ভারতের নির্বাচন ২০১৪—ভোটের হাওয়া: রায়বেরিলি
‘মোদি-হাওয়ায় গাছের পাতাও নড়বে না’
| আপডেট: ০২:৫১, এপ্রিল ২৯, ২০১৪
এ যেন সেই নাকের বদলে নরুন পাওয়ার মতো। একেবারে শেষ বেলায় রায়বেরিলিতে বিজেপির টিকিট পেয়ে যিনি সোনিয়া গান্ধীর ‘রাতের ঘুম ছুটিয়ে দেব’ বলে হুংকার ছেড়েছেন, সেই অসম সাহসী আইনজীবী অজয় আগরওয়ালের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অঞ্জু সিংয়ের প্রচারযান চোখে পড়ল! একটি ছোট্ট ভ্যান সুন্দরী অঞ্জুর হাতজোড় করা ছবি দিয়ে মোড়া। তারই এক ধারে দাঁড়িয়ে ওই ঠাটা রোদে ঠোঁটে মেঘবালিকার হাসি ছড়িয়ে রেখে ভোট চাইছেন যিনি, তিনিই তো অঞ্জু? কোন আশায় এবং কিসের ভরসায় সোনিয়াকে ছেড়ে মানুষ তাঁকে ভোট দেবেন, তা জানার আগ্রহ নিয়ে রাস্তার ওধার থেকে এগোতে না এগোতেই ভ্যানটা রাস্তার বাঁক ঘুরে এগিয়ে গেল। অগত্যা আবার অজয় আগরওয়ালের তল্লাশি।
কিন্তু অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর জানা গেল, অজয় আগরওয়াল সাতসকালে প্রচারে বেরিয়েছেন এবং প্রচার শেষে জরুরি কাজে লক্ষৌ যাবেন। সোনিয়ার রাতের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়ার হুংকার ছাড়ার পেছনে কার্যকারণ কী কী জানার চেষ্টা অতঃপর করতেই হলো। যা জানা গেল, তা পরপর সাজালে এমন দাঁড়ায়, ১) অজয় শুরু থেকেই ঘোর কংগ্রেসবিরোধী। ২) বোফর্স কামান কেলেঙ্কারিতে রাজীব গান্ধী যখন পর্যুদস্ত, তখন তিনি জনস্বার্থের মামলা করেছিলেন, মামলা করেন কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারি নিয়েও। ৩) কংগ্রেস কোনোভাবে বিপাকে পড়লেই অজয় নড়েচড়ে বসেন ও মামলা ঠোকেন। এবং ৪) এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর কংগ্রেসবিরোধী চরিত্রকে বিজেপির কাছে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন।
কিন্তু অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর জানা গেল, অজয় আগরওয়াল সাতসকালে প্রচারে বেরিয়েছেন এবং প্রচার শেষে জরুরি কাজে লক্ষৌ যাবেন। সোনিয়ার রাতের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়ার হুংকার ছাড়ার পেছনে কার্যকারণ কী কী জানার চেষ্টা অতঃপর করতেই হলো। যা জানা গেল, তা পরপর সাজালে এমন দাঁড়ায়, ১) অজয় শুরু থেকেই ঘোর কংগ্রেসবিরোধী। ২) বোফর্স কামান কেলেঙ্কারিতে রাজীব গান্ধী যখন পর্যুদস্ত, তখন তিনি জনস্বার্থের মামলা করেছিলেন, মামলা করেন কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারি নিয়েও। ৩) কংগ্রেস কোনোভাবে বিপাকে পড়লেই অজয় নড়েচড়ে বসেন ও মামলা ঠোকেন। এবং ৪) এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর কংগ্রেসবিরোধী চরিত্রকে বিজেপির কাছে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন।
সোনিয়ার বিরুদ্ধে কাকে প্রার্থী করা যায়, সেই চিন্তায় বিজেপি যখন জেরবার, তখনই অজয়ের মুখটা ভেসে ওঠে এবং তাঁর ভাগ্যেই শিকে ছেঁড়ে। বিজেপির সমর্থকদের কাছ থেকে জানা গেল, অজয় নাকি এতেই বেজায় খুশি। কারণ, দলের এই একটি সিদ্ধান্তই তাঁর পরিচিতির বহরটা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সোনিয়ার হাতে শহীদ হয়ে তিনি বিখ্যাত হবেন। তাঁর লক্ষ্য? বিজেপির কর্মীরা জানালেন, ‘লিখে রাখুন, সোনিয়াকে জিততে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে। অজয় আগরওয়াল শেষ রাউন্ডের গণনা পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকবেন।’
মাথার ঘাম সোনিয়া কতটা পায়ে ফেলছেন, তা জানতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হলো। ২ এপ্রিল সোনিয়া রায়বেরিলি এসেছিলেন সপরিবারে, মনোনয়নপত্র জমা দিতে। তার পর থেকে হিল্লিদিল্লি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলের অন্যদের জন্য, রায়বেরিলিকে বেবাক ভুলে। শেষ পর্যন্ত মেয়ে প্রিয়াঙ্কার কথায় এ মাসের ২৬ তারিখে শেষবারের জন্য রায়বেরিলি ছুঁলেন স্রেফ তিনি যে অসুস্থ নন, তা প্রমাণ করতে। কেন?
কারণটা ব্যাখ্যা করতে বেশ রেগেই গেলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সহসভাপতি গণেশ শঙ্কর পান্ডে। ‘বিজেপির ওই ছেলেটা বলে বেড়াচ্ছে, সোনিয়া গান্ধী নাকি বেজায় অসুস্থ, সে জন্যই রায়বেরিলির দিকে তাঁর নজর নেই, উনি নাকি বাড়ি ছেড়ে বেরই হচ্ছেন না! আরে, এই করে কি জামানত ঠেকানো যায়? ভোট চুকলে বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল।’
সোনিয়ার মাথার ঘাম পায়ে ফেলার প্রসঙ্গটা পাড়তে শিবশরণ মিশ্র আবার হেসে কুটিকুটি। শহরে কংগ্রেসের সদর দপ্তরের কাছেই তাঁর স্টেশনারি দোকান। সেখানে ফটোকপির বন্দোবস্তও আছে। শিবশরণ হাসতে হাসতেই বললেন, ‘আগেরবার বিজেপি কত ভোট পেয়েছিল জানেন? মাত্র ১৬ হাজার! সেবার দ্বিতীয় হয়েছিল বহুজন সমাজ পার্টি। এবার মোদির হাওয়া উত্তর প্রদেশে আছে ঠিকই। কিন্তু সেই বাতাস রায়বেরিলির গাছের পাতাও নড়াতে পারেনি। পারবেও না।’
না পারার কারণগুলোও জানা গেল ক্রমে ক্রমে। রেলের একটা কোচ ও চাকা তৈরির কারখানা প্রায় শেষ এই রায়বেরিলিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখনই সেই চাকা প্রথম গড়ায়। এই দুই কারখানা এই তল্লাটের অর্থনীতির ছবিটা যে পাল্টে দেবে, তা মনেপ্রাণে অনুভব করেন সবাই। পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জে এআইএমএসের ধাঁচে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়া নিয়ে মমতার সঙ্গে দীপা দাশমুন্সির খুনসুটি চললেও এখানে ওই নোংরা রাজনীতির কচকচানি নেই। এটা হয়ে গেলে ৮০ কিলোমিটার দূরে লক্ষৌতেও রায়বেরিলির মানুষদের যেতে হবে না। প্রিয়াঙ্কা নিজেই জানালেন ‘স্পাইস পার্ক’ (মসলা বিক্রির কেন্দ্র) গড়ার সিদ্ধান্তের কথা। বললেন, ‘এটা হয়ে গেলে আপনাদের নামমাত্র দামে মসলা বিক্রি করতে হবে না। পাঁচ গুণ দাম পাবেন।’ ইন্ডিয়ান টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রির হাল ফেরাতে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া, আরও তিনটি বিষয় রয়েছে, যা সোনিয়ার ঘুম নিশ্চিত করতে যথেষ্ট। ১), প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, ২), দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা দুই লাখেরও বেশি মানুষকে কার্ড (বিপিএল) করে দেওয়া এবং ৩) সেচের জন্য প্রতিটি খাল সংস্কার করে তাতে পানি এনে দেওয়া, যাতে উন্নাও থেকে পিলিভিট পর্যন্ত বিপুল মানুষ উপকৃত হবেন।
কিন্তু এগুলোই শুধু নয়, রায়বেরিলির মানুষের জন্য তাঁর মায়ের ভাবনা কতখানি, প্রিয়াঙ্কা নিজেই তার বর্ণনা দিচ্ছেন বিভিন্ন সভায়। বলছেন, ‘গরিব মানুষদের চিকিৎসার জন্য একটা ট্রেন আছে। তার নাম “লাইফ লাইন এক্সপ্রেস”। এই ট্রেনটা রায়বেরিলিতে আনা হয়, যাতে আপনাদের চিকিৎসার জন্য বাইরে না যেতে হয়। এই আসনের ৫২ হাজার মানুষের চিকিৎসা এত বছরে এই ট্রেনে করা হয়েছে। দেড় হাজার হার্টের রোগীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে। অবকাঠামোর কী উন্নতি হয়েছে, সে তো দেখাই যাচ্ছে। কত উড়ালসড়ক, কত রাস্তা হয়েছে আপনাদের তা বলার দরকার নেই। কিন্তু একটা কথা বলা দরকার। পানিতে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইড রুখতে আমার মা রায়বেরিলির প্রতিটি ব্লকে আরও প্ল্যান্ট লাগিয়েছেন, যাতে আপনারা বিশুদ্ধ পানি খেতে পারেন। যাতে পানিবাহিত দুরারোগ্য অসুখে না পড়তে হয়।’
শুধু তা-ই নয়, এবার সোনিয়ার প্রতিশ্রুতি, রায়বেরিলিকে খুব শিগগির সেরা ‘এডুকেশনাল হাব’-এ পরিণত করে দেবেন। কেন্দ্রটা ঘুরলেই এসব নিয়ে চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন হয়ে যাবে।
অজয় আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা না হয়ে বরং একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। রায়বেরিলিতে সোনিয়া গান্ধীর রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো একটা কারণও তিনি দেখাতে পারতেন না। অযথা সময় নষ্ট হতো।
No comments:
Post a Comment