নেতাইয়ের ৫ ফেরার সিআইডি-র জালে
এই সময়, মেদিনীপুর: ২০১১-র বিধানসভা ভোটের মুখে নেতাই গণহত্যা বিপন্ন বাম সরকারের অস্তিত্বে চূড়ান্ত আঘাত হেনেছিল৷ রাজ্যপাটে পরিবর্তন এক রকম অনিবার্য করে তুলেছিল ওই ঘটনা৷ এ বার লোকসভা ভোট-পর্ব চলাকালীন সেই গণহত্যায় অভিযুক্ত 'ফেরার' ৫ সিপিএম নেতা ধরা পড়লেন সিআইডি-র জালে৷ গণহত্যার তিন বছর তিন মাস পর অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের এই 'সাফল্য' বিশেষত, জঙ্গলমহলের ভোটে বর্তমান শাসকদলকে বাড়তি সুবিধা দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ পাশাপাশি, বামেদের অস্বস্তি নিশ্চিত ভাবেই বাড়ল৷ আর এই রাজনৈতিক তাত্পর্যের অঙ্কেই ফের শিরোনামে নেতাই৷
নেতাই মামলার দায়িত্বে থাকা সিবিআইকে পিছনে ফেলে সিআইডি-র 'কৃতিত্বে' অন্য কারণেও উচ্ছ্বসিত শাসকদলের নেতারা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, 'সিআইডি যে দুর্বল নয়, প্রমাণ হল৷ সিবিআই যা পারেনি, সিআইডি সেটা করে দেখাল৷' একই সুরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, 'সিবিআইয়ের চেয়ে সিআইডি যে অনেক অনেক বেশি দক্ষ, সেটাই প্রমাণিত৷' গোপীবল্লভপুরে এক জনসভায় আর এক মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, 'নেতাইয়ে সিবিআই, নন্দীগ্রামে সিবিআই, এমনকী নোবেল চুরিতেও সিবিআই৷ শেষে সিবিআই বলবে, আমরা পারব না৷ অভিনন্দন জানাই সিআইডিকে৷ যাঁরা অন্ধ্রপ্রদেশের জঙ্গল থেকে নেতাই গণহত্যার ৫ অভিযুক্তকে ধরেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ দেখিয়ে দিল, কী ভাবে অভিযুক্তদের ধরতে হয়৷'
শাসকদলের একের পর এক নেতার মন্তব্যেই পরিষ্কার, সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই দাবির পাল্টা হিসেবে তৃণমূল সরকার বুক বাজিয়ে বলার মতো একটা 'অস্ত্র' পেয়ে গেল ভোটের এই মরসুমে৷
সিআইডি-র দাবি, সুদূর অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদ সংলগ্ন চিকরাপল্লির এমবি ভবন নামে একটি বাড়ি থেকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ 'ফেরার' সিপিএম নেতা ডালিম পাণ্ডে, জয়দেব গিরি, তপন দে, খলিলউদ্দিন এবং রথীন দণ্ডপাটকে৷ ডালিম লালগড় জোনাল কমিটির সদস্য, তপন ও জয়দেব লোকাল কমিটির প্রাক্তন ও পরবর্তী সম্পাদক, খলিলউদ্দিনও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য৷ আর রথীন দণ্ডপাট সেই সিপিএম নেতা, যাঁর বাড়ি থেকে গুলি চলেছিল৷
মঙ্গলবার দুপুরে কঠোর নিরাপত্তায় তাঁদের হাজির করা হয় মেদিনীপুর সিজেএম এজলাসে৷ এক দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে পেয়ে ধৃতদের কলকাতার ভবানী ভবনে নিজেদের সদর দপ্তরে নিয়ে যায় সিআইডি৷ আজ, বুধবার ফের তাঁদের ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হবে বলে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে খবর৷ নেতাই মামলার তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ৮ জনকে ফেরার দেখিয়ে মোট ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে ২০১১-র এপ্রিলে চার্জশিট পেশ করে৷ মেদিনীপুর আদালতে ইতিমধ্যে চার্জগঠনও হয়েছে ধৃত ১২ জনের বিরুদ্ধে৷ আজ ঝাড়গ্রাম আদালতে ডালিম পাণ্ডেদের হাজির করা হলে সিবিআই তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানাবে বলেই জানা গিয়েছে৷ চার্জশিটে নাম থাকা অন্য ৩ অভিযুক্ত--সিপিএম জোনাল সম্পাদক অনুজ পাণ্ডে, জেলা পরিষদের ভূতপূর্ব কর্মাধ্যক্ষ ফুল্লরা মণ্ডল এবং বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্পাদক চণ্ডী করণ অবশ্য এখনও অধরাই৷ উল্লেখ্য, এই ৩ জন এবং যে ৫ জন সিআইডি-র জালে ধরা পড়লেন, 'পলাতক অপরাধী' ঘোষণা করে আদালতের নির্দেশে তাঁদের প্রত্যেকের সম্পত্তি ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷
২০১১-র ৭ জানুয়ারি সকালে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির 'সশস্ত্র শিবির' থেকে গুলিচালনার ঘটনায় ৪ মহিলা-সহ নিহত হয়েছিলেন ৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসী৷ আহত হন অন্তত ২৮ জন৷ মাওবাদী এবং বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সিপিএম নেতাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় 'সশস্ত্র শিবির' তৈরি করেছিল বলে অভিযোগ৷ প্রথমে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে স্থানীয় পুলিশ৷ পরে সিআইডি-র হাতে তদন্তভার তুলে দেয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার৷ কিন্ত্ত নিরপেক্ষ তদন্তের প্রশ্নে সন্দেহ প্রকাশ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে বার অ্যাসোসিয়েশন৷ সিবিআই তদন্তের আর্জি জানানো হয়৷ তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল এবং বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ফেব্রুয়ারি মাসেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ সবেমাত্র মাস তিনেক আগে প্রকাশ্য সভায় নেতাইয়ের ঘটনায় দলের কর্মীদের ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিন্ত্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ মানতে রাজি ছিলেন না৷ তাঁর সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তাদেশের বিরুদ্ধে আপিলও করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য শীর্ষ আদালতে ধোপে টেকেনি বাম সরকারের সেই আর্জি৷
সিবিআই ২০১১-র বিধানসভা ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে অতি দ্রুত ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে চার্জশিট পেশ করে 'হার্মাদ শিবির' চালানো এবং গণহত্যার অভিযোগে সিলমোহর দিলেও ধরতে পারেনি মূল অভিযুক্তদের৷ বস্ত্তত, আগেই রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি-র হাতে ধরা পড়েছিল ৪ জন৷ গোয়ালতোড় থেকে সাধারণ ৮ সিপিএম কর্মীকে ধরে সিবিআই৷ নেতৃস্থানীয় অন্য ৮ অভিযুক্ত থেকে যান অধরাই৷ সেই ৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে পাকড়াও করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কৃতিত্বের প্রশ্নে নিশ্চিত ভাবেই পিছনে ফেলে দিল সিআইডি৷
তবে এ হেন সিআইডি অভিযান ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্নও তৈরি হয়েছে৷ রাজ্যে পরিবর্তনের পর ৩৫ মাস কেটে গিয়েছে, এত দিন পর, জঙ্গলমহলে লোকসভা ভোটগ্রহণের ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে সিআইডি-র এই 'সাফল্য' নেহাত কাকতালীয় কি না, সে প্রশ্ন উঠছে৷ মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে ডালিম পাণ্ডেদের হাসি মুখে ক্লান্তি বা উদ্বেগের চিহ্নমাত্র ছিল না৷ আগেই গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার আচমকা তা প্রকাশ্যে জানানো হল কি না, ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও৷ পলাতক জীবন ছেড়ে চেনা বৃত্তে ফিরতে চেয়ে ডালিমরা আত্মসমর্পণ করলেন কি না, প্রশ্ন সেটাও৷
