তৃণমূল যতো ভোট লুটে নামবে,
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় মানুষও ততোই মরিয়া হয়ে উঠবেন
গণশক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বললেন সূর্যকান্ত মিশ্র
এটা সাধারণভাবে বোঝা গিয়েছিলো যে প্রথম দুই দফায় যেভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে সেভাবে যদি ভোটগ্রহণ হয়, মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে মানুষের রায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু তৃতীয় দফার ভোটে দেখা গেলো তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কিছু জায়গায় আইনকানুনের পরোয়া না করে ব্যাপক হিংসা ও বুথদখলের রাস্তা নিয়েছে। তবে তৃণমূল যতো ভোট লুটে নামবে, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় মানুষও ততোই মরিয়া হয়ে উঠবেন। গণশক্তিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্য মিশ্র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রসূন ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু প্রথম দুই দফার ভোটগ্রহণের শান্তিপূর্ণ চিত্র তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণে দেখা গেলো না। উত্তরের দিকে প্রথম দুই দফার পরে ভোটগ্রহণের পালা যতোই দক্ষিণবঙ্গে আসছে ততোই কি উত্তেজনা ও অশান্তি বাড়ার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন?
সূর্যকান্ত মিশ্র: প্রথম দুই দফায় যে ভোটগ্রহণ হয়েছে তাতে দুএকটি কেন্দ্র বাদ দিলে কোথাও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের সরাসরি লড়াই হয়নি। প্রথম দুই দফায় যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়ে গেছে সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে থাকবে। বাকি লোকসভা কেন্দ্রগুলির প্রায় সবকটাতেই লড়াইটা হবে বামফ্রন্টের সঙ্গে তৃণমূলের, সরাসরি। এটা সাধারণভাবে বোঝা গিয়েছিলো যে প্রথম দুই দফায় যেভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে সেভাবে যদি ভোটগ্রহণ হয়, মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে মানুষের রায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু তৃতীয় দফার ভোটে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কিছু জায়গায় আইনকানুনের পরোয়া না করে ব্যাপক হিংসা ও বুথদখলের রাস্তা নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখা যায়নি, তাদের সব জায়গায় কাজে লাগানো হয়নি, রাজ্য পুলিস প্রশাসন বেশ কিছু ক্ষেত্রে শাসকদলের পক্ষ নিতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক কয়েকদিনের মধ্যে তিনজন খুন হয়ে গেছেন। এসত্ত্বেও জনগণ অনেক জায়গায় সন্ত্রাস আক্রমণ উপেক্ষা করে তাঁদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাছাড়া বামপন্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচী, এলাকায় এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রমে, সভা সমাবেশ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থেকে মানুষের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতেই তৃণমূল আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন, স্টার সুপারস্টারদের ছাড়া সভা করতে ভয় পাচ্ছেন। পরাজয়ের এই আতঙ্ক থেকে তৃণমূল মরিয়া হয়ে উঠেছে, বিরোধীদের ওপরে বিশেষত বামপন্থীদের ওপরে আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মীরাও তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি যে যেখানেই আক্রমণ হচ্ছে, সেখানে প্রতিবাদও হচ্ছে। মানুষ প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসছেন। এটা ঠিক যে মরিয়া শাসকদলের আক্রমণ বাড়ছে, কিন্তু এটাও ঠিক যে মানুষও এসব দেখে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে মরিয়া হয়ে উঠছেন, তাঁদের আটকানোর ক্ষমতা কারো নেই। আক্রমণ যতো বাড়বে, প্রতিরোধের তীব্রতাও ততো বাড়বে।
প্রশ্ন: আপনি আশা করছেন যে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এরাজ্যে যেরকম ভোটগ্রহণ দেখা গেছে এবার তার পুনরাবৃত্তি হবে না?
