Wednesday, April 30, 2014

মমতার ছবি-হিসেব নিয়ে তুঙ্গে তরজা

মমতার ছবি-হিসেব নিয়ে তুঙ্গে তরজা

KUNAL-10-(2)
এই সময়: শ্রীরামপুরে নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় কে কিনল, সেই প্রশ্ন তোলার পর তাঁর ছবি-বিতর্ক ক্রমশই জটিল হচ্ছে৷ সোমবার সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন দাবি করেছিলেন, তিনি টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কেনেননি৷ ছবি কে কিনেছেন, তাও তিনি জানেন না৷ মঙ্গলবার সুদীপ্তের সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ বিধাননগর আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, 'আমার সঙ্গে জেলে সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে ছবি বিক্রি নিয়ে যে কথা হয়েছিল, তার সঙ্গে তাঁর ওই মন্তব্যের কোনও মিল নেই৷' তবে দু'জনের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, তা কুণালবাবু জানাতে চাননি৷ এদিনও বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কে বা কারা কিনলেন, তা প্রকাশ্যে জানানোর দাবি করেছেন৷ শাসক তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা কিন্ত্ত সেই দাবির প্রসঙ্গ এড়িয়ে ফের বলেছেন, 'বিরোধীরা ভোটের মুখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে নেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুত্‍সা রটনায় নেমেছে৷'

এর মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস তাদের যে আয়কর রিটার্ন দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দলনেত্রীর ছবি বিক্রি তাদের দলের আয়ের একটা বড় উত্‍স৷ দলের এমপি, এমএলএ-রা যে চাঁদা দেন, তার থেকে অনেক বেশি টাকা আসে মমতার ছবি বিক্রি বাবদ৷ ২০১২ এবং ২১১৩ সালে পেশ করা আয়কর রিটার্নে তৃণমূল এমপি, এমএলএ-দের চাঁদা বাবদ ২০১১ এবং ২০১২ অর্থবর্ষে দলের আয় হয়েছে যেখানে মাত্র ৭৬ লক্ষ ২২ হাজার টাকা, সেখানে শুধু নেত্রীর ছবি বিক্রি করে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা ৯০ হাজার টাকা৷

এদিকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব আবার এদিনই সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস এবং তার মুখপত্র জাগো বাংলার আয়কর রিটার্নে নেত্রীর ছবি বিক্রি বাবদ আয় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে৷ তাঁর প্রশ্ন, বাকি ছবি তবে কারা কিনলেন? তিনি বলেন, '২০০৪ সাল থেকে মমতার ছবি বিক্রি শুরু হয়৷ পরে ক্রমশই তাঁর ছবির 'চাহিদা' বাড়তে থাকে৷ এই মহিলা কোনও দিন সত্য কথা বলেন না৷ এটা তাঁর ডিএনএ-গত সমস্যা৷' এই গৌতমবাবুই গত বছর প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কে বা কারা কিনলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ তাঁর প্রশ্ন ছিল, উনি কি পিকাসো না লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি যে, তাঁর ছবি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়?

লোকসভা ভোট চলাকালীন ফের মমতার ছবি বিক্রির বিতর্ক সামনে চলে আসায় শাসক দল খুবই বিব্রত৷ সোমবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল, জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছিলেন, তাঁদের আয়ের কিছুই লুকানোর নেই৷ দল নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দিয়ে আয়ের সব কিছু জানিয়ে দেয়৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কে বা কারা কিনেছেন, তা তাঁরা বলতে অস্বীকার করেন৷ মঙ্গলবার কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এবং পরে বাসন্তীতে নির্বাচনী সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'তৃণমূলের ব্যালান্স শিটে সব তথ্য সত্য, এটাই বা কে বলল?' তাঁর দাবি, সারদা-কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত হবেই৷ তার পর দিদির (মমতা) দলের প্রায় সব নেতা-মন্ত্রী আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি জেলে যাবেন৷'

তমলুকে এক সভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর এমনই দুরবস্থা যে, তাঁকে প্রতারক সুদীপ্ত সেনের সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে৷' তিনি এদিনও বলেন, 'ইডি সবে কান টেনেছে৷ কান টানলে এর পর মাথাও আসবে৷ সিবিআই তদন্ত হলে সব প্রকাশ্যে আসবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আর বেশি দিন দোষীদের আড়াল করতে পারবেন না৷'

মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-বিতর্ককে এদিন আরও উসকে দিয়েছেন দলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ৷ বিধাননগর আদালতে তোলার আগে তিনি বলেন, 'সুদীপ্ত সেনের কথা ঠিক নয়৷' তাঁর অভিযোগ, শাসক দল সারদার সুবিধাভোগীদের আড়াল করছে৷ মুখ্যমন্ত্রীও একই কাজ করে চলেছেন৷ পুলিশ আবার সরকারের দালালি করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা থেকে কুণালবাবুকে নিবৃত্ত করার জন্য পুলিশ তাঁকে ঠেলে ভ্যানে তুলে দেয়৷ সেই অবস্থাতেই তিনি বলতে থাকেন, 'কেন মন্ত্রী মদন মিত্র এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্‍ কর পুরকায়স্থকে পুলিশ আজও জেরা করছে না৷ আমি বারবার বলছি, আমার অনেক কিছু বলার আছে৷ ইডি আমাকে এবং সুদীপ্ত সেনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করুক৷ পুলিশ আমাকে নানা ভাবে বাধা দিচ্ছে৷' পুলিশকে উদ্দেশ্য করে এক সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'আপনারা আমাকে বলতে বাধা দিলে আমি এখানেই বসে পড়ব৷' বিধাননগর আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর ফের তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন৷ তখনই পুলিশ তাঁকে ঠেকাতে তত্‍পর হয়ে ওঠে৷ চারটি থানার পুলিশ নিয়ে আসা হয় তাঁকে বাগে আনতে এবং সাংবাদিকদের কব্জা করতে৷

এদিন বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, ইডি তাঁকে ভাউচার সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন করেনি৷ সারদার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক ব্যাপারেও তাঁকে জেরা করা হয়নি৷ তাঁর আরও দাবি, ইডি তাঁকে ফের ডাকবে বলেও জানায়নি৷ তবে অর্পিতা জানিয়েছেন, তদন্তের প্রয়োজনে তিনি তাদের সহযোগিতা করবেন৷

মেদিনীপুরে এক সভায় পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, 'রোজই আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইডি আমাকে ডেকেছে কি না৷ কিন্ত্ত এখনও পর্যন্ত আমাকে কেউ ডাকেনি৷ দিল্লি যেন মনে রাখে, তোমাদের যেমন ইডি আছে, আমাদের তেমন দিদি আছে, যাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷'

No comments:

Post a Comment