সিআইডি-র অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ভারতী ঘোষের অবশ্য দাবি, 'গোপন সূত্রে খবর পাওয়া মাত্র হায়দরাবাদ রওনা হয়েছিল আমাদের দল৷ ৫ জনকে ধরে দ্রুত কলকাতায় ফিরতে বিমানের ব্যবস্থা করা হয়৷' তাঁর বক্তব্য, মামলা সিবিআইয়ের হাতে থাকলেও ফেরারদের ধরার জন্য সিআইডি-র সাহায্য আগেই চেয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা৷ 'ফেরার' ৫ জনের অবস্থান সম্পর্কে জানার পর কি সিবিআইকে তা জানানো হয়েছিল? এ ব্যাপারে সিআইডি সূত্রের দাবি, চিকরাপল্লিতে পৌঁছে ৫ জনের ব্যাপারে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে হয়েছে৷ তার পর দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তারের আগে সিবিআইকে জানানোর সুযোগ ছিল না৷
সিআইডি-র পাশাপাশি অন্য একটা যুদ্ধ জিতলেন অবশ্য ভারতী ঘোষ নিজেও৷ পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সুপার হিসাবে গত প্রায় তিন বছর ধরে জঙ্গলমহলেই কাটানো ভারতীকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে এই লোকসভা ভোট-পর্বেই জেলা থেকে অপসারণের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সেই নির্দেশ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করার পাশাপাশি প্রকাশ্য সভায় এই মহিলা পুলিশ অফিসারের কাজের তারিফ করেছিলেন৷ সেই 'তারিফে'র মর্যাদা রেখেই 'অপারেশন নেতাই'য়ে এল ভারতীর সাফল্য৷
শাসক-শিবিরের এই নাটকীয় সাফল্যের সামনে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সিপিএম নেতারা৷ দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্পাদক দীপক সরকার, 'মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি' বলেই ফোন কেটে দিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক দাপুটে নেতা গৌতম দেবের অবশ্য দাবি, 'পালিয়ে গিয়েছিল, গ্রেপ্তার হয়েছে৷ কী আর করা যাবে৷ রাজনীতি করতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়াও নতুন কিছু নয়!' অনুজরাও কি তবে এ বার ধরা পড়তে বা ধরা দিতে চলেছেন?
নেতাই মামলার দায়িত্বে থাকা সিবিআইকে পিছনে ফেলে সিআইডি-র 'কৃতিত্বে' অন্য কারণেও উচ্ছ্বসিত শাসকদলের নেতারা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, 'সিআইডি যে দুর্বল নয়, প্রমাণ হল৷ সিবিআই যা পারেনি, সিআইডি সেটা করে দেখাল৷' একই সুরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, 'সিবিআইয়ের চেয়ে সিআইডি যে অনেক অনেক বেশি দক্ষ, সেটাই প্রমাণিত৷' গোপীবল্লভপুরে এক জনসভায় আর এক মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, 'নেতাইয়ে সিবিআই, নন্দীগ্রামে সিবিআই, এমনকী নোবেল চুরিতেও সিবিআই৷ শেষে সিবিআই বলবে, আমরা পারব না৷ অভিনন্দন জানাই সিআইডিকে৷ যাঁরা অন্ধ্রপ্রদেশের জঙ্গল থেকে নেতাই গণহত্যার ৫ অভিযুক্তকে ধরেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ দেখিয়ে দিল, কী ভাবে অভিযুক্তদের ধরতে হয়৷'
শাসকদলের একের পর এক নেতার মন্তব্যেই পরিষ্কার, সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই দাবির পাল্টা হিসেবে তৃণমূল সরকার বুক বাজিয়ে বলার মতো একটা 'অস্ত্র' পেয়ে গেল ভোটের এই মরসুমে৷
সিআইডি-র দাবি, সুদূর অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদ সংলগ্ন চিকরাপল্লির এমবি ভবন নামে একটি বাড়ি থেকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ 'ফেরার' সিপিএম নেতা ডালিম পাণ্ডে, জয়দেব গিরি, তপন দে, খলিলউদ্দিন এবং রথীন দণ্ডপাটকে৷ ডালিম লালগড় জোনাল কমিটির সদস্য, তপন ও জয়দেব লোকাল কমিটির প্রাক্তন ও পরবর্তী সম্পাদক, খলিলউদ্দিনও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য৷ আর রথীন দণ্ডপাট সেই সিপিএম নেতা, যাঁর বাড়ি থেকে গুলি চলেছিল৷
মঙ্গলবার দুপুরে কঠোর নিরাপত্তায় তাঁদের হাজির করা হয় মেদিনীপুর সিজেএম এজলাসে৷ এক দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে পেয়ে ধৃতদের কলকাতার ভবানী ভবনে নিজেদের সদর দপ্তরে নিয়ে যায় সিআইডি৷ আজ, বুধবার ফের তাঁদের ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হবে বলে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে খবর৷ নেতাই মামলার তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ৮ জনকে ফেরার দেখিয়ে মোট ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে ২০১১-র এপ্রিলে চার্জশিট পেশ করে৷ মেদিনীপুর আদালতে ইতিমধ্যে চার্জগঠনও হয়েছে ধৃত ১২ জনের বিরুদ্ধে৷ আজ ঝাড়গ্রাম আদালতে ডালিম পাণ্ডেদের হাজির করা হলে সিবিআই তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানাবে বলেই জানা গিয়েছে৷ চার্জশিটে নাম থাকা অন্য ৩ অভিযুক্ত--সিপিএম জোনাল সম্পাদক অনুজ পাণ্ডে, জেলা পরিষদের ভূতপূর্ব কর্মাধ্যক্ষ ফুল্লরা মণ্ডল এবং বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্পাদক চণ্ডী করণ অবশ্য এখনও অধরাই৷ উল্লেখ্য, এই ৩ জন এবং যে ৫ জন সিআইডি-র জালে ধরা পড়লেন, 'পলাতক অপরাধী' ঘোষণা করে আদালতের নির্দেশে তাঁদের প্রত্যেকের সম্পত্তি ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷
২০১১-র ৭ জানুয়ারি সকালে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির 'সশস্ত্র শিবির' থেকে গুলিচালনার ঘটনায় ৪ মহিলা-সহ নিহত হয়েছিলেন ৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসী৷ আহত হন অন্তত ২৮ জন৷ মাওবাদী এবং বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সিপিএম নেতাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় 'সশস্ত্র শিবির' তৈরি করেছিল বলে অভিযোগ৷ প্রথমে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে স্থানীয় পুলিশ৷ পরে সিআইডি-র হাতে তদন্তভার তুলে দেয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার৷ কিন্ত্ত নিরপেক্ষ তদন্তের প্রশ্নে সন্দেহ প্রকাশ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে বার অ্যাসোসিয়েশন৷ সিবিআই তদন্তের আর্জি জানানো হয়৷ তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল এবং বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ফেব্রুয়ারি মাসেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ সবেমাত্র মাস তিনেক আগে প্রকাশ্য সভায় নেতাইয়ের ঘটনায় দলের কর্মীদের ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিন্ত্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ মানতে রাজি ছিলেন না৷ তাঁর সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তাদেশের বিরুদ্ধে আপিলও করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য শীর্ষ আদালতে ধোপে টেকেনি বাম সরকারের সেই আর্জি৷
সিবিআই ২০১১-র বিধানসভা ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে অতি দ্রুত ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে চার্জশিট পেশ করে 'হার্মাদ শিবির' চালানো এবং গণহত্যার অভিযোগে সিলমোহর দিলেও ধরতে পারেনি মূল অভিযুক্তদের৷ বস্ত্তত, আগেই রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি-র হাতে ধরা পড়েছিল ৪ জন৷ গোয়ালতোড় থেকে সাধারণ ৮ সিপিএম কর্মীকে ধরে সিবিআই৷ নেতৃস্থানীয় অন্য ৮ অভিযুক্ত থেকে যান অধরাই৷ সেই ৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে পাকড়াও করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কৃতিত্বের প্রশ্নে নিশ্চিত ভাবেই পিছনে ফেলে দিল সিআইডি৷
তবে এ হেন সিআইডি অভিযান ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্নও তৈরি হয়েছে৷ রাজ্যে পরিবর্তনের পর ৩৫ মাস কেটে গিয়েছে, এত দিন পর, জঙ্গলমহলে লোকসভা ভোটগ্রহণের ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে সিআইডি-র এই 'সাফল্য' নেহাত কাকতালীয় কি না, সে প্রশ্ন উঠছে৷ মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে ডালিম পাণ্ডেদের হাসি মুখে ক্লান্তি বা উদ্বেগের চিহ্নমাত্র ছিল না৷ আগেই গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার আচমকা তা প্রকাশ্যে জানানো হল কি না, ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও৷ পলাতক জীবন ছেড়ে চেনা বৃত্তে ফিরতে চেয়ে ডালিমরা আত্মসমর্পণ করলেন কি না, প্রশ্ন সেটাও৷
সিআইডি-র অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ভারতী ঘোষের অবশ্য দাবি, 'গোপন সূত্রে খবর পাওয়া মাত্র হায়দরাবাদ রওনা হয়েছিল আমাদের দল৷ ৫ জনকে ধরে দ্রুত কলকাতায় ফিরতে বিমানের ব্যবস্থা করা হয়৷' তাঁর বক্তব্য, মামলা সিবিআইয়ের হাতে থাকলেও ফেরারদের ধরার জন্য সিআইডি-র সাহায্য আগেই চেয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা৷ 'ফেরার' ৫ জনের অবস্থান সম্পর্কে জানার পর কি সিবিআইকে তা জানানো হয়েছিল? এ ব্যাপারে সিআইডি সূত্রের দাবি, চিকরাপল্লিতে পৌঁছে ৫ জনের ব্যাপারে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে হয়েছে৷ তার পর দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তারের আগে সিবিআইকে জানানোর সুযোগ ছিল না৷
সিআইডি-র পাশাপাশি অন্য একটা যুদ্ধ জিতলেন অবশ্য ভারতী ঘোষ নিজেও৷ পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সুপার হিসাবে গত প্রায় তিন বছর ধরে জঙ্গলমহলেই কাটানো ভারতীকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে এই লোকসভা ভোট-পর্বেই জেলা থেকে অপসারণের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সেই নির্দেশ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করার পাশাপাশি প্রকাশ্য সভায় এই মহিলা পুলিশ অফিসারের কাজের তারিফ করেছিলেন৷ সেই 'তারিফে'র মর্যাদা রেখেই 'অপারেশন নেতাই'য়ে এল ভারতীর সাফল্য৷
শাসক-শিবিরের এই নাটকীয় সাফল্যের সামনে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সিপিএম নেতারা৷ দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্পাদক দীপক সরকার, 'মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি' বলেই ফোন কেটে দিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক দাপুটে নেতা গৌতম দেবের অবশ্য দাবি, 'পালিয়ে গিয়েছিল, গ্রেপ্তার হয়েছে৷ কী আর করা যাবে৷ রাজনীতি করতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়াও নতুন কিছু নয়!' অনুজরাও কি তবে এ বার ধরা পড়তে বা ধরা দিতে চলেছেন?
No comments:
Post a Comment