মিশ্র: না, হুবহু তার পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন ও প্রচারে বাধা, বুথদখল, গণনায় কারচুপিসহ নির্বাচিত সদস্য ও কর্মকর্তাকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রতি পর্যায়েই আক্রমণ অব্যাহত ছিলো। কিন্তু এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারাটাই মুখ্য চ্যালেঞ্জ। একথা ঠিক যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক এক্তিয়ার ও ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের থেকে অনেক বেশি। রাজ্য সরকার যেভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করতে পেরেছে তা লোকসভা নির্বাচনে সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার ও ক্ষমতা সত্ত্বেও আমরা বামপন্থীরা কোনো মোহ নিয়ে চলি না। শেষ পর্যন্ত মানুষের সংগ্রাম ও সংগঠনের ওপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। সেখানে নতুন গতি ও উৎসাহ সঞ্চারিত হচ্ছে, এটাই আসল কথা।
প্রশ্ন: আপনি মানুষের ওপরে নির্ভরতার কথা বলছেন, কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা, এমনকি তাঁদের মন্ত্রীরাও সরাসরি হুমকি দিচ্ছেন। এগুলি কি ভোটপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে না? এগুলি ঠেকানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় আপনারা সন্তুষ্ট?
মিশ্র: তৃণমূলের নেতাদের যেসব উক্তি, হুমকির কথা আপনি বলছেন সেগুলি তাদের হতাশাজনিত বেপরোয়া মনোভাবের প্রতিফলন। ওরা এখন মানুষকে ভয় পাচ্ছেন, তাই হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে দমন করে রাখা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা প্রতিটি ঘটনাতেই অভিযোগ জানাচ্ছি, সবক্ষেত্রে প্রতিকার হচ্ছে তা অবশ্য বলতে পারি না। তৃতীয় দফার ভোটে এক হাজারের বেশি বুথে ভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিশেষ পর্যবেক্ষককে পর্যন্ত অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। অবশ্য যে বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি আমরা করেছি সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু আমি আবারও বলছি, এই সব ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তৎপরতার সঙ্গে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি সমস্ত বুথ এলাকায় মানুষদের প্রতিবাদ প্রতিরোধে সংগঠিত করতে হবে। সেটাই আমাদের মুখ্য কাজ।
প্রশ্ন: স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করতে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে আপনাদের অর্থাৎ বিরোধীদের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসিয়ে দিয়েছেন। আপনারা নাকি কমিশনের সঙ্গে বসে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন...
মিশ্র: এটা একটা ফ্যাসিবাদী প্রবণতা। ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটি লক্ষ্মণই হলো সে সব সময় কল্পিত চরিত্র বা শক্তিকে খাড়া করে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেয় এবং সব ঘটনার পিছনে তার বিরোধীদের সম্মিলিত চক্রান্ত দেখতে পায়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এটা আমরা বারবারই দেখতে পাচ্ছি। তিনি সংবাদমাধ্যমের নাম করে আক্রমণ করছেন। মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন। ফ্যাসিবাদীরা এভাবে একেক সময়ে একেকজনকে আক্রমণের লক্ষ্য বেছে নেয়। ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখতে পাবেন যে ফ্যাসিবাদ যাকে মুখ্যপ্রচারক হিসাবে বেছে নেয় তার অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা থাকে। নিজের ছায়াকেও ভয় পায়। মেগালোম্যানিয়ার শিকার হয়ে থাকে। লক্ষণীয় হলো, এই বিষয়ে সঙ্ঘ পরিবার যাকে সারা দেশে মুখ্য প্রচারক হিসাবে নামিয়েছে তাঁর সঙ্গে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি মালদহে হোটেলের ঘরের এসি মেশিনের ধোঁয়া বা বীরভূমের রাস্তায় পাওয়া বিস্ফোরককে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে হত্যার চক্রান্ত বলেছেন। এগুলিকেও কি আপনি ফ্যাসিবাদী সন্দেহপ্রবণতা বলছেন?
