয়ের ওপর থেকে সব ধরনের ট্যাক্স, ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত এক দশকে শিক্ষায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। শিক্ষিত মানেই এখন আর স্বাক্ষর জ্ঞান নয়। চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাহিত্যসহ শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইংরেজী মাধ্যমের ক্ষুদে ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বলার ঢং-ই বলে দেয় আমরাও জানি। অবাক হয়ে বিশ্ব দেখছে এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এই শিক্ষা অর্জনের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে বই। এছাড়া গবেষণা, জ্ঞানার্জন এবং চলতি বিশ্বের খুঁটিনাটি জানতেও বইয়ের বিকল্প কিছু নেই। তবে সেই বই এখন আর সহজে মিলছে না।
আমদানিকৃত বইতে
যেভাবে কর ও ভ্যাট
আদায় করা হয়
পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে কর ও ভ্যাট আদায় না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোন্ বইটি পাঠ্যপুস্তক আর কোন্টি তা নয়, সেটি নির্ধারণ করতে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় কাস্টমস কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় পাঠ্যপুস্তক থেকেও কর ও ভ্যাট আদায় করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, আমদানি করা বইয়ের ওপর ৩৫ শতাংশ মোট ভ্যাট, ১৫ শতাংশ ডিরেক্ট ভ্যাট, ৩ শতাংশ এ্যাডভান্স ইনকাম ভ্যাট, ৪ শতাংশ উন্নয়ন ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানিকারকরা কোন পথ খুঁজে না পেয়ে চড়ামূল্যে বাজারে এসব বই বিক্রি করছেন। এতে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমদানি করা বইগুলোর ওপর মাত্রাতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের কারণে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, বাংলাবাজার ও নয়াপল্টনের বইয়ের মার্কেটসহ সারাদেশের বইয়ের দোকানগুলো পাইরেসি করা বইয়ে ভরে গেছে। নীলক্ষেতের সব বইয়ের দোকানে শেলফভর্তি পাইরেটেড বই অবাধে চড়ামূল্যে বিক্রি হচ্ছে। চড়ামূল্যের সুযোগে একদল আত্মস্বীকৃত আমদানিকারক বিদেশী ও দেশী বই পাইরেসি করার মতো অনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছেন। যা ভয়াবহ পরিস্থিতির পথ সুগম করছে। এ কারণে কোন নতুন উদ্যোক্তা বই প্রকাশনার কাজে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
অপরদিকে পাইরেসি করা বইয়ের চড়ামূল্য রাখছেন এসব ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে নিউমার্কেটের জিনাত বুক সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএএস মোহাম্মদ ফয়সাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত বইয়ের ওপর কর ও ভ্যাট আরোপের কারণে পাইরেসি বেশি হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে বই আমদানির ওপর থেকে কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে বইয়ের দাম কমে আসবে। তখন বিশ্বের নামকরা প্রকাশকরা বাংলাদেশে মূল বই বিক্রি করতে এগিয়ে আসবেন। ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বই আমদানি সহজ করায় ভারতে পাইরেসি তেমন হয় না। ফলে ওখানে অরিজিনাল বইয়ের বিশাল মার্কেট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও প্রচুর পাঠক রয়েছে। সরকার এ দিকটায় নজর দিলে পাইরেসি বন্ধ হবে, অরিজিনাল বইয়ের বাজার সৃষ্টি হবে। কম দামে শিক্ষার্থীরা বই কিনতে পারবেন। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে কর ও ভ্যাট রাখা হয়নি। কিন্তু এ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট দিতে হচ্ছে। আবার বইটি বিক্রির সময় ভ্যাট কেটে নেয়া হচ্ছে।
