মুম্বই-হাওলায় কালো টাকা সাদা করেছিলেন সুদীপ্ত সেন
এই সময়: হাওলার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার রাস্তা নিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ মুম্বইয়ের এমনই এক ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার হদিস পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), যে সংস্থা থেকে বছরে প্রায় চার কোটি টাকা করে ধার নিয়েছিল সারদা গোষ্ঠী৷ সারদার হাতে থাকা একটি সংবাদ চ্যানেল চালানোর জন্য সেই টাকা কাজে লাগানো হয়েছে বলে কাগজপত্র ঘেঁটে জানতে পেরেছে ইডি৷ কিন্ত্ত নথি ঘেঁটে সেই টাকা শোধ দেওয়া বা সুদ দেওয়ার হিসেব মেলেনি৷ আর এই সূত্রেই সারদার এখনও হদিশ না-মেলা টাকার একটা বড় অংশ হাওলার মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে বলে আশঙ্কা তদন্তকারীদের৷
এদিকে সোমবার ফের ইডি-র দপ্তরে হাজিরা দিতে গিয়ে দীর্ঘ জেরার মুখে পড়েন তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী, নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ৷ নিজেকে সারদার সংবাদমাধ্যমের কর্মী হিসেবে দাবি করা অর্পিতার অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় সুদীপ্ত সেনকে৷ এদিন ইডি-র তদন্তকারীরা জেরার সময় বেশ কয়েকটি ভাউচার ফেলে দেন অর্পিতার সামনে৷ সেগুলিতে তাঁর সই রয়েছে৷ এর আগে ইডি-কে অর্পিতা জানিয়েছিলেন, সারদার কর্মী হিসেবে তিনি শুধু বেতন পেতেন৷ অথচ সারদার দু'টি সংস্থার ওই সব ভাউচারে দেখা গিয়েছে, অর্পিতার সই করার পর সেগুলির মাধ্যমে বেশ কিছু ক্লাব-সংগঠন টাকা পেয়েছে৷ ফলে সারদায় তাঁর যোগ কতটা ঘনিষ্ঠ, তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে৷
ইডি তদন্তে দেখেছে, একটি সংবাদ চ্যানেল হাতে নেওয়ার পর ২০১১ থেকে পরের দু'বছরে সুদীপ্ত সেন মুম্বইয়ের ওই সংস্থা থেকে প্রায় চার কোটি টাকা করে ধার হিসেবে নিয়েছেন৷ অর্থাত্, তিন বছরে ধার নেওয়ার জন্য চ্যানেল চালানোর জন্য ওই টাকা খরচ দেখানো হয়েছে৷ ধারে টাকা নেওয়া হলেও তা মেটানোর কোনও তথ্য পাননি তদন্তকারীরা৷ তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ইতিমধ্যে সারদার কয়েকজন উঁচু পদের কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকা আগেই হাওলার মাধ্যমে পৌছে যেত ভিন রাজ্যের ওই সংস্থার কাছে৷ সেই টাকা থেকে কিছু টাকা সার্ভিস চার্জ বাবদ কেটে রেখে, বাকি টাকা ধার হিসেবে পৌঁছে গিয়েছিল সুদীপ্তর দেব কৃপা ব্যাপার প্রাইভেট লিমিটেডে (এই সংস্থার নামেই চলত সারদার একটি চ্যানেলের কাজকর্ম)৷ আর এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে সারদার কালো টাকা চালান হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷ কেননা, থাইল্যান্ড-মায়ানমারের বেশ কিছু ব্যাঙ্ক রয়েছে, যেখানে টাকা রাখার জন্য কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে হয় না আমানতকারীকে৷ শুধু সেই টাকা ফেরত নেওয়ার সময় ১৫ শতাংশ করে কেটে নেয় সেই ব্যাঙ্ক৷ সে ব্যাপারেও বেশ কিছু তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে বলে ইডি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে৷
কালো টাকা সাদা করার এই চক্রের হদিশ পাওয়ার পর ইডি সারদার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির তথ্য আরও খতিয়ে দেখতে ফরেন্সিক অডিটের সাহায্য নিতে চাইছে৷ সারদার ২১৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের আদান-প্রদান দেখেও তাজ্জব তদন্তকারীরা৷ ২০০৯-এর শেষ থেকে ২০১৩-র প্রথম দিক পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে ২০ লক্ষ বারের বেশি টাকা আদান-প্রদান হয়েছে৷ ফরেন্সিক অডিটেই এর চুলচেরা তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷ ইতিমধ্যে বিধাননগর সিটি পুলিশ সারদার যাবতীয় অর্থনৈতিক হিসেব-নিকেশ ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করতে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্য নিয়েছিল৷ সেখানকার ১৫ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত দল কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক ও অন্যান্য পরীক্ষার পর ২৩০০ পাতার একটি রিপোর্ট তৈরি করে সিটি পুলিশকে দিয়েছে৷
এদিন সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ ইডি-র অফিসে হাজির হন অর্পিতা ঘোষ৷ ঘণ্টা তিনেক পরে বেরিয়ে এসে তিনি দৃশ্যতই যথেষ্ট বিধস্ত ছিলেন৷ অন্যান্য দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাবার্তা বললেও, এদিন প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন৷ যা প্রশ্ন করার, ইডি-র কাছে করতে বলে গাড়ি চড়ে বেরিয়ে যান৷ সারদার মিডিয়া সংস্থার পদে থাকা অর্পিতা ঘোষের ভাউচারে সই মেলার পর সে বিষয়ে তিনি তার স্বপক্ষে খুব বেশি কিছু বলতে পারেননি বলে দাবি তদন্তকারীদের৷ বিধাননগর সিটি পুলিশ রবিবার রাতেই জেরা করে অসমের ব্যবসায়ী রাজেশ বাজাজকে৷ এই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ মাতঙ্গ সিংয়ের সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের যোগাযোগ হয়েছিল বলে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে৷ চ্যানেল বিক্রির নামে ইতিমধ্যে সুদীপ্তর থেকে কয়েক কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাতঙ্গ সিংয়ের নামে৷
No comments:
Post a Comment