মিশ্র: অবশ্যই। উনি মালদহে নিজের পছন্দের হোটেলে ছিলেন। নিজের পছন্দের হোটেলের এসি মেশিনের ধোঁয়াকেও ভয় পাচ্ছেন। রজ্জুতে সর্পভ্রম ছাড়া কি! তার চেয়েও বড় কথা, মুখ্যমন্ত্রীর এই সব প্ররোচনামূলক মন্তব্যের ফলে উৎসাহিত হয়ে বীরভূমে তৃণমূল কর্মীরা শেখ হীরালাল নামের এক সি পি আই (এম) কর্মীকে খুন করে ফেললো। এটাই তো বিপদ।
প্রশ্ন: আপনারা চিট ফান্ড নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকে নোটিস পাঠিয়েছে, জেরা করেছে। নির্বাচনে কি এর কোনো প্রভাব পড়বে?
মিশ্র: চিট ফান্ডের বিপদের কথা আজ নয়, আমরা ৩ বছর আগে থেকে বলে আসছি। চিট ফান্ড বিপর্যয় ঘটার আগে থেকে সতর্ক করেছি। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরেই আমরা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই বিপদের কথা জানিয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারকেও তা জানানো হয়েছিলো। এতদিনে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার পরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কিছুটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তার চেয়েও বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছেন বিষয়টি চাপা দিতে। যে আমানতকারীরা টাকা খুইয়েছেন তাঁদের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী প্রতারকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার দিকে বেশি নজর দিয়েছেন। প্রমাণ লোপাটের কাজে অসম্ভব তৎপরতা দেখাচ্ছেন। সারদার ব্যাঙ্ক লকার নিয়ে সেই ঘটনাই দেখা গেলো। গৌতম দেব, সুজন চক্রবর্তীর ওপরে পুলিস দিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। এসব করে লাভ হবে না, রাজ্যের মানুষ সব দেখছেন, তাঁদের বোকা ভাবাটা ভুল। কেবল নির্বোধরাই মানুষকে বোকা ভাবে। সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলার শেষ পর্যন্ত কী হবে তা দেখা যাবে। কিন্তু ‘জনগণের সুপ্রিম কোর্ট’ যে এর বিরুদ্ধে রায় দেবেন সেই বিষয়ে আমরা আস্থাশীল।
প্রশ্ন: নরেন্দ্র মোদীও তো এখন সারদা নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বলছেন....
মিশ্র: নরেন্দ্র মোদীর কোনো দরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নেই। উনি এতদিনে সারদা কেলেঙ্কারির কথা জানলেন! চার মাস আগে উনি যখন ব্রিগেডে এসে ভাষণ দিয়েছিলেন তখন জানতেন না? তখন তো লাড্ডুর লোভ দেখিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে চিট ফান্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামপন্থীদেরই লড়তে হবে, মোদী বরং ওঁর দলের ইয়েদুরাপ্পাদের দুর্নীতিগুলো সামলান।
প্রশ্ন: এরাজ্যে বামফ্রন্টের প্রচারে কি তৃণমূল সরকারের স্বৈরতন্ত্র, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়গুলিই মুখ্য হয়ে উঠছে? এটা তো লোকসভার নির্বাচন, রাজ্যের ইস্যুগুলির থেকে সর্বভারতীয় ইস্যুই কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
মিশ্র: বামপন্থীদের প্রচারে সর্বভারতীয় ও রাজ্যের বিষয়গুলিকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেখা হয় না। এগুলি একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। আমরা কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতি এবং বি জে পি-র সাম্প্রদায়িকতার বিপদের উল্লেখ করে দেশে অকংগ্রেসী ও অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক জনস্বার্থবাহী বিকল্প গড়ে তোলার ডাক দিয়েছি। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবাহী এই তিনটি বিষয়ের ওপরেই আমরা জোর দিয়েছি এবং ১০দফা বিকল্প কর্মসূচীর ঘোষণাও করেছি। কিন্তু বামপন্থীদের শক্তিশালী করতে না পারলে এই বিকল্প জনস্বার্থবাহী থাকবে কী করে! দেশের নতুন সরকার কোন পথে চলবে, বিকল্প শক্তি কতটা জনস্বার্থবাহী থাকবে, তা নির্ভর করছে বামপন্থীদের শক্তির ওপরে। আর বামপন্থীদের শক্তি বাড়াতে হলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের নির্ধারকভাবে পরাস্ত করে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে বামপন্থীদের জয়ী হতেই হবে। কেবলমাত্র তাহলেই দেশে বামপন্থীরা তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গ বামপন্থী আন্দোলনের শক্তিশালী দুর্গ, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসনের সংখ্যাও বেশি, তাই দেশে বামপন্থীদের শক্তিশালী করে তোলায় পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বও বেশি। আমাদের নির্বাচনী প্রচারে সামগ্রিকভাবে এইভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
প্রশ্ন: এই বছরের গোড়ায় ব্রিগেডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জনসভার আগে আপনি তাঁকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, বি জে পি-র বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন। ব্রিগেডের সেই সভায় মুখ্যমন্ত্রী বি জে পি-র বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। সেইসময় ব্রিগেডে বি জে পি-র জনসভায় এসে নরেন্দ্র মোদীও তৃণমূলের বিরুদ্ধাচারণ করেননি। কিন্তু এখন কী বলবেন? এখন তো মুখ্যমন্ত্রী বি জে পি-র বিরুদ্ধেও বলছেন।
মিশ্র: নির্বাচনী প্রচারের একেবারে শেষদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বি জে পি-র বিরুদ্ধে যা বলছেন, তা খানিকটা বাধ্য হয়েই বলছেন। এটা অবশ্যই লোক দেখানো, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তিনিই হাত ধরে বি জে পি-কে ডেকে এনেছিলেন। আজ মুখ্যমন্ত্রী যাকে হরিদাস পাল বলছেন, তাঁকেই একদিন ফুল পাঠিয়েছিলেন। লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে, মুখ্যমন্ত্রী এখনো একবারের জন্যও অতীতের অবস্থানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, ভুল স্বীকার করেননি। তিনি যে ভবিষ্যতে আবার আর এস এস এবং বি জে পি-র সঙ্গে যাবেন না সেই প্রতিশ্রুতিও দেননি। গুজরাতে সাম্প্রদায়িক গণহত্যার জন্য নরেন্দ্র মোদীও ক্ষমা চাননি। তাঁর মনোভাবটা হলো ‘আদালত আমায় ফাঁসি দেয় দিক, কিন্তু আমি ক্ষমা চাইবো না।’ এখানেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই রকম অবস্থান আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর। ভুল, অন্যায়ের জন্য কিছুতেই ক্ষমা না চাওয়ার ঔদ্ধত্যে তাঁরা এক।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=55507#sthash.9FhkvCda.dpufপ্রশ্ন: লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু প্রথম দুই দফার ভোটগ্রহণের শান্তিপূর্ণ চিত্র তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণে দেখা গেলো না। উত্তরের দিকে প্রথম দুই দফার পরে ভোটগ্রহণের পালা যতোই দক্ষিণবঙ্গে আসছে ততোই কি উত্তেজনা ও অশান্তি বাড়ার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন?
সূর্যকান্ত মিশ্র: প্রথম দুই দফায় যে ভোটগ্রহণ হয়েছে তাতে দুএকটি কেন্দ্র বাদ দিলে কোথাও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের সরাসরি লড়াই হয়নি। প্রথম দুই দফায় যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়ে গেছে সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে থাকবে। বাকি লোকসভা কেন্দ্রগুলির প্রায় সবকটাতেই লড়াইটা হবে বামফ্রন্টের সঙ্গে তৃণমূলের, সরাসরি। এটা সাধারণভাবে বোঝা গিয়েছিলো যে প্রথম দুই দফায় যেভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে সেভাবে যদি ভোটগ্রহণ হয়, মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে মানুষের রায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু তৃতীয় দফার ভোটে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কিছু জায়গায় আইনকানুনের পরোয়া না করে ব্যাপক হিংসা ও বুথদখলের রাস্তা নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখা যায়নি, তাদের সব জায়গায় কাজে লাগানো হয়নি, রাজ্য পুলিস প্রশাসন বেশ কিছু ক্ষেত্রে শাসকদলের পক্ষ নিতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক কয়েকদিনের মধ্যে তিনজন খুন হয়ে গেছেন। এসত্ত্বেও জনগণ অনেক জায়গায় সন্ত্রাস আক্রমণ উপেক্ষা করে তাঁদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাছাড়া বামপন্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচী, এলাকায় এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রমে, সভা সমাবেশ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থেকে মানুষের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতেই তৃণমূল আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন, স্টার সুপারস্টারদের ছাড়া সভা করতে ভয় পাচ্ছেন। পরাজয়ের এই আতঙ্ক থেকে তৃণমূল মরিয়া হয়ে উঠেছে, বিরোধীদের ওপরে বিশেষত বামপন্থীদের ওপরে আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মীরাও তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি যে যেখানেই আক্রমণ হচ্ছে, সেখানে প্রতিবাদও হচ্ছে। মানুষ প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসছেন। এটা ঠিক যে মরিয়া শাসকদলের আক্রমণ বাড়ছে, কিন্তু এটাও ঠিক যে মানুষও এসব দেখে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে মরিয়া হয়ে উঠছেন, তাঁদের আটকানোর ক্ষমতা কারো নেই। আক্রমণ যতো বাড়বে, প্রতিরোধের তীব্রতাও ততো বাড়বে।
প্রশ্ন: আপনি আশা করছেন যে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এরাজ্যে যেরকম ভোটগ্রহণ দেখা গেছে এবার তার পুনরাবৃত্তি হবে না?
মিশ্র: না, হুবহু তার পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন ও প্রচারে বাধা, বুথদখল, গণনায় কারচুপিসহ নির্বাচিত সদস্য ও কর্মকর্তাকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রতি পর্যায়েই আক্রমণ অব্যাহত ছিলো। কিন্তু এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারাটাই মুখ্য চ্যালেঞ্জ। একথা ঠিক যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক এক্তিয়ার ও ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের থেকে অনেক বেশি। রাজ্য সরকার যেভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করতে পেরেছে তা লোকসভা নির্বাচনে সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার ও ক্ষমতা সত্ত্বেও আমরা বামপন্থীরা কোনো মোহ নিয়ে চলি না। শেষ পর্যন্ত মানুষের সংগ্রাম ও সংগঠনের ওপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। সেখানে নতুন গতি ও উৎসাহ সঞ্চারিত হচ্ছে, এটাই আসল কথা।
প্রশ্ন: আপনি মানুষের ওপরে নির্ভরতার কথা বলছেন, কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা, এমনকি তাঁদের মন্ত্রীরাও সরাসরি হুমকি দিচ্ছেন। এগুলি কি ভোটপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে না? এগুলি ঠেকানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় আপনারা সন্তুষ্ট?
মিশ্র: তৃণমূলের নেতাদের যেসব উক্তি, হুমকির কথা আপনি বলছেন সেগুলি তাদের হতাশাজনিত বেপরোয়া মনোভাবের প্রতিফলন। ওরা এখন মানুষকে ভয় পাচ্ছেন, তাই হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে দমন করে রাখা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা প্রতিটি ঘটনাতেই অভিযোগ জানাচ্ছি, সবক্ষেত্রে প্রতিকার হচ্ছে তা অবশ্য বলতে পারি না। তৃতীয় দফার ভোটে এক হাজারের বেশি বুথে ভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিশেষ পর্যবেক্ষককে পর্যন্ত অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। অবশ্য যে বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি আমরা করেছি সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু আমি আবারও বলছি, এই সব ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তৎপরতার সঙ্গে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি সমস্ত বুথ এলাকায় মানুষদের প্রতিবাদ প্রতিরোধে সংগঠিত করতে হবে। সেটাই আমাদের মুখ্য কাজ।
প্রশ্ন: স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করতে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে আপনাদের অর্থাৎ বিরোধীদের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসিয়ে দিয়েছেন। আপনারা নাকি কমিশনের সঙ্গে বসে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন...
মিশ্র: এটা একটা ফ্যাসিবাদী প্রবণতা। ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটি লক্ষ্মণই হলো সে সব সময় কল্পিত চরিত্র বা শক্তিকে খাড়া করে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেয় এবং সব ঘটনার পিছনে তার বিরোধীদের সম্মিলিত চক্রান্ত দেখতে পায়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এটা আমরা বারবারই দেখতে পাচ্ছি। তিনি সংবাদমাধ্যমের নাম করে আক্রমণ করছেন। মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন। ফ্যাসিবাদীরা এভাবে একেক সময়ে একেকজনকে আক্রমণের লক্ষ্য বেছে নেয়। ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখতে পাবেন যে ফ্যাসিবাদ যাকে মুখ্যপ্রচারক হিসাবে বেছে নেয় তার অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা থাকে। নিজের ছায়াকেও ভয় পায়। মেগালোম্যানিয়ার শিকার হয়ে থাকে। লক্ষণীয় হলো, এই বিষয়ে সঙ্ঘ পরিবার যাকে সারা দেশে মুখ্য প্রচারক হিসাবে নামিয়েছে তাঁর সঙ্গে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি মালদহে হোটেলের ঘরের এসি মেশিনের ধোঁয়া বা বীরভূমের রাস্তায় পাওয়া বিস্ফোরককে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে হত্যার চক্রান্ত বলেছেন। এগুলিকেও কি আপনি ফ্যাসিবাদী সন্দেহপ্রবণতা বলছেন?
মিশ্র: অবশ্যই। উনি মালদহে নিজের পছন্দের হোটেলে ছিলেন। নিজের পছন্দের হোটেলের এসি মেশিনের ধোঁয়াকেও ভয় পাচ্ছেন। রজ্জুতে সর্পভ্রম ছাড়া কি! তার চেয়েও বড় কথা, মুখ্যমন্ত্রীর এই সব প্ররোচনামূলক মন্তব্যের ফলে উৎসাহিত হয়ে বীরভূমে তৃণমূল কর্মীরা শেখ হীরালাল নামের এক সি পি আই (এম) কর্মীকে খুন করে ফেললো। এটাই তো বিপদ।
প্রশ্ন: আপনারা চিট ফান্ড নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকে নোটিস পাঠিয়েছে, জেরা করেছে। নির্বাচনে কি এর কোনো প্রভাব পড়বে?
মিশ্র: চিট ফান্ডের বিপদের কথা আজ নয়, আমরা ৩ বছর আগে থেকে বলে আসছি। চিট ফান্ড বিপর্যয় ঘটার আগে থেকে সতর্ক করেছি। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরেই আমরা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই বিপদের কথা জানিয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারকেও তা জানানো হয়েছিলো। এতদিনে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার পরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কিছুটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তার চেয়েও বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছেন বিষয়টি চাপা দিতে। যে আমানতকারীরা টাকা খুইয়েছেন তাঁদের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী প্রতারকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার দিকে বেশি নজর দিয়েছেন। প্রমাণ লোপাটের কাজে অসম্ভব তৎপরতা দেখাচ্ছেন। সারদার ব্যাঙ্ক লকার নিয়ে সেই ঘটনাই দেখা গেলো। গৌতম দেব, সুজন চক্রবর্তীর ওপরে পুলিস দিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। এসব করে লাভ হবে না, রাজ্যের মানুষ সব দেখছেন, তাঁদের বোকা ভাবাটা ভুল। কেবল নির্বোধরাই মানুষকে বোকা ভাবে। সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলার শেষ পর্যন্ত কী হবে তা দেখা যাবে। কিন্তু ‘জনগণের সুপ্রিম কোর্ট’ যে এর বিরুদ্ধে রায় দেবেন সেই বিষয়ে আমরা আস্থাশীল।
প্রশ্ন: নরেন্দ্র মোদীও তো এখন সারদা নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বলছেন....
মিশ্র: নরেন্দ্র মোদীর কোনো দরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নেই। উনি এতদিনে সারদা কেলেঙ্কারির কথা জানলেন! চার মাস আগে উনি যখন ব্রিগেডে এসে ভাষণ দিয়েছিলেন তখন জানতেন না? তখন তো লাড্ডুর লোভ দেখিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে চিট ফান্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামপন্থীদেরই লড়তে হবে, মোদী বরং ওঁর দলের ইয়েদুরাপ্পাদের দুর্নীতিগুলো সামলান।
প্রশ্ন: এরাজ্যে বামফ্রন্টের প্রচারে কি তৃণমূল সরকারের স্বৈরতন্ত্র, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়গুলিই মুখ্য হয়ে উঠছে? এটা তো লোকসভার নির্বাচন, রাজ্যের ইস্যুগুলির থেকে সর্বভারতীয় ইস্যুই কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
মিশ্র: বামপন্থীদের প্রচারে সর্বভারতীয় ও রাজ্যের বিষয়গুলিকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেখা হয় না। এগুলি একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। আমরা কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতি এবং বি জে পি-র সাম্প্রদায়িকতার বিপদের উল্লেখ করে দেশে অকংগ্রেসী ও অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক জনস্বার্থবাহী বিকল্প গড়ে তোলার ডাক দিয়েছি। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবাহী এই তিনটি বিষয়ের ওপরেই আমরা জোর দিয়েছি এবং ১০দফা বিকল্প কর্মসূচীর ঘোষণাও করেছি। কিন্তু বামপন্থীদের শক্তিশালী করতে না পারলে এই বিকল্প জনস্বার্থবাহী থাকবে কী করে! দেশের নতুন সরকার কোন পথে চলবে, বিকল্প শক্তি কতটা জনস্বার্থবাহী থাকবে, তা নির্ভর করছে বামপন্থীদের শক্তির ওপরে। আর বামপন্থীদের শক্তি বাড়াতে হলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের নির্ধারকভাবে পরাস্ত করে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে বামপন্থীদের জয়ী হতেই হবে। কেবলমাত্র তাহলেই দেশে বামপন্থীরা তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গ বামপন্থী আন্দোলনের শক্তিশালী দুর্গ, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসনের সংখ্যাও বেশি, তাই দেশে বামপন্থীদের শক্তিশালী করে তোলায় পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বও বেশি। আমাদের নির্বাচনী প্রচারে সামগ্রিকভাবে এইভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
প্রশ্ন: এই বছরের গোড়ায় ব্রিগেডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জনসভার আগে আপনি তাঁকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, বি জে পি-র বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন। ব্রিগেডের সেই সভায় মুখ্যমন্ত্রী বি জে পি-র বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। সেইসময় ব্রিগেডে বি জে পি-র জনসভায় এসে নরেন্দ্র মোদীও তৃণমূলের বিরুদ্ধাচারণ করেননি। কিন্তু এখন কী বলবেন? এখন তো মুখ্যমন্ত্রী বি জে পি-র বিরুদ্ধেও বলছেন।
মিশ্র: নির্বাচনী প্রচারের একেবারে শেষদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বি জে পি-র বিরুদ্ধে যা বলছেন, তা খানিকটা বাধ্য হয়েই বলছেন। এটা অবশ্যই লোক দেখানো, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তিনিই হাত ধরে বি জে পি-কে ডেকে এনেছিলেন। আজ মুখ্যমন্ত্রী যাকে হরিদাস পাল বলছেন, তাঁকেই একদিন ফুল পাঠিয়েছিলেন। লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে, মুখ্যমন্ত্রী এখনো একবারের জন্যও অতীতের অবস্থানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, ভুল স্বীকার করেননি। তিনি যে ভবিষ্যতে আবার আর এস এস এবং বি জে পি-র সঙ্গে যাবেন না সেই প্রতিশ্রুতিও দেননি। গুজরাতে সাম্প্রদায়িক গণহত্যার জন্য নরেন্দ্র মোদীও ক্ষমা চাননি। তাঁর মনোভাবটা হলো ‘আদালত আমায় ফাঁসি দেয় দিক, কিন্তু আমি ক্ষমা চাইবো না।’ এখানেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই রকম অবস্থান আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর। ভুল, অন্যায়ের জন্য কিছুতেই ক্ষমা না চাওয়ার ঔদ্ধত্যে তাঁরা এক।
No comments:
Post a Comment