এভাবে কর ও ভ্যাট মওকুফ করার পরও দুবার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি নিয়ে ইতোপূর্বে বই আমদানিকারকরা বহুবার বসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে এবার আসছে বাজেটে আমদানির ওপর কর ও ভ্যাট না কমালে বইয়ের দাম আরও বাড়বে। নীলক্ষেতের ক্যাপিটাল বুক সেন্টারের ছাপাধিকারী মোহাম্মদ এএইচ আয়নাল জনকণ্ঠকে বলেন, বইয়ের ওপর ট্যাক্স থাকার কারণেই পাইরেসি হচ্ছে। নিম্নমানের এসব বই পড়ে চোখের অসুখে ভুগছে। এটা বন্ধ করতে হলে বইয়ের দাম কমাতে হবে। আর সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমদানি করা বইয়ের ওপর শুল্ক এত বেশি যে ১ লাখ টাকার বই কিনলে ৩৫-৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। তাই কাস্টমারদের পক্ষে মূল বই কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বইয়ের বড়
মার্কেট
ভারত
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (আমদানি) জানিয়েছে, দেশের ৯৭ ভাগ বই ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বাকি ৩ শতাংশ বই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ বিদেশী বই ইউএসএ, ইউকে ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে ভারত। মেডিক্যাল বই, ডিকশনারি ও আইনের বই সবচেয়ে বেশি করে যুক্তরাজ্য। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং বই জার্মান এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি করা হয়। ভারত এসব দেশে থেকে বই সংগ্রহ করে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রফতানি করে। এছাড়া ভারতীয় লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখা উপন্যাস, কবিতা ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন বাংলাদেশ আমদানি করছে। অভিযোগ রয়েছে, কর ও ট্যাক্স আরোপ করায় এসব বই পাইরেসি করে বিক্রি করা হচ্ছে এবং দামও বেড়ে যাচ্ছে।
সরকারী সিদ্ধান্তের
অপেক্ষায়
এনবিআর
পাঠ্যপুস্তক বই আমদানির ওপর কর ও ভ্যাট নেয়া হচ্ছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এটা নেয়ার নিয়ম নেই। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইংলিশ মিডিয়ামসহ সকল ধরনের পাঠ্যপুস্তক আমদানি শুল্ক ফ্রি করা হয়েছে। তবে অনেক সময় কোনটা পাঠ্যপুস্তক আর কোনটা নয়, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারে বই আমদানি কর ও ভ্যাটমুক্ত করতে হলে সরকারী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। বাজেটে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলে এনবিআর তা বাস্তবায়ন করবে।
জানা গেছে, দেশে ৪০-৫০ জন বিদেশী বইয়ের আমদানিকারক আছেন। যাঁরা দিন দিন বই আমদানিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এর কারণ হিসেবে অধিক শুল্ক ও পাইরেসিকে দায়ী করেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া এমন কোন দেশ নেই, যেখানে আমদানি করা বইয়ের ওপর বেশি হারে শুল্কারোপ করা হয়। ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালের গ্রেড ফাইভে ভারতীয় যে গণিত বইটির দাম ৮০০ টাকা। তার ফটোকপি বই বিক্রি হয় ৩৫০-৪০০ টাকায়। একই শ্রেণীর জাতীয় পাঠক্রমের ইংরেজী ভার্সনে যে গণিত বইটি পড়ানো হয়, সেটির দাম পড়ে ৩৮০-৪০০ টাকা। আর ফটোকপি পাওয়া যায় ১৫০ টাকায়। এছাড়া চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য পাঠ্য ও রেফারেন্স বইয়ের চাহিদা মেটে আমদানি করা বইয়ে। এমনও বই আছে, যার দাম হলো মেসে বা হলে থাকা একজন শিক্ষার্থীর সারা মাসের খরচের দ্বিগুণ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত দাম দিয়ে বিদেশী বই কেনা সম্ভব হয় না। অনেকের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফটোকপিই ভরসা। রাজধানীর নীলক্ষেতে ফটোকপি করা বই আসল বইয়ের আদলে বাঁধাই করে বিক্রি করা হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকতার হোসেন বলেন, আমদানি করা বইয়ের দাম এত বেশি যে, ফটোকপি কিংবা পাইরেসি বই-ই তাদের ভরসা। তিনি বলেন, ফটোকপি ও পাইরেসি বই পড়তে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমদানি করা বইয়ের দাম কমাতে হবে। অভিভাবকরা বলছেন, ছাত্রছাত্রী বা পাঠকের কাছে আসল বা মূল বইয়ের আলাদা একটা আবেদন থাকে। কিন্তু অস্বাভাবিক দামের কারণে তাঁরা ফটোকপি বা নকল বই কিনে কাজ চালিয়ে নেন। আমদানিতে কর ও শুল্ক কমানো হলে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাম মূল্যে বই পড়তে পারবে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment